শরণার্থী সংকট নিয়ে হিমশিম খেতে থাকা জর্ডান ও লেবাননকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার শরণার্থী সংকটসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রীয় শীর্ষ নেতাদের সাথে দেখা করতে দু'দিনব্যাপী জর্ডান এবং লেবানন সফর শুরু করেন ম্যার্কেল৷
জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ এবং লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির সথে তাঁর এ সফরে সাক্ষাতের কথা রয়েছে৷ শিক্ষা, বিনিয়োগ ও গবেষণা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শরণার্থী সংকটই প্রাধান্য পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
প্রতি দু’সেকেন্ডে একজন ঘরছাড়া
আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৭ সালে প্রতি দু'সেকেন্ডে একজন বাস্তুচ্যূত হয়েছেন৷ মিয়ানমার, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিরিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে অনেক মানুষ বাসভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Omic
গৃহহীন যারা
সহিংসতা, যুদ্ধ ও সংঘাতের ফলে বিশ্বে এখন ৬৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন৷ মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইইএনএইচসিআর এ কথা জানিয়েছে৷ জাতিসংঘের হিসেব মতে, ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে ৬ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল৷ সেবছর মূলত মিয়ানমার থেকেই বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল৷ .
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
দু’ সেকেন্ডে একজন
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছরই ১ কোটি ৬২ লক্ষ মানুষ নতুন করে গৃহহীন হয়েছে৷ এদের মধ্যে যাঁরা প্রথমবার বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়েছেন, তাঁরাও যেমন আছেন, তেমনি আছেন যাঁরা আগে থেকেই উদ্বাস্তু, তাঁরাও৷ অর্থাৎ প্রতিদিন ৪৪,৪০০ মানুষ বিতাড়িত হচ্ছেন এবং প্রতি দু'সেকেন্ডে ১ জন করে গৃহহীন হচ্ছেন৷
যুদ্ধ, হিংসা এবং উৎপীড়নের জন্য ৬ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
দেশের মধ্যে
অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ বা হিংসার জন্য দেশের ভেতরেই অনেক মানুষ বাস্তুভিটা ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে বাধ্য হয়৷ তাঁদের বলা হয় আইডিপি (ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড পিপল)৷ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিশ্বে প্রায় ৪কোটি আইডিপি ছিল৷ এই সংখ্যাটা আগের বছরের তুলনায় কমেছে৷ কলম্বিয়া, সিরিয়ায় এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Omic
সিরিয়ার দুর্দশা
গত ৭ বছর ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ওপর দিয়ে নানা ঝড় বয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষ অবধি প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল৷ এছাডা়ও সিরিয়াতে প্রায় ৬২ লাখ মানুষ দেশের ভেতরেই উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Derks
আফগানিস্তান
সিরিয়ার পরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের স্থান৷ প্রচুর মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে পালাচ্ছেন৷ বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীনভাবে যুদ্ধ, সহিসংতা ও উৎখাতের কারণে প্রতিদিনই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ অন্যান্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বিভিন্ন সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এসব মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Paduano
দক্ষিণ সুদানের অবস্থা
দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে ২০১৩ সাল থেকে৷ গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে গত কয়েক বছরে দেশটির লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ জাতিসংঘের মতে, এই দেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে৷
ছবি: Reuters/H. Kalis
তুরস্ক
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরস্কে প্রচুর শরণার্থী রয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষের দিক পর্যন্ত তুরস্কে প্রায় ৩৫ লক্ষ শরণার্থী ছিল৷ তার মধ্যে অধিকাংশই সিরিয়ার মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamik
গরিব দেশেও
অ্যামেরিকা আর ইউরোপ যাঁরা পৌঁছচ্ছেন, তাঁরা ছাড়াও অনেক শরণার্থী কম আয় সম্পন্ন বা মধ্যম আয় সম্পন্ন দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন৷ জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশন (ইউএনএইচসিআর) বলছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ শরণার্থী উন্নয়নশীল দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন, যাঁরা খুবই দরিদ্র৷ এদের মধ্যে আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার, সোমালিয়া, সুদান এবং কঙ্গো, উগান্ডার মানুষই বেশি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.C. Magnenet
8 ছবি1 | 8
সিরিয়ার যুদ্ধ এবং অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির কারণে জর্ডান এবং লেবাননে লাখ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে৷ নিজ দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে দু'টি দেশই সর্বোচ্চসংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, লেবাননে প্রতি ছ'জনের মধ্যে একজন সিরিয়ার শরণার্থী এবং জর্ডানে প্রতি ১১ জনে একজন৷ এর অর্থ দাঁড়ায় লেবাননে এখন সিরিয়ার শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখের মধ্যে৷ আর গত বছরের হিসাব অনুযায়ী জর্ডানে শরণার্থীর সংখ্যা ৭ লাখ৷
জর্ডানে শরণার্থীরা বড় শিবিরে একসাথে বসবাস করলেও লেবাননের চিত্র ভিন্ন৷ লেবাননে শরণার্থী থাকছেন বিচ্ছিন্নভাবে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে৷ জার্মানির গ্রিন পার্টি সমর্থিত হাইনরিশ ব্যোল ফাউন্ডেশনের বৈরুত শাখা প্রধান বেনটে শেলার বলেন, ‘‘শরণার্থীরা লেবাননে অগোছালোভাবে বসবাস করছেন৷ বেশিরভাগ শরণার্থীই বহনযোগ্য তাঁবুর নীচে রাত পার করছেন অথবা কোনো পরিত্যক্ত ভবন বা যেখানে জায়গা পাচ্ছেন, সেখানেই থাকছেন৷ তাদের নিরাপত্তা খুব সামান্যই৷’’
শরণার্থীদের সমস্যাটি জর্ডানে কেন্দ্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলেও, লেবাননে এটি নিয়মতান্ত্রিক নয়৷ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল লেবানন-জর্ডানে সীমান্তের শরণার্থী শিবিরগুলোর অবস্থা ‘বীভৎস’ মন্তব্য করেছে৷
সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর লেবানন ও জর্ডানের শরণার্থীদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা করার ক্ষেত্রে জার্মানির অবস্থান অ্যামেরিকার পরেই৷ ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জর্ডানকে মোট ১০৮ কোটি ইউরো এবং লেবাননকে ১২০ কোটি ইউরো সহায়তা দিয়েছে জার্মানি৷
আর এ সহায়তার সবচেয়ে বড় অংশটি খরচ হয়েছে শরণার্থী শিশুদের শিক্ষাদানে৷