বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও এর মোকাবেলা নিয়ে কথাবার্তায়, বিশেষ করে নানা সময়ে নেয়া নানা পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন শব্দ৷ সেগুলোর প্রায়োগিক অর্থ জানা থাকলে আলোচনার প্রকৃতি বুঝতে সুবিধা হয়৷ তেমন কিছু শব্দ...
বিজ্ঞাপন
মাইগ্রেশন: এমন কোনো পদক্ষেপ, যার ফলে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো বা রোধ করা যায়৷ যেমন বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে গাছ লাগানো, নবায়নযোগ্য শক্তি, যেমন সৌর বা বায়ু বিদ্যুতের নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন বা উৎকর্ষ সাধন, পুরোনো যন্ত্রপাতিকে আরো উন্নত করা, যাতে তা ব্যবহারে কম শক্তির প্রয়োজন হয়৷
অ্যাডাপটেশন: জলবায়ুর পরিবর্তন ও এর প্রকৃত বা সম্ভাব্য প্রভাবের সাথে প্রাকৃতিক বা মানুষের জীবনাচরণ পরির্তনের মাধ্যমে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া যাতে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় বা সম্ভাবনার যথার্থ ব্যবহার করা যায়৷
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন যেভাবে
লক্ষ্যটি খুবই সহজ৷ কার্বন ডাই অক্সাইড জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শত্রু৷ আর গাড়ি, স্মার্টফোনের মতো কিছু জিনিস, যা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ব্যবহার কম করলে অর্থ খরচ কমবে, জলবায়ুর জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
এ বিষয়ে কথা বলা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আপনার কোন ছোট পদক্ষেপ বড় প্রভাব ফেলতে পারে? এটা নিয়ে কথা বলুন পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে৷ আর এটা নিশ্চিত করুন যে, এ বিষয়ে তারা যাতে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷
ছবি: Gemeinde Saerbeck/U.Gunnka
নিজের বাড়িতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
বাড়িতে বৈদ্যুতিক সেবা দেয়ার জন্য এমন কোম্পানিকে বেছে নিতে হবে যারা তাদের বিদ্যুত উৎপাদনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাতাস বা সৌরশক্তি ব্যবহার করে এবং যাতে তারা ‘গ্রিন ই এনার্জি’র অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়৷ যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজের বিদ্যুৎ বিলের দিকে নজর রাখুন৷ অনেক কোম্পানি বিলে লিখে দেয়, তাদের বিদ্যুত উৎপাদনে কতটা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা
ঠান্ডার সময় বাড়ির তাপমাত্রা বাড়ানো বা গরমের সময় শীতল করতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়৷ তাই নিজের আবাসস্থলকে ‘এনার্জি এফিসিয়েন্ট’ বা জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, যাতে ঘরে বাতাস চলাচল এবং বাতাস বন্ধ রেখে উত্তাপ বাড়ানোর সহজ ব্যবস্থা থাকে৷
ছবি: Imago/Westend61
জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি
১৯৮৭ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের যন্ত্রপাতির প্রচলন হয়৷ এ ধরনের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এ পর্যন্ত সেখানকার বাতাসকে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত রাখা গেছে, যা বছরে ৪৪ কোটি গাড়ি থেকে নিঃসরণ হয়৷ জ্বালানি সাশ্রয়ী খুব কম খরচে কার্বন নিঃসরণ রোধের সহজ উপায়৷ তাই রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন এবং এ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার সময় ‘এনার্জি স্টার’ লেবেল দেখে কেনা উচিত৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/C. Ohde
পানি খরচ কমানো
পানির অপচয় রোধ করেও কার্বন দূষণ কমানো যায়, কেননা, পানি পাম্প করতে, গরম করতে বা ঠাণ্ডা করতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়৷ তাই গোসল করার সময় কম পানি খরচ করুন৷ প্রয়োজন না হলে দাঁত মাজার সময় পানির কল বন্ধ রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
যেসব খাবার কিনছেন পুরোটা খান, মাংসের উপর চাপ কমান
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ ভাগ জ্বালানি খরচ হয় খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেটজাত করা এবং সরবরাহে৷ তাই খাবার কম অপচয় করলে জ্বালানি বা শক্তি কম খরচ হয়৷ গবাদি পশু পালনে প্রচুর জ্বালানি অপচয় হয়৷ তাই মাংস খাওয়া কমালে বিরাট পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷
ছবি: Colourbox
ভালো বাল্ব কিনুন
অন্য সব বাল্বের চেয়ে এলইডি বাল্ব শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে৷ এসব বাল্ব দীর্ঘস্থায়ী এবং খরচও কম৷ ১০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব, সাধারণ ৬০ ওয়াটের বাল্বের কাজ দেয় এবং এতে অনেক কম খরচ হয়৷
ছবি: AP
প্লাগ খুলে রাখুন
বাড়ির সব যন্ত্রপাতি যোগ করলে হয়ত দেখা যাবে ৬৫টি আলাদা যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো বিদ্যুতের সাহায্যে চলে৷ তাই যেসব যন্ত্রপাতি পুরোপুরি চার্জ হয়ে গেছে, সেগুলো চার্জে দিয়ে না রাখা, বা কোনো টাইমার সেট করা যাতে নির্দিষ্ট সময় পর চার্জিং বন্ধ হয়ে যায়৷ এছাড়া কম্পিউটার বা ট্যাব, ফোনের মনিটর কম পাওয়ার মোডে দিলেও জ্বালানির কম অপচয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Pape
জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ব্যবহার
গ্যাস-স্মার্ট গাড়ি, যেমন হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক যান চালালে জ্বালানি এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/P. Mlch
বিমান, ট্রেন এবং অটোমোবাইলের ক্ষেত্রে আর একবার ভাবুন
বড় শহরগুলোতে যতটা পারেন হাঁটুন বা গণ পরিবহন ব্যবহার করুন৷ এর ফলে ব্যয়ও কমবে, জ্বালানির অপচয়ও কম হবে৷ সবচেয়ে বড় কথা এর ফলে বায়ু দূষণ অনেক কমবে৷ এছাড়া অনেক মানুষ যদি বিমানে চড়া কমিয়ে দেয়, তাহলে বড় ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে৷ কেননা, আকাশ পথে চলাচল জলবায়ু দূষণের অন্যতম বড় মাধ্যম৷ বিমানের বিকল্প হিসেবে যদি ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, সেটাই বেছে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Balzarini
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে লবণ সহিষ্ণু ধান নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ মাটি লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় সূর্যমুখীর ফুলের আবাদও বেড়েছে৷ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট৷ প্রচলিত ধানের বদলে এ ধরনের ধান চাষ যত বাড়বে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ততই সহজ হবে৷
ছবি: CC/Rishwanth Jayaraj
11 ছবি1 | 11
ক্লাইমেট টেকনোলজি অ্যান্ড নেটওয়ার্ক (সিটিসিএন): এ নেটওয়ার্ক উন্নয়নশীল দেশগুলির অনুরোধে ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে কম কার্বন নিঃসরণ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক উপযোগী করে উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়৷ প্রযুক্তিগত সমাধান, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ে পরামর্শ, আইন এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি এ নেটওয়ার্কের উদ্যেশ্য৷
গ্রিনহাউস গ্যাস: কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস-অক্সাইড, পানির বাষ্প ইত্যাদির সমন্বয়ে সৃষ্টি হওয়া এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ, যা সূর্যের আলো বেশি শোষণ করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে৷ যত বেশি গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয়, তত বেশি তাপমাত্রা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভিতরে আটকে থাকে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে৷
ফসিল ফুয়েল: জীবাষ্ম জ্বালানি হলো, শক্তির এমন উৎস, যা শত শহস্র বছর ধরে জীবন্ত প্রাণির অবশিষ্টাংশ মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকতে থাকতে তৈরি হয়৷ শক্তির এ উৎস নবায়নযোগ্য নয়৷ কয়লা বা তেলের মতো মাটির নীচ থেকে পাওয়া শক্তির উৎসের ব্যবহার পৃথিবীতে গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম কারণ৷ সময়ের সাথে সাথে যতই জ্বালানির প্রয়োজন বাড়ছে, ততই বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে এ জীবাষ্ম জ্বালানি এবং সেই সাথে বাড়ছে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ৷ ফলশ্রুতিতে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে পৃথিবীর উত্তাপ৷
গ্লোবাল অ্যাভারেজ টেম্পারেচার: পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ঠিক করা হয় ভূমি ও সমু্দ্রপৃষ্ঠের উপরে দীর্ঘ সময় ধরে নেয়া তাপমাত্রার গড় করে৷ এ মেয়াদ হতে পারে ৩০ বছর পর্যন্ত৷ এত বেশি সময়ের গড় করার কারন হলো, তাপমাত্রার পরিবর্তন নির্ভর করে মহাসাগরের গতিপ্রকৃতি, পরিবর্তনশীল মেঘমালা, আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক চক্রের উপর৷ বিজ্ঞানীরা এসব দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে আবহাওয়ার গড় নির্ণয় করে থাকে৷
খরা, বন্যা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের কয়েকটি জাত
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে৷ তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো বেশ কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা৷ ছবিঘরে থাকছে সেগুলোর কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মধ্যম খরা, ঠান্ডা ও লবণাক্ততা সহনীয় ধান
ব্রি ৫৫ হচ্ছে আউশ ও বোরো মৌসুমের ধান৷ এটি মাঝারি খরা, ঠান্ডা ও লবণাক্ত পরিবেশ সহ্য করতে পারে৷ আউশ মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৫ টন ফলন হলেও বোরো মৌসুমে এই জাত ফলন দেয় প্রতি হেক্টরে সাত টন৷ ব্রি ৫৫ ধান ১০-১২ দিন সেচহীন অবস্থায় এবং ১৫-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৮ ডিএস/মিটার (প্রতি মিটারে ৮ ডেসিসিমেন্স) লবণাক্ত পরিবেশে টিকে থাকতে পারে৷ ১৪৫ দিনের মধ্যে এ ধান কাটার উপযোগী হয়৷
ছবি: M. Mamun
অধিক খরা সহিষ্ণু জাত
ব্রি ৫৭ জাতের এই ধানটিও আমন মৌসুমের৷ এটিও খরা সহনীয় ধান৷ পানির স্তর ২০ সেমি নীচে নেমে গেলেও এ জাতটি টিকে থাকতে পারে৷ এর ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ থেকে চার টন৷ ১০৫ দিনে এ ধান কাটার উপযোগী হয়৷
ছবি: M. Mamun
খরা সহনীয় জাত
খরা সহনীয় আগাম আমন মৌসুমের ধান হলো ব্রি ৫৬৷ ১৫ থেকে ১৬ দিন সেচহীন অবস্থায় টিকে থাকতে পারে৷ ব্রি ৫৬ প্রতি হেক্টরে চার থেকে সাড়ে চার টন ফলন দেয়৷ বীজতলা থেকে শুরু করে ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটার উপযোগী হয়৷
ছবি: M. Mamun
খরাপ্রবণ এলাকার ধান
ব্রি ৪৩ বোনা আউশের আগাম জাত ও কিছুটা খরাসহিষ্ণু৷ ছিটিয়ে, সারি করে এবং ডিবলিং- এই তিন পদ্ধতিতেই এর বীজ বোনা যায়৷ জাতটির জীবনকাল মাত্র ১০০ দিন৷ উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে এই ধান হেক্টর প্রতি সাড়ে তিন টন ফলন দিয়ে থাকে৷
ছবি: M. Mamun
অতি খরা সহনশীল
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে ব্রি ৭১ ধানের জাত৷ খরা সহনশীল জাতটি প্রজনন পর্যায়ে ২১ থেকে ২৮ দিন বৃষ্টি না হলেও টিকে থাকতে পারে৷ দেখতে মাঝারি মোটা আকৃতির৷ জীবনকাল ১১৪ থেকে ১১৭ দিন৷ অতি খরা বা মাটির আর্দ্রতা ২০ শতাংশের নীচে থাকলেও প্রতি হেক্টরে ৩.৫ টন, মধ্যম মানের খরায় চার টন ও খরা না থাকলে পাঁচ থেকে ছয় টন পর্যন্ত ফলন হয়৷
ছবি: M. Mamun
ঝড়, বৃষ্টি সহিষ্ণু ধান
ব্রি ২৯ জাতের ধান চাষে সেচ, সার ও সময় কম লাগে৷ ঝড়, বৃষ্টিতেও হেলে পড়ে না৷ ১৬০ দিনে ফসল ঘরে তোলা যায়৷ বিঘা প্রতি ফলন ২৪-২৮ মন৷
ছবি: M. Mamun
বন্যা সহিষ্ণু ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানের ফসলি জমি প্রায়ই আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়৷ এ ধরনের বন্যা সহ্য করতে পারে এমন কিছু জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ এর মধ্যে একটি ব্রি ৫১৷ এটি টানা ১৫ থেকে ১৭ দিন পানির নীচে ডুবে থাকলেও নষ্ট হয় না৷ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে৷ হেক্টরে ৪ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়৷ দক্ষিণাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় ধানের জাত এটি৷
ছবি: M. Mamun
অধিক বন্যা সহনশীল
ব্রি ৭৯ জাতের ধানের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ১৮ থেকে ২১ দিন বন্যার পানিতে ডুবে থাকলেও ফলনের তেমন ক্ষতি হয় না৷ আর এত দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে না পড়লে স্বাভাবিক অবস্থায় এটি হেক্টর প্রতি ৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম৷
ছবি: M. Mamun
লবণ সহিষ্ণু, অধিক ফলনশীল
আমন জাতের ব্রি-৭৩ ধান লবণসহিষ্ণু ও অধিক ফলনশীল৷ চাল মাঝারি চিকন ও সাদা৷ ভাতও হয় অন্য চালের চেয়ে ঝরঝরে৷ প্রতি হেক্টরে স্বাভাবিক ফলন হয় সাড়ে চা টন৷ কম লবণাক্ত জমিতে এ ধান ৬ দশমিক ১ টন ফলন দিতে পারে৷ এ জাতের ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রবও অনেক কম৷
ছবি: M. Mamun
একাধারে বন্যা ও লবণসহিষ্ণু
ব্রি ৭৮ জাতের আমন ধানটি একাধারে বন্যা ও লবণসহিষ্ণু৷ বাংলাদেশে এই জাতের ধান এটিই প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছে৷ এর আগে আলাদাভাবে লবণাক্ততা ও বন্যা সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছিল৷ সে রকম দুই জাতের ধানের জিন একীভূত করে ব্রি-৭৮ উদ্ভাবন করা হয়েছে৷
ছবি: M. Mamun
জোয়ার-ভাটায় চাষের উপযোগী
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জোয়ার-ভাটা এলাকায় চাষের উপযোগী জাত ব্রি ৭৬৷ এ জাতের ধানগাছের উচ্চতা ১৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়৷ এ জাতের ধান অন্য যে-কোনো আমনের চেয়ে হেক্টরপ্রতি এক টন বেশি ফলন দেয়৷
ছবি: M. Mamun
উচ্চমাত্রার আমিষযুক্ত ধান
১৯৯৭ সালে ইরান থেকে নিয়ে আসা ‘আমল ৩’-এর সঙ্গে বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় মেগাজাত ব্রি ২৮-এর সংকরায়ণ ঘটিয়ে ব্রি’র বিজ্ঞানীরা নতুন জাতের একটি ধানের উদ্ভাবন করেছেন৷ এর নাম ব্রি ৮১৷ বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন জাতের ধানের ফলন হবে প্রচুর, মানের দিক থেকে হবে রপ্তানিযোগ্য৷ এছাড়া এতে আমিষও থাকবে বেশি৷
ছবি: M. Mamun
উচ্চ ফলনশীল সরু চালের ধান
জাতের নাম ব্রি ৬৩৷ এই জাতের ধান থেকে বোরো মৌসুমে উচ্চমানের চাল পাওয়া যায়৷ এর চাল সরু ও গুণাগুণ বালাম চালের মতো বলে জাতটি সরু বালাম নামে পরিচিত৷ এ ধানের চাল বাসমতির মতো লম্বা ও চিকন৷ ১৪৮ থেকে ১৫০ দিনে ফসল ঘরে তোলা যায় এবং উপযুক্ত পরিচর্যায় হেক্টরে সাড়ে ছয় থেকে সাত টন ফলন হয়৷ ব্রি ৬৩-র আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত ধানের জাতের চেয়ে অনেক কম৷
ছবি: M. Mamun
13 ছবি1 | 13
ইন্টেনডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (আইএনডিসি): ২০১৭ সালের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে প্রস্তাবিত জলবায়ু চুক্তির আওতায় দেশগুলো ২০২০ সালে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা নির্ধারণ করে থাকে৷ আইএনডিসি হিসেবে পরিচিত এ পরিকল্পনার একটা বড় অংশ থাকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন-ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ কমানো৷
ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি): ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের দু'টি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত হয়৷ এ প্যানেল মূলত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের উপর গবেষণা করে থাকে৷ এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বর্তমান অবস্থা জনগণের কাছে তুলে ধরাই এ প্যানেলের উদ্দেশ্য৷
পার্টস পার মিলিয়ন (পিপিএম): একটি নির্দিষ্ট নমুনার উপর কোনো বিশেষ উপাদানের ঘণত্বের পরিমাণ৷ জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বাতাসে দূষনের পরিমান, যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড বা মিথেন ইত্যাদির পরিমাণ বের করতে এ টার্মটি ব্যবহার করে থাকেন৷ যেমন, বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিরাপদ মাত্রা ৩৫০ পিপিএম হলেও বর্তমানে তা প্রায় ৪০০ পিপিএম৷ প্রতি বছর আনুমানিক ২ পিপিএম করে এ পরিমাণ বাড়ছে৷
প্রি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেভেল অফ কার্বন-ডাই অক্সাইড: শিল্পবিপ্লবের আগে বাতাসে কী পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড ছিল তা জানাতে এ টার্মটি ব্যবহার করা হয়৷ সেসময় এর পরিমাণ ছিল ২৮০ পিপিএম৷
কিয়োটো প্রটোকল: একটি বহুরাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি৷ এ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলিকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে দায়বদ্ধ করা হয়৷ ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের জাপানের কিয়োটো শহরে এই চুক্তি প্রথম গৃহীত হয়৷ উন্নত দেশগুলিকে মূলত গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত করে এই চুক্তি উন্নত দেশগুলিকে এর পরিমাণ কমিয়ে আনতে বলে৷ এর ফলে ২০০৮ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ৩৭টি শিল্পোন্নত দেশের নিঃসরণের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়৷ ওই চুক্তিতে ১২৯টি দেশ সমর্থন দিয়েছিল৷ তবে পরবর্তীতে চুক্তি থেকে ২০১২ সালে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় ক্যানাডা৷
দ্য প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্ট বা প্যারিস চুক্তি: ২০১৫ সালের ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কার্বন নির্গমন কমানো ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়৷ ২০১৬ সালের এপ্রিলে জাতিসংঘ সদর দফতরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে ‘প্যারিস চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয়৷ এতে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ আর ২০২০ সালের মধ্যে চুক্তিতে অনুমোদন দেওয়া দেশগুলোকে কার্বন নির্গমন নির্দিষ্ট সীমায় নামাতে হবে৷ এই চুক্তির ভিত্তিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ ও প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করবে ধনী দেশগুলো৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷