মিশরে রোববার থেকে শুরু হয়েছে জাতিসংঘ আয়োজিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন বা কপ-২৭৷ সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার আশা রাখছে৷
বিজ্ঞাপন
এই লক্ষ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সম্মেলন ইতিমধ্যেই অনেকে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন৷ কয়েকজনের মতামত এখানে তুলে ধরা হল৷
জাতিসংঘের মহাসচিব
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘‘গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বাড়ছে৷ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমাগতও বাড়ছে৷ এবং আমাদের গ্রহ দ্রুত এমন একটি জায়গায় পৌঁছাবে যে জলবায়ু সৃষ্ট বিশৃঙ্খলাকে আর বিপরীত দিকে আনা যাবে সম্ভব হবে না৷''
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘আমরা এখন জলবায়ু নরকের হাইওয়েতে আছি এবং আমাদের পা গাড়ির গতিবর্ধকে৷''
জেনে রাখুন কিছু জলবায়ু পরিভাষা
রোববার শুরু জলবায়ু সম্মেলন৷ মিশরের শার্ম আল-শেইখে জলবায়ু নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জড়ো হবেন বিশ্বনেতারা৷ দশকের পর দশক ধরে চলা এই আলোচনায় চালু হয়েছে অনেক জটিল পরিভাষাও৷ ছবিঘরে থাকছে কিছু পরিভাষার ব্যাখ্যা৷
ছবি: Sayed Sheasha/REUTERS
গ্লাসগো প্যাক্ট
২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে এই চুক্তি হয়৷ প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের কোনো চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়৷ এই চুক্তিতে রাষ্ট্রগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য আরো উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Jane Barlow/empics/picture alliance
প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্ট
কিয়োটো প্রোটোকলের উত্তরসূরি হিসাবে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে হয় এই চুক্তি৷ এই চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করার ব্যাপারে একমত হয় স্বাক্ষরকারী দেশগুলো৷ দেশগুলো জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার ব্যাপারেও একমত হয়৷ ২০২০ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
১.৫ ডিগ্রি
প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো চলতি শতাব্দীতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রির অনেক নীচে ধরে রাখতে সম্মত হয়৷ চুক্তিতে এর আইনি বাধ্যবাধকতাও তৈরি হয়৷ পাশাপাশি উষ্ণতা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করার কথাও বলা হয় এই চুক্তিতে৷
ছবি: Martin Meissner/AP/picture alliance
কপ ২৭
কনফারেন্স অব পার্টিজ- কপ জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কনভেনশনের সর্বোচ্চ সংস্থা৷ প্যারিস চুক্তি সই করা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতি বছর কপের সম্মেলন আয়োজিত হয়৷ কপের ২৭তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে মিশরের শার্ম আল-শেইখের রেড রিসোর্ট টাউনে৷
ছবি: Sayed Sheasha/REUTERS
ন্যাশনালি ডিটারমাইনড কন্ট্রিবিউশনস, এনডিসি
এনডিসি হচ্ছে রাষ্ট্রগুলোর ঘোষণা করা কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা৷ ২০২০ সাল থেকে কোন দেশ কতটুকু নিঃসরণ কমাবে, সেটি রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেই ঘোষণা করছে বিভিন্ন দেশ৷ প্রতি পাঁচ বছরে একবার বিভিন্ন দেশ এই লক্ষ্যমাত্রা নতুন করে নির্ধারণ করে৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
‘জাস্ট ট্রানজিশন’
নিম্ন কার্বন নিঃসরণের অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে জাস্ট ট্রানজিশন বলা হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিঘ্নিত না করে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার নীতি নির্ধারণ করা হয়৷ শ্রমিক, বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং ভোক্তাদের সুযোগসুবিধা যাতে বৃদ্ধি পায়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হয়৷
ছবি: Mousse/abaca/picture alliance
ক্লাইমেট ফিন্যান্স
২০০৯ সালে ধনী দেশগুলো অপেক্ষাকৃত দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়৷ ২০১৫ সালে দেশগুলো এই প্রতিশ্রুতি ২০২৫ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়৷ কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি এখনও পূরণ করতে পারেনি ধনী দেশগুলো৷
ছবি: Getty Images/C. Court
লস অ্যান্ড ড্যামেজ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ধনী দেশগুলো সহায়তা দিতে রাজি হলেও দরিদ্র দেশগুলো প্রতিবছরই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কতটা ক্ষতি হচ্ছে তার পরিমাণ নির্ধারণে সম্মত হওয়ার জন্য চাপ দিয়ে থাকে৷ এই ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা গেলে সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণও দাবি করা সম্ভব হবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষে৷
ছবি: DW/G. Rueter
8 ছবি1 | 8
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেন, ‘‘আমরা যদি ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি টন কার্বনের গড় মূল্য কমপক্ষে ৭৫ ডলার নির্ধারণ করতে না পারি তাহলে বরং ব্যবসা এবং ভোক্তাদের স্থানান্তরিত করার জন্য প্রণোদনা তৈরি না করাই ভাল৷''
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মাদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান জানান, তার দেশ জ্বালানী সরবরাহের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হিসেবে পরিচিত এবং যতদিন বিশ্বের তেল এবং গ্যাসের প্রয়োজন হবে ততদিন সংযুক্ত আরব আমিরাত এই ভূমিকা পালন করে যাবে৷
সেনেগালের প্রেসিডেন্ট এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপার্সন ম্যাকি সাল বলেন, ‘‘যদিও আফ্রিকা গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনে ৪ শতাংশেরও কম অবদান রাখে, তারপরও তারা কার্বন ব্যবহারে মিতব্যয়িতা, জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীলতা এবং একটি যুক্তিসঙ্গত সময়সীমার মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আজ করবে৷''
‘‘আমরা একটি সবুজ পরিবর্তনের পক্ষে যা ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত৷ এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমরা চাই না যা আমাদের উন্নয়নকে ব্যহত করে,'' বলেন তিনি৷