জার্মানির বন শহরে চলছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলো জানতে চাইছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার অর্থ কোথা থেকে আসবে৷
ছবি: Imago/CoverSpot/B. Lauter
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ সহ কয়েকটি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হলেও এর কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ অতিবৃষ্টি, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরাসহ নানান দুর্যোগের মুখে পড়ছে দেশগুলো৷ প্রতিটি দুর্যোগের পর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রতিটি দেশকে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোর প্রশ্ন হচ্ছে, শিল্পোন্নত দেশগুলো যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মূলত দায়ী, তাই তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত৷ এই লক্ষ্যে ২০১৩ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ' নামে একটি মেকানিজম গড়ে উঠে৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ শিল্পোন্নত দেশগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে৷ কারণ এতে সমর্থন দিলে ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে এই আশংকায় আছে দেশগুলো৷
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন যেভাবে
লক্ষ্যটি খুবই সহজ৷ কার্বন ডাই অক্সাইড জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শত্রু৷ আর গাড়ি, স্মার্টফোনের মতো কিছু জিনিস, যা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ব্যবহার কম করলে অর্থ খরচ কমবে, জলবায়ুর জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
এ বিষয়ে কথা বলা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আপনার কোন ছোট পদক্ষেপ বড় প্রভাব ফেলতে পারে? এটা নিয়ে কথা বলুন পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে৷ আর এটা নিশ্চিত করুন যে, এ বিষয়ে তারা যাতে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷
ছবি: Gemeinde Saerbeck/U.Gunnka
নিজের বাড়িতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
বাড়িতে বৈদ্যুতিক সেবা দেয়ার জন্য এমন কোম্পানিকে বেছে নিতে হবে যারা তাদের বিদ্যুত উৎপাদনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাতাস বা সৌরশক্তি ব্যবহার করে এবং যাতে তারা ‘গ্রিন ই এনার্জি’র অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়৷ যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজের বিদ্যুৎ বিলের দিকে নজর রাখুন৷ অনেক কোম্পানি বিলে লিখে দেয়, তাদের বিদ্যুত উৎপাদনে কতটা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা
ঠান্ডার সময় বাড়ির তাপমাত্রা বাড়ানো বা গরমের সময় শীতল করতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়৷ তাই নিজের আবাসস্থলকে ‘এনার্জি এফিসিয়েন্ট’ বা জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, যাতে ঘরে বাতাস চলাচল এবং বাতাস বন্ধ রেখে উত্তাপ বাড়ানোর সহজ ব্যবস্থা থাকে৷
ছবি: Imago/Westend61
জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি
১৯৮৭ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের যন্ত্রপাতির প্রচলন হয়৷ এ ধরনের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এ পর্যন্ত সেখানকার বাতাসকে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত রাখা গেছে, যা বছরে ৪৪ কোটি গাড়ি থেকে নিঃসরণ হয়৷ জ্বালানি সাশ্রয়ী খুব কম খরচে কার্বন নিঃসরণ রোধের সহজ উপায়৷ তাই রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন এবং এ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার সময় ‘এনার্জি স্টার’ লেবেল দেখে কেনা উচিত৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/C. Ohde
পানি খরচ কমানো
পানির অপচয় রোধ করেও কার্বন দূষণ কমানো যায়, কেননা, পানি পাম্প করতে, গরম করতে বা ঠাণ্ডা করতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়৷ তাই গোসল করার সময় কম পানি খরচ করুন৷ প্রয়োজন না হলে দাঁত মাজার সময় পানির কল বন্ধ রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
যেসব খাবার কিনছেন পুরোটা খান, মাংসের উপর চাপ কমান
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ ভাগ জ্বালানি খরচ হয় খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেটজাত করা এবং সরবরাহে৷ তাই খাবার কম অপচয় করলে জ্বালানি বা শক্তি কম খরচ হয়৷ গবাদি পশু পালনে প্রচুর জ্বালানি অপচয় হয়৷ তাই মাংস খাওয়া কমালে বিরাট পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷
ছবি: Colourbox
ভালো বাল্ব কিনুন
অন্য সব বাল্বের চেয়ে এলইডি বাল্ব শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে৷ এসব বাল্ব দীর্ঘস্থায়ী এবং খরচও কম৷ ১০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব, সাধারণ ৬০ ওয়াটের বাল্বের কাজ দেয় এবং এতে অনেক কম খরচ হয়৷
ছবি: AP
প্লাগ খুলে রাখুন
বাড়ির সব যন্ত্রপাতি যোগ করলে হয়ত দেখা যাবে ৬৫টি আলাদা যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো বিদ্যুতের সাহায্যে চলে৷ তাই যেসব যন্ত্রপাতি পুরোপুরি চার্জ হয়ে গেছে, সেগুলো চার্জে দিয়ে না রাখা, বা কোনো টাইমার সেট করা যাতে নির্দিষ্ট সময় পর চার্জিং বন্ধ হয়ে যায়৷ এছাড়া কম্পিউটার বা ট্যাব, ফোনের মনিটর কম পাওয়ার মোডে দিলেও জ্বালানির কম অপচয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Pape
জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ব্যবহার
গ্যাস-স্মার্ট গাড়ি, যেমন হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক যান চালালে জ্বালানি এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/P. Mlch
বিমান, ট্রেন এবং অটোমোবাইলের ক্ষেত্রে আর একবার ভাবুন
বড় শহরগুলোতে যতটা পারেন হাঁটুন বা গণ পরিবহন ব্যবহার করুন৷ এর ফলে ব্যয়ও কমবে, জ্বালানির অপচয়ও কম হবে৷ সবচেয়ে বড় কথা এর ফলে বায়ু দূষণ অনেক কমবে৷ এছাড়া অনেক মানুষ যদি বিমানে চড়া কমিয়ে দেয়, তাহলে বড় ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে৷ কেননা, আকাশ পথে চলাচল জলবায়ু দূষণের অন্যতম বড় মাধ্যম৷ বিমানের বিকল্প হিসেবে যদি ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, সেটাই বেছে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Balzarini
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে লবণ সহিষ্ণু ধান নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ মাটি লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় সূর্যমুখীর ফুলের আবাদও বেড়েছে৷ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট৷ প্রচলিত ধানের বদলে এ ধরনের ধান চাষ যত বাড়বে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ততই সহজ হবে৷
ছবি: CC/Rishwanth Jayaraj
11 ছবি1 | 11
বাংলাদেশের ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' এর পরিচালক সালিমুল হক রয়টার্সকে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করায় অগ্রগতি সামান্য৷
অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল হেড অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বলেন, ‘‘লস অ্যান্ড ড্যামেজের জন্য এখনও কোনো তহবিল নেই – এটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ৷''
দুর্যোগের পর ব্যয় মেটাতে উন্নত দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোকে বিমা সহায়তা নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে৷ এতে করে দুর্যোগের পরপরই প্রাথমিক খরচ মেটানো সহজ হবে বলে মনে করছে উন্নত দেশগুলো৷ জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল বলছেন, ‘‘ক্ষতির পুরোটা বিমা দিয়ে পোষানো যাবেনা৷ তবে বিমার টাকা দিয়ে পুনর্গঠন কাজ শুরুর আগে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারে দেশগুলো৷ কারণ বিমার টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়াটা দ্রুত৷ দাতাদের উপর বসে থাতে হয় না৷''
তবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, ভর্তুকি না দিলে দরিদ্র দেশের পক্ষে বিমার প্রিমিয়ামের টাকা দেয়া সম্ভব হবে না৷ তাছাড়া দুর্যোগের কারণে যে অনেক সময় পারিবারিক ফটো নষ্ট ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যায়, সেসবের ক্ষতি অর্থ দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়৷ তাছাড়া যেসব দুর্যোগ অনেকদিন ধরে ঘটে, যেমন খরা, তার ক্ষতিপূরণ বিমার আওতায় পড়বে না৷
এদিকে বিমা ছাড়াও ক্ষতিপূরণের উৎস হিসেবে আরও কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি, এয়ারলাইন্স ও শিপিং কোম্পানির উপর কর নির্ধারণ; বৈশ্বিক কার্বন কর এবং আর্থিক লেনদেনের উপর কর বসানো ইত্যাদি৷
২০৩০ নয়, ২০২০ এর আগেই
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বেশিরভাগ দেশের সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে৷ তবে বনের জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেয়া উত্থানশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিরা ২০২০ সালের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু করতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন৷
যে অ্যামেরিকা প্যারিস চুক্তি মান্য করছে
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বর্জন করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য শহর ও রাজ্য কর্তৃপক্ষ প্যারিস চুক্তি মেনে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির বদলে বিকল্প পথে এগোনোর অঙ্গীকার করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Thibault Camus
বারাক ওবামার বিবৃতি
কঠিন পরিস্থিতিতেও আশাবাদী হিসেবে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পরিচিত৷ ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি বর্জন করার পর তিনি অ্যামেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের উদ্দেশ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পথে এগিয়ে চলার প্রেরণা দেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
ক্লাইমেট মেয়রস গ্রুপ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৬৮টি শহরের মেয়র প্যারিস জলবায়ু চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলার অঙ্গীকার করেছেন৷ লস অ্যাঞ্জেলেস, বস্টন, নিউ ইয়র্ক, হিউস্টন ও শিকাগোর মতো বড় শহরের নগরপাল পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি
ছবি: CC/ John Picker
‘ট্রাম্প পিটসবার্গের প্রতিনিধি নন’
ট্রাম্প তাঁর ভাষণে নিজেকে পিটসবার্গের প্রতিনিধি বললেও শহরের মেয়র তা নস্যাৎ করে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার উদ্যোগ চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার করেন৷ ইস্পাত শিল্পের পতনের পর শহরকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তির জন্য প্রস্তুত করতে তিনি বদ্ধপরিকর৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/S. Strasburg
শিকাগোর সাফল্যের কাহিনি
বারাক ওবামার শহর শিকাগোর মেয়র ব়্যাম ইমানুয়েল মনে করিয়ে দেন, কার্বন নির্গমন কমিয়ে কীভাবে কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়, তাঁর শহর তার দৃষ্টান্ত৷ প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী তিনি এই সফল কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/A. Nelles
মার্কিন জলবায়ু জোট
ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন রাজ্যের গভর্নররা মিলে ‘ইউএস ক্লাইমেট অ্যালায়েন্স’ নামের এক জোট গড়ে তুলেছেন৷ তাঁরা শুধু প্যারিস চুক্তি কার্যকর করবেন না, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জোরালো পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন৷
ছবি: Imago/blickwinkel
ক্যালিফোর্নিয়া আদর্শ দৃষ্টান্ত
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর জেরি ব্রাউন বলেন, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পূর্ণ ভুল পথ বেছে নিয়েছেন৷’’ এমন ‘বিপথগামী’ ও ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁর রাজ্য তার বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত৷
ছবি: Reuters/M. Whittaker
6 ছবি1 | 6
জেডএইচ/ডিজি (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন, রয়টার্স)
বন্ধু, প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মতামত জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷