জর্ডানে ড্রোন হামলার জবাবে পাল্টা আক্রমণ শুরু যুক্তরাষ্ট্রের
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
শনিবার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মো শিয়া আল-সুদানির কার্যালয় জানিয়েছে, ইরাকে ইরানপন্থি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলার ফলে ষোল জন প্রাণ হারিয়েছেন। তার মধ্যে বেসামরিক নাগরিকেরাও রয়েছেন।
বাগদাদ সরকার একটি বিবৃতিতে, এটিকে ইরাকের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আগ্রাসন" বলে উল্লেখ করেছে এই হামলাকে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরাক ও সিরিয়ায় রাতারাতি মার্কিন বিমান হামলার নিন্দা করেছে। তাদের মতে, এটা দুই দেশের "সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার লঙ্ঘন করেছে।''
ইরান, সিরিয়া এবং ইরাক সকলেই মার্কিন হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে। জর্ডানে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার পরই পাল্টা হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহের হামলার জন্য ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ইসলামিক রেজিস্ট্যান্সকে দায়ী করেছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা সিরিয়া ও ইরাকে ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে কন্ট্রোল অপারেশন সেন্টার, গোয়েন্দা কেন্দ্র, মিলিশিয়া গোষ্ঠী এবং তাদের ইরানি পৃষ্ঠপোষকদের রকেট ও অস্ত্র সরবরাহ ঘাঁটি।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, "তারা মার্কিন বাহিনী ও সহকারী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে হামলায় সহায়তা করেছিল।"
মার্কিন হামলা একটি কৌশলগত ভুল: তেহরান
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এক বিবৃতিতে বলেন, "সিরিয়া ও ইরাকে গত রাতের হামলা দুঃসাহসিক পদক্ষেপ। এটা মার্কিন সরকারের কৌশলগত ভুল। এই অঞ্চলে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তোলা ছাড়া এতে আর কোনো ফল হবে না।"
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা মধ্যপ্রাচ্যে বিপজ্জনকভাবে সংঘাত বাড়িয়ে দিতে পারে। "
ইরাকের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া রসুল এক বিবৃতিতে বলেছেন, "এর ফলাফল ইরাক এবং আশেপাশের অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।"
ইরাক ও সিরিয়ায় একাধিক মৃত্যু
ইরাকি সরকারের মুখপাত্র বাসেম আল-আওয়াদির মতে, মার্কিন হামলায় বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। কমপক্ষে ২৩ জন আহত হয়েছেন।
সিরিয়ায় সংঘাত পর্যবেক্ষণকারী ব্রিটেন-ভিত্তিক গোষ্ঠী সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, সেখানে হামলায় কোনো বেসামরিক লোক নিহত হয়নি, তবে সবমিলিয়ে মোট ২৩ জন ইরানপন্থি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
অবজারভেটরির প্রধান রামি আবদেল রহমান বলেন, "মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে: দেইর এজোর এলাকায় ১০ জন ইরানপন্থি যোদ্ধা এবং মায়াদিন এলাকায় ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন"।
তিনি বলেন, যোদ্ধাদের মধ্যে নয়জন সিরিয়ান এবং ছয়জন ইরাকি। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আরো হামলা আসন্ন হতে পারে এই ভয়ে ইরানপন্থি অন্যান্য বাহিনী দেইর এজোরে অবস্থান সরিয়ে নিচ্ছে, বলে অবজারভেটরি জানিয়েছে।
মার্কিন প্রতিক্রিয়া ও বাইডেনের মত
সিরিয়ার সীমান্তের কাছে জর্ডানে একটি ছোট মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হন এবং একাধিক জন আহত হন। এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি ডোভার বায়ুসেনা ঘাঁটিতে তিন সেনার দেহাবশেষ ফেরতের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
জর্ডানে হামলার দায় অস্বীকার ইরানের
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, প্রায় ৩০ মিনিট টানা হামলা চলেছে। প্রতিরক্ষা বিভাগ এখনও এর প্রভাব মূল্যায়ন করছে।
বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে, এটি শুধু প্রত্যাঘাত নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে ইরান। শুক্রবার ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি বলেন, ‘‘যদি যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থে আঘাত করে, তাহলে তেহরান প্রতিশোধ নেবে। আমরা যুদ্ধ শুরু করব না, তবে যদি একটা দেশ, যদি কোনো নিষ্ঠুর শক্তি আমাদের ধমকাতে চায়, তাহলে ইরান কড়া জবাব দেবে।"
লন্ডনও জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের "আক্রমণের জবাব দেওয়ার অধিকার" সমর্থন করে।
ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, "যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিচ্ছেদ্য বন্ধু। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক, আর্থিক এবং সামরিক সহায়তাসহ সমগ্র অঞ্চলে ইরানের অস্থিতিশীল কার্যকলাপের নিন্দা করেছি।"
ইইউ সতর্ক করেছে, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার কারণে সারা বিশ্বে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। শীর্ষ ইউরোপীয় কূটনীতিক জোসেপ বোরেল এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ইইউ সবাইকে সংঘাত এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।"
আরকেসি/এআই (এপি,এফপি, রয়টার্স)