রাশিয়ার গেওফিজিকা বিমানে গ্লোরিয়া পরিমাপ যন্ত্র দিয়ে বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে৷ তবে ঝুঁকিপূর্ণ এই মিশনে পদে পদে বিপদের আশঙ্কা ছিল৷ শেষ পর্যন্ত সবকিছু অক্ষত থাকায় নিশ্চিন্ত গবেষকরা৷
বিজ্ঞাপন
সুইডেনের উত্তরে কনট্রোল সেন্টারে জলবায়ু গবেষকরা গোটা মিশনের উপর সরাসরি নজর রাখছেন৷ পরীক্ষার এলাকা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা আছে৷ পাইলট গেওফিজিকা বিমানটিকে হুবহু পূর্বনির্ধারিত রুট অনুযায়ী উড়িয়ে নিয়ে যাবেন৷ একমাত্র এভাবেই নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া সম্ভব৷ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গ্লোরিয়া পৃথিবীতে তথ্য পাঠাবে৷
প্রায় ১০ বছর ধরে গবেষকদল এই মুহূর্তের জন্য কাজ করে গেছে৷ প্রায় ১ কোটি ইউরো মূল্যের গবেষণা প্রকল্পে সাফল্যের প্রথম স্বাদ পেয়ে উত্তেজনা কিছুটা কমলো৷
গেওফিজিকা বিমানটিকে উড়ালের আগে প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ কিন্তু আবহাওয়া আরও খারাপ হয়েছে৷ মেরু অঞ্চলের এক ঝড় গোটা মিশন বানচাল করে দিতে পারে৷ উত্তর মেরু অঞ্চলে আবহাওয়ার এমন তারতম্য সামাল দেওয়া বিশেষ করে বিমানের টায়ারের জন্য মোটেই সহজ নয়৷ গ্লোরিয়া কি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ঠিকমতো কাজ করে মূল্যবান তথ্য পাঠাতে পারবে? জলবায়ু গবেষক মার্টিন রিসে বলেন, ‘‘বিমান আকাশে উড়লে সবার, বিশেষ করে সহকর্মীদের উত্তেজনা বেড়ে যায়৷ কারণ অনেক ভুল হতে পারে৷ উড়াল ঠিকমতো পূর্ণ হলে সবাই তাই নিশ্চিন্ত বোধ করেন৷''
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন যেভাবে
লক্ষ্যটি খুবই সহজ৷ কার্বন ডাই অক্সাইড জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শত্রু৷ আর গাড়ি, স্মার্টফোনের মতো কিছু জিনিস, যা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ব্যবহার কম করলে অর্থ খরচ কমবে, জলবায়ুর জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
এ বিষয়ে কথা বলা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আপনার কোন ছোট পদক্ষেপ বড় প্রভাব ফেলতে পারে? এটা নিয়ে কথা বলুন পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে৷ আর এটা নিশ্চিত করুন যে, এ বিষয়ে তারা যাতে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷
ছবি: Gemeinde Saerbeck/U.Gunnka
নিজের বাড়িতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
বাড়িতে বৈদ্যুতিক সেবা দেয়ার জন্য এমন কোম্পানিকে বেছে নিতে হবে যারা তাদের বিদ্যুত উৎপাদনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাতাস বা সৌরশক্তি ব্যবহার করে এবং যাতে তারা ‘গ্রিন ই এনার্জি’র অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়৷ যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজের বিদ্যুৎ বিলের দিকে নজর রাখুন৷ অনেক কোম্পানি বিলে লিখে দেয়, তাদের বিদ্যুত উৎপাদনে কতটা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা
ঠান্ডার সময় বাড়ির তাপমাত্রা বাড়ানো বা গরমের সময় শীতল করতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়৷ তাই নিজের আবাসস্থলকে ‘এনার্জি এফিসিয়েন্ট’ বা জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, যাতে ঘরে বাতাস চলাচল এবং বাতাস বন্ধ রেখে উত্তাপ বাড়ানোর সহজ ব্যবস্থা থাকে৷
ছবি: Imago/Westend61
জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি
১৯৮৭ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের যন্ত্রপাতির প্রচলন হয়৷ এ ধরনের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এ পর্যন্ত সেখানকার বাতাসকে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত রাখা গেছে, যা বছরে ৪৪ কোটি গাড়ি থেকে নিঃসরণ হয়৷ জ্বালানি সাশ্রয়ী খুব কম খরচে কার্বন নিঃসরণ রোধের সহজ উপায়৷ তাই রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন এবং এ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার সময় ‘এনার্জি স্টার’ লেবেল দেখে কেনা উচিত৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/C. Ohde
পানি খরচ কমানো
পানির অপচয় রোধ করেও কার্বন দূষণ কমানো যায়, কেননা, পানি পাম্প করতে, গরম করতে বা ঠাণ্ডা করতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়৷ তাই গোসল করার সময় কম পানি খরচ করুন৷ প্রয়োজন না হলে দাঁত মাজার সময় পানির কল বন্ধ রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
যেসব খাবার কিনছেন পুরোটা খান, মাংসের উপর চাপ কমান
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ ভাগ জ্বালানি খরচ হয় খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেটজাত করা এবং সরবরাহে৷ তাই খাবার কম অপচয় করলে জ্বালানি বা শক্তি কম খরচ হয়৷ গবাদি পশু পালনে প্রচুর জ্বালানি অপচয় হয়৷ তাই মাংস খাওয়া কমালে বিরাট পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷
ছবি: Colourbox
ভালো বাল্ব কিনুন
অন্য সব বাল্বের চেয়ে এলইডি বাল্ব শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে৷ এসব বাল্ব দীর্ঘস্থায়ী এবং খরচও কম৷ ১০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব, সাধারণ ৬০ ওয়াটের বাল্বের কাজ দেয় এবং এতে অনেক কম খরচ হয়৷
ছবি: AP
প্লাগ খুলে রাখুন
বাড়ির সব যন্ত্রপাতি যোগ করলে হয়ত দেখা যাবে ৬৫টি আলাদা যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো বিদ্যুতের সাহায্যে চলে৷ তাই যেসব যন্ত্রপাতি পুরোপুরি চার্জ হয়ে গেছে, সেগুলো চার্জে দিয়ে না রাখা, বা কোনো টাইমার সেট করা যাতে নির্দিষ্ট সময় পর চার্জিং বন্ধ হয়ে যায়৷ এছাড়া কম্পিউটার বা ট্যাব, ফোনের মনিটর কম পাওয়ার মোডে দিলেও জ্বালানির কম অপচয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Pape
জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ব্যবহার
গ্যাস-স্মার্ট গাড়ি, যেমন হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক যান চালালে জ্বালানি এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/P. Mlch
বিমান, ট্রেন এবং অটোমোবাইলের ক্ষেত্রে আর একবার ভাবুন
বড় শহরগুলোতে যতটা পারেন হাঁটুন বা গণ পরিবহন ব্যবহার করুন৷ এর ফলে ব্যয়ও কমবে, জ্বালানির অপচয়ও কম হবে৷ সবচেয়ে বড় কথা এর ফলে বায়ু দূষণ অনেক কমবে৷ এছাড়া অনেক মানুষ যদি বিমানে চড়া কমিয়ে দেয়, তাহলে বড় ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে৷ কেননা, আকাশ পথে চলাচল জলবায়ু দূষণের অন্যতম বড় মাধ্যম৷ বিমানের বিকল্প হিসেবে যদি ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, সেটাই বেছে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Balzarini
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে লবণ সহিষ্ণু ধান নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ মাটি লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় সূর্যমুখীর ফুলের আবাদও বেড়েছে৷ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট৷ প্রচলিত ধানের বদলে এ ধরনের ধান চাষ যত বাড়বে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ততই সহজ হবে৷
ছবি: CC/Rishwanth Jayaraj
11 ছবি1 | 11
রাতে প্রায় ৪ ঘণ্টার উড়ালের পর বিমানটি ফিরে এলো৷ কিন্তু ঠিক তখনই ঘটলো সেই ভয়ঙ্কর কাণ্ড৷ টায়ার ফেটে যাওয়ায় বিমানটি রানওয়েতে পিছলে গেলো৷ গবেষকদের মনে গভীর উৎকণ্ঠা৷ সংবেদনশীল পরিমাপের যন্ত্রটির কি কোনো ক্ষতি হলো? পাইলট এই অবস্থায় মাথা ঠান্ডা করে রুটিন মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলেন৷ ফলে কোনো বিপর্যয় ঘটলো না৷ তবে অবিলম্বে ক্ষতির মাত্রা পরখ করতে হবে৷ মার্টিন রিসে বলেন, ‘‘অতি সংবেদনশীল পরিমাপের যন্ত্রটির কারণে আমাদের জন্য বিমানের ল্যান্ডিং ছিল ভয়ঙ্কর এক সময়৷ টায়ার ফেটে যাবার পর বিমানটি সামান্য ঘুরে গিয়েছিল৷ তখন কিছু ভেঙে যাবার একটা আশঙ্কা ছিল৷ যদিও আমরা যন্ত্রটি ভালোভাবে লাগিয়েছিলাম, যাতে কোনো ক্ষতি না হয়৷ তেমনটা ঘটলে এক ধাক্কায় আরও কয়েক বছর পিছিয়ে যেতাম৷ শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক থাকায় আমরা নিশ্চিন্ত হলাম৷''
গবেষকরা অত্যন্ত মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷ গ্লোরিয়া বায়ুমণ্ডলের প্রক্রিয়া এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে৷ ফলে হয়ত কয়েক সপ্তাহ আগেই আবহাওয়ার নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাষ পাওয়া যাবে৷