জলবায়ু সম্মেলনের সময়েই মানবাধিকার কর্মীর মৃত্যুর শঙ্কা
৮ নভেম্বর ২০২২
কারাগারে আটক ব্রিটিশ-মিশরীয় লেখক এবং গণতন্ত্রপন্থি কর্মী আলা আব্দুল ফাত্তাহ পানিও পান করছেন না৷ এ কারণে কয়েক দিনের মধ্যে তার মৃত্যুর আশঙ্কা করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
বিজ্ঞাপন
মানবাধিকার সংস্থাটির শঙ্কা, এমন অবস্থা চলতে থাকলে মিশরে চলমান জলবায়ু সম্মেলনের মাঝেই এই মানবাধিকার কর্মীর মৃত্যু হতে পারে৷
সম্ভাব্য মৃত্যুর হাত থেকে তাকে বাঁচাতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড মিশরের কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷
‘‘তার (ফাত্তাহ) মৃত্যু ঠেকাতে হলে এখনই কিছু করতে হবে,'' বলেন তিনি৷
৪০ বছর বয়সি মানবাধিকার কর্মী আলা আব্দুল ফাত্তাহ তার আত্মীয়দের জানিয়েছেন, তিনি রোববার পর্যন্ত কেবল পানি পান করবেন এবং তারপর পানিও বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন৷ মিশরে ব্রিটিশ কনস্যুলারে প্রবেশের অনুমতি প্রদানে চাপ প্রয়োগ করতে গত প্রায় ২০০ দিন ধরে তিনি শুধু ১০০ ক্যালোরি খাদ্য গ্রহণ করেছেন৷
মুক্তির আহ্বান
এবারের জলবায়ু সম্মেলন মিশরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ এই সম্মেলনকে ঘিরে দেশটির মানবাধিকার কর্মী ও গণতন্ত্রপন্থি কর্মীদের দুর্দশাার বিষয়টি সামনে চলে আসে৷ তারা মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির হাতে প্রচণ্ড দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছেন৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এই সম্মেলন উপলক্ষে মিশরীয় সরকার ৭৫০ জন রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিলেও বিক্ষোভ দমন ও নজরদারি বাড়িয়েছে৷
অনেক আন্তর্জাতিক ও মানবাধিকার সংস্থার মতো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও আলা আব্দুল ফাত্তাহর আশু মুক্তি দাবি করেছে৷
‘‘জীবন বাঁচাতে আলা শুধু তার শরীরের উপর নির্ভর করছে৷ সে আর অন্যদের মতো জীবন যাপন করছে না,'' বলছিলেন ফাত্তার বোন সানা সেইফ৷
‘‘তার অবস্থা খুবই নাজুক৷ আমি তার বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কিত,'' যোগ করেন তিনি৷
‘‘যখন শেষবার কারাগারে, প্লাস্টিকের পর্দার আড়াল থেকে তাকে দেখি, তখন তার শরীরে ছিল হাড্ডি আর চামড়া, চোখ দুটিও ভিতরে ডুকে গেছে এবং তার শরীরের শক্তি প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল,'' বলেন আলার বোন৷
আলার পরিবার রোববার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মাধ্যমে একটি চিঠি প্রকাশ করেছে৷ চিঠিতে বলা হয়েছে, আলার মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন৷
কে এই ফাত্তাহ, কেন তিনি বন্দি?
ফাত্তাহ একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার, বিশিষ্ট লেখক এবং গণতন্ত্রপন্থি কর্মী৷ তিনি ২০১১ সালে মিশরে বিপ্লবের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন৷ ওই সময় হোসনি মোবারক সরকারের পতন ঘটে৷
যুক্তরাজ্যে জন্ম নেয়া আলা আব্দুল ফাত্তাহর মা একজন ডাক্তার৷
আলা গত ৮ বছরে বার বার আটক হয়েছেন৷ সর্বশেষ তাকে আটক করা হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে৷ তখন তার বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকা ও অপপ্রচারের অভিযোগ আনা হয়৷ পরবর্তীতে তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়৷
একেএ/এসিবি (এপি, ডিপিএ)
রাষ্ট্র যেভাবে ‘বিরোধীদের’ বিদেশ থেকে আটক করে
ফ্রিডম হাউস বলছে, বিরোধীদের বিদেশ থেকে ধরে নানাভাবে শায়েস্তা করে বিভিন্ন দেশের সরকার৷ কোনো কোনো দেশ গোপনে গোয়েন্দা অভিযান চালায় অন্য দেশে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অপহরণ, এমনকি হত্যাও করে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. J. Phillip
সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত
২০২০ সালে নিখোঁজ হন ওরহান ইনান্দি৷ কিরগিস্তানের রাজধানী বিশেকে তুর্কি-কিরগিজ এই শিক্ষাবিদের গাড়ির দরজা ছিল খোলা৷ হঠাৎ উধাও হওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছিল ইনান্দিকে হয়ত অপহরণ করা হয়েছে৷ সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান জানিয়েছেন, গুলেনপন্থি হিসেবে পরিচিত ইনান্দিকে তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি আটক করেছে৷ পরে ইনান্দির স্ত্রী জানান, তার স্বামীর ডান হাতের তিনটি অংশ পিটিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Sapat
বিদেশে ‘বিরোধী’ নির্যাতনে ৩১ দেশ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ফ্রিডম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের মোট ৩১টি দেশ বিদেশে অবস্থানরত ভিন্নমতাবলম্বী নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচক নাগরিকদের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অপহরণ, নির্যাতন, এমনকি হত্যাও করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. J. Phillip
তালিকার শীর্ষে যারা
অপহরণ, আটক, গোয়েন্দা সংস্থার অভিযান পরিচালনা, হত্যা, সহিংস হামলা, প্রত্যর্পণ, দমন-নিপীড়ন এবং গুম- বিদেশে অবস্থানরত ‘বিরোধীদের’ বিরুদ্ধে এসবের যে-কোনো একটি করেছে, এমন ৩১টি দেশের নামের তালিকা দিয়েছে ফ্রিডম হাউস৷ সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন, উজবেকিস্তান, রুয়ান্ডা, রাশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, মিশর, সৌদি আরব, তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, ইথিওপিয়া এবং লিবিয়া৷
বিদেশ থেকে বিরোধীদের ধরা সহজ!
ফ্রিডম হাউসের বিশেষজ্ঞ ইসাবেল লিনৎসার বলেন, কাউকে বিদেশ থেকে ধরে আনা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ নজরদারি করে, গোয়েন্দাদের কাজে লাগিয়ে বিদেশের মাটিতে কারো ওপর হামলা চালানো বা তাকে ধরে এনে নির্যাতন চালানো এখন আর অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়৷
ছবি: James Lawler Duggan/AFP
সাত বছরে ৬০৭ জন
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত মোট ৬০৭ জন মানুষ নিজের দেশের বাইরে খুন,অপহরণ অথবা অন্য ধরনের হামলার শিকার হয়েছেন৷ তবে লিনৎসার মনে করেন প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি৷
ছবি: picture-alliance/empic/P. Byrne
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে সবচেয়ে পটু তিন দেশ
অন্য দেশে ঢুকে নিজেদের নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলা চালায় চীন, তুরস্ক এবং মিশর৷ তবে এর বাইরেও অনেক দেশই যে এমনটি করে, তা মনে করাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনেছে ফ্রিডম হাউস৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ওয়ার অন টেরর’-এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রও বেশ কয়েকবার এমনটি করেছে৷ উদাহরন হিসেবে খালেদ আল মাসরিকে অপহরণ করে সিআইএ-র নির্যাতন এবং জুলিয়ান আসাঞ্জকে হত্যার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷
ছবি: Emrah Gurel/AP Photo/picture alliance
চীনের উইগুর-দমন কৌশল
বিদেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর হামলায় সবচেয়ে সক্রিয় চীন৷ সাম্প্রতিক সময়ে চীন উইগুরদের ওপরই এমন হামলা সবচেয়ে বেশি চালিয়েছে৷ এ কাজে চীন সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের সহায়তা নিয়ে থাকে৷ সেই ব্যক্তি কোন দেশে আছে তা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানার পর তাকে ধরতে সেই দেশের সহায়তা চাওয়া হয়৷ থাইল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নেয়৷ তারপর তাকে ফিরিয়ে দেয় চীনে৷
বিদেশ থেকে অপহরণে এগিয়ে তুরস্ক
ইসাবেল লিনৎসার জানান, ফ্রিডম হাউসের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ থেকে ভিন্নমতাবলম্বীদের সবচেয়ে বেশি অপহরণ করেছে তুরস্ক৷ তুরস্কের পরই রয়েছে মিশর৷ তিনি আরো জানান, তুরস্ক সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সমঝোতায় না গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটির মাধ্যমে গোপনে, অবৈধভাবেই কাজটি সম্পন্ন করে৷ জাতিসংঘের তদন্তকারীরা ইতিমধ্যে তুরস্ককে বিদেশে এমন গোপন অভিযান পরিচালনা বন্ধ করতে বলেছে৷