প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে কিরিবাটি দ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷ উপার্জনের আশায় তরুণ প্রজন্ম বিকল্পের খোঁজ করতে বাধ্য হচ্ছে৷ এক জার্মান জাহাজ কোম্পানি তাদের আশার আলো দেখাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বেটিও দ্বীপে প্রশিক্ষণকেন্দ্রে প্রথম ডাক এলো৷ প্রাতরাশেরও আগে ভোর ৬টায় আধ ঘণ্টা ধরে খেলাধুলা করতে হয়৷ ৫০ বছরেরেও বেশি সময় ধরে তথাকথিত ‘এমটিসি’ চালু রয়েছে৷ এক জার্মান জাহাজ কোম্পানি তার সহ প্রতিষ্ঠাতা৷ রুবেয়াউয়া টাবেলা বলেন, গভীর সমুদ্রে কাজ করতে চান বলেই তিনি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ তিনি প্রথম সারিতেই দাঁড়িয়ে আছেন৷ তবে বাকি শিক্ষানবিসদের মতো তিনি এখানে শুধু একটা সংখ্যা৷ তাঁর পরিচয় ‘এফ ইলেভেন’৷
অ্যাডভেঞ্চারই আসল বিষয়৷ শিক্ষানবিসদের এর আগে কখনো এমন অভিজ্ঞতা হয় নি৷ তাঁদের আশা, এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কোনো মাছ ধরার জাহাজে কাজ করতে পারবেন৷ অনেকেই এর আগে বিদেশ ভ্রমণ করেন নি৷ কেউ কেউ জার্মান কার্গো বা অন্য জাহাজে কাজের আশা করছেন৷
মাটি ছাড়া চাষবাস
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অনেক এলাকায় কৃষিকাজ কঠিন হয়ে পড়ছে৷ ভবিষ্যতে খাদ্য চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপায় হতে পারে হাইড্রোপনিকস বা জলচাষ৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
২০৫০ সালে বিশ্বের বর্তমান জনসংখ্যার সঙ্গে আরও তিনশ কোটি মানুষ যোগ হবে৷ এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের কোনো অঞ্চল ডুবে যাচ্ছে, আর কোথাও দেখা দিচ্ছে খরা৷ ফলে ফসল উৎপাদনের নতুন পদ্ধতি খুঁজতে হচ্ছে, বিশেষ করে খরাপ্রবণ এলাকায় কীভাবে শস্য ফলানো যায়, তা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা৷ এই সমস্যার সমাধান হতে পারে হাইড্রোপনিকস বা জলচাষ৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
সুবিধা
অল্প জায়গায় চাষ আর বেশি উৎপাদন – হাইড্রোপনিকস দিয়ে দুটোই সম্ভব৷ এই পদ্ধতিতে মাটি ছাড়াই ফসল উৎপাদন করা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. De Melo Moreira
কৃত্রিম উপায়
আলো ও তাপের ব্যবস্থা করে ফসল উৎপাদন করা হয়৷ আর ফসল যেন দ্রুত বাড়তে পারে, সেজন্য শস্যের মূলে স্প্রেসহ অন্যান্য উপায়ে পুষ্টিকর উপাদান প্রয়োগ করা হয়৷ এভাবে সারা বছরই ফসল উৎপাদন সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
কম পানি, সার
হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে পানি রিসাইকল করা যায়৷ ফলে প্রচলিত পদ্ধতিতে যত পানি প্রয়োজন হয় তার মাত্র ১০ শতাংশ দিয়েই হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে ফসল ফলানো যায়৷ এছাড়া একবার ব্যবহৃত হওয়া পুষ্টিকর উপাদান উবে যায় না বলে সারও বেশি প্রয়োজন হয় না৷ আর মাটির সংশ্লিষ্টতা না থাকায় কীটনাশকেরও দরকার পড়ে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Schwarz
খাড়াভাবে উঠে যাওয়া
ছবি দেখে হয়ত কিছুটা বুঝতে পারছেন৷ হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে সবজির চারা একটির উপর আরেকটি বসিয়ে দেয়া যায়৷ ফলে অল্প জায়গায় বেশি ফসল উৎপাদন সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ Photoshot
অসুবিধা
হাইড্রোপনিকস ব্যবস্থায় প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান এবং অবকাঠামো প্রয়োজন হয়৷ প্রচলিত পদ্ধতিতে যেমন আলো আর তাপ সূর্য থেকে বিনামূল্য পাওয়া যায়, জলচাষ ব্যবস্থায় টাকা খরচ করে সেগুলোর ব্যবস্থা করতে হয়৷ আর কোনো কারণে অনেকক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকলে সব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷
ছবি: Imago/View Stock
ব্যবহার বাড়ছে
হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে সব সবজি জন্মানো সম্ভব৷ তবে শসা, সবুজ সালাদ, গোলমরিচ, টমেটো, ঔষধি গাছ – ইত্যাদির ফলন ভালো হয়৷ ২০১৬ সালে হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে ২১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয়েছিল৷ প্রতিবছর সেটি সাত শতাংশ হারে বাড়ার কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Kambou
7 ছবি1 | 7
নাবিকের জীবন নিয়মে বাঁধা৷ প্রশিক্ষণের সময়ও জাহাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়৷ অনেকেরই সেই নিয়ম বেশ কড়া বলে মনে হয়৷ ৬টি জার্মান কোম্পানি মিলে এসপিএমএস নামের যে সংস্থা চালু করেছে, বেশিরভাগ শিক্ষানবিসই সেখানে কাজ করতে চান৷
ক্যাপ্টেন অ্যান্ড্রু হাইনৎসেন সেই সংস্থার কর্ণধার৷ তাঁর মতে, এখানকার ছেলেরা যেহেতু পানির মধ্যেই বড় হয়েছে, এই শিল্পক্ষেত্র তাদের বেশ কদর করবে৷ তবে ভবিষ্যতে মোটা বেতনের চাকুরির পথে প্রায়ই কিছু বাধা থেকে যায়৷ অ্যান্ড্রু বলেন, ‘‘নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলাবোধ একটা বড় সমস্যা৷ নাবিকদের সময় ও ঘড়ির গুরুত্ব বোঝানোও কঠিন কাজ৷ ইউরোপে অথবা সমুদ্রে জাহাজের মধ্যে সময়ের চরিত্র ও ছন্দ একেবারে আলাদা৷ শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যতের নাবিকদের সেটা বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে৷’’
শিক্ষানবিস হিসেবে রুবেয়াউয়া ৬ মাস প্রশিক্ষণের পরেই টুনা মাছ ধরার ট্রলারে কাজ করতে পারেন৷ জাপান এই প্রশিক্ষণে সহায়তা করে৷ ১৮ মাস ধরে সেই শিক্ষাক্রম শেষ করলে নাবিক হওয়া সম্ভব৷ কিন্তু রুবেয়াউয়ার জন্য সেই সময় অত্যন্ত দীর্ঘ৷ ২০ বছর বয়স হলেই তাঁকে পরিবারের ৩টি প্রজন্মের জন্য উপার্জন করতে হবে৷ রুবেয়াউয়া বলেন, ‘‘পরিবারের সঙ্গে আর দেখা না হলে খুবই দুঃখ পাবো৷ কিন্তু এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাবা-মাকে বাঁচানোর সুযোগ পাবো৷ একমাত্র এভাবেই নিজেকে ও বাকিদের সাহায্য করতে পারবো৷’’
এর আগে কখনো আয়ের এই উৎস এত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক মানুষের জীবনের ভিত্তি হুমকির মুখে পড়েছে৷ একমাত্র সমস্যা হলো, শুধু রবিবারই ছুটি পাওয়া যায়৷
আমাদের গ্রহের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি কি ও কোথায়?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপদ কোনদিক থেকে ঘটতে পারে? প্রতিবছর ডাভোসের বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সুশীল সমাজের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরিপ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/NASA
চরম আবহাওয়া
গত বছরের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিশেষজ্ঞরা ব্রেক্সিট ও নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতিগতি সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছিলেন৷ এবার তার স্থান নিয়েছে চরম আবহাওয়া: ছবিতে যেমন ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ইরমা ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
...তারপরেই আসছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়
ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, ধস নামা, সুনামি, ঝড়ঝঞ্ঝা, বন্যা ও অপরাপর প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুঁকি৷ আবার সাইবার আক্রমণও একটা ঝুঁকি! তবে পঞ্চম স্থানে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ফলশ্রুতি৷ ছবিতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
প্রকৃতি ও জলবায়ু
জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়জনিত ঝুঁকি এবার গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট জুড়ে৷ নজর দেওয়া হয়েছে আগামী দশ বছরে কী ঘটতে চলেছে, তার দিকে: যেমন গত বছরের জুন মাসে বাংলাদেশে বিশাল ধস নেমে একাধিক গ্রাম ও রাস্তা ডুবিয়ে দেয়৷ ছবিতে ত্রাণকর্মীরা চাপা পড়াদের উদ্ধারের কাজে ব্যস্ত৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Str
ধ্বংস ও লীলা
গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র বলতে আজও প্রধানত পারমাণবিক, রাসায়নিক ও জীবাণু বোমাকেই বোঝায়৷ এ ধরনের মারণ প্রযুক্তি যে একটানা এগিয়ে চলেছে ও ছড়িয়ে পড়ছে, তার বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছে গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট৷ ছবিতে গত সেপ্টেম্বর মাসে বার্লিনের মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন আন্দোলনকারীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
বুদ্ধিতে ব্যাখ্যা আছে – কিন্তু সমাধান?
স্বল্পমেয়াদে আমাদের বিশ্বের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে চরম আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়৷যেমন গত নভেম্বর মাসে ইরানের কেরমানশাহের ভূমিকম্প (ওপরের ছবি)৷ মোদ্দা কথা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ব্যবস্থা না করে মানবজাতির নিস্তার নেই৷
ছবি: Hadi Mokhtarian
তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দিয়েছেন যে, পানির অভাব স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে৷ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পানীয় জলের অভাব মানুষ ও জীবজন্তুকে কষ্টে ফেলা ছাড়াও বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি করছে৷ ছবিতে আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে ইরানের জাবোলে একটি উটের লাশ৷
ছবি: Mehr News
বিবেকের দংশন?
এ বছর বিশ্বের প্রথম পাঁচটি ঝুঁকির মধ্যে কোনোটিই অর্থনৈতিক নয়, অথচ ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সে ধরনের ঝুঁকি প্রাধান্য পেয়েছিল৷ তবে অর্থনৈতিক সংকটের ঝুঁকি যে একেবারে লোপ পেয়েছে, এমন নয়৷ ছবিতে এথেন্সের রাজপথে ভিক্ষার আশায় হাত বাড়িয়ে রয়েছেন এক নারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
7 ছবি1 | 7
রুবেয়াউয়া দক্ষিণ তারাওয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছেন৷ তাবোনিবারা দ্বীপে নৌকায় করে নিজের বাড়ি যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগে৷ সমুদ্রের দিকে ঢেউ দ্বীপের ভিত্তিতে ধাক্কা দিয়ে চলেছে৷ শুধু লেগুন এখনো হ্রদের মতোই রয়েছে৷ প্রশিক্ষকরাই রুবেয়াউয়া-কে দ্বীপে নামিয়ে দিয়ে গেলেন৷
রুবেয়াউয়া-র পরিবার উপার্জনের জন্য প্রকৃতির উপরই নির্ভর করে৷ রাষ্ট্র শুকনা নারিকেল কিনে নেয় বটে, কিন্তু প্রতি বছর তা থেকে আয় কমে চলেছে৷ পানির তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে চলায় মাছ ধরা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ তাঁর বাবা প্রায়ই শুধু সামুদ্রিক ঘাস নিয়ে বাড়ি ফেরেন৷ রুবেয়াউয়ার বাবা বলেন, ‘‘সব বদলে যাচ্ছে৷ কোনো মাছই বেশি ধরতে পারছি না৷ সি ওয়ার্মসও উধাও হয়ে যাচ্ছে৷ চারিদিকে ভূমিক্ষয় চলছে৷ কুয়ার পানি লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে৷ গাছেও খুব কম নারিকেল গজাচ্ছে৷’’
রুবেয়াউয়া বলেন, ‘‘আমার অনুপস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সত্যি দুশ্চিন্তা হচ্ছে৷ সব কিছু বদলে যাবে বলে মনে আশঙ্কা রয়েছে৷’’
কিরিবাটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির অন্যতম৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দারিদ্র্য আরও বাড়ছে৷ পরিবারকে সাহায্য করতে রুবেয়াউয়া শীঘ্রই একটি চাকুরি পাচ্ছেন, যা অন্যদের নেই৷ কিন্তু তার মূল্য কম নয়৷