ঈদের দিন প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ঢাকার বেশ কিছু জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়৷ আর তাতে কোরবানির পশুর রক্ত মিশে সড়কগুলোকে দেখতে লাগে রক্তনদীর মতো৷ এই ‘রক্তাবদ্ধতা' রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ আরো বাড়িয়ে দেবে, বলছেন চিকিৎসকরা৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/S. K. Das
বিজ্ঞাপন
ঈদ উল-আজহার দিন ঢাকার বকশিবাজার, হোসেনী দালাল, যাত্রাবাড়ি, শান্তিনগর, শান্তিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ আরও অনেক এলকার রাস্তা ডুবে যায় বৃষ্টির পানিতে৷ কোথাও হাঁটু সমান, আবার কোথাও কোমর সমান পানি৷ আর সেই পানি কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে৷ তারপরও পানিতেই চলে যান্ত্রিক যানবাহন, রিকশা৷ উপায় না থাকায় কেউ কেউ রক্তমাখা পানিতে হাঁটতে বাধ্য হন৷
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ)-এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মিল্লাতুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘শান্তিনগর এবং এর আশেপাশের এলাকায় সবচেয়ে খারাপ পরিস্থতির সৃষ্টি হয়৷ কারণ মগবাজার ফ্লাইওভার তৈরির কারণে ঐ এলাকার ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ ব্যবস্থা বলতে গেলে অকার্যকর৷ তাই ঐ দিন পানি সরতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লেগে যায়৷ জমে থাকা পানি ছড়িয়ে পড়ে পাশ্ববর্তী এলাকাতেও৷''
মিল্লাতুল ইসলাম
This browser does not support the audio element.
তবে নগরবাসী যদি নিয়ম মেনে নির্ধারিত জায়গায় কোরবানি দিত, তাহলে এই রক্তাক্ত পরিস্থিতি অনেকটাই এড়ানো সসম্ভব হতো বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৫০৪টি জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয় পশু কোরবানির জন্য৷ কিন্তু এর অর্ধেকই খালি থাকে৷ অনেকেই বাসার সামনে অথবা বাড়ির ভেতরে খোলা জায়গায় কোরবানি দেন৷ ফলে বৃষ্টির পানির সঙ্গে গরুর রক্ত এবং বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে৷ শুধু তাই নয়, পানি জমে থাকায় উলটে ড্রেনের বর্জ্য উপরে উঠে আসে৷''
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন সর্বমোট ২৫০০ কিলোমিটার খোলা ড্রেন এবং ৪০০০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ সিস্টেম ব্যবস্থাপনা করে আসছে৷ গত চার বছরে ৩০৩ কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হয়েছে ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নতিসাধনে৷ কিন্তু তার ফলাফল শূন্যই বলা চলে৷
বৃষ্টিপাত থেকে যে পানি জমা হয়, তা ‘রানঅফ ওয়াটার' বলে পরিচিত৷ রাজধানীর এই পানি ‘স্টর্ম' ড্রেন দিয়ে নিষ্কাশিত হওয়ার কথা৷ গতবছর থেকে ঢাকা ওয়াসা ‘স্টর্ম ওয়াটার ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান' বাস্তবায়ন করছে৷ কিন্তু তা কবে শেষ হবে নিশ্চিত নয়৷
ঢাকা ওয়াসার একটা প্রধান দায়িত্ব হলো, পানি সরবরাহ এবং শহরের ৩৯ শতাংশ ড্রেনেজ সিস্টেমকে সচল রাখা৷ এ কাজ করার জন্য ৬৫ কিলোমিটার খোলাখাল এবং বক্স কালভার্ট আছে৷ এছাড়াও এদের আছে ড্রেনেজ পাম্পিং সিস্টেম৷ কিন্তু অসময়ে কিছুই কাজে আসে না৷
দুনিয়া জুড়ে ঈদ
বিশ্বের নানান জায়গায়, অথচ একইভাবে উদযাপিত হচ্ছে ঈদ উল-আজহা৷ ঢাকা থেকে কলকাতা, ফিলিস্তিন থেকে এথেন্স, অথবা আবার পুবে ফিরলে রাশিয়া, সর্বত্রই মানুষ প্রার্থনা করছে৷ ছোটরা আনন্দ করছে৷ ঈদের আনন্দ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Tsarnaev
ঢাকায় ঈদের নামাজ
ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ পড়ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
ঢাকায়...
মসজিদের বাইরে তখন বৃষ্টি...
ছবি: Getty Images/AFP
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়
শোলাকিয়ায় বাংলাদেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত৷ অতীতে সোয়া লাখ মুসল্লি সমবেত হতেন এই জামাতে, সেই থেকে নাম হয়েছে শোলাকিয়া৷
রাশিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্রের রাজধানী গ্রসনি-তে ‘কুরবান বায়রাম’ বা ঈদ উল-আজহা এর নামাজ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Tsarnaev
এথেন্সের আল-হুদা ইসলামিক সেন্টারে...
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের আল-হুদা ইসলামিক সেন্টারে ঈদের উৎসবে একটি শিশু...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Roark
9 ছবি1 | 9
মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘‘শান্তিনগর ছাড়াও ঢাকার আরো কয়েকটি এলকায় ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে আছে উন্নয়মূলক কাজের জন্য৷ শান্তিনগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য অবশ্য মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে৷''
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ছয় হাজার ১১০ টন গৃহস্থালি বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে৷ এর মধ্যে ঢাকার প্রত্যেক নাগরিক ৩৭৭ গ্রাম বর্জ্য উৎপাদন করে, যার ৯৭ শতাংশই জৈব পদার্থ৷ বাকি ৩ শতাংশ বর্জ্য অজৈব৷ গত ১০ বছরে এ মহানগরীতে বর্জ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ৷ ১০ বছর আগে দৈনিক তিন হাজার ২০০ টন বর্জ্য উৎপাদনের বিপরীতে ৪৩ শতাংশ হারে অপসারিত হতো এক হাজার ৩৭৬ টন৷ এখন দৈনিক ছয় হাজার ১১০ টন বর্জ্য উৎপাদনের বিপরীতে অপসারিত হয় চার হাজার ৫৮২ টন৷ এইসব বর্জ্য ডেনেজ সিস্টেম ছাড়াও কঠিন বর্জ্য সরাসরি ডাম্পিং-এ নেয়া হয়৷ তবে বৃষ্টিতে পানি জমলে কঠিন এবং তরল বর্জ্য একাকার হয়ে যায়৷
ড. লেনিন
This browser does not support the audio element.
প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. লেলিন চৌধুরী ডয়চে বলেন, ‘‘এমনিতেই ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার কারণে নানা রেগের জীবাণু ছড়ায়৷ আর এবার পানির সঙ্গে পশুর রক্ত যোগ হওয়ায় তার আশঙ্কা আরো বেড়ে গেল৷ কারণ রক্ত জীবানু তৈরির একটি অনুকুল ক্ষেত্র৷ অর্থাৎ এবার, জীবাণু জন্ম নেবে আর সেই জীবাণু পানিবাহিত রোগের বিস্তার ঘটাবে রাজধানীতে৷ এর মধ্যে অন্যতম হলো টাইফয়েড, জন্ডিস, উদারাময় ইত্যাদি৷''
তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশে কোরবানির বর্জ্য নিয়ে তেমন গবেষণা না থাকলেও মুম্বইয়ের ভেন্ডিবাজার এলাকার ড. আসাদ নামের একজন চিকিৎসক এ ধরনের একটি গবেষণা করেছেন৷ সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, কোরবানির বর্জ্য ঠিকমতো পরিষ্কার করা না হলে এবং যেখানে-সেখানে কোরবানি দেওয়া হলে ঐ অঞ্চলে ঈদের পরপরই সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার ৩০-৩৫ ভাগ বেড়ে যায়৷''
তিনি বলেন, ‘‘এবার আমরা ঢাকায় রক্তাবদ্ধতা দেখলাম৷ এটা থেকে বোঝা গেল যে, কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে৷''
যেখানে-সেখানে কোরবানির ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে কীভাবে এড়ানো সম্ভব? লিখুন নীচের ঘরে৷
কোরবানির ঈদের কিছু ছবি
মুসলমানদের দুটি বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদ-উল-আযহা একটি৷ সারা বিশ্ব পালিত হয় এই উৎসব৷ বাংলাদেশ এবং জার্মানিতে ঈদ পালনের কিছু ছবি নিয়ে আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: DW
ঈদ মানেই খুশি, আনন্দ
মুসলমানদের দুটি বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদ-উল-আযহা একটি৷ চারদিকেই ছড়িয়ে পড়েছে সেই ঈদের আনন্দ৷ কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া আর কোরবানি৷
ছবি: Reuters/Ajay Verma
ঈদের জামাত
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত হয় শোলাকিয়ায়৷ তবে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই একাধিক জামাতের আয়োজন করা হয়৷ ঈদ-উল-আযহার সময় ঈদের জামাতের পর শুরু হয় পশু কোরবানি৷
ছবি: Getty Images/Allison Joyce
নারীরাও অংশ নেন জামাতে
ঈদের জামাতে নারীরাও অংশ নিয়ে থাকেন৷ তবে বাংলাদেশের সর্বত্র এই প্রচলন নেই৷ ধর্মীয়ভাবেও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ রয়েছে৷ ঢাকার একটি মসজিদে ঈদের জামাতে অংশ নেয়া এক নারীর ছবি এটি৷
ছবি: Getty Images/Allison Joyce
শিশু, কিশোরদের আনন্দ
বাংলাদেশে শিশু, কিশোরদের আনন্দের এক অন্যতম উপলক্ষ্য ঈদ৷ ঈদের সকালে নামাজ শেষে শিশু, কিশোররা সালামি সংগ্রহে নেমে পড়ে৷ ঘুরতে গিয়ে প্রিয় খেলনাটা বেছে নেয়ার জন্যও ভালো সময় এটি৷
ছবি: Reuters/Adnan Abidi
‘বিএনপি নেত্রীর মানসিক অবস্থার ঠিক নেই’
৬ অক্টোবর গণভবনে সর্বসাধারণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বিএনপি নেত্রীর মানসিক অবস্থা ঠিক নেই, তাঁকে আগে মন ঠিক করতে হবে৷ যখন সংলাপের জন্য ডেকেছি, তখন আসেননি৷ এখন সংলাপের কথা বলছেন৷ আগে মন ঠিক করুন, তারপর বলুন কী করতে চান৷’’ (ফাইল ফটো)
ছবি: DW/H.R. Swapan
‘দেশকে বাঁচান’
বিএনপির চেয়ারপর্সন বেগম খালেদা জিয়া সর্বসাধারণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে৷ সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দেশকে এবং নিজেকে বাঁচাতে হবে৷ এই অত্যাচারীদের থেকে দেশকে বাঁচানোই এখন কর্তব্য৷ সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে আমরা বিজয়ী হব৷ দেশের মানুষের বিজয় হবে৷’’ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানিতে কোরবানি
জার্মানিতে ৪০ লক্ষ মুসলমানের বাস৷ তাঁদের অনেকেই জার্মানিতে কোরবানি দেন৷ তবে জার্মানিতে কোনো বাড়িতে গরু বা ভেড়া কোরবানির অনুমতি নেই৷ কোরবানির জন্য বিশেষ জায়গা রয়েছে, সেখানে আগে থেকেই অর্ডার নেয়া হয় এবং ঈদের দিন বা পরের দিন কোরবানির মাংস ক্রেতার হাতে তুলে দেন তাঁরা৷ জার্মানিতে চার অক্টোবর ঈদ পালন করা হয়েছে৷
ছবি: DW/C. Bleiker
তুরস্ক থেকে আসা
জার্মানিতে বসবাসরত বেশিরভাগ মুসলমানই এসেছেন তুরস্ক থেকে৷ আর এখানে তুর্কিদের খাবার দোকান বা রেস্টুরেন্টের ব্যবসা বেশ জমজমাট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ঈদের নামাজ
জার্মানির বিভিন্ন শহরে মসজিদের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি৷ এছাড়া নতুন নতুন মসজিদ হচ্ছেও৷ অনেক মসজিদেই ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: Getty Images
বাঙালিদের আলাদা আয়োজন
জার্মানিতে বসবাসরত বাঙালিরাও আলাদাভাবে কোনো কোনো মসজিদে নামাজের আয়োজন করেন এবং অনেক বাঙালি কাজের চাপ থাকা সত্ত্বেও একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন৷ পরে অনেকেই বাড়িতে দেখা সাক্ষাৎ করে ঈদের খাওয়া-দাওয়া করেন৷