হোয়াইট হাউসে পালাবদলের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রশ্নে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ প্যারিস চু্ক্তিতে আবার যোগ দেবার পাশাপাশি আরো নতুন উদ্যোগে শামিল হতে প্রস্তুত বাইডেন প্রশাসন৷ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত ও প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি অ্যামেরিকার এই নতুন ভূমিকার নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ সোমবার তিনি বিশ্বের রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য জগতের ২০ জনেরও বেশি শীর্ষ নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন৷ নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরে ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন সামিটে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে নতুন মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা তুলে ধরবেন তিনি৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, চীনের উপ প্রধানমন্ত্রী হান জেং-সহ একাধিক নেতা এই জলবায়ু সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন৷ তবে বর্তমান করোনা সংকটের কারণে অনলাইন পদ্ধতিতে ২৪ ঘণ্টার এই সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতিও পরিবর্তন হচ্ছে৷ শীতের দেশেও অনেক সময় নাভিশ্বাস উঠায় গরম৷ পৃথিবীর অতি গরমের ১০টি দেশের তালিকা করেছে ‘স্কাইমেট ওয়েদার’৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R.K. Singhআফ্রিকার দেশ সুদানে বছরজুড়েই গরম থাকে৷ এমনকি, বৃষ্টির মধ্যে সেখানে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে৷ মরুর দেশ সুদানে গড় তাপমাত্রা থাকে ৫২ ডিগ্রি৷ একেবারে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় গরমে বেশি নাভিশ্বাস উঠে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/U. Doeringআরবের ধনী দেশ ওমান৷ অতি উষ্ণ দেশ হিসাবেও এটি আছে প্রথম সারিতে৷ বছরের পাঁচ থেকে ছয় মাস এখানে তাপমাত্রা ৫০-৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে৷ দেশটির বেশির ভাগ জায়গাই এয়ার-কন্ডিশনড৷
ছবি: MHCযুদ্ধের বাইরে অন্য অনেক সমস্যা মোকাবেলা করে ইরাক৷ এর মধ্যে একটি বড় সমস্যা অধিক তাপমাত্রা৷ গরমের দিনে এখানকার তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি থেকে শুরু করে ৫৪ ডিগ্রিতে ছাড়িয়ে যায়৷ উত্তরের পর্বত এলাকায় বরফ পড়লেও পুরো দেশে তাপমাত্রা থাকে অসহনীয়৷
ছবি: Reuters/Rasheedবহু রকম আবহাওয়া প্রত্যক্ষ করা হয় ভারতে৷ দেশটির হিমালয় এলাকায় তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামে৷ আর রাজস্থানের মতো মরু এলাকায় তাপমাত্রা উঠে ৪৮ ডিগ্রি পর্যন্ত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R.K. Singhগ্রীষ্মে মধ্য অ্যামেরিকার দেশ মেক্সিকোতে গড় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে থাকে৷ এমন তাপমাত্রার মধ্যও মেক্সিকোর কয়েকটি সমুদ্র সৈকত পৃথিবী অন্যতম শীর্ষ পর্যটক গন্তব্য৷
ছবি: picture alliance / blickwinkel/imagesandstories১৩টি রাজ্য ও তিনটি প্রজাতান্ত্রিক এলাকা নিয়ে গঠিত পূর্ব-এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া৷ দেশটির তাপমাত্রায় নানাবিধ পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷ সারাবছর এখানে তাপমাত্রা থাকে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে৷ আর কোনো কোনো সময় এটা ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে৷
ছবি: Reuters/T. Sylvesterউত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার আবহাওয়া বিচিত্র রকম৷ এখানে যেমন ভয়াবহ উষ্ণ দিন হয়, তেমনি সবচেয়ে ঠাণ্ডা রাত পাওয়া যায়৷ মৃদু বৃষ্টিপাতের দেশটিতে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে৷ শীতকালে আলজেরিয়ায় গড় তাপমাত্রা থাকে ২৫ ডিগ্রি৷ আর গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা থাকে অনেক শুষ্ক এবং আর্দ্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Messaraবেশির ভাগ অঞ্চল মরুভূমি হওয়ায় সৌদি আরবের তাপমাত্রা বেশি৷ বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশটির তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে৷ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় তাপমাত্রা পরিবেশকে অসহনীয় করে তোলে৷ দিনের বেলা গরমের মাত্রা ৫২ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠা সেখানে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Timberlakeপৃথিবীর অন্যতম উষ্ণ দেশ ইথিপিওয়া৷ দেশটির ‘দানাকিল ডিপ্রেসন’ মরুভূমির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের একশ‘ মিটার নিচে অবস্থিত৷ এখানে হরহামেশা লু হাওয়া বয়ে যায় এবং ভূমিকম্প হয়৷ দিনের বেলা তাপমাত্রা ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছার রেকর্ডও আসে দেশটিতে৷
ছবি: Imago/photothekলিবিয়ায় গরমের কারণে গ্রীষ্মে চামড়া পুড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হয়ে থাকে৷ লিবিয়ান মরুভূমির দখলের দেশটির বড় অংশ৷ এখানকার শুষ্ক আবহাওয়া তাপমাত্রা প্রায় ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠায়৷ ১৯২২ সালে রেকর্ড ৫৭ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠে লিবিয়ায়৷
ছবি: Reuters/H. Amara তাত্ত্বিক আলোচনার বদলে সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব মোকাবিলার বাস্তবসম্মত প্রস্তুতি মূল লক্ষ্য৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এই সব পদক্ষেপ রূপায়নের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হবে৷ সম্মেলনের শেষে খরা, বন্যা, উচ্চ তাপমাত্রা, সমুদ্রস্তরের বেড়ে চলা উচ্চতার মতো সমস্যা সামলাতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুমোদন করতে চায় নেদারল্যান্ডসের সরকার৷ এমন বিপর্যয়ের ফলে খাদ্য সংকটের মতো সমস্যা সামলানোর উদ্যোগও সম্মেলনে গুরুত্ব পাচ্ছে৷ সেই ‘অ্যাডাপ্টেশন অ্যাকশন অ্যাজেন্ডা' বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাজে লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব বান কি মুন এই সম্মেলনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন৷ গত সপ্তাহে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখনো পর্যন্ত মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেয় নি৷ ২০২১ সালে বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একাধিক মাইলফলক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন৷ গোটা বিশ্বের প্রায় ৩,০০০ বিজ্ঞানী বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কুপ্রভাব সামলাতে বিশ্বনেতাদের প্রতি সুরক্ষামূলক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন৷
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেন, তাঁর দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে অবস্থিত৷ কয়েক শতাব্দীর সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তাঁর দেশ বাকিদের পানি দূরে রাখার উদ্যোগে সহায়তা করতে পারে৷
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বাংলাদেশ, মিশর, মালাউই, নেদারল্যান্ডস, সেন্ট লুসিয়া ও জাতিসংঘকে নিয়ে এক অ্যাডাপটেশন অ্যাকশন কোয়ালিশন ঘোষণা করতে চলেছেন৷ তাঁর দফতর এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানিয়ে বলেছে, যে এর মাধ্যমে সেই সব এলাকার সমাজকে সহায়তা করা হবে, যেগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে৷ নতুন এই গোষ্ঠী জাতিসংঘের ডাকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গীকারগুলিকে কার্যক্ষেত্রে রূপায়ন করতে সহায়তা করবে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)