জলবায়ু সম্মেলনের চুক্তির সফলতা নিয়ে শঙ্কা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০মাত্র দুমাসেরও কম সময় আগে স্বাক্ষরিত হওয়া কোপেনহেগেন অ্যাকর্ড নামের চুক্তিটির কোনো ভবিষ্যৎ নেই বলে এখনি কেউ কেউ বলছেন৷
তাঁদের মতে, সম্মেলনের সময় বিতর্ক এড়াতেই তাড়াহুড়ো করে যেনতেনভাবে চুক্তিটির খসড়া তৈরি করা হয়েছিল৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তিটির খসড়া তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছিল৷
এছাড়া গত ৩১ জানুয়ায়ী ছিল শেষ দিন, যে সময়ের মধ্যে প্রতিটি দেশকে জাতিসংঘকে দুটি বিষয়ে লিখিতভাবে জানানোর কথা ছিল৷ এর মধ্য একটি হলো কার্বন নির্গমন হ্রাসের বিষয়ে কে কি করবে তা জানানো আর অন্যটি হলো দেশগুলো কোপেনহেগেন অ্যাকর্ডকে সমর্থন করছে কি না৷
নির্ধারিত সময়ের পর দেখা গেল, প্রতিটি দেশ কার্বন নির্গমনের ব্যাপারে কি কি করতে চায় তা জানালেও চীন, ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়া চুক্তিটি সমর্থনের বিষয়ে কিছু জানায়নি৷
এ ব্যাপারে বার্তা সংস্থা এএফপি চীন ও ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি৷
লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট ফর এনভায়রনম্যান্ট এন্ড ডেভেলপম্যান্ট-এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সালিমুল হক বলছেন, বিশ্বের বড় বড় উন্নয়নশীল দেশগুলো চুক্তিটি সমর্থন না করার অর্থ হলো চুক্তিটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত৷
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তিটি বিভিন্ন দেশের উপর খুব সামান্যই প্রভাব ফেলতে সক্ষম৷ তাঁরা বলছেন, এই চুক্তিটি দিয়ে বছর শেষে, পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি নুতন বৈশ্বিক চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব নয়৷
চুক্তিটির কার্যকারিতার জন্য যে ধরণের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দরকার তা এতই দুর্বল যে পুরো ২০১০ সাল জুড়ে চুক্তিটি নিয়ে আলোচনার জন্য এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে৷ এর মধ্যে একটি হবে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক, যা অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে জার্মানির বনে৷ আর পরেরটি অনুষ্ঠিত হবে ডিসেম্বরে মেক্সিকোতে, যা হবে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক৷
চুক্তিটির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করছেন এমন একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, এরই মধ্যে চীন, ভারতসহ অন্যান্য দ্রুত উন্নয়নশীল রাষ্ট্র চুক্তিটির ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে৷ তিনি বলছেন, প্রকাশ্যে দেশগুলো চুক্তিটির প্রতি সমর্থন দেখিয়ে গেলেও গোপনে তাঁরা মূলত চুক্তিটি উপেক্ষা করছে৷
সমালোচকরা বলছেন, চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর লক্ষ্যে পৌঁছানোর কোনো রোডম্যাপ নেই৷ এছাড়া কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে দেশগুলোর ইচ্ছার উপরই সব ছেড়ে দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ দেশগুলোকে বাধ্য করার মত কোনো ধারা চুক্তিতে নেই, যা চুক্তিটিকে দুর্বল করে দিয়েছে৷
প্রতিবেদকঃ জাহিদুল হক
সম্পাদনাঃ অরুণ শঙ্কর চৌধুরী