জাতিসংঘের পরিবেশ বিজ্ঞানীদের প্যানেল আইপিসিসি-র চতুর্থ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় রবিবার৷ তাতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষই দায়ী৷ এ শতকের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার জন্যও তাগিদ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে৷
বিজ্ঞাপন
ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসি-র প্রতিবেদনে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই৷ পরিবেশ দূষণ বাড়ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনও হচ্ছে৷ সচেতনতা বৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ – কোনো ক্ষেত্রেই প্রত্যাশা মতো ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে না বলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সাফল্যও আসছে মন্থর গতিতে৷ তাই আইপিসিসি প্রতিবেদনে আশঙ্কা এবং সে আশঙ্কা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদটাই বেশি৷
বরাবারের মতো এবারও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মূল সুপারিশ তেল, গ্যাস পোড়ানো কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্রালানির ব্যবহার বাড়ানো৷ ঘরবাড়ি, গাড়ি আর কারখানায় বায়ু এবং সৌরশক্তি থেকে উৎপন্ন জ্বালানির ব্যবহার না বাড়ালে এ শতকেই জলবায়ু পরিবর্তন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এর কিছু লক্ষণের দিকেও মনযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে৷ জাতিসংঘের পরিবেশ বিজ্ঞানীদের প্যানেল বলেছে, উষ্ণায়ন বাড়ছে বলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে চলেছে, বিশ্বের অনেক জায়গায় লু-হাওয়াও বইছে ঘনঘন৷
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ হুমকির মুখে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এমনিতেই বিপর্যয়ের মুখোমুখি৷ সম্প্রতি সে দেশের সরকার রিফ এলাকার একটি বন্দর সম্প্রসারণের ঘোষণা দেয়ায় সমস্যা আরও বাড়তে যাচ্ছে৷
ছবি: imago/blickwinkel
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ
ইউনেস্কো অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে ১৯৮১ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই প্রবাল প্রাচীর এলাকায় ৬২৫ রকমের মাছ, ১৩৩ প্রজাতির হাঙর সহ অন্যান্য বৃহদাকার সামুদ্রিক মৎস, অসংখ্য প্রজাতির জেলিফিশ, ঝিনুক, শামুক এবং ত্রিশটিরও বেশি প্রজাতির তিমি মাছ ও ডলফিন রয়েছে৷ কিন্তু দূষণ ও মানবসৃষ্ট কারণে গত কয়েক দশক ধরে এই রিফের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে৷
ছবি: imago/Harald Lange
বন্দর সম্প্রসারণ
১৯৮৪ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের অ্যাবট বন্দরটি কয়লা রপ্তানিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ সম্প্রতি সরকার এটার সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে৷ কিন্তু এতে রিফের পরিবেশ আরও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে বড় বন্দর
সম্প্রসারণের পর অ্যাবট বন্দর দিয়ে প্রায় ১২০ মিলিয়ন টন কয়লা রপ্তানি করা সম্ভব হবে৷ ফলে এটিই হবে দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে বড় বন্দর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভারতের কয়লা রপ্তানি
অ্যাবট বন্দর সম্প্রসারণের অন্যতম একটি কারণ ভারতে কয়লা রপ্তানি৷ ভারতের দুটি কোম্পানি – জিভিকে এবং আদানি গ্রুপ – মাইনিং কোম্পানি হ্যানকক প্রোস্পেকটিং-এর সঙ্গে মিলে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড এলাকার খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করতে চায়৷ এরপর সেটা অ্যাবট বন্দর দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে৷
ছবি: AFP/Getty Image
হুমিকর মুখে প্রবাল
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কোরাল এমনিতেই হুমকির মুখে রয়েছে৷ বন্দর সম্প্রসারণের পর সেই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: imago/blickwinkel
কচ্ছপদের যে সমস্যা হবে
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কচ্ছপরা বিভিন্ন দ্বীপের সৈকতের বালুতে যৌনক্রিয়া করে থাকে৷ এক্ষেত্রে বালুর তাপমাত্রা একটা বড় ব্যাপার৷ বড় বন্দরের কারণে আশেপাশের এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে কচ্ছপরা বিপদে পড়তে পারে৷
ছবি: Mark Kolbe/Getty Images
আখ চাষও সমস্যা
অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূল জুড়ে থাকে আখের খেতে ব্যবহৃত কীটনাশকের একটা অংশ রিফের পানিতে পড়ে সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবন বিপন্ন করছে৷ এর সঙ্গে বন্দরের সম্প্রসারণ কাজ যুক্ত হওয়ায় সমস্যা আরও বাড়বে৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন বলেন, ‘‘বিজ্ঞান যা বলার বলেছে৷ সেখানে কোনো ধুম্রজাল নেই৷ সবাইকে এখন কাজ করতে হবে, কারণ, সময়টা আমাদের অনুকূলে নেই৷'' আইপিসিসি চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র পাচাউরি বলেছেন, ‘‘পরিবর্তনের ইচ্ছাটারই বেশি দরকার আর আমরা মনে করি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞান সম্পর্কে জানলে-বুঝলেই তা হবে৷''
উষ্ণায়ন এবং তার প্রভাব পর্যবেক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৮ সালে কাজ শুরু করে আইপিসিসি৷ রবিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ৩০ হাজার গবেষণাপত্রের আলোকে করা৷ গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য মানুষই শতকরা ৯৫ ভাগ দায়ী৷