গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছে সন্ত্রাসী গোষ্টীগুলি৷ তাই অবিলম্বে তাঁদের ফেরত পাঠানো জরুরি বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার ও জম্মুর রাজনৈতিক দলগুলি৷
বিজ্ঞাপন
মাস দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে ক্রমশই গুরুতর বিপদের কারণ হয়ে উঠছে৷ গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান সমর্থিত লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি), হিজবুল মুজাহিদিন এবং জঈসে মহম্মদের (জেইএম) মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি হিন্দু প্রধান জম্মু এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে জঙ্গি কার্যকলাপে তাঁদের যুক্ত করতে চাইছে৷ এ জন্য টাকা-পয়সা দিয়েও সাহায্য করছে তারা৷ জম্মুর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলি এখন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির চারণভূমি৷ ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্সিগুলির এমনটাই সন্দেহ৷ তাছাড়া ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী যখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, তখন রোহিঙ্গা-জঙ্গি সংযোগ কাশ্মীর সমস্যাকে আরও ঘোরালো করে তুলছে, ভবিষ্যতেও তুলবে৷
কিন্তু কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি জম্মুর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে টানছে – এ কথা মানতে আদৌ রাজি নন ইন্ডিয়ান ডিফেন্স স্টাডি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সংস্থার সিনিয়ার ফেলো কিশলয় ভট্টাচার্য৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, এই সন্দেহের বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই৷ এটা নিছকই সন্দেহ৷
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
8 ছবি1 | 8
জম্মু এলাকায় রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের বসবাস নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে রাজ্যে বছরখানেক ধরেই৷ দাবি ওঠেছে রোহিঙ্গা খেদাও৷ এখন সেটা বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে৷ বলা হচ্ছে, মাস খানেকের মধ্যে যদি এদের উৎখাত করা না হয়, তাহলে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে হত্যা করা হবে৷ কারণ রোহিঙ্গা ও জঙ্গিদের যোগসাজস এক টাইম বোমা৷ যেন কোনো মূহূর্তে বিরাট বিপর্যয় ঘটাতে পারে৷ জনমত গড়ে তুলতে কাগজে পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন দিয়েছে জম্মুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ৷ রোহিঙ্গা বিতাড়নের জন্য আলাদাভাবে আন্দোলনে নেমেছে জম্মুর প্যান্থার্স পার্টি এবং হিন্দুত্ববাদী বজরং দল৷ তাদের নিশানায় অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরাও আছে৷
এই পরিস্থিতিতে ঐ পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে এলাকার শান্তি ও সুস্থিতি রক্ষা করতে জম্মুকে রোহিঙ্গা মুক্ত করতে হবে৷ বিষয়টি আরো অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে জম্মুর সুঞ্জওয়ান এলাকায় সেনা ও জঙ্গি সংঘর্ষে নিহত হয় জঙ্গি নেতা মুফতি ওয়াকাস৷ জম্মুর সুঞ্জওয়ানে সেনা ঘাঁটিতে আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় পাঁচজন সেনা এবং সেনাবাহিনীর একজনের বাবার মৃত্যু হয়৷ সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর ফ্যামিলি কোয়ার্টারেও হামলা চালায়৷ সেনা ছাউনির ধারে কাছেই বসবাস করছে বহু সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনেরও সন্দেহ, এই আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার পেছনে আশেপাশের লোকজনদের সমর্থন আছে৷ তার আগের দিন শোপিয়ানে সেনার গুলিতে নিহত হয় তিনজন সাধারণ কাশ্মীরি৷ সব মিলিয়ে ফের অশান্ত হয়ে ওঠে সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকা৷
কিশলয় ভট্টাচার্য
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অনুপ্রবেশ করে সেখানকার জঙ্গিদের খপ্পরে পড়ার কথাও শোনা যাচ্ছে৷ সেবিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিশেষজ্ঞ কিশলয় ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, রোহিঙ্গারা এসেছেন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে৷ রাখাইন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সীমান্তবর্তী অঞ্চল নয়৷ ওদের অনুপ্রবেশের ন্যাচারাল রুটের মধ্যে পড়ে না৷ তবে এক সময়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অনেক বার্মিজ শরণার্থী ছিল, যখন ১৯৮৮ সালে অং সান সু চিকে গৃহবন্দি কোরে রাখা হয়েছিল, তখন ভারত-বর্মার (এখনকার মিয়ানমার) সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলি থেকে অনেক বার্মিজ ভারতে পালিয়ে আসে৷ রোহিঙ্গারা আসলে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশ হয়ে৷ কারণ রাখাইন প্রদেশটা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে অনেক দূরে৷ প্রথমে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে গেছে এবং সেখান থেকে ভারতে৷ তবে ভারতে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশ জম্মুতে বসবাস করছে৷ তবে আমার জানা মতে, এদের সঙ্গে কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যোগসাজস আছে, এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ সরকারের কাছে নেই৷ সরকার বলবো না, বলবো কিছু এজেন্সির সন্দেহ৷ আর রোহিঙ্গারা মুসলিম বলেই যে তাঁরা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করছেন, এটারও কোনো যুক্তি নেই৷ ভারতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ মুসলিম৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যা ভারতে৷ কাজেই মুসলিম বলেই কাশ্মীরের জঙ্গি সংগঠনগুলি রোহিঙ্গাদের হাত ধরবে এটাও নেহাত জল্পনা৷ তাছাড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাষাগত ও অন্যান্য অনেক বিষয়ে কাশ্মীরিদের যথেষ্ট পার্থক্য আছে৷
জম্মু-কাশ্মীর শিল্প ও বণিক সংঘ বলছে, তাঁরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী হলেও রোহিঙ্গাদের পাকাপাকিভাবে এই রাজ্যে থাকতে দেওয়ার বিরোধী৷ জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদার প্রেক্ষিতে বহিরাগতদের রাজ্যে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেই৷ তাই পুরো ব্যাপারটা এখন নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টে রায়ের ওপর৷
রোহিঙ্গাদের ইতিহাস
একটা সময় ছিল যখন কয়েকজন রোহিঙ্গা মিয়ানমার সংসদে সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ আর এখন রোহিঙ্গাদের ভোট দেয়ারই অধিকার নেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
স্বাধীনতার আগে
বর্তমানে মিয়ানমার নামে পরিচিত দেশে ১২ শতক থেকে মুসলমানরা বাস করছে বলে দাবি অনেক ইতিহাসবিদ ও রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন বলছে, মিয়ানমার যখন ব্রিটিশ শাসনের অধীন (১৮২৪-১৯৪৮) ছিল তখন বর্তমানের ভারত ও বাংলাদেশ থেকে অনেকে শ্রমিক হিসেবে সেখানে গিয়েছিল৷ তবে তারা যেহেতু ব্রিটিশ আমলে এসেছে তাই স্বাধীনতার পর মিয়ানমার তাদের অবৈধ হিসেবে গণ্য করে৷ প্রতিবেদন পড়তে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
রোহিঙ্গা সাংসদ
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সংসদকে জানান, বার্মায় ১৯৫১ সালের নির্বাচনে পাঁচজন ও ১৯৫৬ সালে ছ’জন রোহিঙ্গা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ সব মিলিয়ে মিয়ানমার সংসদে মোট ১৭ জন রোহিঙ্গা সাংসদ ছিলেন বলে জানান তিনি৷ এর মধ্যে দুজন ছিলেন নারী৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Gacad
অভ্যুত্থান
১৯৬২ সালে বার্মায় সামরিক অভ্যুত্থান হয়৷ এরপর সব নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধন কার্ড করতে বলা হলেও রোহিঙ্গাদের দেয়া হয়েছিল বিদেশি পরিচয়পত্র৷ ফলে রোহিঙ্গাদের জন্য চাকরি ও পড়াশোনার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়৷ ছবিটি ১৯৬২ সালের ৪ মার্চ তৎকালীন বার্মার রাজধানী রেঙ্গুন থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AFP
প্রথমবার বিতাড়ন
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে তাড়াতে ১৯৭৭ সালে নির্যাতন শুরু করা হয়৷ ফলে ১৯৭৮ সালের মে মাসের মধ্যে প্রায় দু’লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল৷ এরপর জুলাইতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ জাতিসংঘও মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল৷ ফলে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল মিয়ানমার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/K. Huda
‘গোপন’ চুক্তি
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া ঐ চুক্তির উপর ‘সিক্রেট’ অর্থাৎ ‘গোপন’ শব্দটি লেখা ছিল৷ ২০১৪ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়টি চুক্তিটি প্রকাশ করে৷ এতে দেখা যায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে যাঁদের পরিবারের একসময় জাতীয় নিবন্ধন কার্ড ছিল তাঁদের মিয়ানমার সরকার ‘বার্মার বৈধ বাসিন্দা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ চুক্তিটি পড়তে উপরে (+) চিহ্ন ক্লিক করুন৷
ছবি: http://dataspace.princeton.edu
রাষ্ট্রহীন
১৯৮২ সালে পাস হওয়া নতুন নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের বস্তুত রাষ্ট্রহীন করে দেয়া হয়৷ ঐ আইনে মিয়ানমারের ১৩৫টি জাতিগত গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয়া হয়, যার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম নেই৷ এই আইনের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য পড়াশোনা, চাকরি, ভ্রমণ, ধর্মীয় রীতিনীতি পালন, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া ইত্যাদি সীমিত হয়ে যায়৷ এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভোটের অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
দ্বিতীয় পর্যায়ের বিতাড়ন
১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে আবার রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার৷ ফলে প্রায় আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল৷ এরপর তাদের ফিরিয়ে নিতে দুই দেশ একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছিল৷ বিবৃতিতে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ‘মিয়ানমারের বাসিন্দা’ এবং ‘মিয়ানমার সমাজের সদস্য’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল৷
সবশেষ ঘটনা
গত আগস্টের এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে অভিযান শুরু করে৷ ইতিমধ্যে এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ৷ নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ছয় লক্ষ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে৷ তবে তাদের ফিরিয়ে নিতে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷