ইউরোপেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমশ প্রকট হচ্ছে৷ জার্মানির একটি দ্বীপ শীঘ্রই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোধের আশায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদালতে হাজির হয়েছে দ্বীপের এক পরিবার৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমশ প্রকট হচ্ছে৷ জার্মানির একটি দ্বীপ শীঘ্রই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে তাই যথাযথ উদ্যোগের আশায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদালতে হাজির হয়েছে দ্বীপের এক পরিবার৷
ঝড়ো হেমন্তের বদলে লাঙ্গেউগের আবহাওয়া রৌদ্রোজ্জ্বল৷ নভেম্বর মাসেও খালি পায়ে সমুদ্রতটে হাঁটা তাই এখন স্বাভাবিক ব্যাপার৷ তবে নর্থ সি'র লাঙ্গেউগ দ্বীপে এমন অবস্থা আগে ছিল না৷ সর্বশেষ গ্রীষ্মে সেখানে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছিল৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সেখানে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে৷ আর ঝড় জলোচ্ছ্বাসও ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে৷
সমুদ্রতটের একেবারে পাশেই মিশায়েল রেক্টেনভাল্ডের রেস্তোরাঁ৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় শুরুর দিকেই তাঁর রেস্তোরাঁ ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েরাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয়তায় তিনি হতাশ৷ এই বিষয়ে তাই ইইউ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি৷ রেক্টেনভাল্ড বলেন, ‘‘১৯৫০ সাল থেকে এখন অবধি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বিশ সেন্টিমিটার বেড়েছে৷ তার অর্থ হচ্ছে, ঝড়ে জলোচ্ছ্বাস এখন আগের চেয়ে উঁচু৷ ফলে আমাদের ঝুঁকি বাড়ছে৷ আমাদের মিঠাপানির আধার এখানে, উঁচু বালিয়াড়ির ঠিক পরেই৷ নর্থ সি যদি এই বালিয়াড়ি উপচে যায়, তাহলে মিঠাপানির আধারে সমুদ্রের নোনাজল মিশে যাবে৷''
শীতকালে বেড়ানোর জন্য জার্মানির শীর্ষ দশটি দ্বীপ
গরমের সময় জার্মানির দ্বীপগুলোতে পর্যটকদের বেশ আনাগোনা থাকে৷ কিন্তু যাঁরা অনেক মানুষের সমাগম পছন্দ করেন না, তাঁরা চাইলে শীতেও সেখানে যেতে পারেন৷ এমনই কয়েকটি দ্বীপের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZB/Sauer
ঝোড়ো হাওয়ায় ঘোরাঘুরি
জার্মানির সবচেয়ে বড় দ্বীপ ব়্যুগেন৷ বাল্টিক উপকূলের এই দ্বীপটি গ্রীষ্মকালে জমজমাট থাকলেও শীতে অল্প সংখ্যক পর্যটকের দেখা মেলে৷ ঝোড়ো আবহাওয়ার মধ্যেও যেন তাঁরা ঘুরতে পারেন সেজন্য রয়েছে নানারকম টুর-এর ব্যবস্থা৷ আছে স্কেটিং-এর সুবিধাও৷ আর যাঁদের একটু গরম পছন্দ তাঁদের জন্য হোটেলগুলোতে রয়েছে ব্যবস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZB/Sauer
সৈকতে স্কি!
জার্মান-পোল্যান্ড সীমান্তের উজেডম দ্বীপের সৈকতে শীতের সময় পর্যটকরা যান স্কি করতে৷ অর্থাৎ গরমে যেখানে সবাই সূর্যস্নান করে, শীত এলেই সেটা হয়ে যায় স্কি-র জায়গা৷
ছবি: picture alliance/ZB/Sauer
সামুদ্রিক ঈগল দেখতে হিডেনজে
খেয়াল করে দেখুন পানি সব বরফ হয়ে গেছে৷ শীতের হিডেনজে বা হিডেনসি এমনই৷ সেখানে গেলে বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক ঈগলের দেখা পাওয়া যাবে৷ গরমের সময় যেটা আপনি পাবেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer
সাগর দেখার সময় শীতকাল!
উত্তর সাগরের জ্যুল্ট দ্বীপে গ্রীষ্মকালে গেলে পর্যটকদের ভিড়ে স্বস্তিমতো সাগরের সৌন্দর্য দেখাই দায়৷ কিন্তু শীতের সময়কার এই ছবিটি দেখুন৷ হাতেগোনা অল্প কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷ ফলে তাঁরা সময় নিয়ে সাগরের রূপ উপভোগ করতে পারছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ossinger
ঘমুন্ত আমরুম
জ্যুল্ট দ্বীপের পাশেই আমরুম-এর অবস্থান৷ প্রতি গ্রীষ্মে সেখানে গড়ে প্রায় আট হাজার পর্যটকের দেখা মেলে৷ তখন তাঁদের আপ্যায়ন করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন দ্বীপবাসী৷ তাই শীতকাল এলেই আরাম করতে চলে যান তাঁরা৷ তবে সেসময় যে অল্প সংখ্যক পর্যটক সেখানে যান তাঁরা নির্জন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Rehder
বন্যার দ্বীপ হালিগেন
নর্থ ফ্রিজিয়ান ভাডেন সাগরের বুকে ছোট ১০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত হালিগেন৷ ঐ অঞ্চলে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ বার সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়৷ তাই বসবাসের জন্য মানুষ টিলা তৈরি করে সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে৷ শীতের সময় রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকরা ছুটে যান হালিগেন-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Hitij
যেন সাগরের বুকে এক দুর্গ
জার্মানির মূল ভূখণ্ড থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের হেলগোল্যান্ড দেখতে অনেকটা দুর্গের মতোই মনে হয়৷ ১৭২১ সালে বড় একটি দ্বীপ ভেঙে দুটো দ্বীপে পরিণত হয়৷ হেলগোল্যান্ড তার মধ্যে একটি৷ অন্যটির নাম ড্যুনে৷ শীতে সেখানে গেলে ধূসর রঙয়ের শিশু সিল জন্মাতে দেখা যায়৷
ছবি: Kurverwaltung Helgoland
বিচিত্র হাঁসের দেখা মেলে নর্ডার্নে
প্রকৃতির নির্জনতা উপভোগের পাশাপাশি বিচিত্র হাঁসের সঙ্গে পরিচিত হতে পর্যটকরা শীতের সময় নর্ডার্নে দ্বীপে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Wagner
না বেশি গরম, না বেশি শীত
এই হলো বোর্কুম দ্বীপের আবহাওয়া৷ জার্মানির সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের সীমান্তের এই দ্বীপটি তাই পর্যটকদের প্রিয়৷ সেখানকার বাতাস বেশ পরিষ্কার, সঙ্গে আছে পর্যাপ্ত আয়োডিন৷ দ্বীপটিতে তিনটি বাটিঘর রয়েছে৷ ছবির এই লাইটহাউজটি ১৯ শতকের শেষে নির্মাণ করা হয়, এবং এটি জার্মানির প্রথম বাতিঘর যেটাতে বিদ্যুতের ব্যবহার হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Grigoleit
শীতে ফুলের দেখা!
জার্মানি, অস্ট্রিয়া আর সুইজারল্যান্ড জুড়ে লেক কন্সটান্স হ্রদের অবস্থান৷ বিশাল এই হ্রদের মাঝে রয়েছে মাইনাও নামের একটি দ্বীপ৷ শীত শেষ হওয়ার আগেই সেখানে ফুল ফোটা শুরু করে৷ তাই প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের প্রিয় একটি জায়গা মাইনাও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Seeger
10 ছবি1 | 10
লাঙ্গেউগে ইতোমধ্যে পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মে তা তীব্র হয়৷ দ্বীপটিতে বাসিন্দা মাত্র দু'হাজার৷ তবে দু' লাখের বেশি মানুষ এখানে ছুটি কাটাতে আসেন এবং তাঁরা অনেক পানি ব্যবহার করেন৷ দ্বীপটিতে প্রাকৃতিক পানির আধার এখানে, বালিয়াড়ির ঠিক নীচে৷ বালির নীচে বৃষ্টির পানি জমা হয়৷ এখানে কুয়া রয়েছে, আর সেটাই দ্বীপের মিঠাপানির একমাত্র উৎস৷ এখন সমুদ্র ক্রমশ এই আধারের কাছে আসায় মিঠাপানির আধার ছোট হয়ে আসছে৷
সাধারণ মানুষ মনে করছেন, ইইউ'র উচিত কঠোর জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা৷ আর রেক্টেনভাল্ড পরিবার হচ্ছে দশটি পরিবারের একটি, যারা ইইউ'র বিরুদ্ধে জনগণের জলবায়ু মামলায় অংশ নিচ্ছেন৷ বাকিরা ইউরোপের অন্যান্য দেশ, কেনিয়া এবং ফিজি থেকে এসেছে৷
ইউরোপের আদালত তাঁদের মামলা গ্রহণ করেছে৷ ফলে শুনানি শুরু করা যাবে৷ বাদির এক্ষেত্রে কোনো খরচ নেই৷ বিভিন্ন দাতারা মামলার খরচ জোগাচ্ছে৷ মিশায়েল রেক্টেনভাল্ড বলেন, ‘‘অবশ্যই আমরা ভালো কিছুর ব্যাপারে আশাবাদী৷ প্রথমে আমি ভেবেছিলাম, এটা নিয়ে গণমাধ্যমে কিছুটা হৈচৈ হবে এবং শুধুমাত্র সেটাই হবে প্রাপ্তি৷ কিন্তু তারা মামলাটি গ্রহণ করেছে৷ এবং এখন আমি ভাবছি, সত্যিই কিছু একটা হতে যাচ্ছে৷ ভালো কোনো প্রাপ্তি হলে তা চমৎকার ব্যাপার হবে, কিন্তু কে জানে কী হবে৷''
আইনি সিদ্ধান্ত যত তাড়াতাড়ি হবে ততই ভালো, কেননা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে৷ লাঙ্গেউগের বাসিন্দাদের হাতে সময় বেশি নেই৷