জলবায়ুকে গুরুত্ব দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান
২৪ আগস্ট ২০২৪
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ এখনও স্পষ্ট নয়৷ বিভিন্ন খাত সংস্কারের পর নির্বাচন করতে চায় সরকার৷ এসব লক্ষ্যের মধ্যেও জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান পরিবেশকর্মীদের৷
বিজ্ঞাপন
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ৫৬ বছর বয়সি আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান৷ ইতিমধ্যে দূষণ, জলাশয় রক্ষা ও একবার ব্যবহৃত হয় এমন প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো নিয়ে কথা বলেছেন তিনি৷ তবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে এখনও কথা বলেননি৷
তবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ায় পরিবেশকর্মীদের আশা বেড়েছে৷ ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে কাজ করতেন এমন একজন পরিবেশকর্মী দায়িত্ব পাওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার জলবায়ু ইস্যুতে সাধারণ বাংলাদেশিদের জন্য কল্যাণকর হবে এমন নীতি গ্রহণ করবে বলে আমাদের আশা বেড়েছে৷''
ইউনূস সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে চাকরি সংকটের সমাধান করা৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের প্রসার বাড়িয়ে নতুন চাকরি তৈরি সম্ভব মনে করেন রহমান৷ শেখ হাসিনার সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার ‘সবুজ চাকরি' তৈরি ও ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল৷ কিন্তু সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের গতি ধীর বলে মনে করছেন তিনি৷
বাংলাদেশের জলবায়ু প্রচেষ্টায়বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ জলবায়ু ও উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম (বিসিডিপি) নামে একটি তহবিল গঠন করা হয়৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব জনগোষ্ঠীর জীবনমান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাদের জন্য এই তহবিল খরচ করা হবে৷ আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দ্বিপাক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই তহবিলে অর্থ দেবে৷
বিসিডিপির লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মী প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকাভিত্তিক সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেইন খান৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থিতিশীল ও কার্যকর থাকবে৷ খান বলেন, জলবায়ু সংশ্লিষ্ট অনেক নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ এখন চলছে৷ অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও এগুলো চলবে বলে আশা করেন তিনি৷
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও সরকারের কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে ডিডাব্লিউ৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
সিফাত নাহার, চিকিৎসক
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ওষুধের অপ্রতুলতা, পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাব, লোকবলের অভাবসহ আরো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ এসব কারণে আমরা প্রায়ই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই৷ মাঝেমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ তাই আমার প্রত্যাশা থাকবে, এই সরকার কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করার চেষ্টা করবে৷
ছবি: DW
দীপংকর সরকার দীপু, ভিজুয়াল আর্টিস্ট
বেশিরভাগ মানুষের আস্থা অর্জন, জানমালের নিরাপত্তা বিধান, দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা- ইত্যাদি সরকারের চ্যালেঞ্জ৷ আর সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারেন, দুর্নীতি নির্মূল করতে পারেন, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে পারেন৷
ছবি: DW
সাদিয়া মরিয়ম রূপা, আলোকচিত্রী ও শিক্ষক
প্রত্যাশা: পাহাড় থেকে সেনাশাসন হটাতে হবে, পাহাড় দখলমুক্ত করতে হবে৷ ক্ষমতাধর ও আইনপ্রণেতাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকতে হবে৷ বাকস্বাধীনতা খর্ব করা যাবে না৷ বিচারব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে হবে৷ জনস্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করতে হবে৷
ছবি: DW
আলী আরাফাত জাকারিয়া, লেখক
প্রত্যাশা: রাষ্ট্র সংস্কার, বিশেষ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, আইন-শৃঙ্খলা ঠিক করা, পুলিশকে দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখা, দুর্নীতি দমন ও ছাত্র হত্যার বিচার করা, আর্থিকখাতে দুর্নীতি করা ব্যক্তিদের বিচার এবং সর্বোপরি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখা৷ চ্যালেঞ্জ: অর্থনীতি ঠিক করা, সতর্কতার সাথে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে পুলিশ রিফর্ম করা৷
ছবি: DW
ফারহানা শারমিন শুচি, উদ্যোক্তা
স্বচ্ছ সরকার চাই৷ রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছিল, সেগুলো নির্মূল করতে হবে৷ দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়, অবিচার দেখেছি৷ এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ দুর্নীতিবাজদের সরিয়ে তরুণ প্রজন্মকে নিয়োগ দিতে হবে৷ দুর্নীতি দূর করতে শিক্ষার্থীদের মনিটরিং দরকার৷
ছবি: DW
আমিরুল, প্রকৌশলী
প্রত্যাশা: কথা বলা ও রাস্তায় নামার অধিকার ফিরিয়ে আনা৷ এখন যে পরিস্থিতি সেটা আগে মোকাবেলা করুক, সব স্বাভাবিক করে আনুক এটাই আশা করি৷ প্রাইমারি ফোকাস হওয়া উচিত রাষ্ট্রকে আগে গড়ে তোলা৷ নৈরাজ্য হবার পরে যে অবস্থা বা গত সরকার ১৫ বছর যেভাবে শাসন করেছে এটা থেকে স্বাভাবিক করার জন্য দেশকে একটা শক্তিশালী জায়গায় নেওয়া উচিত৷ অর্থনৈতিক দিক থেকে এবং সকল দিকই যেন ঠিকঠাক করতে পারে৷
ছবি: DW
শিমু আক্তার, শিক্ষার্থী ও ভলিবল খেলোয়াড়
আশা করবো বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ার দাবির কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করবে৷ তবে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা এই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে৷
ছবি: DW
আবুল বাশার, শরবত বিক্রেতা
আমি চাই এই সরকার সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করবে যেন গরিব, ধনী সবাই শান্তিতে বাস করতে পারেন৷ রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার প্রতি লোভ এই সরকারকে বিপদে ফেলতে পারে বলেও মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
রুপসী চাকমা, শিক্ষার্থী
পার্বত্য চট্টগ্রামে বহুদিন ধরে ‘সেনাশাসন’ চলছে৷ যত ধরনের বৈষম্য তৈরি করা দরকার, সেটা তারা করেছে৷ আমরা সেনাশাসন প্রত্যাহার চাই৷ কল্পনা চাকমার গুমের যে ঘটনা ঘটেছিল তার তদন্ত ও সন্ধান চাই৷ দীর্ঘদিন ধরে যে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা ছিল সেটা নির্মূল করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে৷ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নির্মূল করে সংস্কার করাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: DW
জয়নাল, পান বিক্রেতা
সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা, দ্রব্যমূল্য যেন কম থাকে, সাধারণ মানুষ যেন কম দামে খাবার কিনতে পারে৷ তবে মনে হয় দ্রব্যের দাম কমানো অনেক কঠিন হবে৷ অবশ্য সরকার যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে, তাহলে হয়তো পারবে৷
ছবি: DW
ইসরাত জাহান ইমু, শিক্ষার্থী
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে হয়ে আসা ছাত্র আন্দোলনের সকল দাবি যেন এই সরকার পূরণ করে৷ এছাড়া অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে৷ কাঠামোগত দুর্নীতি দূর করতে হবে৷ নতুন সংবিধান তৈরি করে প্রশাসনিক কাঠামো এমনভাবে পরিবর্তন করতে হবে যেন পরবর্তী কোনো সরকার আবার স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে৷