1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে ইউরোপীয় আদালতে

২২ ডিসেম্বর ২০২১

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা যে তরুণ প্রজন্মের বাকি জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলছে, সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই৷ সেই বিপর্যয় এড়াতে হাত গুটিয়ে বসে না থেকে পর্তুগালের এক পরিবার ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে৷

Portugal | junge portugiesische Klimaaktivisten verklagen 33 Länder am EGMR
ছবি: GLAN//dpa/picture alliance

ক্লাউডিয়া দুয়ার্তে আগুস্তিনিও গাছপালার অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে পড়ছেন৷ পর্তুগালের অ্যাটলান্টিক উপকূলে সবুজের সমারোহের কথা তিনি মনে করতে পারেন৷ কিন্তু দাবানলের পর থেকে পাইনের গাছ লাল হয়ে গেছে৷ ক্লাউডিয়া বলেন, ‘‘এমন সুন্দর জায়গায় ধ্বংসলীলা দেখলে মনে ভারি দুঃখ হয়৷ এমন ঘটনা আরও ঘনঘন দেখা যাবে, এই জায়গাটি যেন সেই আশঙ্কার প্রতীক হয়ে উঠেছে৷ শুধু এখানে নয়, আমাদের গ্রহের সর্বত্র৷ এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়ানো উচিত৷''

পর্তুগালে বারবার দাবানল সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে৷ ২০১৭ সালে সে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে৷ সেই ঘটনায় ১১০ জন নিহত, অসংখ্য মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে৷ আবহাওয়া আরও শুষ্ক ও গরম হয়ে ওঠায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়৷

ক্লাউডিয়ার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমনটা ঘটছে৷ সে কারণে ২১ বছর বয়সি নার্সিং ছাত্র হিসেবে তিনি প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চান৷ রাজধানী লিসবন থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে লেইরিয়া শহরের বাসিন্দা তিনি৷ তবে রাজপথে অনেক বিক্ষোভ দেখিয়ে কোনো লাভ হয়নি৷ সে কারণে তিনি এবার ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনো এক দিন বিপদহীন ও সুস্থ এক পৃথিবীতে বাস করতে চাই বলে ৩৩টি দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছি৷''

জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে মরিয়া পর্তুগিজ তরুণী

05:17

This browser does not support the video element.

ক্লাউডিয়ার ভাই-বোন ও তিন বন্ধুও সেই মামলায় শামিল হয়েছেন৷ ১৮ বছর বয়সি ভাই মার্টিম হাঁপানি রোগে ভুগছেন৷ তাঁদের মতে, আরও বেশি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে৷ বেড়ে চলা উত্তাপ ও দাবানলও এমন অবস্থার কারণ বলে তাঁরা মনে করেন৷ মার্টিম মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্বাসজনিত সমস্যা বাড়বে৷ তাঁর মতো মানুষের অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে৷

তাঁদের বাবা-মাও এই মামলার প্রতি সমর্থন করছেন৷ টেরেসা মোটার বয়স ৪৭৷ তিনি জার্মানিতে বড় হয়েছেন৷ তাঁর মতে, তাঁর নিজের জীবনে দুশ্চিন্তা না থাকলেও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে  ছেলেমেয়েদের ভয়ভীতি তিনি পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেন৷ সে কারণে স্ট্রাসবুর্গ শহরের আদালতের বিচারকরা এই মামলাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট৷ টেরেসা বলেন, ‘‘আমার ছোট সন্তান আছে, যার বয়স মাত্র নয়৷ তার জীবন কেমন হবে? আমারও মনে কিছুটা অপরাধবোধ জেগে ওঠে৷ আমি কিছুই করতে পারিনি, কোনো অবদান রাখি নি৷ বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবনাচিন্তা করি নি, আমার সন্তানদের মতো সেই অধিকারের জন্য লড়াই করিনি৷ তাই মনে অপরাধবোধ জন্মায় বৈকি৷''

ক্লাউডিয়া আগের প্রজন্মকে দোষ দেন না৷ তাঁরা তো আর বেশি ভালো জানতেন না৷ কিন্তু যারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকেই অস্বীকার করে, তাদের প্রতি তাঁর ক্ষোভ কম নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, যে সব মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বাস করে না, তাদের মনে বিশেষ অপরাধবোধ কাজ করে৷ তারা একেবারেই বিশ্বাস করতে চায় না৷ আমরা নিজেদের গ্রহের কী দশা করছি, তা স্বীকার করতে তাদের আসলে বড্ড কষ্ট হয়৷''

ছবি: DW

‘গ্লোবাল লিগাল অ্যাকশন' নামের আয়ারল্যান্ডের মানবাধিকার সংগঠন এমন মামলার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে৷ আইনজীবী হিসেবে গেরি লিস্টন ও তাঁর টিমের কৌশল কিন্তু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল৷ কারণ, ইউরোপীয় আদালত এমন মামলা জাতীয় আদালতে পাঠিয়ে দিতে পারতো৷ কিন্তু বিচারপতিরা তরুণ পর্তুগিজদের মামলাটি বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেন৷ গেরি মনে করেন, ‘‘এমন বিপর্যয় প্রতিরোধ করতে কোনো সরকার নির্দেশিকা মেনে কার্বন নির্গমন না কমালে তারা আসলে জনসংখ্যার একটি অংশের প্রতি বৈষম্য করছে৷ নির্দিষ্ট বয়সের মানুষ, অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ও ভিটেমাটি ঝুঁকির মুখে ফেলছে৷''

এমন সব ছবির মাধ্যমে গেরি লিস্টনের বক্তব্য স্পষ্ট হয়ে যায়৷ তিনি ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদ ও প্যারিস জলবায়ু সংরক্ষণ চুক্তির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ তাঁর মতে, চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা সর্বোচ্চ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে রাষ্ট্রগুলিকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ আরও কমাতে হবে৷

এই সংগ্রামে সাফল্য সম্পর্কে ক্লাউডিয়া আশাবাদী৷ কারণ তাঁর মামলাও সরকারগুলির উপর চাপ আরও বাড়িয়ে তুলছে৷ ক্লাউডিয়া মনে করেন, ‘‘আমরা যা করছি, তার জন্য অনেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে৷ ফলে আমার অত্যন্ত আনন্দ হচ্ছে৷ কিন্তু এখনো দীর্ঘ পথ চলা বাকি৷ তার জন্য আমাদের অনেক শক্তির প্রয়োজন৷ শেষ পর্যন্ত আমরা তো কিছু হাসিল করতে চাই৷''

কবে মামলার রায় হবে, তা বলা যাচ্ছে না৷ কারণ ৩৩টি দেশই ক্লাউডিয়া ও অন্যান্যদের এই মামলাকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে মানতে প্রস্তুত নয়৷

নর্মান স্ট্রিগেল/এসবি

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ