অল্পবয়সিরা শহর ছাড়ছে, কাজকর্ম পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠছে, ক্ষয়ে পড়ছে শহরের কেন্দ্রস্থল৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির শহরগুলি থেকে এ ধরনের চিত্রই উঠে আসে এখনও৷ তবে এর বিরুদ্ধে যে কিছু করাও যায়, সেটাই এবার দেখিয়েছে হালের গ্লাউখা শহর৷
বিজ্ঞাপন
এতদিন পর্যন্ত গ্লাউখা এক সমস্যাকীর্ণ জায়গা বলে পরিচিত ছিল৷ জার্মানির স্যাকসনি আনহাল্ট রাজ্যের হালে শহরের অংশ এটি৷ বেকারত্ব ও ক্ষয়ে পড়া বাড়িঘরের ভারে জর্জরিত এক অঞ্চল৷ অন্তত কিছুদিন আগে পর্যন্ত৷ গত কয়েক বছরে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এমনটি সম্ভব হয়েছে ‘সামাজিক শহর' প্রকল্প ও অসংখ্য ব্যক্তিগত উদ্যোগের মাধ্যমে৷
অবস্থা ছিল শোচনীয়
হালে শহরের ঊনবিংশ শতাব্দীর পুরানো বাড়িগুলির অবস্থা ছিল শোচনীয়৷ যুদ্ধের ধকল সামলে উঠলেও কমিউনিস্ট আমলে ধসে পড়ে সেগুলি৷ পুনরেকত্রীকরণের পরপরই নতুন মালিকদের পক্ষে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে পুনর্গঠন করা সম্ভব ছিল না৷ আর তাই হালে সেই সময় ১০০,০০০ বাসিন্দা হারায়৷
এখন অবশ্য গ্লাউখাতে ৪০০০ মানুষ বসবাস করেন৷ ৬০ শতাংশ বাড়ি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন৷ অনেক বছর ধরে এখানে বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও অভিবাসীরাই বসবাস করতেন৷ অনেক বাড়ি খালি পড়ে ছিল৷ উদ্যোগী নাগরিকরা এই পরিস্থিতি বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন৷ ২৭টি বাড়ি সরকারি সহায়তায় পুনর্গঠন করা হয়৷ অঞ্চলটি আবার আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে৷ ইতোমধ্যে আরো ১৭টি বাড়ি সরকারি সাহায্য ছাড়াই মেরামত করা হয়েছে৷ এখন অল্পবয়সিরাও বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে আবার শহরটিতে থিতু হচ্ছেন৷
‘সামাজিক শহর' প্রকল্প
জার্মান সরকার গ্লাউখার মতো অন্যান্য শহরেও সহায়তা করছে৷ ‘সামাজিক শহর' কর্মসূচির জন্য সরকারি অনুদান ৪০ মিলিয়ন থেকে ১৫০ মিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত করা হয়েছে৷ সারা জার্মানিতে এই ধরনের ৫৮০ প্রকল্প রয়েছে৷ জার্মান নির্মাণ মন্ত্রণালয়ের উলরিশ হাটৎসফেল্ড এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘প্রথমে আমরা আশেপাশের পরিবেশের উন্নয়ন করি, মালিকদের বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করি৷ এরপর আমরা আশা করি যে, প্রকল্পটি তার নিজস্ব গতিতে চলবে৷ গ্লাউখার-এর ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়েছে৷''
বিশ্ব ভ্রমণ: জার্মানির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের শিল্প
বার্লিন দেয়াল শিল্প ইতিহাসকে বিভক্ত করেছে৷ তাই সমান্তরালভাবে ৬০ বছরের জার্মান শিল্পের ইতিহাস ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ নামে এই প্রদর্শনীতে ফুটে উঠেছে৷ এর আয়োজক ইনস্টিটিউট ফর ফরেন কালচারাল রিলেশন্স৷
ছবি: Julian Röder
পুনরেকত্রীকরণের শিল্প
এই দেয়াল শিল্প ইতিহাসকে বিভক্ত করেছে৷ তাই সমান্তরালভাবে ৬০ বছরের জার্মান শিল্পের ইতিহাস এখানে উঠেছে ফুটে৷ ইনস্টিটিউট ফর ফরেন কালচারাল রিলেশন্স ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ নামে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে৷ এখানে তৎকালীন পূর্ব জার্মানির আলোকচিত্রী সিবিলে ব্যার্গেমান সোভিয়েত ব্লক ভাঙার ক্রমিক চিত্র তুলে ধরেছেন৷
ছবি: Nachlass Sibylle Bergemann/Ostkreuz
গ্রাউন্ড জিরো
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি৷ নাৎসিবাহিনীর অত্যাচারের চিত্রের পর আর কিছু কি দেয়ার থাকতে পারে? এ যেন ‘গ্রাউন্ড জিরো’ থেকে কনটেম্পোরারি আর্ট বা সমকালীন শিল্পের ইতিহাস শুরু৷
ছবি: Bernd Borchardt/VG Bild-Kunst Bonn 2013
অসঙ্গতিপূর্ণ শিল্পের গোপন রহস্য
গ্যারহার্ড আল্টেনবুর্গ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের ভিন্নধর্মী শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম৷ তাঁর কাজে কখনোই সামাজিক বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়নি৷ অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আল্টেনবুর্গ সৃষ্টি করেছিলেন গোপন কিছু করার৷ পুনরেকত্রীভূত জার্মানিতে এখন তাঁর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত৷ এমনকি বুন্ডেসটাগ বা জার্মান সংসদেও তাঁর চিত্রকর্ম ঝোলানো আছে৷
ছবি: Uwe Walter/VG Bild-Kunst, Bonn 2013
পশ্চিমে বিমূর্ত ছবির প্রতি সমর্থন
পশ্চিম জার্মান চিত্রশিল্পী ব্যার্নার্ড শুলৎসের ছবিতে কাব্য যেমন আছে, তেমনি আছে একটা বিমূর্ত ধারণা৷ আইএফএ জানিয়েছে, আল্টেনবুর্গের মধ্যেও একই ধরণের শৈল্পিক চিন্তাভাবনা কাজ করেছে৷ ১৯৫৯ সালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কনটেম্পোরারি প্রদর্শনীতে তাঁদের দু’জনের চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়৷
ছবি: Uwe Walter/VG Bild-Kunst Bonn, 2013
পূর্ব জার্মানির ফটোগ্রাফিতে স্বাধীনতা
গত ৬০ বছরের ফটোগ্রাফিতে পুরো জার্মানির যে বিষয়টি আবিষ্কার হয়েছে, তা হোল স্বাধীন আর্ট ফর্ম৷ তৎকালীন পূর্ব বার্লিনের ফটোগ্রাফার আর্নো ফিশার ১৯৫৭ সালে এই রাস্তার ছবিটি তুলেছিলেন৷ ফিশারের ছবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, বরং মানুষের অস্তিত্ব বোঝানোর আগ্রহই তাঁর শিল্পকর্মে বেশি লক্ষ্যণীয়৷
ছবি: Bernd Borchardt/Erbengemeinschaft Arno Fischer
উত্তেজনামুলক নয়, পার্থিব
ফটোগ্রাফার সারগেসহাইমার অনেকটা আর্নো ফিশারের মতো, যা দেখেন তারই ছবি তুলতে ভালোবাসেন৷ সারগেসহাইমারের আসল নাম কার্ল-হাইনৎস হার্গেসহাইমার৷ তিনি যতটা না উত্তেজনামূলক বিষয়বস্তুর ছবি তুলতে ভালোবাসতেন, তার চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন পার্থিব কোনো কিছুর ছবি তুলতে৷
ছবি: Chargesheimer
পূর্বের জ্যামিতিক শিল্প
বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর আইএফএ জিডিআর শিল্পীদের শিল্পকর্মকে সমর্থন দেয়৷ হ্যার্মান গ্ল্যোকনারও তাঁদের মধ্যে একজন৷ এখানে দেখা যাচ্ছে দেয়ালের যে পাশে যে শিল্পীদের বসবাস, তাঁদের কাজের মধ্যে সম্পর্ক৷
ছবি: VG Bild-Kunst Bonn, 2013
পশ্চিমের জ্যামিতিক শিল্প
দ্বিমাত্রিক রং, ছন্দময় ভঙ্গি: সাবেক পশ্চিম জার্মানির অংশ মিউনিখ শহরের গ্রাফিক শিল্পী গ্যুন্টার ফ্রুট্রুংকের কাজের ধরণটা একেবারেই অন্যরকম৷ তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কাজগুলোর একটি হলো জার্মানির বিখ্যাত স্বল্প মূল্যের বিপণি আল্ডি-র প্লাস্টিক ব্যাগ৷
ছবি: Bernd Borchardt/VG Bild-Kunst Bonn, 2013
গতানুগতিক শিল্পের বিরুদ্ধে
ইওসেফ বয়েসের এই চিত্রকর্মটির নাম ‘আই ডু নট নো আ উইকএন্ড’৷ ১৯৬০ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে তিনি দর্শকদের তাঁর ঘণ্টাব্যাপী ‘পারফর্মেন্স’ দিয়ে প্ররোচিত করেছিলেন৷ তাঁর মতো করে পূর্ব-পশ্চিমের বিভেদ নিয়ে এমন কাজ করার মতো সাহস কোনো পূর্ব জার্মান শিল্পী দেখাননি৷
ছবি: Uwe Walter/VG Bild-Kunst Bonn, 2013
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী
অনেক বছর আগে যখন নারীর সম অধিকারের বিষয়টি এত ব্যাপক ছিল না, তখন নারী শিল্পীদের সুযোগ দিয়েছিল আইএফএ৷ ৭০-এর দশকে নারী বিপ্লবীদের পাশাপাশি ভূমিকা রেখেছিলেন নারী শিল্পীরাও৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম কাথারিনা ফ্রিচ৷
ছবি: Copyright: VG Bild-Kunst Bonn, 2013
ড্রেসডেনে ড্যুসেলডর্ফ স্কুল অফ ফটোগ্রাফি
পূর্ব বা পশ্চিম? স্টেশন সিরিজের কয়েকটি ছবির একটি এই ছবিটি৷ ছবিটি ড্যুসেলডর্ফ স্কুল অফ ফটোগ্রাফির কথা মনে করিয়ে দেয়, যেটি বার্ন এবং হিয়া বেশারের তৈরি৷ তাঁরা দু’জন শিল্পকারখানার চুল্লির উপর ফটোগ্রাফির জন্য সুপরিচিত৷
ছবি: VG Bild-Kunst Bonn, 2013
ফটো সাংবাদিকতার চেয়েও বেশি কিছু
প্রথম দেখায় এটি শুধু ২০০১ সালে ইটালিতে অনুষ্ঠিত জি-এইট সম্মেলনের বিক্ষোভের ছবি ছাড়া কিছুই নয়৷ কিন্তু ভালোভাবে দেখলে এটায় একটা নতুন ধরণ চোখে পড়বে, জানান আইএফএ-র কিউরেটর ভিনজেন৷ ফটো সাংবাদিক জুলিয়ান ব়্যোডার এই কিউরেটরের নতুন আবিষ্কার৷
ছবি: Julian Röder
12 ছবি1 | 12
কোনো বাড়ির মালিক যদি মেরামতে টাকা ঢালতে রাজি না হন, তাহলে তাঁকে বাড়িটি বিক্রি করার পরামর্শ দেওয়া হয়৷ শিল্পীদেরও উদ্বুদ্ধ করা হয় শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে অংশ নিতে৷ এর ফলাফলও দেখা গিয়েছে৷
শিল্পীরাও এগিয়ে এসেছেন
আলোকচিত্রশিল্পীরা গ্লাউখার বাসিন্দাদের এলাকার পটভূমিতে ছবি তুলে বড় করে রাস্তার ধারে সাজিয়ে রেখেছেন৷ বাড়ির মালিকরা মেরামতে বিনিয়োগ করছেন৷ এইভাবে গ্লাউখা ইতিবাচক আলোকে আসতে পেরেছে৷
তবে শহরের ভাঙাচোরা ফুটপাথ ও রাস্তাঘাটের দিকেও নজর দেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে৷ সবুজ দেখা যায় খুব কমই৷ এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত গেরনোট লিন্ডেমান বলেন, ‘‘আমরা শুরু করার আগে খালি বাড়িঘরের পরিমাণ ছিল ৩০ শতাংশ, এখন মাত্র ৮ শতাংশ৷ এছাড়া এখন আমাদের আরো বেশি বাচ্চাদের ডেকেয়ার সেন্টার ও গাছগাছালি প্রয়োজন৷''
শুধু একটাই চিন্তা রয়ে গিয়েছে: পুরানো বাড়িঘরগুলি নতুন চাকচিক্য পেলে বহুদিনের বাসিন্দাদের কী হটিয়ে দেওয়া হবে? ‘‘এখন পর্যন্ত নয়'', বলেন উদ্যোক্তারা৷ বাড়িভাড়া যাতে সাধারণের আয়ত্তের মধ্যে থাকে, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে৷