1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি স্পষ্ট বাংলাদেশে

২ ডিসেম্বর ২০১১

নদী-নালায় ভরা বাংলাদেশে ইদানিং পানির সঙ্কট দেখা যাচ্ছে৷ বহু গ্রামে বিশুদ্ধ পানির সন্ধানে প্রতিদিন মহিলাদের কয়েক মাইল হাঁটতে হচ্ছে৷ আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল ভোগ করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ৷ বাড়ছে সমুদ্রের পানি৷

জলবায়ু শরণার্থী বাড়ছেছবি: Sophie Tarr

মোসাম্মাত মনোয়ারা প্রতি দুদিন পরপর তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে যান খাবার পানি আনতে৷ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচ৷ অন্তত দুই থেকে তিন কলসি পানি তাঁকে আনতে হয়৷ তবে তিনি একা নন৷ তাঁর সঙ্গে আশেপাশের বাড়ির আরো অনেক মহিলা রয়েছেন৷ রাজশাহী জেলার শারমঙ্গোলিয়া গ্রামে পানির অভাব অনেকদিন থেকেই দেখা যাচ্ছে৷ গত এক দশক ধরে মনোয়ারা এভাবেই পরিবারের জন্য পানি সংগ্রহ করছে৷ এর কারণ হল তাদের এলাকার টিউবওয়েলগুলো শুকিয়ে গেছে৷

ঢাকার প্রেস ক্লাবে তিনি এসেছিলেন এই সমস্যা তুলে ধরতে৷ অক্টোবর মাসে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে একটি ট্রাইবুনালের শুনানি হয়৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন মোসাম্মত মনোয়ারা৷ তিনি বলেন, ‘‘রেশনের মত করে আমাদের পানি ব্যবহার করতে হয়৷ সপ্তাহে একদিন আমরা গোসল করি৷ রান্নাও করতে হয় খুব অল্প পরিমাণে কারণ ধোয়া-ধুয়ির জন্য পানি থাকে না৷''

‘‘আমরা দিনের পর দিন না খেয়ে থাকি'' – রুবিনা আখতার

একই কথা জানালেন ২৫ বছর বয়সি রুবিনা আখতার৷ রংপুর জেলার চর মরনিয়া গ্রামের বাসিন্দা রুবিনা৷ তিনি জানান,‘‘তিস্তা নদির ভাঙনে আমি আমার ঘর-বাড়ি হারিয়েছি৷ গত পাঁচ বছরে চারবার এই ঘটনা ঘটেছে৷ গত বর্ষায় আমরা নদী থেকে অনেক দূরে ঘর তৈরি করেছিলাম কিন্তু বন্যা সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে৷ আমাদের মাছ ধরার নৌকা পর্যন্ত৷ আমরা এখন খোলা আকাশের নীচে থাকি৷ দয়া করে কেউ যদি কিছু খেতে দেয় তখন আমরা কিছু খাই নয়তো না খেয়ে থাকি৷''

ছবি: AP

বন্যার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে একজন মহিলা জানান, ‘‘আমি পাঁচ বছরে তিনটি বন্যা দেখেছি৷ আমরা এখন বন্যার সঙ্গে বসবাস শুরু করেছি৷ এই পানি গায়ে লাগার ফলে বিভিন্ন ধরণের চুলকানিও দেখা দিয়েছে৷''

যে কোন সময়ে যে কোন ধরণের মহামারি ছড়িয়ে পড়তে পারে

আবু মোস্তফা কামাল পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন৷ তিনি জানান, আবহাওয়া এবং জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে তাতে উপকূলের প্রায় তিন কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হবে৷ এর পাশাপাশি বাংলাদেশের কৃষিকাজও নানাভাবে ব্যাহত হবে৷ তিনি বলেন,‘‘আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক৷ এর ফলে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা বেড়েছে এবং বাড়ছে সমুদ্রের পানিও৷ পানিতে নোনাভাব বেশি, গাছ গাছালি মরে যাচ্ছে – বিশুদ্ধ পানির অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি শহরেই৷ সবচেয়ে বড় ভয় হল এসবের ফলে যেকোন সময়ে যেকোন ধরণের মহামারি ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ আমরা কৃষিনির্ভর দেশ – আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে এই ক্ষেত্রে৷ প্রচণ্ড চাপ পড়ছে পরিকাঠামোর ওপর৷''

একশো কোটি ডলার নিয়ে তর্ক এবং বিতর্ক

গত বছর কানকুনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে সব দেশ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে তাদের সাহায্য করতে একশো কোটি ডলার বরাদ্দ করা হবে৷ সেসব দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে৷ বরাদ্দ করা এই অর্থ দিয়ে ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষদের সাহায্য করা হবে৷ তবে কীভাবে এই অর্থ ব্যয় করা হবে তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে বিতর্ক৷ এই অর্থ নিয়ন্ত্রণ করবে কে? ঠিক কোন কোন খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হবে? এসব প্রশ্ন নিয়েই আলোচনা করা হচ্ছে ডারবানে৷ বাংলাদেশের বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ জানান, অতি দ্রুত এই অর্থ বাংলাদেশের প্রয়োজন৷ হাসান মাহমুদ জানান,‘‘আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের মানিয়ে চলতে হবে৷ এবং এর জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আমরা নদীর ভাঙন বন্ধ করতে নদীর পার বাঁধাই করতে পারি, নদীর তলায় খনন করতে পারি – এসবের ফলে নদীকে আরো নানাভাবে আমরা ব্যবহার করতে পারবো৷ বন্যা রোধ করা সম্ভব হবে৷ আর তা হলে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষকে আর গৃহহীন হতে হবে না৷''

ড. হাসান মাহমুদ বলেন, শুধু বাংলাদেশের সমস্যা মেটাতেই প্রয়োজন অন্তত দশ কোটি ডলার এবং তা প্রয়োজন আগামী তিন-চার বছরের মধ্যেই৷ কাজ এখন থেকেই শুরু করতে হবে নয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ