দূষণ যেভাবে হচ্ছে তাতে এই শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা দুই দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। জাতিসংঘের রিপোর্ট প্রকাশ।
বিজ্ঞাপন
সামনেই জলবায়ু বৈঠক। পরিবেশ রক্ষায় নতুন টার্গেট স্থির হবে সেখানে। কিন্তু প্যারিস জলবায়ু বৈঠকে ১২০টি দেশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। জাতিসংঘের রিপোর্টে তা স্পষ্ট। রিপোর্ট বলছে, বিশ্বজুড়ে দূষণের যে মাত্রা, তাতে এই শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা দুই দশমিক সাত ডিগ্রি বাড়তে পারে। অথচ প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ঠিক হয়েছিল, তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির মধ্যে আটকে রাখতে হবে।
‘আমাদের দেশ এখন মরুভূমি হবার পথে’
একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে চরম অনাহার- এর মাঝে মরুভূমিতে পরিণত হবার মুখে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন৷
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
অর্থনীতির কোপ
১২ বছর বয়সি ভাগ্নেকে সাথে নিয়ে আলি কয়েক ঘণ্টা ধরে একটি বাবলা গাছ কাটার চেষ্টা চালাচ্ছে। এককালে এই আলির রোজগার চলতো চাষ ও ঘরামির কাজ করে। ইয়েমেনের পড়ন্ত অর্থনীতি বন্ধ করেছে সেই সুযোগ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
জ্বালানির অভাব
এক সময় ইয়েমেনের বেশির ভাগ চুলা জ্বলত গ্যাসে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ধসে পড়া অর্থনীতির ফলে সেই জায়গা দখল করেছে কাঠ ও পাথর। ফলে বাজারে দামি পণ্য বলতে কাঠই, যা বিক্রি করছে আলির মতো অসংখ্য জীবিকা-হারানো মানুষ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
অনাহার
সাত সন্তানের পিতা আলি বলেন, ‘‘যদি বেশি করে কাঠ আমরা জোগাড় করতে পারি, তাহলে আমাদের দুমুঠো খাবার জোটে। কিন্তু আজকাল গাছের অভাব চোখে পড়ার মতো। কী হবে জানি না। হয় একসাথে বাঁচবো, বা একসাথে মরবো।’’
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
কেন এই অভাব
টানা ছয় বছর ধরে চলা সংঘর্ষের কারণে ইয়েমেনের আশি শতাংশ মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের সম্পদ ও শস্য থেকে। গবেষণা বলছে, দেশটির বেশির ভাগ জনতার জীবন নির্ভর করছে বৈদেশিক সহায়তার ওপর। ইয়েমেনের মূল বন্দর হোদেইদাহ হুতিপন্থি গোষ্ঠীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশটির জ্বালানি খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
ঝুঁকিতে ইয়েমেন
রাজধানী সানাতেই প্রতি বছর প্রয়োজন হয় আট লাখ ৮৬হাজার গাছের কাঠ। গত তিন মাসেই কাটা হয়েছে ৫০ লাখের বেশি গাছ, জানাচ্ছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী আবদুল্লাহ আবদুল-ফুতুহ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
মরুভূমি হবে ইয়েমেন
কাঠবিক্রেতা সুলাইমান বলেন, ‘‘কাঠের চাহিদা আরো বাড়ে যখন হোদেইদাহ বন্দরে জাহাজ আসে। কিন্তু আমরা ভয় পাচ্ছি যে, খুব শিগগিরই এই দেশটা মরুভূমি হয়ে যাবে। এখনই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আগে যে ঘন সবুজ দেখা যেতো পাহাড়ের গায়ে, তা আজ আর নেই।’’
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
কাঠের বাজার
গাছের মালিকের কাছ থেকে একশ মার্কিন ডলার সমান দামে একটি বাবলা গাছ কিনতে পারেন কাঠুরেরা। তারপর সেই গাছের কাঠ ট্রাকে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানী সানাসহ অন্যান্য শহরে। এক ট্রাক কাঠ থেকে আয় হয় তিনশ থেকে সাতশ মার্কিন ডলার।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
7 ছবি1 | 7
কেন এই বৃদ্ধি
রিপোর্ট বলছে, কার্বন ফুটপ্রিন্টই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ। তথ্য দিয়ে তাদের বক্তব্য প্রমাণ করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাসের দূষণ সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ কমার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু প্যারিস সম্মেলনে স্থির হয়েছিল তা ৫৫ শতাংশ কমানো হবে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহু দূরে দাঁড়িয়ে আছে দেশগুলি। দ্রুত লক্ষ্যপূরণ করতে না পারলে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া এবং পরিবেশের অবস্থা আরো খারাপ হবে সচেতন করা হয়েছে রিপোর্টে।
বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ করতে হলে প্রতি বছর গোটা পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ ২৮ গিগাটন কমাতে হবে। অর্থাৎ, প্রতিটি দেশকে বাৎসরিক কার্বন ফুটপ্রিন্ট ৩০ শতাংশ হারে কমাতে হবে।
জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত সংস্থার প্রধান ইংগার অ্যান্ডারসন বলেছেন, ''ঘড়ি অত্যন্ত দ্রুত চলছে। হাতে মাত্র আট বছর সময় আছে। এরমধ্যে পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়িত করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহতার সামনে দাঁড়াতে হবে বিশ্বকে।''
পৃথিবী জ্বলছে...
তাপদাহ তীব্র হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ হেক্টর বন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে৷ এই মুহূর্তে বিশ্বের নানা দেশে জ্বলতে থাকা আগুনের কয়েকটি চিত্র দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: ROMAN KUTUKOV/REUTERS
রাশিয়া: স্বস্তির অবকাশ নেই
রাশিয়ার বেশ কিছু এলাকায় কয়েক সপ্তাহ ধরে আগুন জ্বলছে৷ উত্তর-পূর্বের ইয়াকুতিয়া ও এর আশেপাশের এলাকা সবচেয়ে ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, রাশিয়া জুড়ে ২৫০-এরও বেশি স্থানে দাবানল ছড়িয়েছে, জ্বলছে ৮৬ লাখ একর বনভূমি৷
ছবি: ROMAN KUTUKOV/REUTERS
কুয়াশা? না, ছাই!
কেবল আগুনই যে স্থানীয়দের সংকটে পরিণত হয়েছে, এমন নয়৷ ঘন ধোঁয়া এবং ছাই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাতে ছড়িয়ে পড়ছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে সাইবেরিয়ান শহর ক্রাসনোয়ার্স্ক৷ শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাড়ির বাইরে শ্বাস নেয়াও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: REUTERS
গ্রিস: নিজভূমে উদ্বাস্তু
গ্রিসের দ্বীপ ইউবোয়ার পেফকি বন্দরে ফেরি দাঁড়িয়ে আছে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই অপর পাশের মূল ভূখণ্ডে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমাবেন বাসিন্দারা৷ যখন ফিরে আসবেন, মোটামুটি নিশ্চিত, তাদের বাড়িঘর কিছুই থাকবে না৷ দমকলের অগ্নিনির্বাপক বিমান আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে৷ তবে তাতে কাজ হচ্ছে না৷
ছবি: ALEXANDROS AVRAMIDIS/REUTERS
বেপরোয়া প্রচেষ্টা
সবাই কিন্তু পালিয়ে যাচ্ছেন না৷ অনেকেই নিজেদের বাড়িঘর রক্ষায় দমকলের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু কখনো কখনো এই চেষ্টা সহায়তার বদলে আরো বিপত্তি তৈরি করছে৷ যেমন, ছবির এই ব্যক্তি গাছের ডাল নিয়ে আগুন থামানোর চেষ্টা করছেন৷ নিজেদের বিপদের মুখে ঠেলে কর্তৃপক্ষের জন্য আরো বিপদ তৈরি করছেন অনেকে৷
ছবি: NICOLAS ECONOMOU/REUTERS
তুরস্ক: হুমকিতে আবাসিক এলাকা
গ্রিস এবং ইটালির পাশাপাশি তুরস্কও আগুনের সঙ্গে লড়াই করছে৷ আগুনের লেলিহান শিখা বন থেকে আবাসিক এলাকাতেও থাবা বসাচ্ছে৷ ছবিতে দেথা যাচ্ছে একটি ভবনকে আগুন থেকে বাঁচাতে লড়াই করছেন দমকলকর্মীরা৷ তুরস্কে দাবানলে দেড় লাখ হেক্টরেরও বেশি এলাকা জুড়ে আগুন ছড়িয়েছে৷ দাবানল গ্রাস করেছে আস্ত গ্রামকেও৷
ছবি: KENAN GURBUZ/REUTERS
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ডিক্সি ফায়ার
অ্যামেরিকার পশ্চিম উপকূলে ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫,৭০০টি আগুন জ্বলছে৷ দাবানলের মৌসুম এখনও শুরুই হয়নি৷ রাজ্যটির ইতিহাসে এই ডিক্সি ফায়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম৷ গ্রিনভিল নামের একটি শহর এই আগুনে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে৷ ছবিতে এক দমকলকর্মীকে আগুনের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: FRED GREAVES/REUTERS
মরার ওপর খাঁড়ার ঘা
দাবানল তো আছেই, পাশাপাশি সান্তা বারবারা পাহাড়ে তোলা এই ছবির মতো হঠাৎ করেই ছাই ও জ্বলন্ত কয়লার ঘূর্ণি পরিস্থিতি আরো সংকটময় করে তুলছে৷ দাবানলের ফলে আবহাওয়া নিজের মতো করে কিছুক্ষণ পরপরই পালটে যাচ্ছে৷ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে স্থানীয় গভর্নররা এখন ওয়াশিংটনের সহায়তার আশা করছেন৷ আরো অনেক কর্মী ও অগ্নিনির্বাপক বিমান প্রয়োজন৷
ছবি: David McNew/REUTERS
7 ছবি1 | 7
প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য প্রতিটি দেশকে নিজের মতো টার্গেট তৈরি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে যে বিশেষ লাভ হয়নি, তা এখন স্পষ্ট। এর ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এবারের সম্মেলনে কড়া ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুকোমুখি হতে হবে।
বস্তুত, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গোটা বিশ্বে এবছর তাপপ্রবাহ দেখা গেছে। দাবানল, তাপপ্রবাহ, বন্যায় ক্ষতি হয়েছে অনেক। আবহাওয়ার খামখেয়ালি রূপ দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে এই সমস্ত বিষয়গুলিকেই আলোচনায় রাখা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কোভিড এবং আবহাওয়া
কোভিড এবং লকডাউনের ফলে গোটা বিশ্বেই আবহাওয়ার সামান্য উন্নতি দেখা গেছিল। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেশ খানিকটা কমেছিল। কিন্তু লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে সেই গ্রাফ ধরে রাখা যায়নি। ফের কার্বন নিঃসরণের গ্রাফ উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, লকডাউনের সময়ের গ্রাফ যদি বেধে ফেলা যেত, তাহলে পরিবেশের পক্ষে তা ভালো হতো।