সকাল সাতটার সময় গোরোতে কনকনে ঠান্ডা৷ ঘন কুয়াশা পোডেল্টার বন্দর প্রায় ঢেকে দিয়েছে৷ ফলে ভাদিস পেসান্টির জন্য সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘বার বার নির্দিষ্ট কিছু স্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়৷ কিন্তু এমন এক সকালে এত ঘন কুয়াশার কারণে দিক নির্ণয় অত্যন্ত কঠিন৷ আমরা এই কুয়াশাকে ‘কালিগা' বলি৷''

ভাদিসের বাবাও অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে জাল ফেলতেন৷ তবে ভাদিস এখন শুধু ‘ক্ল্যাম' ঝিনুক ধরেন৷ কোথায় কতটা ধরা হবে, সেটা দৈনিক ভিত্তিতে স্থির করে দেওয়া হয়৷ ভাদিস বলেন, ‘‘সন্ধ্যাবেলায় আমরা সমবায় থেকে একটা বার্তা পাই৷ তাতে বলা হয় আগামীকাল অমুক জোনে মাছ ধরা হবে৷ ঠিক কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে, তারও উল্লেখ থাকে৷ কত পরিমাণ আমরা ধরে আনতে পারবো, তাও স্থির করে দেওয়া হয়৷''

উপহ্রদের শান্ত পরিবেশে প্রায় আধ ঘণ্টা এগোনোর পর আচমকা শব্দ বেড়ে গেল৷ ভুতের মতো ক্ল্যাম শিকারীরা কুয়াশার মধ্য থেকে বেরিয়ে পড়লেন৷ গোরো উপহ্রদে প্রায় দেড় হাজার নারীপুরুষ এই কাজ করেন৷ শেষ পর্যন্ত ভাদিস-ও তাঁর ক্ল্যাম ধরার এলাকায় পৌঁছে গেলেন৷ পানি গভীর না হলেও বেশ শীতল৷ 

কমপ্রেস্ড এয়ার রেকের সাহায্যে তাঁরা বালুর উপর থেকে ক্ল্যাম সংগ্রহ করেন৷ উপহ্রদের পানির তাপমাত্রা প্রায় ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ শীতকালে ঠিক যেমনটা হওয়া উচিত৷ কিন্তু গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা লাগাতার ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রয়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সেখানেও হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে৷ এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরে ভাদিস পেসান্টি বলেন, ‘‘যেমন সমুদ্রের স্তরে পরিবর্তন ঘটলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা টের পাই৷ অথবা শিরোকো বাতাস বইলে বা চাঁদের বিভিন্ন পর্যায়ের সময়ে তা বোঝা যায়৷ আমাদের এখানে আগে কখনো দেখা যায় নি, এমন মাছ, ক্ল্যাম বা কাঁকড়া দেখলেও আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে পারি৷''

সে কারণে ক্ল্যাম চাষ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে ভাদিস মনে করছেন৷ তাঁর মতে, সেটা জলবায়ুর জন্য ভালো৷ তিনি বলেন, ‘‘ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বা চুনাপাথর দিয়ে খোল তৈরি, যা আবদ্ধ কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়া আর কিছুই নয়৷''

ফারেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোফেসর এলেনা টাম্বুরিনি জলবায়ুর জন্য ক্ল্যাম্পের গুরুত্ব সংক্রান্ত এক গবেষণা চালিয়েছেন৷ তিনিও গোরোর জেলেদের তত্ত্ব সঠিক হিসেবে মনে করেন৷ প্রো. টাম্বুরিনি বলেন, ‘‘বেড়ে ওঠার সময় এই নরম প্রাণীগুলি খোলস তৈরি করে, যা কার্বন-ডাই-অক্সাইড আবদ্ধ করে৷ এক কিলো ক্ল্যাম্প নিলে মনে রাখতে হবে, যে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য যে সিওটু নির্গমন করা হয়েছে, তার মাত্রা কিন্তু বেড়ে ওঠা ক্ল্যাম্পের খোলসে বন্দি গ্যাসের মাত্রার তুলনায় অনেক কম৷ সেটাই এ ক্ষেত্রে বিস্ময়কর ঘটনা৷''

উপহ্রদে প্রায় দশ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গোরোর জেলেরা প্রায় এক ডজন প্রজাতির এই নরম প্রাণী চাষ করছেন৷

প্রায় সাত বছর আগে ভাদিস ও তাঁর সহযোগীরা আরও একটি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প শুরু করেন৷ জোয়ারের টান কাজে লাগিয়ে তাঁরা ভূমধ্যসাগরে অয়েস্টার সংগ্রহ করছেন৷ ভাদিস পেসান্টি বলেন, ‘‘গোটা ইটালিতে একমাত্র আমাদের এখানেই অয়েস্টার উৎপাদন হয়৷ এখন চূড়ান্ত ভাটার সময় চলছে এবং কচি অয়েস্টার-ভরা এই ঝুড়িগুলি শূন্যে ভাসছে ও রোদ পাচ্ছে৷ কয়েক ঘণ্টা পর জোয়ার এলে গোটা এলাকা ডুবে যাবে৷''

এই জগত রক্ষা করতে ভাদিস ও গোরোর জেলেরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন৷

প্রতিবেদন: গুস্তাফ হোফার/এসবি