পরাগায়ন উদ্ভিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখে গাছপালা কি আগের মতোই বংশবৃদ্ধি করতে পারবে? বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
কোন খাদ্য সুস্বাদু, মৌমাছি তা ঠিক বোঝে৷ কিন্তু গাছপালাই আবার সেই খোরাক স্থির করে দেয়৷ প্রথমে এককভাবে সেই কাজ করলেও এক ধরনের মধুর সাহায্যে গাছ স্থির করে দেয়, কোন পোকা পরাগায়ন করবে, কোনটি তা করবে না৷
গাছের নিজস্ব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো এক সময়ে সম্ভবত তা বদলে যায়৷ ভুপার্টাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারট্রুড লোহাউস তা পর্যবেক্ষণ করছেন৷ তিনি উদ্ভিদজাত নেকটার ও উদ্ভিদের রক্ত বলে পরিচিত ফ্লোয়েম রস বিশেষজ্ঞ৷ সেই রক্তই নেকটারের ভিত্তি৷ ঠিক কীভাবে এবং কোন পরিবেশে শর্করা ও অ্যামিনো অ্যাসিডের মিশ্রণ গাছের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, সে বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে চান তিনি৷ কারণ গাছের রস শুধু নেকটারের স্বাদ ও কোন পোকার সেই স্বাদ পছন্দ হবে সেটাই স্থির করে না, সেইসঙ্গে গাছের বেঁচে থাকার ক্ষমতাও নির্ধারণ করে৷
তবে সেই পদার্থ উদ্ভিদ থেকে বার করা বেশ কঠিন৷ সেটাই হলো সমস্যা৷ সেই কাজে সাহায্য করতে পারে অ্যাফিড বা জাবপোকা৷ তবে সব পাতার উপর এই পোকা পাওয়া যায় না৷ সেই পোকা ধরা কিন্তু এমন কিছু কঠিন নয়৷ লোহাউস বলেন, ‘‘ছোট খাঁচা ও একটি ব্রাশ থাকলেই হবে৷ খুব সাবধানে জাবপোকা ধরে খাঁচায় পুরতে হয়৷ কিছু পোকা ব্রাশেই লেগে থাকে৷’’
গাছের রক্তের স্বাদ বদলাতে চান বিজ্ঞানীরা
03:56
বলা বাহুল্য, পোকাগুলি একটু ঘাবড়ে গেছে৷ বন্দি পোকা নতুন একটি পাতা পেয়েছে৷ তারপর মাইক্রোস্কোপের নীচে সেগুলি পর্যবেক্ষণ করার পালা৷ জায়গা ও পাতা অনুযায়ী উদ্ভিদের রসের গঠনে পার্থক্য দেখা যায়৷
উদ্ভিদের মধ্যে ঠিক কী ঘটছে, তা বুঝতে কোষের ভিতরের দৃশ্যের সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে হয়৷ কিন্তু সে কাজ বেশ কঠিন, কারণ শুধু হাতে গোনা কয়েকটি কোষেই শর্করা প্রবেশ করে৷ কিন্তু ঠিক কোনগুলিতে? এদিকে অনুসন্ধানের সময় পাতা মুড়লেও চলবে না৷ গ্যারট্রুড লোহাউস মনে করিয়ে দেন, ‘‘অর্থাৎ আমি এই পাতা মুড়লে নিরানব্বই শতাংশ কোষ পাবো৷ কিন্তু যে এক শতাংশের উপাদান জানতে চাই, সেগুলি পাবো না৷’’
সেই সমস্যার সমাধান করতেই জাবপোকা কাজে লাগতে পারে৷ এই পোকা বুঝতে পারে, ঠিক কোন কোষে ফ্লোয়েম রস রয়েছে৷ তারপর সেখানে শুঁড় ঢুকিয়ে রস শুষে নেয়৷ কিন্তু সেই গুণই তার কাল হয়েছে৷ কারণ মাইক্রোস্কোপের মধ্যে লেজার রয়েছে৷ পোকা কোষ থেকে রস শুষে নেবার সময় গ্যারট্রুড বোতাম টিপে সেটির শুঁড় কেটে নেন৷
ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্ম নল দিয়ে তিনি কাটা শুঁড় থেকে রস বার করে নেন৷ সেই রসই উদ্ভিদের তৈরি নেকটারের ভিত্তি৷ গ্যারট্রুড লোহাউস বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘পরাগ বহনকারী হিসেবে মৌমাছি রয়েছে৷ এমনকি বাদুড় বা পাখিও সে কাজ করে৷ মৌলিক গবেষণার দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রশ্ন হলো, ফুলের মধ্যে ঠিক কী আনা হয়? এবং নেকটার তৈরি করতে গাছের হাতে এনজাইম সংক্রান্ত কোন ক্ষমতা রয়েছে কি?’’
উদ্ভিদের কোষের রসে কৃত্রিমভাবে রদবদল করতে পারলে ফুল হয়তো অন্যান্য পরাগ বহনকারীদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে৷ তখন বাইরের পরিবেশ বদলে গেলেও গাছ হয়তো আরও সহজে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে৷
সে ক্ষেত্রে শুধু মানুষ ও পরাগ বহনকারীরা সন্তুষ্ট হবে না৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জাবপোকারাও তাদের খোরাক পাবে৷
মাল্টে লিন্ডে/এসবি
মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...
এক গাছে এত প্রজাতির পাখি!
হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে আছে এক মান্দার গাছ৷ ফেব্রুয়ারি-মার্চে গাঢ় কমলা রঙের ফুলে ছেয়ে যায় সেটি৷ ফুলের মধু খেতে দিনভর গাছটিতে ভিড় করে নানা রঙের পাখি৷ একটি গাছে একসঙ্গে এত বেশি প্রজাতির পাখি অন্য কোথাও দেখা যায় না৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সাতছড়ির মান্দার গাছ
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরে ওয়াচ টাওয়ারের পাশেই বিশাল আকারের মান্দার গাছটির অবস্থান৷ ছয়তলা বিশিষ্ট ওয়াচ টাওয়ারটির মতোই উচ্চতা এ গাছটির৷ ফলে ওয়াচ টাওয়ারটির প্রতি তলায় দাঁড়িয়ে খুব কাছে থেকে দেখা যায় নানান পাখি৷ প্রকৃতিপ্রেমী বিশেষ করে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফাররা ফুলের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সেখানে যান৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বাসন্তী লটকন টিয়া
টিয়া প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট এ পাখিটি দেখতে খুবই সুন্দর৷ সাতছড়ির মান্দার ফুলে এ পাখিটি প্রচুর দেখা যায়৷ ভোরা, লেজকাটা টিয়া বা শুধু লটকন বিভিন্ন নামে পরিচিত এ পাখিটির ইংরেজি নাম ‘ভের্নাল হ্যাঙ্গিং প্যারট’৷ সাতছড়ির গাছে পাখিটি সকালে বেশি দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
লালবুক টিয়া
মদনা টিয়া নামেও পাখিটি পরিচিত৷ ইংরেজি নাম ‘রেড ব্রেস্টেড প্যারাকিট’৷ এর ঠোঁট লাল, মাথা বাদামি, পিঠ সবুজ ও বুক লাল৷ গলায় সুন্দর একটি কালো মালা আছে৷ জোরে আওয়াজ করে দলবেঁধে এরা মান্দার ফুলের মধু আর পাপড়ি খেতে আসে৷ এ পাখিটিও সকালে আর বিকেলে বেশি দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সিপাহি বুলবুলি
এর ইংরেজি নাম ‘রেড হুইস্কার্ড বুলবুলি’৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাখিটি ঝুঁটি বুলবুল, ঝুঁটকুলি, পাহাড়ি বুলবুল কিংবা চায়না বুলবুল নামেও পরিচিত৷ সাতছড়ির মান্দার গাছে পাখিটি সারাদিনই কম-বেশি দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
কালো খোঁপা বুলবুলি
পাখিটি কালো-ঝুঁটি বুলবুলি বা কালো-খোঁপা হলদে বুলবুলি নামেও পরিচিত৷ ইংরেজি নাম ‘ব্লাক হেডেড ইয়োলো বুলবুল’৷ এ প্রজাতির পাখিটি গাছের ডালে একা একা বেশি বিচরণ করে৷ সবসময় এ প্রজাতির পাখিটি দেখা গেলেও তা সংখ্যায় অনেক কম৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বাংলা বুলবুলি
সব জায়গাতেই পাখিটি প্রচুর দেখা যায়৷ মান্দার গাছের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সেখানেও পাখিটি আসে৷ সারাদিনই কমবেশি পাখিটির দেখা মেলে৷ এর ইংরেজি নাম ‘রেড ভেন্টেড বুলবুলি’৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নীলগলা বসন্ত বৌরি
মান্দার গাছে মধু খেতে এসে পাখিটি দীর্ঘক্ষণ একনাগারে ডাকতে থাকে৷ এর ইংরেজি নাম ‘ব্লু থ্রোটেড বারবেট’৷ পাখিটির ডাক বনের অনেক দূর থেকেও শোনা যায়৷ দেশের বিভিন্ন এলাকাভেদে পাখিটি ধনিয়া, বড় বসন্ত বৌরি বা বসন্ত বাউরি নামেও পরিচিত৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
কাঠ শালিক
সাতছড়ির মান্দার গাছে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এ পাখিটি৷ এর ইংরেজি নাম ‘চেস্টনাট টেইলড স্টার্লিং’৷ গাছের ডালে বসে এ পাখিকে অন্যান্য পাখির সঙ্গে সবসময় ঝগড়া করতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সবুজ পাতা বুলবুলি
পাখিটির ইংরেজি নাম ‘গোল্ডেন ফ্রন্টেড লিফবার্ড’৷ এলাকাভেদে এ পাখিটি সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি, পাতা বুলবুলি, সোনা-কপালি হরবোলা নামেও পরিচিত৷ এ পাখিটিও প্রচুর দেখা যায় সাতছড়ির মান্দার গাছে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
উদয় ধলা চোখ
দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাখিটি শ্বেত আঁখি, শ্বেতাক্ষি, বাবুনাই, চশমা টুনি, চশমা পাখি নানা নামেও পরিচিত৷ এর ইংরেজি নাম ‘ওরিয়েন্টাল হোয়াইট আই’৷ পাখিটি আকারে খুবই ছোট এ পাখিটিও দলবেঁধে আসে সাতছড়ির মান্দার ফুলে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মেটেটুপি বাটকুড়ালি
সাতছড়ির মান্দার ফুলে মাঝে মধ্যে দেখা যায় পাখিটি৷ এর ইংরেজি নাম ‘গ্রে ক্যাপড উডপেকার’৷ পাখিটি আকারে অনেকটা চড়ুই পাখির মতো৷ পাখিটিকে গাছে ডালে বসে কাঠ ঠোকরাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
আরো আছে নানান পাখি
এছাড়াও আরো নানান পাখির মেলা বসে সাতছড়ির এই মান্দার গাছে৷ এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সবুজ টিয়া, ফুলমাথা টিয়া, পাহাড়ি ময়না, সুঁইচোরা, ভিমরাজ, হরিয়ালসহ আরো নানা রকম চোখ জুড়ানো পাখির মেলা বসে সাতছড়ির মান্দার ফুলে৷