1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যস্ত ভারত, দায় ও দায়িত্ব নেয় না কেউ

গৌতম হোড় দিল্লি | শময়িতা চক্রবর্তী কলকাতা
৭ জুলাই ২০২৫

মাত্র একমাসের বর্ষাতেই হিমাচল প্রদেশে ১৯টি মেঘফাটা বৃষ্টি, ২৩টি চকিত বন্যা হয়েছে, ৭৮ জন মারা গেছেন।

হিমাচলের ধস। ২০২৩ সালের ছবি।
হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, কেরালা, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপূর্বসহ ভারতের বহু রাজ্যেই মেঘফাটা বৃষ্টি, চকিত বন্যা ও প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়। ছবি: AFP

প্রতিবছর মেঘফাটা বৃষ্টি ও তার জেরে চকিত বন্যার বিপর্যস্ত হচ্ছে হিমাচল, প্রতিবছরই তার তীব্রতা বাড়ছে, ক্ষতক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে।

২০২৫ সালে প্রথম একমাসের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও মৃত্যু দেখে বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব,  ২০২৪ সালে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হিমাচলে ৪০৮ জন মারা গেছিলেন, এক হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সাত হাজার গবাদি পশু মারা যায়। ।

বিপর্যয়ের খতিয়ান

২০২৩ সালে হিমাচলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মারা গেছিলেন ৪২৮ জন। নিখোঁজ ৩৯ জন। আট হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কুলু, মানালি, সিমলা। সিমলায় ধসের ফলে পুরো বাড়ি ভেঙে পড়ার ভিডিও আলোড়ন ফেলে দেয়। কালকা-সিমলার রাস্তায় বহু জায়গায় ধস নামে, অনেক জায়গায় অর্ধের রাস্তা ধসের ফলে তলিয়ে যায়।

২০২২ সালে বৃষ্টি, বন্যা ও ধসে ১২৫ জন মারা যান, সাতটি মেঘফাটা বৃষ্টি এবং ৩০টিরও বেশি চকিত বন্যা হয়। রোহরুতেই প্রায় পাঁচশ ছাগল ও ভেড়া মারা যায়।

২০২১ সালে ৪৭৬ জন মারা যান। প্রচুর সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়। অনেক বাড়ির ক্ষতি হয়।

রাজধানী সিমলায় ২০১৬ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বৃষ্টি, বন্যা, ধসে ৯১ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ২০২৪ সালে ৪০ জন। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা কমিটির রিপোর্ট হলো রাজধানী সিমলায় মেঘফাটা বৃষ্টি হয়েছে, ধস নেমেছে, আগুন লেগেছে। প্রচুর বাড়ি, গোশালা ও সরকারি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হিমাচলের ৪৫ শতাংশ এলাকা ধসপ্রবণ

আইআইটি রোপারের সমীক্ষা বলছে, হিমাচল প্রদেশের ৪৫ শতাংশ এলাকা ধসপ্রবণ। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, যে সব জায়গার ঢাল পাঁচ দশমিক আট ডিগ্রি থেকে ১৬ দশমিক চার ডিগ্রির মধ্যে তা ধসপ্রবণ ও বন্যাপ্রবাণ এলাকা। যে সব জায়গায় এক হাজার ছয়শ মিটার খাড়াই আছে, সেগুলিও ধসপ্রবণ।

হিমাচলে মোট ১৭ হাজার ১২০টি জায়গা ধসপ্রবণ। তার মধ্যে ৬৭৫টি গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ও ঘনবসতি এলাকায়।

যেখানে সেখানে বাড়ি

তথাগত সেন গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে হিমাচলে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত ২০ বছরে পাহাড়ে যেখানে সেখানে বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সে সব ছোট বাড়ি নয়। সাততলা, আটতলা বিশাল বাড়ি। আগে যেখান দিয়ে বৃষ্টির জল যেত, সে সব জায়গায় বাড়ি হতো না। নিয়মও সেরকম ছিল। কিন্তু এখন আর সেই নিয়ম না মেনে পঞ্চায়েতের অনুমতিতে সব জায়গায় বাড়ি তৈরি হচ্ছে। গাছ কাটা পড়ছে। রাস্তা তৈরি হচ্ছে, সুড়ঙ্গ তৈরি হচ্ছে। এর বিপুল প্রভাব গিয়ে পড়ছে পরিবেশের উপর।''

পরিবেশবিদ ও নাট্যকর্মী মল্লিকা জানাল ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''ভারতে পরিবেশগত বিষয়ে কেউ দায় নেয় না। জলবায়ু পরিবর্তন যা আমদের দৈনিক অভ্যাসের জন্য হচ্ছে। আমাদের বুঝতে হবে, আমাদের দোষে আমাদের দেশ ও বিশ্বের ক্ষতি হচ্ছে, আমাদের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে, না হলে কিছুই হবে না।''

তার মতে, ''আমরা যখন একজন রাজনীতিককে জেতাই, তখন তার উপর আমাদের বিশাল প্রত্যাশা থাকে। তবে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে গেলে রাজনীতিক ও জনগণের মধ্যে আলোচনা হতে হবে, পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে হবে। এই পার্টনারশিপ এখন নেই। আমরা মনে করি, সবই রাজনীতিক করবে। এটা অসম্ভব। সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। আরো খারাপ হবে।''

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''পরিবেশ বাঁচানো দায়িত্ব সকলের, এটা একেবারে ঠিক কথা। কিন্তু আমাদের দেশের পরিস্থিতি ও মানুষের মনোভাব ও ভাবনা হলো, সরকারকে, রাজনীতিকদের উদ্যোগটা নিতে হবে, নজরদারি করতে হবে, আইন না মানলে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে, আমাদের দেশে কিছু সাধারণ মানুষ উদ্যোগী হয়ে কিছু করতে চায় না।''

শরদ মনে করেন, ''সবচেয়ে বড় কথা সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমাদের কোনো নির্বাচনে পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয় না। পরিবেশ বাঁচানো কখনো ইস্যু হয় না। এত বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও নয়। কারণ মানুষ সচেতন নয়। আমাদের রাজনীতিকরাও সচেতন নয়। সরকারও নয়। দিল্লির উদাহরণ তো সামনে আসে। প্রতিবছর দেওয়ালির সময় দিল্লি দূষণে গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। তারপরেও সমানে বাজি পোড়ানো হয়, চাষের মাঠে খড় পোড়ানো হয়। বছরের পর বছর একই দৃের পুনরাবৃত্তি হয়।''

তথাগত মনে করেন, ''জনসংখ্যার বিস্ফোরণের চাপ ভারতের সর্বত্র বিপুলভাবে পড়ছে। সব জায়গায় পরিকাঠামো বাড়াতে হচ্ছে। পাহাড়ে পর্যটকদের চাপ আছে। পাহাড়ের গায়ে সিমলা শহরের দৃশ্য একসময় ছিল নয়নমনোহর। এখন দেখলে ভয় হয়।  সর্বত্র শুধু বাড়ি। তিলমাত্র ফাঁক নেই।''

'পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু পরিবেশের কথাও ভাবতে হবে'

মল্লিকা জালান বলেছেন, ''পর্যটন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটকরা বিভিন্ন জায়গা থেকে, দেশ থেকে আসেন।  তাদের দৌলতে পর্যটকর-প্রধান এলাকায় অর্থ আসে। অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। আমি ছোটবেলায় কেদারনাথ, বদ্রীনাথ গেছিলাম। এখন যদি কেউই সেখানে যেতে বলে, আমার যাওয়ার সাহস হবে না। কারণ, আমার মনে হবে, ধস, বন্যা, বৃষ্টিতে আমি যে কোনো সময় আটকে যাব।''

তিনি মনে করেন, ''শুধু হিমাচল নয়, শুধু পাহাড়ের রাজ্য নয়, সামগ্রিকভাবে ভারত নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে। হিমাচলের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, সেটা উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপূর্বের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমরা প্রাকৃতিক বিপয়কে নিয়ে কিছুদিন হইচই করি, তারপর ভুলে যাই। আমাদের বৃহত্তর ছবিটা মনে রাখতে হবে। পুরো উপমহাদেশ ও পুরো বিশ্বকে মাথায় রাখতে হবে। এই বিপর্যয়ের পিছনে সকলের দায় আছে। এটা থামানোর দায়িত্বও সকলের।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ