‘‘আমি জার্মান নাগরিক হলে জার্মানির পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তিত হতাম'' – বলেছেন নোবেলজয়ী সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাল গোর৷ তিনি মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে পিছিয়ে পড়ছে জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
অ্যাল গোর মূলত জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধীআন্দোলনকে সফল করার কাজে ভূমিকা রাখায় জার্মানির সাম্প্রতিক যে ব্যর্থতা সেদিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন৷ আর তাঁর এ বক্তব্য এসেছে ম্যার্কেল সরকারের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে বিষয়টি উঠে আসার পর৷ সম্প্রতি ম্যার্কেলের জোট সরকারও স্বীকার করেছে যে, ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানি যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না৷
অ্যাল গোর মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব ধরে রাখতে হলে জার্মানিকে অবশ্যই ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে, তা অর্জন করতে হবে৷ ২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের এই সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বার্লিনে এসেছেন জলবায়ু বিষয়ক এক সম্মেলনে অংশ নিতে৷ মঙ্গলবার ‘ক্লাইমেট রিয়েলিটি', অর্থাৎ ‘জলবায়ু বাস্তবতা' শীর্ষক এ সম্মেলনের দিনেই টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে নেতৃত্ব ধরে রাখতে হলে জার্মানিকে অবশ্যই ২০৩০ সালের মধ্যে নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে৷ ''
এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি জার্মান নাগরিক হলে জার্মানির পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তিত হতাম৷''
জার্মানির মোট বিদ্যুতের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি আসে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে৷ গ্রিন পার্টি এবংরা এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত উন্নতি না হওয়া এবং নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ না কমার জন্য অংশত সরকারকেই দায়ী করে৷
এসিবি/এসবি (রয়টার্স, এপি)
বিশ্বের সবচেয়ে সবুজ সাত শহর
নিজেদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন শহর৷ চলুন এখন অবধি সফল কয়েকটি শহরের কথা জেনে নেয়া যাক৷
ছবি: picture alliance/GES/M. Gilliar
কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ শহর হতে চায় কোপেনহেগেন৷ ১৯৯৫ সাল থেকে এখন অবধি শহরটি কার্বন নির্গমণের হার অর্ধেকে কমিয়ে এনেছে৷ শহরের একটি বড় অংশকে গাড়িমুক্ত করে এবং উচ্চমানে গণপরিবহন এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা লেন গড়ে ক্রমশ সবুজ শহরে পরিণত হচ্ছে ডেনমার্কের এই রাজধানী৷
ছবি: DW/E. Kheny
রেকইয়াভিক, আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডের রাজধানীতে তাপ এবং বিদ্যুতের পর্যাপ্ত নবায়নযোগ্য সাপ্লাই রয়েছে৷ মূলত হাইড্রোপাওয়ার এবং জিওথার্মাল থেকে আসে এগুলো৷ শহরটির ৯৫ শতাংশ বাড়ির হিটিং সিস্টেম সরাসরি জেলা হিটিং নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত, যা এক চমৎকার ব্যাপার৷ ২০৪০ সাল নাগাদ শহরের সকল গণপরিবহণ জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত করতে হয় নগর কর্তৃপক্ষ৷ সেখানে সাধারণ মানুষকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/U. Bernhart
কুরিটিবা, ব্রাজিল
ব্রাজিলের অস্টম বড় শহর কুরিটিবার ৬০ শতাংশ মানুষ শহরের বাস নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরশীল৷ শহরটিতে আড়াইশ’ কিলোমিটার সাইকেল লেন রয়েছে৷ পাশাপাশি হাঁটার জন্যও আছে বিশেষ ব্যবস্থা৷ শহরটির প্রাকৃতিক সবুজ দেয়াল বন্যা রোধে সহায়তা করে৷
ছবি: picture alliance/GES/M. Gilliar
সান ফ্রান্সিসকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সান ফ্রান্সিসকো শহরে ২০১৬ সালে এক আইন পাস করা হয় যাতে নতুন সব ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়৷ শহরটিতে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ সেই ২০০৭ সাল থেকে৷ ২০২০ সাল নাগাদ নিজেদের আর্বজনামুক্ত শহর ঘোষণার পরিকল্পনা করছে সান ফ্রান্সিসকো৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Edelson
ফ্রাংকফুর্ট, জার্মানি
২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর শহরে পরিণত হতে কাজ শুরু করেছে ফ্রাংকফুর্ট৷ নতুন তৈরি হওয়া ভবনগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী করতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ পিভিসির মতো বিতর্কিত সামগ্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ শহরটি আবর্জনার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে এক কার্যকরী পন্থা অবলম্বন করে৷
ছবি: CC BY Epizentrum 3.0
ভ্যানকুভার, কানাডা
২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের সবচেয়ে সবুজ শহরে পরিণত হতে চায় ফ্রাংকফুর্ট৷ ২০০৭ সালের তুলনায় সেসময় কার্বন নির্গমণের মাত্রা ৩৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায় শহরটি৷ শহরটির প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের প্রায় সবটাই আসে হাইড্রোইলেক্ট্রনিক ড্যাম থেকে৷ তবে হিটিং এবং গণপরিবহণে এখনো গ্যাস এবং তেল ব্যবহার করে শহরটি৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/A. Chin
কিগালি, রুয়ান্ডা
কিগালিকে বলা হয় আফ্রিকার সবচেয়ে পরিষ্কার শহর৷ এটি পথচারী এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা লেন করার পরিকল্পনা করেছে৷ সেখানে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ আর নগরের বাসিন্দারা মাসে একদিন নগর পরিষ্কারের কাজ করেন৷ তবে নগর পরিষ্কার রাখতে গিয়ে নগরের বাসিন্দাদের উপর বাড়াবাড়িরকম চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন৷
ছবি: Imago/robertharding
লিবিয়ানা, স্লোভেনিয়া
ইউরোপের সবুজ রাজধানী ২০১৬ খেতাবজয়ী এই শহরে বিদ্যুতের উৎস হাইড্রোপাওয়ার৷ গণপরিবহণ, পথচারীদের এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা লেনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে শহরটি৷ ইউরোপের প্রথম শজর হিসেবে আবর্জনার মাত্রা শূণ্যতে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে শহরটি, ইতোমধ্যে আবর্জনার ৬০ শতাংশ রিসাইকেল করতে সক্ষম হয়েছে শহরটি৷