জর্ডান আক্রমণের জবাব দিতে প্রস্তুত অ্যামেরিকা: বাইডেন
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়ে দিয়েছেন, জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে আক্রমণের জবাব দিতে প্রস্তুত অ্যামেরিকা।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবারই পেন্টাগন এবং হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ''আমরা জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি। খুব শিগগির এই জবাব দেয়া হবে।'' তবে কীভাবে জবাব দেয়া হবে, তা স্পষ্ট করেননি বাইডেন।
এর আগে সোমবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, জবাব দেয়া হলেও মধ্যপ্রাচ্যে আরো একটি লম্বা লড়াইয়ে অংশ নিতে চাইছে না অ্যামেরিকা। অর্থাৎ, ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে না। এদিন সাংবাদিকেরা বাইডেনকে ইরান নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি কি এই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেন? বাইডেন জানিয়েছেন, ইরান সমস্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য।
বিভিন্ন স্তরে আক্রমণ
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, নানা স্তরে জবাব দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ, একবার আক্রমণ না চালিয়ে নানা দিক থেকে ইরান এবং তার মদতপুষ্ট গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
অ্যামেরিকার বড় শত্রু কারা?
ইরানের সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে অ্যামেরিকার৷ আর চীনের সঙ্গে চলছে বাণিজ্য যুদ্ধ৷ মার্কিনিদের বিবেচনায় তাঁদের শত্রুদের চিনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
উত্তর কোরিয়া
জরিপের মাধ্যমে অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে গ্যালাপ৷ প্রতিষ্ঠানের ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের মতো এবারও অ্যামেরিকার শত্রু তালিকার শীর্ষ দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নাম আছে৷ ২০১৬ সালে ১৬ ভাগ মানুষ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তিকে হুমকি হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছিলেন৷ ২০১৮ সালে এসে হুমকি বিশ্বাসকারীদের সংখ্যা ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাশিয়া
অ্যামেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার শত্রুতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের৷ এর মধ্যে উত্থান-পতনও দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে৷ ২০১৬ সালে ১৫ শতাংশ অ্যামেরিকান বলেছেন, রাশিয়া তাঁদের সবচেয়ে বড় শত্রু৷ ২০১৮ সালে গিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে৷
চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও৷ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে চীন৷ দুই দেশের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত উভয়ের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে৷ ২০১৬ সালে অ্যামেরিকার ১২ শতাংশ মানুষের বিবেচনায় চীন ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় শত্রু৷ তবে, ২০১৮ সালে দেশটিকে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ১১ শতাংশ অ্যামেরিকান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অ্যামেরিকানদের কাছে তাঁদের শত্রু তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান৷ পরের কয়েক বছর পরিস্থিতি ভালো হয় কিছুটা৷ তবে, ২০১৫ সালে ইরানকে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ৯ শতাংশ অ্যামেরিকান৷ ২০১৮ সালে এমন চিন্তার মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ শতাংশে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
সিরিয়া
গ্যালাপের পাশাপাশি অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে ক্যানাডাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন গ্লোবালাইজেশন বা সিআরজি৷ তাদের বিবেচনায় ইরান, রাশিয়া ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে সিরিয়ায় ক্ষমতাসীনদের সখ্যের কারণে সিরিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকার বিরোধ হয়েছে৷ আবার অ্যামেরিকা-ইসরায়েল মৈত্রীর ক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থানে আছে সিরিয়া৷ ভূ-রাজনৈতিক কারণে সিরিয়ার উপর আধিপত্য রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Elfiqi
ভেনেজুয়েলা
সিআরজি বলছে, ভেনেজুয়েলার তেলের মজুদ ও সামাজিক-রাজনৈতিক কারণে অ্যামেরিকার সঙ্গে তাঁদের বিরোধ দীর্ঘদিনের৷ যদিও বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভেনেজুয়েলা, তবুও সেই বিরোধ কমেনি মোটেও৷ দেশটির ক্ষমতাসীন মাদুরো সরকারকে হটাতে তৎপর অ্যামেরিকা৷ সম্প্রতি অ্যামেরিকার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Miraflores
6 ছবি1 | 6
বস্তুত, জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণের পর দেশের ভিতর চাপের মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। রিপাবলিকানরা সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটেরা আরো একটি যুদ্ধে যেতে বাধা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাইডেন। তারপরেই কৌশলী আক্রমণের কথা জানান। তবে বিশদে সেই কৌশলের কথা প্রকাশ করেননি তিনি।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য
এদিকে ইসরায়েলেরপ্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, সমস্ত পণবন্দিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল কোনোরকম সংঘর্ষ-বিরতিতে যাবে না। বস্তুত, গাজা স্ট্রিপে এখনো শতাধিক পণবন্দি আটক। গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর হামাস ওই ব্যক্তিদের পণবন্দি করে। এর আগে বেশ কিছু বন্দিকে মুক্তি দিলেও এখনো বহু মানুষ হামাসের হাতে আটক।
এদিকে ইসরায়েলে প্রায় প্রতিদিনই পণবন্দিদের মুক্তির দাবি মিছিল বার হচ্ছে। বন্দিদের পরিবারের সদস্যেরা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
হামাসের বক্তব্য
এদিকে প্যারিসে যে বৈঠক হচ্ছে, সেখানে ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে মিশর, কাতার এবং অ্যামেরিকার প্রতিনিধিরা। দ্রুত যুদ্ধবিরতি ঘোষণার চাপ তৈরি করছে এই দেশগুলি। সম্প্রতি একটি খসড়া প্রস্তাব তারা তৈরি করতে পেরেছে সর্বসম্মতিক্রমে। হামাসের কাছে এই সেই পত্র পাঠানো হয়েছে। হামাস সবুজ সংকেত দিলে চুক্তিটি বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব। চুক্তিতে বলা হয়েছে একশজন পণবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। হামাস একাজ করলে ইসরায়েল দুইমাসের জন্য সংঘর্ষ-বিরতির কথা ভাবতে পারে। হামাস জানিয়েছে, প্রস্তাবটি নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালাচ্ছে।