মূল বার্লিন প্রাচীর ভেঙে পড়েছিল ১৯৮৯ সালে৷ তার তিন বছর পর ১৯৯২ সালে আরেকটি প্রাচীর গড়ে ওঠে৷ সেটা ধনী আর গরিব দেশগুলোর মধ্যে৷ তখন বলা হয়েছিল, কার্বন নির্গমন কমানোর দায়িত্ব শুধু ধনী দেশগুলোর৷
বিজ্ঞাপন
১৯৯২ সালে জলবায়ু বিষয়ক একটি সম্মেলনে ধনী ও গরিব দেশগুলোর মধ্যে এধরনের একটি বিভাজন করা হয়৷ তারপর থেকে কেটে গেছে ২২ বছর৷ এর মধ্যে সে সময়কার ‘গরিব' দেশ মেক্সিকো আর সিঙ্গাপুরের অনেক উন্নতি হলেও জলবায়ু আলোচনায় এখনো তারা ‘গরিব'৷
পেরুর লিমাতে এখন চলছে জলবায়ু আলোচনা৷ শুক্রবার শেষ দিন৷ ১৯২টি দেশের কর্মকর্তারা গত ১১ দিন ধরে আলোচনা করে যাচ্ছেন৷ তাদের মূল লক্ষ্য আগামী বছরের শেষে প্যারিসে যে সম্মেলন হবে সেখানে একটি চুক্তি পাওয়ার আশায় খসড়া তৈরি করা৷ কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে ‘বার্লিন প্রাচীর'৷ কারণ ধনী দেশরা বলছে কার্বন নির্গমন কমাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে দ্বীপগুলো
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতকেই বিশ্বের অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে পড়বে, বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানুষে মানুষে হানাহানি৷ আইপিসিসি-র রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পৃথিবীর স্বর্গ হারানোর পথে
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ মালদ্বীপ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত৷ ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এটি পুরোপুরি তলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের৷
ছবি: picture alliance/chromorange
বন্যার প্রকট আকার
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ৷ নিম্ন ভৌগলিক অবস্থান এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে দেশটি৷ সাগরের পানির উচ্চতা মাত্র তিন ফুট বেড়ে গেলেই দেশের অর্ধেক পানির নীচে তলিয়ে যাবে৷
ছবি: Tareq Onu
পানিতে নিমজ্জিত সম্পদ
সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে এরই মধ্যে দ্বীপগুলোর নিম্নাঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে শুরু করেছে অনেকেই৷ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিরিবাটি দ্বীপপুঞ্জের কিছু গ্রাম এরই মধ্যেপানিতে তলিয়ে গেছে৷ ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় বেশ চিন্তিত সেখানকার চাষীরা৷
ছবি: AFP/Getty Images
তাপমাত্রা বৃদ্ধি
আইপিসিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই শতকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ০.৩ থেকে ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এমনকি শিল্পকারখানা যেখানে বেশি সেখানে গড়ে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে৷ ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়বে ২৬ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার৷
ছবি: picture-alliance/AP
সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে বসবাস
সমুদ্রের পানি থেকে বাঁচার উত্তম পন্থা জানা আছে ডাচদের৷ প্রায় ১০০০ বছর আগে বন্যার হাত থেকে বাঁচতে তারা প্রথম পরিখা নির্মাণ করেছিল৷ এ কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছে সেখানে৷ তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও ভাবছে ডাচরা৷
ছবি: picture-alliance/Ton Koene
ডুবছে বিশ্ব ঐতিহ্য
ইটালির ভেনিস পুরোটাই পানি বেষ্টিত৷ তাই সেখানে বন্যা কোনো আকস্মিত ঘটনা নয়৷ কিন্তু চিন্তা বিষয় হল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরটি ক্রমেই পানির তলায় তলিয়ে যাচ্ছে৷ ইটালির সরকার ভেনিস রক্ষায় ৯.৬ বিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষার এই প্রকল্প ২০১৬ সাল নাগাদ শেষ হবে৷
ছবি: AP
প্রাকৃতিক বিপর্যয়
আইপিসিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এশিয়া ও ইউরোপে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে পানি সংকট এবং খরা দেখা দেবে বলেও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এর ফলে ফসল ভালোমত হবে না, দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি৷
ছবি: dapd
কোনো মানুষ রেহাই পাবে না
আইপিসিসি-র সভাপতি রাজেন্দ্র পাচৌরি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা যদি ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায় তবে ঝুঁকির পরিমাণও সেই অনুপাতে বাড়বে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব থেকে বিশ্বের কোনো মানুষই রেহাই পাবেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, ‘‘এটা (কার্বন নির্গমন কমানো) সবার দায়িত্ব৷ কারণ সম্মিলিতভাবে যে কার্বন নির্গত হয় সেটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ কোনো একটি বিশেষ দেশ থেকে যেটা নির্গত হয়, শুধু সেটা নয়৷''
তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা যদি এখন কিছু করতে ব্যর্থ হই তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না৷''
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টড স্টার্ন জলবায়ু বিষয়ক আলোচনায় যে ‘বার্লিন প্রাচীর' রয়েছে সে নিয়ে আগেও কথা বলেছেন৷ এবার তিনি বললেন, ‘‘১৯৯২ সালে যে বিভাজন করা হয়েছিল সেটা রাজনৈতিকভাবে ‘সমর্থনযোগ্য নয়'৷ কেননা তখন থেকে বিশ্ব অর্থনীতি এখন অনেক বদলেছে৷''
জাতিসংঘের সাবেক জলবায়ু বিষয়ক প্রধান ইভো ডে বোয়ার বলেন, ‘‘আলোচনার সময় বিভাজনের বিষয়টি প্রথম দেখা দেয় ২০০৭ সালে৷''