জলপথে বিপজ্জনক পরিস্থিতি ও দুর্ঘটনা এড়াতে জার্মানিতে এক অভিনব সিমুলেটর ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এর সাহায্যে সম্ভাব্য বিপদগুলি সম্পর্কে আগেভাগে আভাস পেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ফেডারেল জলপথ ইঞ্জিনিয়ারিং ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা বিএডাব্লিউ এই মুহূর্তে মাইন নদীর উপর লোয়র এলাকার সেতুটি পরীক্ষা করছে৷ চারিপাশের নিসর্গ অতি সুন্দর দেখতে হলেও মাইন নদীর উপর নীচু সেতুগুলি উত্তর সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের মধ্যে যোগাযোগের পথে সমস্যা সৃষ্টি করছে৷
এবার পুরানো এই সেতুগুলির মেরামতির সময় এসে গেছে৷ কাজ সারতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে৷ রাইন-মাইন-দানিয়ুব খাল এতদিন বন্ধ রাখলে অনেককেই বড় অর্থনৈতিক লোকসানের মুখ দেখতে হবে৷ তাই প্রশ্ন হলো, নির্মাণকাজের সময় নদীর মধ্যভাগ বন্ধ রাখলে পাশের অংশ দিয়ে কি পরিবহণ চালু রাখা সম্ভব?
চলুন যাই ‘ক্রুজ শিপ’-এ
‘ক্রুজ শিপ’ বা বিলাসবহুল প্রমোদতরী তৈরিতে এগিয়ে আছে ইউরোপ৷ এসব জাহাজে করে ভ্রমণে আগ্রহীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ নতুন জাহাজ তৈরিতে পরিবেশের কথাও মাথায় রাখা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Dubray
জনপ্রিয়তা বাড়ছে
চলতি বছর প্রায় আড়াই কোটি মানুষ ‘ক্রুজ শিপ’ অর্থাৎ বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে ভ্রমণ করবেন বলে জানিয়েছে ‘ক্রুজ লাইনস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন’ বা সিএলআইএ৷ আগের বছরের চেয়ে সংখ্যাটি প্রায় ১০ লক্ষ বেশি৷ এই সময়ে ২৬টি নতুন ক্রুজ শিপ পানিতে নামবে বলেও জানিয়েছে সিএলআইএ৷ এর মধ্যে ১২টি গভীর সমুদ্রে যাওয়া জাহাজ আছে৷ আর বাকিগুলোর মধ্যে আছে নদীতে চলবে এমন জাহাজ ও বিশেষায়িত নৌকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Herrera
মেড ইন জার্মানি
এ বছর যে জাহাজগুলো চলাচল শুরু করবে তার প্রতি চারটির মধ্য একটি জার্মান শিপইয়ার্ড বা তার সাবসিডিয়ারিতে তৈরি হবে৷ নতুন জাহাজগুলো ২৮ হাজারেরও বেশি যাত্রী পরিবহণ করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marks
ইউরোপীয়দের প্রাধান্য
ইটালির ফিনকানতিয়েরি, ফ্রান্সের এসটিএক্স ও জার্মানির মায়ার ভ্যার্ফট (ছবি) - এই তিন শিপইয়ার্ডেই বেশিরভাগ বিলাসবহুল প্রমোদতরী নির্মাণ করা হয়৷ ২০১৬ সালের শুরু পর্যন্ত ফিনকানতিয়েরি-র কাছে ২৪টি, মায়ার ভ্যার্ফটের কাছে ২১টি ও এসটিএক্স ফ্রান্সের কাছে ১২টি জাহাজ তৈরির কার্যাদেশ ছিল৷
ছবি: Meyer Werft
পরিবেশের ক্ষতি কমানোর লক্ষ্য
নতুন যে জাহাজগুলো তৈরি হচ্ছে সেগুলোতে জ্বালানি তেলের পরিবর্তে এলএনজি অর্থাৎ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হবে৷ এছাড়া থাকবে ইলেকট্রিক মোটর, এলইডি বাতি ইত্যাদি৷ জাহাজের কাঠামোর কোটিংয়েও পরিবর্তন আনা হবে৷ এছাড়া জাহাজ তৈরিতে অপেক্ষাকৃত হালকা ওজনের ধাতু ব্যবহারের মাধ্যমে একে জ্বালানি সাশ্রয়ী করে তোলা হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/I. Wagner
সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী
নাম ‘হারমোনি অফ দ্য সিজ’৷ দৈর্ঘ্য ৩৬২ মিটার আর প্রস্থ ৬৬ মিটার৷ আছে ১৬টি ডেক, ২০টি খাবার ঘর, ২৩টি সুইমিং পুল৷ প্রায় ১২ হাজার গাছ সমৃদ্ধ একটি পার্কও আছে জাহাজটিতে৷ ৫,৪৮০ জন যাত্রী আর ২,০০০ জন ক্রু পরিবহণে সক্ষম এটি৷ ‘রয়েল ক্যারিবিয়ান ক্রুজ’ জাহাজটি তৈরিতে এসটিএক্স ফ্রান্সকে এক বিলিয়ন ইউরোর বেশি অর্থ দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Dubray
ভালো দিন নয়
১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল ক্রুজ শিপের ইতিহাসে বেদনাদায়ক এক দিন৷ সেদিন ‘টাইটানিক’ ডুবে গিয়েছিল৷ ২৬৯ মিটার দীর্ঘ জাহাজটিতে নয়টি ডেক ছিল৷ দুর্ঘটনার সময় টাইটানিকে প্রায় ২,২০০ মানুষ ছিলেন৷ এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার জন প্রাণ হারান৷ দুর্ঘটনায় পড়ার এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের মধ্যে অন্য একটি জাহাজ উপস্থিত হলেও টাইটানিকে সবার জন্য লাইফবোট না থাকায় এতজনের মৃত্যু হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রুজ জাহাজ নির্মাণে চীন?
২০১৬ সালে প্রায় ১০ লক্ষ চীনা নাগরিক প্রমোদতরীরে ভ্রমণ করেছেন৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সংখ্যাটি ৮০ লক্ষ হতে পারে৷ তাই চীনা শিপইয়ার্ডগুলো ক্রুজ জাহাজ তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে৷ ২০১৫ সালে ইটালির ফিনকানতিয়েরি ‘চায়না শিপবিল্ডিং কর্পোরেশন’ এর সঙ্গে একটি যৌথ কোম্পানি গড়ে তুলেছে৷ তারা চীনা বাজারের জন্য জাহাজ তৈরি করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
যে সব জাহাজ নদীর উজানের দিকে চলে, সেগুলিকে বর্তমানেও পাশের এই পথ ধরে চলতে হয়৷ একাধিক জাহাজ পরস্পরের সঙ্গে লাগিয়ে যে বহর সৃষ্টি করা হয়, তার জন্য এমন সরু পথ বড়ই কঠিন৷ জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে ভ্যার্নার মেংকে মনে করেন, ‘‘নদীর পাড় ও সেতুর থাম এড়িয়ে চলার বিশাল ঝুঁকি রয়েছে৷ তাই মাঝামাঝি পথে চলতে হয়৷ অর্থাৎ সেটা করা সম্ভব৷ তবে অসম্ভব না হলেও নদীর মধ্যভাগ দিয়ে গেলে অনেক সহজে জাহাজ চালানো সম্ভব৷''সেতুর থামের সঙ্গে দূরত্ব সত্যি বড় কম৷ প্রাচীরের গায়ে দাগ দেখলেই বোঝা যায়, যে সবাই এই পথে ঠিকমতো জাহাজ চালাতে পারে না৷ কোনো সমস্যা হয় নি৷ উজানের পথে তেমন সমস্যা হয় না৷ কিন্তু উলটো পথে স্রোত সামলে এই সরু অংশ দিয়ে জাহাজ চালানো অনেক বেশি কঠিন৷
তাই এবার সিমুলেটর কাজে লাগানো হচ্ছে৷ অভিজ্ঞ এক ক্যাপ্টেন নিজের হাতে সেই পরীক্ষা করছেন৷ নকল যাত্রা সত্ত্বেও উত্তেজনা কিন্তু কম নেই৷ ধাক্কা না মেরেই তিনি কাজটা করতে পেরেছেন৷ কিন্তু এবার পরিস্থিতি আরও কঠিন করতে পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এমন অবস্থায় এখনো পর্যন্ত সব ক্যাপ্টেনেরই বড় সমস্যা হয়েছে৷ হ্যোর্নিশ-ও সেটা টের পাচ্ছেন৷ পানির এমন উচ্চতায় কোনোরকমে জাহাজ গলানো সম্ভব৷ ফলে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এই অংশে জাহাজ চলাচল উচ্চতার উপর নির্ভর করবে৷
চড়ায় জাহাজ আটকে যাওয়া বা অন্য জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা সিমুলেটরেই সীমাবদ্ধ থাকলে ভালো, বাস্তবে যেন সেই সব অঘটন না ঘটে৷ আধুনিক প্রযুক্তি সেটাই সম্ভব করে তুলতে চায়৷
ইয়র্গ ভল্ফ/এসবি
গবেষণার জাহাজে বসবাসের অভিজ্ঞতা যেমন
ব্রেমারহাফেন থেকে কেপ টাউনে যাচ্ছে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত জাহাজ পোলারস্ট্যার্ন৷ সেই জাহাজের একজন ক্রু কিছু বিশেষ ছবি শেয়ার করেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷ তাঁর সমুদ্র জীবনের কিছুটা বোঝা যাবে এ সব ছবিতে৷
ছবি: Eva Brodte
রৌদ্রোজ্জ্বল সুন্দর দিন
গভীর সমুদ্রে একটি জাহাজে দিনরাত কাজ করার অভিজ্ঞতাটা চমৎকার হয়ে ওঠে এমন রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায়৷ তবে সব দিন এমন থাকে না৷
ছবি: Eva Brodte
মেঘাচ্ছন্ন দিনগুলো
মেঘাচ্ছন্ন দিনগুলো জাহাজের ক্রু’দের জন্য সুখকর নয়৷ তবে দিন যেমনই হোক না কেন, কাজ তাদের চালিয়ে যেতে হয়৷
ছবি: Eva Brodte
সবার আগে নিরাপত্তা
জাহাজের ডেকে যাওয়ার আগে প্রত্যেক ক্রু’র নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক৷ আর সেই নিরাপত্তার অনিবার্য অংশ হচ্ছে লাইফজ্যাকেট এবং হেলমেট পরা৷
ছবি: Eva Brodte
নমুনা সংগ্রহ
এই সমুদ্রযাত্রার মূল লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহ৷ ক্রু’রা গবেষণার জন্য পানির নমুনা সংগ্রহ করেন৷
ছবি: Eva Brodte
সমুদ্র থেকে গবেষণাগারে
গবেষকরা বালতিতে করে সমুদ্র থেকে পানি তোলেন৷ এরপর সেগুলো ফিল্টারে পরিশোধনের পর কন্টেইনারে করে গবেষণাগারে নিয়ে যান৷
ছবি: Eva Brodte
ফলাফলের অপেক্ষা
বিজ্ঞানীরা পানির নমুনার মধ্যে থাকা ক্লোরোফিলের মতো রঞ্জক পদার্থগুলো জাহাজের বিভিন্ন গবেষণাগারে পরীক্ষা করেন৷ এ সব পরীক্ষার ফলাফল জানতে উৎসুক তারা৷ আমরাও তা আপনাদের জানাতে পারবো শীঘ্রই৷