জার্মানির বন শহরে চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনা বুধবার গতি পেয়েছিল৷ কারণ, সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট৷ তবে সবার দৃষ্টি কেড়েছে টিমোসি নাউলুসালা৷
বিজ্ঞাপন
১২ বছরের নাউলুসালা ফিজির বাসিন্দা৷ গতবছর এক সাইক্লোনে তার গ্রামের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়৷ ‘‘আমার এক সময়ের সুন্দর গ্রাম এখন বিরান, সেখানে কিছু নেই... আপনারা কিছু না করলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থাকবেই,'' সম্মেলনে উপস্থিত প্রায় ২৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ অন্যান্য ডেলিগেটদের বলেছে নাউলুসালা৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এই সময় উপস্থিত ছিলেন৷ সম্মেলনস্থলে পৌঁছার পর ম্যার্কেল মঞ্চে উঠলে সেখানে তাঁর সঙ্গে গিয়ে কথা বলেছে নাউলুসালা৷ মাক্রোঁ তখন তাঁদের পাশেই ছিলেন৷
নাউলুসালা মঞ্চে উপস্থিত হলে সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের ডেলিগেটরা হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়৷
এরপর দেয়া বক্তব্যে ম্যার্কেল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মানবজাতির সবচেয়ে বড় না হলেও একটি অন্যতম সমস্যা৷ তবে তিনি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসা ‘সহজ নয়'৷ ম্যার্কেলের এই বক্তব্য পরিবেশিবাদীদের হতাশ করেছে৷
বিশ্ব উষ্ণায়নের শৈল্পিক প্রতিবাদ
জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে ভবিষ্যতের লক্ষ্য নিয়ে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও তহবিল সংক্রান্ত আলোচনাও ছিল এতে৷ তবে কেবল কথা নয়, সম্মেলন ঘিরে ছিল নানা সৃজনশীল প্রকাশও৷
ছবি: DW/P. Große
সবকিছু একসাথে
কপ২৩ সম্মেলনে স্বাগতিক দেশ ফিজির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাংক বাইনিমারামা বলেন, ‘‘লক্ষ্যে পৌঁছাতে একটি আকাঙ্খাকে সামনে রেখে একসাথে আমাদের নৌকা ভাসাতে হবে৷’’ সম্মেলনে অংশ নেয়া ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিরা সেই বক্তব্যের প্রতিফলনই যেন দেখতে পায় ফিজির নিজস্ব নৌ-যানের এ অবয়বে৷
ছবি: DW/H. Kaschel
প্রতিবাদে হস্তশিল্প
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষত আদিবাসী গোষ্ঠির মানুষেরা৷ এ ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা৷ কপ২৩ চলাকালীন রাইনাউয়ে পার্কে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের হাতের কাজের নমুনা দিয়ে তৈরি করা এই তাঁবু সেই সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতীকী রূপ৷
ছবি: DW/P. Große
মেরু ভল্লুকের দুঃখজনক পরিণতি
কেবল মানুষ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা, বন্যা বা ঝড়ের তাণ্ডবে ভুগছে প্রাণীরাও৷ মেরু ভল্লুকের মতো অনেক প্রাণীই চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে৷ সম্মেলনে মেরু ভল্লুকের বিদ্ধ করা মূর্তি যেন জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণাম জানান দিয়েছে৷
ছবি: DW/P. Große
গাছবন্ধু
গাছ আমাদের পরম বন্ধু৷ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গাছের কোনো বিকল্প নেই৷ জার্মান ফরেস্ট অ্যাসোসিয়েশন গাছের গুরুত্ব বোঝাতে এই ৮ মিটার লম্বা গাছের ভাস্কর্যটি তৈরি করে৷
ছবি: DW/P. Große
বিপদের মুখে বিশ্ব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিদিন আরো বিপদগ্রস্থ হয়ে উঠছে পৃথিবী৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে আবহাওয়ার তীব্রতা মারাত্মক আকার ধারণ করছে৷ পৃথিবীর বিপন্নতার কথা মনে করিয়ে দিতেই যেন জার্মানির উন্নয়ন মন্ত্রণালয় পৃথিবীর এই ২০ মিটার লম্বা অবয়বটি বসিয়েছিল রাইনাউয়ে পার্কে৷
ছবি: DW/P. Große
নবায়নযোগ্য জ্বালানি
গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতই সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে জলবায়ু চুক্তি থেকে পিছু হঠছে, সেখানে ভারত ও চীন ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে৷ অদূর ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভর বাড়ানোর ইঙ্গিত ছিল ভারতীয় প্যাভেলিয়নে৷
ছবি: DW/P. Große
রাজপথে প্রতিবাদ
জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পরিবেশ কর্মীদের প্রতিবাদ সমাবেশ ছিল বন শহরে৷ জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে এ প্রতিবাদে সামিল হয় হাজারো মানুষ৷ পরে বন থিয়েটারে এ সব প্রতিবাদী পোস্টার প্রদর্শিত হয়৷
ছবি: DW/P. Große
প্রতিবাদে মুখোশ
প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসতে চাওয়া একমাত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র৷ জলবায়ু সম্মেলনে প্রতিবাদকারীদের অন্যতম লক্ষ্যও তাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
8 ছবি1 | 8
উল্লেখ্য, জার্মানির মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে৷ আর ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৪০ শতাংশ কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা জার্মানি নির্ধারণ করেছিল তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না দেশটি৷
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় সংকট' বলে আখ্যায়িত করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ তিনি তাঁর বক্তব্যে ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ' বা আইপিসিসির জন্য বরাদ্দ দিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান৷ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশ্বের কয়েক হাজার বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত আইপিসিসি৷ সংস্থাটি কয়েকবছর পরপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইপিসিসিতে দেয়া বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ দেশটি প্রতিবছর আইপিসিসিকে দুই মিলিয়ন ডলার দিতো, যা ঐ সংস্থার মোট বাজেটের প্রায় অর্ধেক৷
জলবায়ু সম্মেলনে মাক্রোঁ বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত করে বলছি, ২০১৮ সালের শুরু থেকে আইপিসির বাজেটে এক ইউরোও ঘাটতি থাকবে না৷''
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আফ্রিকার সংগ্রাম
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হলেও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের নাম জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়া দেশের তালিকায় উপরের দিকেই আছে৷
ছবি: DW/J. Beck
বাঁধ নির্মাণ
সাগরের পানি বৃদ্ধি ও অতিবৃষ্টি থেকে সৃষ্ট বন্যার কারণে মোজাম্বিকের উপকূলীয় শহর বাইরার জনজীবন হুমকির মুখে পড়েছে৷ এ থেকে পরিত্রাণ পেতে শহরের মাঝখান দিয়ে যাওয়া নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া নতুন খাল তৈরি ও বনায়ন করেও সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছে৷
ছবি: DW/J. Beck
বনায়ন
সাহারা মরুভূমির বালু দিন দিন সাব-সাহারা আফ্রিকার আবাদি জমিতে ঢুকে পড়ছে৷ এতে অত্র অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে৷ এই অবস্থায় আফ্রিকার ১১টি দেশ প্রচুর গাছ লাগিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Senna
মাটির ক্ষয়রোধ
নাইজারের সুন্না মুসা শতাব্দী পুরনো সেচ ব্যবস্থা প্রয়োগ করে ফসল উৎপাদন করেন৷ এর ফলে মাটির ক্ষয়রোধ সম্ভব হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরাও ফসল উৎপাদনের প্রাচীন পদ্ধতি প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন৷
ছবি: DW/K. Tiassou
সবুজ জ্বালানি
২০৩০ সালের মধ্যে আফ্রিকার সবার জন্য জ্বালানির ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন মহাদেশটির ৫৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান৷ এই লক্ষ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসের প্রসার ঘটানো হচ্ছে৷ প্রতিবছর ৩০০ গিগাওয়াট সবুজ জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Vaughn
সৌরশক্তি ব্যবহার
খরচ কমে যাওয়ায় আফ্রিকার মানুষেরা সৌরশক্তি ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ ফলে ব্যক্তিগত বাড়ি ছাড়াও হাসপাতাল, স্কুল এসব জায়গায় সৌরশক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: Solar4Charity
ইটের বদলে প্লাস্টিক
নাইজেরিয়ায় বাড়ি নির্মাণে ইটের বদলে পুরনো প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করছেন অনেকে৷ এতে পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে৷ সারা বিশ্বে মিনিটে প্রায় ১০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হয় বলে জানা গেছে৷