1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফার্নগাছের উপকারিতা

মারটিন রিবে/এসি১২ এপ্রিল ২০১৪

সালভিনিয়া নাটান্স আসলে একটি জলজ ফার্ন, অর্থাৎ ফার্নগাছ৷ পানিতে বাস বলেই হয়তো তার গা-পাতা সব কিছু মোড়া থাকে বাতাসের স্তরে৷ এভাবে কি বড় বড় কনটেনার জাহাজগুলোকেও পানি-প্রতিরোধী বাতাসের স্তরে মুড়ে দেয়া সম্ভব?

প্রতিবছর ছ'হাজার কোটি লিটার ভারী তেল বাঁচানো সম্ভব করতে পারে এ ধরণের জলজ ফার্নছবি: picture alliance/Mary Evans Picture Library

উদ্ভিদটির উপরিভাগ, অর্থাৎ পৃষ্ঠভাগ এক ধরনের লুপ করা রোঁয়া দিয়ে ঢাকা৷ সেটাই হল বন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের অনুসন্ধানের বিষয়৷ জলজ শ্যাওলা সালভিনিয়া-র ত্বকের সূক্ষ্ম রোঁয়া নাকি জাহাজের খোলের পানির সঙ্গে ঘর্ষণ কমাতে সাহায্য করবে৷ এর ফলে সারা বিশ্বে কোটি কোটি টন ভারী তেল বাঁচবে, এবং সেই পোড়া তেল থেকে সালফার ডাইঅক্সাইড ও কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমনও বাঁচানো সম্ভব হবে৷

এটাও এক ধরণের জলজ ফার্নছবি: picture alliance/Mary Evans Picture Library

সালভিনিয়া উদ্ভিদটির বিশেষ ক্ষমতা হলো এই যে, জলের নীচে তার ত্বক জুড়ে থাকে ছোট ছোট বাতাসের কণিকা বা বুদবুদ৷ পদ্মপাতার উপরিভাগের বিশেষ কাঠামো আবিষ্কার করেছিলেন যে বিজ্ঞানী, তিনি হলেন প্রফেসর ভিলহেল্ম বার্টলট৷ বার্টলটের বিবৃতিতে: ‘‘হঠাৎ একদিন আমাদের মাথায় এলো, যে পদ্মপাতার মতো সালভিনিয়ার নিজেকে অমলিন রাখার ক্ষমতা নয়, বরং তার বাতাসের আস্তরণটাই আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ – যদিও আমরা সেটাকে এ যাবৎ একটা পার্শ্বপ্রভাব বলেই গণ্য করে এসেছি৷ তখন আমরা বুঝতে পারলাম, জাহাজ নির্মাতারা ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন, যখন তারা আমাদের বলছেন, একটা গোটা জাহাজকে বাতাসের স্তরে মুড়ে দিতে পারলে খুবই ভালো হতো৷ তাহলে জাহাজটা জল কেটে না গিয়ে, বাতাসের উপর দিয়ে ভেসে যেত বলা চলে৷''

ছবি: picture alliance / Godong

বন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেস গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক প্রফেসর বার্টলট ও তাঁর সহযোগীরা জানতে চান, সালভিনিয়া কী করে বুদবুদগুলিকে ধরে রাখে৷ সালভিনিয়া নাটান্স নামধারী জলজ ফার্ন-এর রোঁয়াগুলি দেখা যায় ত্রিমাত্রিক অনুবীক্ষণ যন্ত্রে৷ নেস জীববৈচিত্র্য প্রতিষ্ঠানের পদার্থবিদ মাটিয়াস মাইল বলেন: ‘‘সালভিনিয়ার রোঁয়াগুলো ডিম ফেটানোর যন্ত্রের তারের মতো৷ উদ্ভিদের পাতার উপরিভাগের মতো এই রোঁয়াগুলোও পুরোপুরি মোমের মতো ক্রিস্টাল এবং বাতাসের বুদবুদে ঢাকা৷ শুধু ক্রিস্টালের মাথায় চারটি কালো কোষ আছে, যেখানে পানি আকৃষ্ট হয়ে এক ধরনের মেনিসকাস সৃষ্টি করে, যার ফলে বস্তুত বাতাসের আস্তরণটি আরো স্থিতিশীল হয়৷''

লুপ করা, পানি-প্রতিরোধী রোম ও পানির মধ্যে একটি বাতাসের স্তর সৃষ্টি হয়৷ লুপের মাথার অংশটি পানিকে আকৃষ্ট করে এবং বলতে কি, বাকি উদ্বিদের সঙ্গে জুড়ে রাখে৷ তার নীচে বাতাসের স্তর সব নড়াচড়া সত্ত্বেও মাসের পর মাস পালাতে পারে না৷ সালভিনিয়ার স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক রোঁয়ার কাঠামোকে ধাতব ও প্রযুক্তিগত সার্ফেস বা পৃষ্ঠভাগের উপর কীভাবে সৃষ্টি করা যায়, সেটাই আবিষ্কার করতে চান বন শহরের গবেষকরা৷

ইতিমধ্যে প্রকৃতির অনুকরণে পানি-প্রতিরোধী পৃষ্ঠভাগ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে৷ গবেষকরা জাহাজের মডেলের উপর কৃত্রিম ত্বক বসিয়েছেন, যা বাতাসের স্তরকে ধরে রাখতে সক্ষম৷ মডেল জাহাজের সংক্ষিপ্ত যাত্রায় এই বাতাসের স্তর অক্ষতই থাকে৷ জাহাজের তলাটাও শুকনোই থাকে৷ পানি ঐ বদ্ধ বাতাসের স্তরে ধাক্কা খেয়ে নিজের থেকেই সরে যায়৷ প্রফেসর বার্টলট বলেন:

‘‘স্বভাবতই পরিকল্পনা হলো, বড় বড় কনটেনার জাহাজগুলোকে এ ভাবে বায়োমেট্রিক, প্রযুক্তিলব্ধ সালভিনিয়া পৃষ্ঠভাগ দিয়ে মুড়ে দেওয়া৷ তার অর্থ, একটি বড় কনটেনার জাহাজের যাত্রাতেও এই বাতাসের স্তরগুলি স্থিরভাবে আটকে থাকবে৷''

কৃত্রিম রোঁয়াগুলিকে প্রাকৃতিক রোঁয়াগুলির মতো দেখতে না হলেও, তারা ঠিকই বাতাস ধরে রাখতে পারে – তবে যথেষ্ট সময়ের জন্য নয়৷ মাটিয়াস মাইল বলেন: ‘‘আমরা এই পশমের গোছার মতো দেখতে পৃষ্ঠভাগটিকে পানিপ্রতিরোধী করে তুলি৷ কিন্তু এখানে এখনও যেটা নেই, সেটা হলো গোটা কাঠামোর উপরের দিকে পানি আকর্ষণকারী অংশটি, যা বাতাসের স্তরটিকে স্থিতিশীল রাখতে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে৷''

একটি কৃত্রিম পৃষ্ঠভাগ, যার কল্যাণে বড় বড় তেলের জাহাজ কিংবা কনটেনারবাহী জাহাজ বাতাসের উপর দিয়ে ভেসে বেড়াতে পারবে, তার অর্থনৈতিক এবং পরিবেশমূলক সুবিধা হবে অসীম৷ প্রফেসর বার্টলটের মতে: ‘‘কনটেনার জাহাজগুলোকে এ দিয়ে মুড়ে দিতে পারলে পানিতে জাহাজের ঘর্ষণ কমবে অন্তত দশ শতাংশ, এমনকি হয়ত ৩০ শতাংশের বেশি৷''

এভাবে পৃথিবী জুড়ে জাহাজ চলাচলে প্রতিবছর ছ'হাজার কোটি লিটার ভারী তেল বাঁচানো সম্ভব হবে – এবং সেই সঙ্গে কমবে পরিবেশ দূষণ৷

বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ