একদল কিশোর-কিশোরী জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সরকারের ব্যর্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চলেছে৷ ইতিপূর্বে নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামে এ ধরনের মামলা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বাদিপক্ষের ২১ জনের বয়স ৯ থেকে ২১-এর মধ্যে৷ তাদের সঙ্গে রয়েছেন জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. জেমস হ্যানসেন৷ ব্যাপারটা আদালতে ওঠে ২০১৫ সালে৷ সরকারের বিরুদ্ধে মামলাকারীদের অভিযোগ, সরকার বিশ্বের উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করে তরুণ প্রজন্মের জীবনধারণ ও স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করেছেন৷ সরকার বায়ু ও পানির মতো অত্যাবশ্যক গণসম্পদ সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, এই হলো অভিযোগ৷
অরেগনের জেলা আদালত ১১ই নভেম্বরের রায়ে বাদীপক্ষের যুক্তি বজায় রেখে বলেছে, ‘‘জীবাশ্মজাত জ্বালানি পোড়ানো থেকে সৃষ্ট কার্বন ডাইঅক্সাইড জলবায়ু প্রণালীকে এমনভাবে প্রভাবিত করছে, যা বাদীদের লক্ষণীয়ভাবে বিপদে ফেলবে... এ-কথা সরকারের ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে জানা ছিল৷'' তা সত্ত্বেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেননি, যে কারণে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে উদ্ভূত হানির জন্য মার্কিন সরকার অংশত দায়ী৷ এই হলো আদালতের রায়৷
একটু পানির জন্য
মরক্কোতে সাহারা মরুভূমির কাছে প্রত্যন্ত ১৩টি গ্রামের মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে অভিনব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ জার্মানির এক ফাউন্ডেশন এতে সহায়তা করছে৷
ছবি: M. Gundlach
প্রত্যন্ত এলাকা
মরক্কোতে সাহারা মরুভূমির কাছে অবস্থিত ১৩টি গ্রামে প্রায় ৪০০ মানুষের বাস৷ গ্রামগুলো এতই প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত যে, সেখানকার বাসিন্দাদের পানির জন্য অনেক দূরে যেতে হয়৷ প্রতিদিন এই কাজে গড়ে অন্তত তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়৷ সাধারণত নারীরাই এই কাজটি করে থাকেন৷ তবে একটি প্রকল্প তাঁদের কষ্ট লাঘবের স্বপ্ন দেখাচ্ছে৷
ছবি: M. Gundlach
সমাধান কুয়াশা
এলাকাটি বছরের প্রায় ছ’মাস ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে৷ সেই কুয়াশাকে কাজে লাগিয়েই গ্রামবাসীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
ছবি: M. Gundlach
কুয়াশা ধরতে জাল
পাহাড়ের উঁচুতে স্থাপিত বিশেষ জালে কুয়াশা আটকে পানি হয়ে ঝরবে৷ পানি ধরার জন্য থাকবে বড় বড় পাত্র৷ এরপর পাইপের মাধ্যমে তা পাহাড়ের নীচে অবস্থিত গ্রামগুলোতে সরবরাহ করা হবে৷ ঘন কুয়াশার সময় এক বর্গমিটার জাল থেকে দিনে প্রায় ২২ লিটার পানি পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা৷ ভিডিও দেখতে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: M. Gundlach
জার্মান সহায়তা
যে প্রযুক্তিতে কুয়াশা থেকে পানি সংগ্রহ করা হবে তার নাম ‘ক্লাউডফিশার’৷ জার্মানির ভাসাস্টিফটুং ফাউন্ডেশনের প্রকৌশলী পেটার ট্রাউটভাইন এটি উদ্ভাবন করেছেন৷ মরক্কোর বেসরকারি সংস্থা ‘দার সি হামদ’ ঐ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ইতিমধ্যে প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কাজ শেষ করেছে৷ ফলে কিছু গ্রামের বাসিন্দারা এখনই তাদের ঘরে পানি পাচ্ছেন৷ কয়েকদিনের মধ্যে সবার জন্য পানির ব্যবস্থা করতে আরও জাল স্থাপনের কাজ শুরু হবে৷
ছবি: M. Gundlach
শিক্ষিত হচ্ছেন নারী
যে গ্রামগুলোতে ইতিমধ্যে পানি পাওয়া যাচ্ছে সেখানকার নারীদের প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সময় বেঁচে যাওয়ায় এখন তাঁরা লেখাপড়া শেখা থেকে শুরু করে অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজে জড়িত হতে পারছেন৷ প্রকল্পের আওতায় তাঁদের শিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে৷
ছবি: Ane Nordentoft/Transterra Media
কাজের স্বীকৃতি
প্রকল্পটিকে সম্প্রতি জাতিসংঘের ক্লাইমেট চেঞ্জ পুরস্কার দেয়া হয়েছে৷ কুয়াশা থেকে পানি সংগ্রহের এটিই সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলে ধারণা করা হয়৷ জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফসিসির মুখপাত্র নিক নাটাল বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এ ধরনের অভিনব পরিকল্পনা সত্যিই এক দারুণ ব্যাপার৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
১৯ বছর বয়সি টিয়া হ্যাটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সকলেই আমাদের ভবিষ্যৎ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন৷জলবায়ু পরিবর্তন থেকে আমরাই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হব৷'' বাদীপক্ষের সব কিশোর-কিশোরী ব্যক্তিগতভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে পড়েছে: কেউ হয়তো যে খামার এলাকায় থাকে সেখানে খরা চলেছে; অন্যরা বন্যার কবলে পড়েছে৷ টিয়া হ্যাটনের মতো কেউ হয়তো অরণ্যে দাবানলের কারণে হাঁপানিতে ভুগছে৷
টিয়াদের এই মামলাকে যুগান্তকারী বলে গণ্য করা হচ্ছে৷ বহু লবি গ্রুপ এই মামলার বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছিল, যেমন অ্যামেরিকান ফুয়েল অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স বা এপিআই সংগঠন; অথবা ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ম্যানুফ্যাকচারার্স বা অ্যামেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট, এমনকি মার্কিন সরকার - সকলেই চেয়েছিল এই মামলা খারিজ হোক৷ ডিস্ট্রিক্ট জাজ অ্যান এইকেন কিন্তু তাঁর রায়ে লিখেছেন, ‘‘পরিবেশ সংক্রান্ত আইনের ক্ষেত্রে ফেডারাল আদালতগুলো বড় বেশি সাবধানী, যার ফলে দুনিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷''
ইউরোপ ছিল পথিকৃৎ৷ ২০১৫ সালে একটি ওলন্দাজ আদালত সরকারকে ২০২০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন দেশব্যাপী ২৫ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দেয়৷ ইতিপূর্বে উর্জেন্ডা নামের একটি সংগঠন ৯০০ ওলন্দাজ নাগরিকের হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে৷ সেই প্রথম নাগরিকরা সরকারের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংক্রান্ত মামলা করে জেতেন৷ পরে বেলজিয়ামেও এ ধরনের মামলা হয়৷ পন্থা একই৷ প্রথমে নাম-করা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সচেতনতা অভিযান; তারপর নাগরিক সমর্থন সংগ্রহের জন্য একটি স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান; সবশেষে মামলার খরচ তোলার জন্য একটি ক্রাউডফান্ডিং অভিযান৷
জলবায়ু সংরক্ষণে আমরা কী অবদান রাখতে পারি?
গোটা বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশের উৎস কয়লা, তেল ও গ্যাস৷ বাকি এক-চতুর্থাংশের জন্য কৃষি ও কাঠ কাটার কাজ দায়ী৷ ১০টি উপায়ে আমরাও কার্বন নির্গমন এড়িয়ে চলতে পারি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কয়লা, তেল ও গ্যাসের কম ব্যবহার
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কল-কারখানা ও পরিবহণ ক্ষেত্রই মূলত কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী৷ শীতের দেশে ঘরবাড়ি গরম রাখতে প্রায় ৬ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করা হয়৷ তাই পরিবেশ সংরক্ষণ করতে কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আরও দক্ষতার সঙ্গে জ্বালানি ব্যবহার করা উচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘ক্লিন এনার্জি’ নিজেই উৎপাদন করুন
বিদ্যুতের জন্য আর কয়লা, তেল বা গ্যাস-ভিত্তিক জ্বালানি কেন্দ্রের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না৷ বিকল্প জ্বালানি ইতোমধ্যে আরও সস্তা হয়ে উঠেছে৷ নিজস্ব উদ্যোগে জ্বালানি উৎপাদন করে চাহিদা মিটিয়ে প্রায়ই কিছু উদ্বৃত্ত থেকে যায়৷ ছাদের উপর সৌর প্যানেলের জন্য যথেষ্ট জায়গা আছে৷ এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিরও যথেষ্ট উন্নতি ঘটছে৷
ছবি: Mobisol
ভালো আইডিয়ার প্রতি সমর্থন চাই
পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানি পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে ও ‘ক্লিন এনার্জি’ বিক্রি করছে৷ যেমন জার্মানির সাবেক শহরের সোলার পার্ক৷ জনসংখ্যা মাত্র ৭,২০০৷ চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আদর্শ হয়ে উঠেছে এই ছোট্ট শহরটি৷ এক মার্কিন প্রতিনিধিদল সেই সাফল্যের রহস্য বুঝতে এসেছে৷
ছবি: Gemeinde Saerbeck/Ulrich Gunka
জলবায়ুর ক্ষতি করলে কোম্পানির লোকসান
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিমা কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, পৌর কর্তৃপক্ষ – সবাই জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি কোম্পানি থেকে বিনিয়োগের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে৷ জার্মানির ম্যুনস্টার শহর কর্তৃপক্ষ সবার আগে এই ‘ডাইভেস্টমেন্ট’ আন্দোলনে শামিল হয়েছে৷ গোটা বিশ্বে মোট ৫৭টি পৌর কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত একই পথ বেছে নিয়েছে৷
ছবি: 350.org/Linda Choritz
গাড়ি ছেড়ে সাইকেল, ট্রাম-বাস, ট্রেন
সাইকেল, ট্রাম-বাস ও ট্রেন ব্যবহার করলে অনেক কার্বন সাশ্রয় করা যায়৷ গাড়ির তুলনায় বাস ৫ গুণ বেশি পরিবেশবান্ধব – ইলেকট্রিক ট্রেন ১৫ গুণ বেশি৷ আমস্টারডাম শহরের বেশিরভাগ মানুষই সাইকেল চালান৷ শহর কর্তৃপক্ষ সাইকেলের জন্য চওড়া পথ তৈরি করেছে৷
ছবি: DW/G. Rueter
বিমানযাত্রা এড়িয়ে চলুন
বিমানযাত্রা পরিবেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে৷ হিসেব অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকে বছরে গড়ে ৫.৯ টনের বেশি কার্বন নির্গমন করলে চলবে না৷ অথচ বিমানে চেপে বার্লিন ও নিউ ইয়র্ক করলেই যাত্রী প্রতি ৬.৫ টন কার্বন নির্গমন করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Huguen
কম মাংস খান
পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কৃষিক্ষেত্রও সমস্যা সৃষ্টি করে৷ ধানচাষের ফলে এবং গরু, ভেড়া ও ছাগলের পেটের মধ্যে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর মিথেন সৃষ্টি হয়৷ একদিকে সারা বিশ্বে মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ অন্যদিকে গবাদি পশুপালনের কারণে পশুখাদ্য হিসেবে সয়াবিনের চাহিদাও বেড়ে চলেছে৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
অরগ্যানিক খাদ্য কিনুন
লাফিং গ্যাস জলবায়ুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ গ্রিনহাউস এফেক্টের প্রায় ৬ শতাংশ এই গ্যাসের কারণে ঘটে৷ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ইঞ্জিনের পাশাপাশি বিশাল মাত্রার কৃষিকাজে কৃত্রিম সারের কারণে এই গ্যাস সৃষ্টি হয়৷ অরগ্যানিক খামারে এই বস্তুটি নিষিদ্ধ৷
ছবি: imago/R. Lueger
টেকসই নির্মাণ ও ভোগ
ইস্পাত ও সিমেন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রেও প্রচুর কার্বন নির্গমন ঘটে৷ অন্যদিকে কাঠ ও বাঁশের ক্ষেত্রে সেই ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷ নির্মাণের ক্ষেত্রে সঠিক উপকরণ বাছাই করে পরিবেশের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব৷ ভোক্তা হিসেবেও সবার মনে রাখা উচিত, যে প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার করলে পরিবেশের কত ক্ষতি হয়৷
ছবি: Oliver Ristau
দায়িত্বশীল হবার পালা
পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে গ্রিনহাউস গ্যাস পরিহার করতে হবে৷ স্কুলের এই ছাত্রছাত্রীরা ‘ক্লিন এনার্জি’ সম্পর্কে অত্যন্ত উৎসাহী৷ ভবিষ্যতের জন্য তারা এটাকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে৷ তাদের এই স্বপ্ন পূরণ করতে সবাই সাহায্য করতে পারে৷