জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বাংলাদেশের আশ্রয়ণ প্রকল্প
তৌফিকুল ইসলাম লিপু কক্সবাজার
২৩ জুলাই ২০২০
ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারানো বাংলাদেশের ছয়শ' পরিবার পেয়েছে নতুন ঠিকানা৷ সরকার থেকে তাদের দেয়া হয়েছে একটি করে ফ্ল্যাট৷
বিজ্ঞাপন
একসময় তাদের বাড়িঘর ছিল, মাথা গোঁজার ঠাই ছিল৷ কিন্তু ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছেন উদ্বাস্তুতে৷ এমন ভাগ্যহারাদের জন্য বাংলাদেশের কক্সবাজারে খুরুশকুলে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে৷ এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ৬০০ পরিবার তাদের ফ্ল্যাট বুঝে পাচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘খুরুশকুলে আলাদা একটি সুন্দর শহর গড়ে উঠবে৷ আপনারা এতদিন যেভাবে ছিলেন কষ্টের মধ্যে, আমি নিজে গিয়েছি, আমি দেখেছি সেই জায়গা, কাজেই আপনারা এখানে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবেন৷ আপনাদের ছেলেমেয়েরাও ভালোভাবে বড় হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে, সেটাই আমরা চাই৷’’
কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প
01:49
প্রকল্পটি কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে৷ মোট ২৫৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা প্রকল্পটিকে ভাগ করা হয়েছে ৪টি জোনে৷ সেখানে চার হাজার ৪০৯টি পরিবার একটি করে ফ্ল্যাট পাবে৷ পাশাপাশি থাকছে আধুনিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও৷ প্রকল্প পরিচালক মাহবুব হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চারটি জোনের মধ্যে পর্যটন জোন, শুঁটকি মহল, বাফার জোন৷ এর মধ্যে পর্যটন জোনটি বেসরকারি বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে পৃথক ডিপিপির মাধ্যমে৷ অত্যাধুনিক পর্যটন সুবিধা বলতে যা বোঝায়, এখানে সবই থাকবে৷ শুঁটকি মহলে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিক্রি, ইটিপি সুবিধা থাকবে, যাতে বর্জ্য নদীতে না যায়৷ এখানে যারা থাকবে, তারা নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে এবং পেশাগতভাবে নিশ্চিত থাকবেন যাতে জীবনকে তারা ভালো করতে পারেন৷’’
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর সহায়-সম্বলহারা মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন কক্সবাজারে পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া ও নাজিরার টেক এলাকায়৷ কিন্তু কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ফলে শেষ আশ্রয়টুকু হারাতে বসেছিল তারা৷ পরবর্তীতে ১৮৩৯ কোটি টাকা ব্যায়ে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়, যেখানে মোট ১৩৯টি পাঁচ তলা ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে৷ এরমধ্যে শেষ হয়েছে ২০টির নির্মাণ কাজ৷ স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল মনে করেন, এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে বাংলাদেশ একটি উদাহরণ তৈরি করতে পেরেছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ উন্নত দেশও জলবায়ু পরিবর্তনে এত বড় প্রকল্প নেয়নি৷ চার হাজার ৪০৯ টি পরিবারের পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে ৬০০ পরিবার এখন এখানে এসেছে৷ আশা করছি সহসাই বাকি সব পরিবার এখানে আসবেন৷’’
জলবায়ু পরিবর্তনে ২০ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কারা?
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে জার্মানওয়াচ৷ ১৯৯৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স৷ বাংলাদেশ রয়েছে সাত নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zumapress
ডমিনিকা
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের এই দ্বীপরাষ্ট্রটি রয়েছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকার ১০ নম্বরে৷ সূচকে দেশটির স্কোর ৩২ দশমিক তিন তিন৷ দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিবছর গড়ে তিন জনের বেশি মারা গেছেন৷ সম্পদের গড় বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি৷ তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগের ঘটনা এই ২০ বছরে ঘটেছে কেবল আটটি৷
ছবি: Ocean College
নেপাল
নয় নম্বরে থাকা নেপালের সার্বিক সূচকে স্কোর ৩১ দশমিক পাঁচ৷ প্রতিবছর গড়ে মারা গেছেন ২২৮ জন৷ সম্পদের ক্ষতির বার্ষিক গড় ২২ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০ বছরে দুর্যোগের সংখ্যা ১৮০টি৷
ছবি: AP
থাইল্যান্ড
৩১ স্কোর নিয়ে আট নম্বরে অবস্থান এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ডের৷ দেশটিতে ২০ বছরে গড়ে ১৪০ জন মারা গেছেন জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জটিলতায়৷ গড় বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৭৭৬ কোটি মার্কিন ডলার৷ এই সময়ে দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে ১৪৭টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
বাংলাদেশ
৩০ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে তালিকার সপ্তম স্থানে৷ প্রতি বছর গড়ে ৫৭৭ জনের বেশি মারা গেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে৷ সম্পদের ক্ষতি হয়েছে গড়ে ১৬৮ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি৷ ২০ বছরে ১৯১টি দুর্যোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইনডেক্সে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ভিয়েতনাম
ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামের স্কোর ২৯ দশমিক আট তিন৷ ২০ বছরে গড়ে ২৮৫ জনের বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন৷ সম্পদের গড় ক্ষতির পরিমাণ ২০১ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি৷ দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে ২২৬টি৷
ছবি: DW/Benjamin Bathke
পাকিস্তান
২৮ দশমিক আট তিন স্কোর নিয়ে পাঁচে রয়েছে পাকিস্তান৷ গড়ে ৫০০ মানুষ মারা গেছেন প্রতি বছর৷ সম্পদের গড় ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার৷ দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে ১৫২টি৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Ali
ফিলিপাইন্স
১৭ দশমিক ছয় সাত স্কোর নিয়ে চারে অবস্থান ফিলিপাইন্সের৷ প্রতি বছর গড়ে মারা গেছেন ৮৭০ জনেরও বেশি৷ সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ গড়ে প্রায় ৩১২ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি৷ ২০ বছরে দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে ৩১৭টি৷
ছবি: Reuters/R. Loaquinario
হাইতি
১৩ দশমিক আট তিন স্কোর নিয়ে তালিকার তিন নম্বরে রয়েছে হাইতি৷ ২০ বছরে গড় মৃত্যু ২৭৪ জন৷ গড় বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ২৭ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি৷ দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে ৭৮টি৷ তালিকার অন্য সব দেশের তুলনায় ক্ষতি কম হলেও ছোট এ দেশের জন্য মাথাপিছু হিসেবে হাইতির এ পরিসংখ্যান বেশ ভয়াবহ৷ এ কারণেই অন্যদের পেছনে ফেলে এর স্থান হয়েছে তিন নম্বরে৷
ছবি: Imago/robertharding/C. Kober
মিয়ানমার
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার৷ দেশটির স্কোর ১০ দশমিক তিন তিন৷ ২০ বছরে গড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন দেশটিতে৷ সম্পদের বার্ষিক ক্ষতি হয়েছে গড়ে ১৬৩ কোটি মার্কিন ডলার৷ দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে ৫৫টি৷
ছবি: DW/A. Islam
পুয়ের্তো রিকো
তালিকার শীর্ষে রয়েছে আরেক ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র পুয়ের্তো রিকো৷ দেশটির স্কোর মাত্র ছয় দশমিক ছয় সাত৷ পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে মনে হতে পারে অন্য সব দেশের তুলনায় পুয়ের্তো রিকোর ক্ষতি একেবারেই কম৷ মাত্র ৯১০৪ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফলের দেশটিতে বছরে গড়ে দেড়শ’ মানুষের মৃত্যু দেশটিকে গত ২০ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশে পরিণত করেছে৷ সম্পদের গড় বার্ষিক ক্ষতি ৪৫৬ কোটি মার্কিন ডলার৷ দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে ২৫টি৷