জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেন এমন বিজ্ঞানীরা বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন৷ অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ পরিণতির জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ব নেতারা কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় আগামীতে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বিশ্বকে৷ আর কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সম্পতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট এবং বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ ঝড়, বন্যা এবং খরা দেখা দিতে পারে৷ এ অবস্থা চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে৷
বর্তমানে যে হারে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে যাবে৷ এমনটাই জানিয়েছে, ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসি৷
আইপিসিসি দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ পরিকল্পনা এবং জলবায়ু রক্ষা বিভাগের প্রধান সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘মানব ইতিহাসের জন্য আগামী কয়েকটা বছর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়৷ আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি, আপনাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছি৷ এখন প্রতিটি দেশের সরকারের দায়িত্ব নিজেদের দায়িত্ব পালন করা৷ '' আইপিসিসি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ভয়াবহতাখুব দ্রুতই টের পাবে বিশ্ববাসী৷ গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক জেনিফার মর্গান বলেছেন, ‘‘বিজ্ঞানীরা অদূর ভবিষ্যতের জন্য যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, সেসব ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে৷ ''
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ‘ভাসমান’ যুদ্ধ
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় আবাদি জমি বছরে ছয় মাসেরও বেশি সময় পানির নীচে তলিয়ে থাকে৷ জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার গল্প শুনুন তাদের মুখেই৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শৈশব থেকেই ভাসমান চাষ করেন সানোয়ার মিয়া
পিরোজপুর জেলার বৈঠাকাটা ইউনিয়নের সানোয়ার মিয়ার বয়স ৪৩ বছর৷ শৈশব থেকেই বাবার হাত ধরে শিখেছেন ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ৷ পাঁচ হাজার টাকায় এক খণ্ড জমি দুই বছরের জন্য লিজ নিয়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা উৎপাদন করছেন৷ সব খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে তাতে সংসার চলে যায় কোনোরকমে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
মৌসুমে পাঁচবার চারা
বাবুল হাওলাদার যে যায়গাটিতে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন, সেটি তাঁর নিজেরই৷ শুকনো মৌসুমে মাত্র একবার এ জমিতে ধান চাষ করতে পারলেও ডুবন্ত জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে তিনি কমপক্ষে পাঁচ বার চারা উৎপাদন করতে পারেন৷ এতে তাঁর লাভও ভালো হয়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
স্বামীকে সহায়তা করেন আকলিমা
আকলিমা বেগমের স্বামী ভাসমান পদ্ধতিতে গাছের চারা ও সবজি চাষাবাদ করেন জলভূমিতে৷ স্বামীর কৃষিকাজে সবসময় সহায়তা করেন তিনি৷ বীজ বপন থেকে চারা গজানো পর্যন্ত যতরকমের পরিচর্যা, তার সবই তিনি করে থাকেন বাড়ির আঙ্গিনায় বসে৷ ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদে, চারা গজানোর কাজটি বাড়িতেই করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
বীজ বপন করেই চলে সংসার
আঞ্জু আরা বেগম অন্যের জমির জন্য বীজ বপনের কাজ করেন৷ কচুরিপানা ও ঘাস দিয়ে একটি গোলাকার বল তৈরি করে তার ভেতরে বীজ বপন করতে হয়৷ এক হাজার বীজ বপনের জন্য তিনি পারিশ্রমিক পান দেড়শ টাকা৷ দিনে সর্বোচ্চ দেড় হাজার পর্যন্ত বীজ বপন করতে পারেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
ভাসমান চাষাবাদ সহজ
ডুবে থাকা জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদই সহজ মনে হয় বৈঠাকাটা এলাকার খায়রুল ইসলামের কাছে৷ ভাসমান পদ্ধতিতে তিনি বিভিন্ন রকম লতা-জাতীয় সবজি চাষ করেন৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
কচুরিপানা বিক্রি
হারুনুর রশীদের মতো অনেকেই আছেন, কচুরিপানা বিক্রিই যাঁদের একমাত্র পেশা৷ বাড়ির আশপাশের বিভিন্ন নীচু এলাকায় তাঁরা আটকে রাখেন কচুরিপানা৷ মৌসুমে তা বিক্রি করেন কৃষকদের কাছে৷ এক নৌকা কচুরিপানা বিক্রি হয় পাঁচ থেকে আট হাজার টাকায়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
শ্যাওলা-ঘাস বিক্রি করেন হারেছ মিয়া
ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য পানির নিচের শ্যাওলা খুবই প্রয়োজনীয়৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের কাছে শ্যাওলা বিক্রি করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
ছয় মাসে ছয় বার
নিজের জলমগ্ন জায়গায় ছয় মাসে ছয় বার সবজির চারা উৎপাদন করেন আব্দুর রহমান৷ প্রথম দুই বারের চারা বিক্রি করে তাঁর সব খরচ উঠে যায়, বাকি চার বারের পুরোটাই লাভ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
জৈব পদ্ধতিতেই চাষাবাদ
নাজিরপুরের রুহুল আমিন জানান, ভাসমান পদ্ধতিতে যে চাষাবাদ হয়, তাতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করতে হয় না৷ পচা কচুরিপানাই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে জৈব সার হিসেবে কাজ করে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
9 ছবি1 | 9
গবেষণা প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক মাইলেস অ্যালেন বলেছেন, ‘‘আমরা যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবেশে নির্গমণ করছি, আমাদের দায়িত্ব তা অপসারণ করে পরিবেশে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা৷'' ৬ হাজারেরও বেশি সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে৷
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে জৈবজ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে৷ তবে গত ৩০ বছরে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়েছে, তা অপসারণ করতে ভারতের আয়তনের দ্বিগুণ এলাকায় জৈব জ্বালানি উৎপাদনকারী ফসল উৎপাদন করতে হবে৷ তাহলেই ১ হাজার ২০০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইডকে ভূগর্ভে পাঠানো সম্ভব হবে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছোট-বড় দ্বীপ, উন্নয়নশীল দেশ এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
আগামী ডিসেম্বরে পোল্যান্ডে হতে যাচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন৷ সেখানে বিশ্বনেতাদের উপর এ বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷