জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি ‘এক্সট্রিম ওয়েদার’
২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯যেমন বরফ গলে যাচ্ছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে, প্রাণীকূলের বিলুপ্তি হচ্ছে৷ তবে যে বিষয়টি আমরা সকলেই সবচেয়ে বেশী বুঝতে পারছি সেটি হচ্ছে ‘এক্সট্রিম ওয়েদার' বা চরম আবহাওয়া৷ অর্থাৎ একটা সময় ছিলো, যখন কর্কট ক্রান্তি কিংবা মকর ক্রান্তি রেখার আশপাশের নাতিশীতোষ্ণ এলাকাগুলোতে শীত কিংবা গরমের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য দেখা যেতো না৷
উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের কথাই ধরুন না৷ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কর্কট ক্রান্তি রেখা চলে যাওয়ায় এ এলাকা সবসময় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত৷ এখন গ্রীষ্মকালে গরমের চোটে মানুষের প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে৷ অপরদিকে শীতের মৌসুমে তীব্র ঠাণ্ডায় সবকিছু যেন জমাট বেধে যায়৷ কয়েক দশক আগেও গরমকালে কিংবা শীতে মানুষকে এতটা কাবু হতে কিন্তু দেখা যায়নি৷ বাংলাদেশের মত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে নিরীক্ষীয় অঞ্চল কিংবা মরু অঞ্চলের অবস্থা কি একবার ভাবুন তো৷
বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবী নামক এ গ্রহের জলবায়ু যে পরিবর্তন হচ্ছে তার অন্যতম আলামত হচ্ছে এই চরম আবহাওয়া৷ এবং এই চরম আবহাওয়ার কারণে নানা প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে৷ দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গল কেবল কোনো অঞ্চল নয় – এই ‘রেন ফরেস্ট' গোটা পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে৷ কিন্তু এ জঙ্গলও এখন হুমকির মুখে৷
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি বা ইউএনইপি সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়া আমাজনের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে আমাজনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে৷ যার পরিণতিতে আমাজন নদী এবং এ জঙ্গলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে৷ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সাল নাগাদ ওই এলাকার ১৭ ভাগ বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে যার আয়তন পাকিস্তান কিংবা ফ্রান্সের মত দেশের চেয়েও বড়৷ এছাড়া আমাজন নদীর পানিও এখন হুমকির মুখে৷
উল্লেখ্য, বিশ্বের সুপেয় পানির ২০ শতাংশ বহন করে কেবল আমাজন নদী একাই৷ চরম আবহাওয়ার কারণে যে কেবল তীব্র গরম কিংবা ঠাণ্ডা অনুভূত হয় তাই নয় বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়েরও সৃষ্টি হয়৷ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা টর্নেডোর জন্য অন্যতম দায়ী এই চরম আবহাওয়া৷
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গোটা বিশ্বের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা নানা চিন্তা ভাবনা করছেন৷ চরম আবহাওয়াও তাদের মাথাব্যাথার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে৷ তাই চরম আবহাওয়া নিয়ে বিগত ২০০৬ সাল থেকে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ‘এক্সট্রিম ওয়েদার কংগ্রেস'৷ সারা বিশ্বের পরিবেশ বিজ্ঞানী, আবহাওয়াবিদরা এ কংগ্রেসে যোগ দেন৷ গত বছর অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে সুমেরু বা আর্কটিকের বরফ গলে যাওয়ার বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পেয়েছিলো৷ এ বছরও জার্মানির ব্রেমেন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘এক্সট্রিম ওয়েদার কংগ্রেস'৷ প্রতি বছর এ সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে জার্মানির ইনস্টিটিউট ফর ওয়েদার এন্ড ক্লাইমেট কমিউনিকেশন৷ কেবল পরিবেশ বিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদরাই নন, এবারের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগন এবং রাজনীতিকেরাও৷
জলবায়ু পরিবর্তন ও চরম আবহাওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ একইসঙ্গে চরম আবহাওয়ার ফলে সৃষ্ট নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে রোধ করা সম্ভব সে বিষয়টিও এসেছে এবারের ‘এক্সট্রিম ওয়েদার কংগ্রেস'এ৷ এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনৈতিক প্রভাবটিও উঠে এসেছে এবারের সম্মেলনের আলোচনায়৷