রাস্তার উপর যুবকের বুকের উপর পা তুলে দাঁড়িয়ে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের কাজে স্তম্ভিত মহানগরী। ক্ষমা চাইলেন কমিশনার।
বিজ্ঞাপন
কলকাতার ব্যস্ত এলাকা রবীন্দ্রসদন এক্সাইড মোড়। রোববার সন্ধ্যায় সেখানেই ঘটেছে এই ভয়াবহ ঘটনা। এক যুবককে রাস্তায় ফেলে প্রথমে মারা হয়। তারপর তার বুকের উপর পা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে এক পুলিশকর্মী। সবুজ রঙের জামা পরিহিত ওই পুলিশকর্মী পুলিশের ভাষায় সিভিক ভল্যান্টিয়ার বা গ্রিন পুলিশ। বেশ কিছুক্ষণ ওই অবস্থায় যুবককে রাস্তায় ফেলে রাখে সে। পাশে অন্য পুলিশকর্মীরা থাকলেও ওই সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে বাধা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। নেটনাগরিকরা ওই দৃশ্যের সঙ্গে অ্যামেরিকায় জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনা তুলনা টেনেছেন। জর্জ ফ্লয়েড অবশ্য মারা গিয়েছিলেন। কলকাতার যুবক বেঁচে আছেন।
রোববার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় লালবাজার। পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র রাতে বলেন, ‘‘আমি ঘটনাটি দেখে বিব্রত। দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই সময়ে ওখানে ডিউটিতে থাকা সমস্ত অফিসারদের সোমবার সকালে আমার অফিসে ডেকে পাঠিয়েছি। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কী করে এই অমানবিক ঘটনা ঘটল, তা জানতে চাওয়া হবে।''
জর্জ ফ্লয়েড হত্যা: শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা দোষী
২০২০ সালে মিনেয়াপোলিসে আফ্রো-অ্যামেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শওভিন৷ কয়েক দশক জেল খাটতে হতে পারে তাকে৷
ছবি: via REUTERS
দোষী সাব্যস্ত
মিনেয়াপোলিসের রাস্তায় ২০২০ সালের ২৫ শে মে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শওভিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে মার্কিন আদালত৷
ছবি: via REUTERS
হাঁটু গেড়ে বসা
এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল জর্জ ফ্লয়েডকে গ্রেফতারের সময় তার গলার উপর নয় মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন ডেরেক শওভিন৷
ছবি: Imago Images/AFLO/K. Hiromi
তিনটি অভিযোগ
শওভিনকে তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়: সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার, থার্ড ডিগ্রি মার্ডার এবং নরহত্যা৷ রায়ে পৌঁছাতে ১২ সদস্যের বিচারকের প্যানেল পুরো একদিন সময় নেন৷ এর আগে তিন সপ্তাহ ধরে চলে বিচারকাজ৷
ছবি: REUTERS
৪০ বছরের কারাদণ্ড
ডেরেকের শাস্তি এখনো ঘোষণা হয়নি৷ তবে তার কয়েক দশকের জেল হতে পারে৷ শাস্তি ঘোষণার আগ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে থাকতে হবে তাকে৷ ফ্লয়েডকে হত্যার সময় উপস্থিত বাকি তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিচার শুরু হবে আগস্টে৷
ছবি: Jim Mone/AP/picture alliance
রায়ে উচ্ছ্বাস
রায় ঘোষণার পর আদালতের বাইরে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়৷ ফ্লয়েডের পরিবারের আইনজীবী এই রায়কে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মত একটি ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন৷
ছবি: Adrees Latif/REUTERS
অবশেষে ন্যায়বিচার
রায় ঘোষণার পরই ফ্লয়েড পরিবারকে টেলিফোন করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস৷ বাইডেন বলেন, ‘‘জানি, এই রায়ে আপনাদের পরিবারের তেমন কোন লাভ হয়ত হলো না, কিন্তু কিছুটা ন্যায়বিচার অন্তত হলো৷’’ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘‘পদ্ধতিগত বর্ণবাদ পুরো জাতির আত্মার উপর একটি কলঙ্ক৷’’
ছবি: Andrew Harnik/Getty Images
জর্জ ফ্লয়েড নামে বিল
কমলা হ্যারিস এরইমধ্যে আইন প্রণেতাদের জর্জ ফ্লয়েড নামে একটি বিল পাসের নির্দেশ দিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ব্যবস্থায় সংস্কার আনবে৷
ছবি: Senate Television/AP Photo/picture alliance
বারাক ওবামার বিবৃতি
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন৷ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্ণবাদ রুখতে এবং আনতে আরো অনেক কাজ করতে হবে৷ এখানে অনেক মানুষ আছেন, যারা প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে প্রাণ হারানোর ভয়ে থাকেন৷
ছবি: Reuters/S. Sibeko
এমন রায় খুব কম
এর আগে খুব কম সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নরহত্যার অভিযোগ এসেছে এবং এদের মধ্যে অল্প কয়কেজনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Adrees Latif/REUTERS
ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং বর্ণবাদী বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল৷ বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিলো পুরো বিশ্বে৷
ছবি: Niall Carson/PA Wire/dpa/picture alliance
10 ছবি1 | 10
অভিযুক্ত গ্রিন পুলিশ তন্ময় বিশ্বাস অবশ্য কৃতকর্মের জন্য দুঃখিত নন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ওই যুবক এক নারীর ব্যাগ ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু জনতা তাকে ধরে ফেলে। শুরু হয় মারধর। ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনতার হাত থেকে ওই যুবককে তিনিই উদ্ধার করেন বলে দাবি তন্ময়। এরপর ওই যুবককে রাস্তাতেই বসতে বলা হয়। স্থানীয় পুলিশ অফিসররা তাকে ঘিরে ধরে। তন্ময়ের অভিযোগ, নেশাগ্রস্ত ওই যুবকের গায়ে খুব জোর। সে বার বার পালানোর চেষ্টা করছিল। সে জন্যই তার বুকে পা তুলে আটকে রাখার চেষ্টা হচ্ছিল।
স্থানীয় মানুষের অবশ্য অভিযোগ, তন্ময় রাস্তায় ফেলে মারছিলেন ওই যুবককে। পেটে বুকে পিঠে বুট দিয়ে লাথি মারার পরে তার বুকে পা তুলে দেওয়া হয়। ওই যুবক তখন বার বার ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করতে থাকে। কিন্তু তন্ময় তাকে আটকে রাখে।
স্থানীয় থানার এক পুলিশ অফিসারের বক্তব্য, ওই যুবকের পকেট থেকে একটি চোরাই মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। যে নারীর ব্যাগ সে চুরি করেছিল, সেটিও উদ্ধার করা গেছে। মোবাইল বা ব্যাগের মালিক কেউই থানায় অভিযোগ জানাননি। তবে থানা চাইলে ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।
নেটিজেনদের প্রশ্ন, ওই যুবককে ধরে কেন শেক্সপিয়র সরণি থানায় নিয়ে যাওয়া হলো না? কেন তার বিরুদ্ধে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? রাস্তায় কোনো ব্যক্তির বুকের উপর পা তুলে দেওয়ার অধিকার আদৌ কি পুলিশের আছে? পুলিশ যে এ কাজ করতে পারে না, তা পুলিশ কমিশনারের কথাতেই স্পষ্ট।