জলবায়ু পরিবর্তন
২৭ মে ২০১২![Bangladeshi commuters wade through the flooded streets of Dhaka, Bangladesh, 22 July 2007. At least 15 people have been killed in floods in Bangladesh triggered by heavy monsoon rains over the past three days. EPA/ABIR ABDULLAH +++(c) dpa - Bildfunk+++](https://static.dw.com/image/15818265_800.webp)
জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিত ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং জ্বালানি সমস্যা ও এর সমাধান' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জনস্বাস্থ্যের হুমকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়৷ ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের হুমকি ও এর প্রতিকারে কৌশলগত পরিকল্পনা' বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্মানির বিলেফেল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোবারক হোসেন খান৷
সম্মেলনের কারিগরি অধিবেশনে ড. খান বলেন, ‘‘আইপিসি ২০১২ প্রতিবেদন অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের যে নেতিবাচক প্রভাব, তা সবচেয়ে বেশি পড়ছে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের উপর৷ ফলে এসব দেশের জনস্বাস্থ্যের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্যণীয়৷ আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা বা ঘাটতি বাড়ছে৷ কারণ বন্যা, সাইক্লোন হলে পানি দূষিত হচ্ছে৷ আবার যখন অতিরিক্ত গরম পড়ছে তখনও আমরা ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে বেশি পরিমাণ পানি তুলে নিচ্ছি৷ ফলে দেখা যাচ্ছে পানির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷ আবার পানির সাথে জনস্বাস্থ্যের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে৷ কারণ পানিবাহিত অনেক রোগের প্রকোপ জনস্বাস্থ্যকে হুমকির দিকে ঠেলে দেয়৷ যেমন বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের পর দুর্যোগ পীড়িত এলাকায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার সংক্রমণ দেখা যায়৷''
অবশ্য, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মতো সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে শুধুই জলবায়ু পরিবর্তনের ফল তা জোর দিয়ে বলা যায় না৷ তবে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বৃদ্ধির সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. মোবারক হোসেন খান৷ আর এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়৷ তাঁর মতে, একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে৷ অন্যদিকে, এর পরোক্ষ প্রভাবে মানুষ নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে৷
এমতাবস্থায় জনস্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য সর্বপ্রথম ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন এই বাংলাদেশি-জার্মান বিজ্ঞানী৷ তাঁর মতে, ‘‘আমাদের কর্মকাণ্ড এবং আচরণের কারণেই পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে৷ আবার পরিবেশ সর্বপ্রথম আমাদেরই আঘাত হানছে এবং হানবে৷ তাই ব্যক্তিপর্যায়েই আমাদের প্রথম এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে এবং সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে৷ যেমন আমাদের নিজেদেরই উচিত পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ না করা এবং ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলা৷ আবার সুযোগ থাকলে নিজেদের জায়গা নিজেদেরই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে৷ এতে করে কারো ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয় না৷ বরং এমন কাজের মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজেকে রক্ষা করা হয়, তেমনি অপরকে বাঁচানোর কাজও করা হয়৷ ফলে আমার নিজের কাজের মাধ্যমে সবাই লাভবান হয়৷ তবে একইসাথে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষকেও এক্ষেত্রে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জনস্বাস্থ্য ভেঙে না পড়ে এবং গোটা সমাজে বিপর্যয় না ঘটে৷''
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়