করোনা মহামারির ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের রুটিরুজিতে টান পড়ছে৷ ফিলিপাইন্সের এক প্রত্যন্ত দ্বীপের জেলেরাও এই সংকটের ধাক্কা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন৷ সামান্য সঞ্চয় তাদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ফিলিপাইন্সের কামোটেস দ্বীপপুঞ্জে মাঝরাত থেকে বৃষ্টি পড়ছে৷ তাই নৌকা নিয়ে বের হওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ ফলে জেলেদের মাথায় হাত৷ কোলিন সেরানিয়ানা ২৫ বছরেরও বেশি সময় থেকে মাছ ধরছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা জেলেরা আবহাওয়ার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছি৷ পূবের দমকা বাতাস এতক্ষণে সরে যাওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু সম্ভবত মার্চ মাস পর্যন্ত এই বাতাস বইতে থাকবে৷ গত বছর সেই সময়েই থেমেছিল৷ আবহাওয়া আর আগের মতো নির্দিষ্ট ধারা মানছে না৷''
সাধারণত জানুয়ারি মাসেই বর্ষার মরসুম শেষ হতো৷ ফেব্রুয়ারি ছিল বছরের অন্যতম শুকনা মাস৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবকিছু বদলে গেছে৷ আবহাওয়ার উপর কড়া নজর রেখে জেলেদের সেই অনুযায়ী কাজ করতে হচ্ছে৷
জলবায়ু পরিবর্তনে জেলেদের ক্ষতি
03:48
কোলিন সেরানিয়ানার চার সন্তান৷ দুই জন বড় হয়ে নিজেদের পথ বেছে নিয়েছে৷ তার স্ত্রী জোসলিন জানালেন, মাছের জোগান কখনো কমে গেলেও তারা ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে পেরেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সমুদ্র থেকে আমরা যা পাই, তাই আমাদের খাদ্য ও আয়ের উৎস৷ সেই অর্থ দিয়েই সন্তানদের স্কুল-কলেজে পাঠাতে পেরেছি৷ তা নিয়ে আমার যথেষ্ট গর্ব রয়েছে৷ আমার স্বামী ও আমি কোনোদিন স্কুলে পড়ি নি৷ কারণ আমাদের সময়ে সেটা সম্ভব ছিল না৷''
বেলার দিকে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হলো৷ কোলিন দুটি বড় মাছ ধরলেন৷ তিনি রেড স্ন্যাপার মাছটি বিক্রি করবেন৷ সেটির ওজন পাঁচ কিলোরও বেশি৷
ভাগ্য ভালো থাকলে তিনি দিনে ১৫ কিলো মাছ ধরতে পারেন৷ পরিবারের জন্য সব সময় কিছুটা রেখে পাড়ার লোকের কাছে বাকিটা বিক্রি করা হয়৷
মাছ নয়, প্লাস্টিক ধরছেন জেলেরা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে গ্রিসের রয়েছে সবচেয়ে বড় মাছ ধরার বহর৷ সেখানকার জেলেরা ‘ফিসিং ফর লেটার’ নামের এক প্রকল্পের আওতায় এজিয়ান সমুদ্র জঞ্জালমুক্ত করছেন৷
ছবি: DW/D. Tosidis
এক অস্বস্থিকর বিস্ময়
জাল খোলার পর মাছের সঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্য দেখছেন জেলেরা৷ গ্রিসের রয়েছে ২৫০টি ট্রলারের বিশাল মাছ ধরার বহর৷ এই বহর সমুদ্রের একটি নির্দিষ্ট গভীরতা অবধি জাল ফেলে মাছ ধরতে পারে৷
ছবি: DW/D. Tosidis
‘ফিশিং ফর লেটার’
সমুদ্রে জমা হওয়া জঞ্জাল সাফ করতে ‘ফিশিং ফর লেটার’ প্রকল্পের আওতায় গ্রিসের জেলেদের ব্যবহার করা হচ্ছে৷ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর অবধি এই প্রকল্প পরিচালনা করা হয়৷
ছবি: DW/D. Tosidis
দেড় টন জঞ্জাল
প্রকল্পের আওতায় অক্টোবর থেকে এখন অবধি এই জেলার এজিয়ান সমুদ্রের তাদের অংশ থেকে দেড় টন আবর্জনা সাফ করেছে৷ প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করতে কাভালা এবং থেসালোনিকি বন্দরের আটটি ট্রলার ব্যবহার করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/D. Tosidis
সমুদ্রের জন্য আশা
‘ফিশিং ফর লেটার’ প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রচলিত চর্চায় পরিবর্তন আনার পাশাপাশি সমুদ্রের তলদেশে জমে থাকা প্লাস্টিক পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ পাশাপাশি এই বিষয়ে মৎস শিল্প সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিও প্রকল্পটির লক্ষ্য৷
ছবি: DW/D. Tosidis
প্লাস্টিকের সিংহাসন
সমুদ্রতলের একটি বড় অংশ এখন প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্যে ঢেকে আছে৷ কখনো কখনো ভাঙা চেয়ারের মতো বড় প্লাস্টিক বর্জ্যেরও সন্ধান মেলে সেখানে৷ এরকম বর্জ্য সামুদ্রিক জীবদের উপর কেমন প্রভাব ফেলছে তা বুঝতে গবেষণা করছেন গবেষকরা৷
ছবি: DW/D. Tosidis
নানা রকম আবর্জনা
‘ফিশিং ফর লেটার’-এর প্রধান সমুদ্র বিজ্ঞানী ক্রিস্টিনা কনটাক্সি জেলেদের জালে ধরা পড়া একটি প্লাস্টিক ব্যাগ দেখছেন৷ এমন ব্যাগ, বোতল আর ক্যানই সমুদ্রে বেশি পাওয়া যায়৷ যেসব অঞ্চলে পর্যটক বেশি, সেসব অঞ্চলে এমন আবর্জনাও বেশি থাকে৷
ছবি: DW/D. Tosidis
ফিরিয়ে আনা হয় মূল ভূখণ্ডে
মাছ থেকে প্লাস্টিক আলাদা করার পর সেগুলো প্রকল্পের দেয়া বড় ব্যাগে ভরা হয়৷ এরপর মূল ভূখণ্ডে ফিরিয়ে এনে সেগুলো পরিবেশবান্ধব উপায়ে নষ্ট করা হয়৷
ছবি: DW/D. Tosidis
বছরে সত্তর হাজার টন মাছ
গ্রিসে মৎসজীবীর সংখ্যা দশ হাজারের মতো৷ তারা বছরে গড়ে সত্তর হাজার টনের মতো মাছ ধরেন৷
ছবি: DW/D. Tosidis
অ্যাক্টিভিস্টরাও সক্রিয়
‘ফিশিং ফর লেটার’ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তরা সমুদ্র থেকে তোলা প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্যের হিসেব রাখেন৷ বর্তমানে গ্রিসের উত্তরাঞ্চলে এই প্রকল্প চলছে৷
ছবি: DW/D. Tosidis
9 ছবি1 | 9
মহামারির আগে তিনি এক ব্যবসায়ীর কাছে মাছ বিক্রি করতেন, যিনি পাইকারি বাজারে সরবরাহ করেন৷ তাতে মুনাফা হতো৷ কিন্তু আপাতত বাজার বন্ধ রয়েছে৷ প্রতিবেশীদের অত বেশি দাম দেবার সামর্থ্য নেই৷
জোসলিন বিক্রিবাটার হিসেব রাখেন৷ কিছু টাকা বেঁচে গেলে তিনি এক সেভিংস ক্লাবে সেগুলি জমা রাখেন৷ জোসলিন বলেন, ‘‘সেভিংস ক্লাব আমাদের কাছে ব্যাংকের মতো৷ আমাদের দ্বীপে কোনো ব্যাংক নেই৷ তাই আমরা এভাবে মানুষকে সঞ্চয় করতে শেখাই৷''
পিলারের বেশিরভাগ মানুষই পেশায় জেলে৷ সেখানে অন্য কোনো কাজের তেমন সুযোগ নেই৷ প্রায় চার বছর আগে স্থানীয় সেভিংস ক্লাব গঠন করা হয়েছিল৷