বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে করোনা সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক প্যাকেজ অনুমোদনের চেষ্টা চলছে৷ এখনো উত্তর ও দক্ষিণের দেশগুলির মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকটের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঐক্যের অভাব ঘরে-বাইরে এই রাষ্ট্রজোটের ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতি করছে৷ বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকট কাটানোর প্রশ্নে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইইউ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে আবার ঐকমত্য অর্জনের চেষ্টা চালানো হবে৷ সদস্য দেশগুলি মতপার্থক্য কাটিয়ে সংকটের মোকাবিলা করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ একমাত্র বাজেট ঘাটতি ও ঋণভার সংক্রান্ত নিয়ম সাময়িকভাবে শিথিল করার বিষয়ে ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে৷
সবার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দীর্ঘমেয়াদী বাজেট স্থির করতে হবে৷ ব্রেক্সিটের ফলে অবশিষ্ট ২৭টি সদস্য দেশগুলিকে সেই তহবিলের জন্য অর্থ ভাগ করে নিতে হবে৷ সব দেশের সম্মতি ছাড়া সেই বাজেট অনুমোদন করা সম্ভব নয়৷ ২০২১ থেকে ২০২৭ সালের এই বাজেটের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব এক পুনরুদ্ধার তহবিল যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন ইইউ দেশগুলির সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেল৷
করোনা সংকট সামলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে ফেরার লক্ষ্যেও কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছে ইইউ৷ ইইউ কমিশনের আশঙ্কা, বর্তমান সংকটের ফলে অর্থনীতির প্রায় দশ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে৷ সেই ধাক্কা সামলাতে দেড় লাখ কোটি ইউরো অঙ্কের এক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি স্থির করার চেষ্টা চলছে৷
সদস্য দেশগুলির সহায়তার প্রশ্নে ইউরোপের উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করার চেষ্টা চলছে৷ বিশেষ করে দক্ষিণের দেশগুলির দীর্ঘদিনের বিশাল বাজেট ঘাটতি ও ঋণভারের দায় ভাগ করে নেবার প্রশ্নে জার্মানিসহ উত্তরের অনেক দেশের অবস্থান অনড় রয়েছে৷ তাই ‘করোনা বন্ড'-এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সেই দায় ভাগ করে নেবার প্রশ্নেও বিরোধিতা করে চলেছে এই দেশগুলি৷ সংকটের সুযোগ নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের আশঙ্কাও তারা দূর করতে চায়৷ জরুরি অবস্থায় নেওয়া যে কোনো পদক্ষেপের নির্দিষ্ট সময়সীমা স্থির করার উপরও জোর দিচ্ছে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনের মতো দেশ৷ তাছাড়া তাদের মতে, বাড়তি আর্থিক সহায়তা ঋণ হিসেবেই চিহ্নিত করতে হবে৷ অর্থাৎ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই ঋণ ফেরত দেবার শর্ত মেনে নিতে হবে৷
এই ব্যবধান কাটাতে ইইউ কমিশন দুই শিবিরের মধ্যে আপোশের চেষ্টা করছে৷ যৌথ তহবিল গঠন করে এবং সদস্য দেশগুলির ২০২১-২০২২ সালের বাজেটের জন্য গ্যারেন্টি সাময়িকভাবে বাড়িয়ে অর্থের ‘অপব্যবহার’ সংক্রান্ত আশঙ্কা দূর করতে চায় কমিশন৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি তরান্বিত করতে এমন সব উদ্যোগের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ সেক্ষেত্রে জাতীয় সরকারের বদলে ইইউ কমিশনের মাধ্যমে অর্থ ব্যয় করা হবে৷
বৃহস্পতিবারের শীর্ষ সম্মেলনে কিছু পদক্ষেপ অনুমোদন করা সম্ভব হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এর আওতায় বেকারত্ব প্রতিরোধ করতে বেতন ও মজুরির ক্ষেত্রে সরকারি ভরতুকি, ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে বিপর্যস্ত কোম্পানিগুলির জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও ইউরো এলাকার বেলআউট তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ দেওয়া হবে৷ জুন মাসেই এই সব পদক্ষেপ কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)
জার্মানিতে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জীবন
করোনা-সংকট সত্ত্বেও জার্মানি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে ফেরার উদ্যোগ শুরু করছে৷ প্রথম পর্যায়ে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে৷ তবে প্রতিটি রাজ্য এ ক্ষেত্রে নিজস্ব পথ বেছে নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
নতুন করে দৈনন্দিন জীবনের স্বাদ
প্রায় এক মাস কড়কড়ির পর জার্মানির মানুষ আবার কিছু স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছেন৷ কিন্তু দেশের সব প্রান্তে বিধিনিয়ম এক নয়৷ ১৬টি রাজ্য এ বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ কিছু রাজ্যে ২০শে এপ্রিল থেকে ৮০০ বর্গ মিটারের কম আয়তনের দোকানপাট খোলা হয়েছে৷ তবে এমন অভিজ্ঞতার জন্য বার্লিনের মতো কিছু রাজ্যের মানুষকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: Reuters/A. Gebert
যত মত, তত পথ
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া অবিলম্বে দোকানবাজার খোলার পথ বেছে নিয়েছে৷ বন শহরের অনেক মানুষ চুটিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন৷ আরো এক ধাপ এগিয়ে এ রাজ্যে এমনকি হবু মায়েদের প্রয়োজনীয় পণ্যের বড় দোকান খোলার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
সাইকেল কেনার উৎসাহ
ডিন্সলাকেন শহরে সোমবার সাইকেলের দোকান খোলার পর নতুন সাইকেল কেনার আশায় অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন৷ জার্মানির সব রাজ্যেই সাইকেল, বই ও গাড়ির দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ অন্যান্য দোকানের মতো এ ক্ষেত্রে আয়তন সংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না৷
ছবি: Getty Images/L. Baron
ব্যবসা-বাণিজ্য আবার চালু
দোকানের মালিকরা আবার ক্রেতাদের স্বাগত জানাতে পেরে খুবই সন্তুষ্ট৷ বসন্ত উপলক্ষ্যে কিছু ছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন অনেকে৷ স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের লুডভিগসবুর্গ শহরে এক দোকানের সামনে লেখা আছে ‘‘আমরা ফিরে এসেছি৷ আপনাদের আবার দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFPT. Keinzle
আবার স্কুলে ফেরার আনন্দ
কিছু রাজ্যে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে আবার স্কুলে ফিরতে পারছে৷ বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গ ও স্যাক্সনি রাজ্য বেশি বয়সের শিক্ষার্থীরা ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি ও মূল পরীক্ষার জন্য সোমবার থেকে স্কুল ভবনে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে৷ জার্মানির বেশিরভাগ রাজ্যে ৪ঠা মে থেকে শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ পাবে৷ শুধু বাভেরিয়া রাজ্যে ১১ই মে পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Michael
চিড়িয়াখানা ও মিউজিয়ামও দরজা খুলছে
কড়াকড়ির কারণে জার্মানির চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ কয়েকটি রাজ্যে সেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে৷ মেকলেনবুর্গ-ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া, ব্রান্ডেনবুর্গ ও রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট রাজ্য চিড়িয়াখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই তিনটি এবং আরো কিছু রাজ্যে মিউজিয়ামও খোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/L. Kuegeler
মাস্ক পরার চল বাড়ছে
কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় প্রকাশ্যে মাস্ক পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ জার্মানির কিছু অঞ্চলে অবশ্য আরো বেশি মাস্ক-পরা মানুষ চোখে পড়ছে৷ দেশজুড়ে বাধ্যতামূলক না হলেও কয়েকটি রাজ্য ও পৌর কর্তৃপক্ষ এই নিয়ম চালু করছে৷ যেমন স্যাক্সনি রাজ্যে এপ্রিল মাস থেকে ট্রাম-বাস বা ট্রেনে এবং দোকানবাজারে মাস্ক পরা অথবা অন্য কোনো উপায়ে মুখ ও নাক ঢাকা বাধ্যতামূলক৷ বাভেরিয়াসহ আরো কিছু রাজ্যেও এমন নিয়ম চালু হয়েছে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
ব্যবধান বজায় রাখুন!
গোটা দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না৷ বাসার মানুষ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে৷ যে সব দোকান খোলা হচ্ছে, সেখানেও নানাভাবে ক্রেতাদের মধ্যে এই দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা রয়েছে৷