হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের অনুষ্ঠানে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিয়ে গোটা দেশে শুরু হয়েছিল তুমুল বিতর্ক৷ কিন্তু পরে দেখা গেল, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জলে নামলেন, কিন্তু পা ভেজালেন না৷
বিজ্ঞাপন
চানক্যের ভূমিকা নিয়ে ইতিহাসের প্রবীণ অধ্যাপকের মতোই আপাদমস্তক কংগ্রেস নেতা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভাষণে উঠে এলো প্রাচীন ভারত থেকে আধুনিক ভারতের ইতিহাস৷ এটাই ভারতের ঐতিহ্য৷ তুলে ধরলেন বহুত্ববাদ ও সহিষ্ণুতার মধ্যেই নিবদ্ধ ভারতের আত্মা, সেকথা৷ সংবিধানকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ৷ এমন কিছু বললেন না, যা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সূচনা হতে পারে৷ যাঁরা এজন্য মুখিয়ে ছিলেন, তাঁরা কার্যত নিরাশ৷ কংগ্রেসের মনে যে ক্ষোভ জমা হয়েছিল, তা কিন্তু চাপা থাকেনি৷ কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রণববাবুর মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় টুইট করে বলেছেন, নাগপুরে আরএসএস-এর মঞ্চে কংগ্রেসের অভিজ্ঞ নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া ভাষণ কেউ মনে রাখবে না, কিন্তু মঞ্চে তাঁর উপস্থিতির ছবি থাকবে এবং তা ছড়িয়ে পড়বে তার সঙ্গে ভুয়া বিবৃতি ও মন্তব্য জুড়ে দিয়ে৷ বিজেপি এবং আরএসসএস সেটা পুরোদমে কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে৷ এটা তো সবে শুরু৷ ইতিমধ্যেই প্রণববাবুর ছবি বিকৃত করে আরএসএস-এর সরসংচালকদের ভঙ্গিতে প্রণববাবুকে অভিবাদন গ্রহণ করতে দেখানো হয়েছে, যা তিনি আদৌ করেননি৷ একজন নিরপেক্ষ নাগরিকের মতোই তিনি দাঁড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেছেন৷
তাঁর আগে সংঘের শীর্ষ পরিচালক মোহন ভাগবত বেশ সতর্কতার সঙ্গে তাঁর বক্তব্য রেখেছেন যা নিয়ে প্রণববাবুকে যেন অস্বস্তিতে পড়তে না হয়৷ বলেছেন, সংঘের মঞ্চে এসেছেন বলেই প্রণববাবু তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় বা মতাদর্শ বিকিয়ে দিয়েছেন, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই৷ ভারতের বহুত্ববাদে সংঘও শামিল৷ প্রণববাবুও বহুত্ববাদের কথা বলতে গিয়ে নেহেরুর ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া' বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন বটে কিন্তু স্বাধীন ভারত আজ যেখানে পৌঁছেছে তার কৃতিত্ব দিয়েছেন মূলত বল্লভভাই প্যাটেলকে৷ তাঁরই হাত ধরে দেশীয় রাজাদের ঐক্যবদ্ধ করার পর আজ ভারতের এই চেহারা তৈরি হয়েছে৷ নিজের রাজনৈতিক সহকর্মী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা উচ্চারণ করলেন না৷ তাঁর বক্তৃতার কোনো অংশে উল্লেখ ছিল না আরএসএস-এর. সংঘের ইতিহাস নিয়ে একটি কথাও৷
‘প্রণববাবুর উপস্থিতি তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈধতা দিয়েছে’
এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘প্রণববাবর ভাষণে নতুন তো কিছু নেই৷ ভারত বহুত্ববাদী গণতন্ত্র, নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের দেশ৷ এ তো নতুন কথা নয়৷'' গান্ধী হত্যায় আরএসএস-এর চক্রান্তের অভিযোগ সম্পর্কে অধ্যাপক বন্দোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘আরএসএস-এর চক্রান্ত আদালত কিন্তু বলেননি৷ আদালত আরএসএসকে ছাড় দিয়েছে৷ সরসংঞ্চালক গোলগাওকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়৷ তবে সামাজিক স্তরে সবাই জানে গান্ধী হত্যার পেছনে সংঘ পরিবারের হাত থাকতে পারে৷ আরএসএস-এর মঞ্চে প্রণববাবুর উপস্থিতি আরএসএসকে খানিকটা রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈধতা দিয়েছে৷ জনমানসে সংঘপরিবারকে গঙ্গাজল ছিটিয়ে খানিকটা পবিত্র করলেন আর কি! সব মিলিয়ে এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়৷ আগামী বছরে লোকসভা নির্বাচনে শহুরে মানুষকে কিছুটা প্রভাবিত করলেও করতে পারে৷ বিজেপির পক্ষে ভোট দিতে পারে৷ আর প্রণববাবু মেয়ে মহিলা কংগ্রেসের প্রধান শর্মিষ্ঠা মুখার্জী যা বলেছেন, সেটা কংগ্রেসের মান রাখতে৷ নির্বাচনে তিনি যাতে কংগ্রেস প্রার্থী হতে পারেন৷''সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মনে করেন, সংঘকে তাদের নিজেদের ইতিহাসও মনে করিয়ে দেওয়া উচিত ছিল৷ টুইটে বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, কিভাবে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর উচ্ছ্বাস দেখিয়েছিল, মিষ্টি বিলিয়েছিল আরএসএসকে সেটা মনে করিয়ে দিতে পারতেন প্রণববাবু৷ সীতারাম ইয়েচুরি আরো বলেছেন, কিভাবে কংগ্রেস সরকার তিন তিনবার আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল. এমন কি খোদ বল্লবভাই প্যাটেলও আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন৷ এসব কথা প্রণববাবু সংঘকে মনে করিয়ে দিলে ভালো করতেন৷ আর সিপিআই নেতা ডি. রাজার মন্তব্য, ‘‘নাগপুরে সংঘের অনুষ্ঠানে প্রণববাবুর উপস্থিতিতে আমরা খুশি নই৷ তবে তিনি ভাষণে যেসব কথা বলেছেন বা যে বার্তা দিয়েছেন, সেটা প্রত্যাশিত ছিল৷ আরএসএস এখন তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত করার চেষ্টা করতে পারে৷''
ভারত চলে বাপের নামে
বংশ নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয় ভারতে৷ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন ভারতের বৈশিষ্ট্যই বংশপরম্পরা৷ রাজনীতি থেকে শুরু করে খেলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সাম্রাজ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
আম্বানির রাজত্ব
বিখ্যাত শিল্পপতি ধীরুভাই আম্বানি যে সাম্রাজ্য গড়ে গিয়েছিলেন, উত্তরাধিকারসূত্রে তার সম্রাট বনেছেন মুকেশ এবং অনীল আম্বানি৷ বাবার রাজ্য বেশ ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন তাঁরা৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়েও নিচ্ছেন বহুদূর৷
ছবি: picture-alliance/AP
বচ্চন, দ্য বচ্চন
অমিতাভ বচ্চন সম্পর্কে নতুন করে কাউকে কিছু বলার নেই৷ গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে যে বচ্চন রাজত্ব শুরু হয় বলিউডে, এখনও তা টলাতে পারেনি কেউই৷ তাঁর নামের অংশীদার হয়েই বড় পর্দায় এসেছেন অভিষেক বচ্চন৷ অনেকেই মনে করেন, অমিতাভের ছেলে না হলে বর্তমান অবস্থানে আসা কঠিনই হতো জুনিয়র বচ্চনের৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
ছোট দেওল, বড় দেওল
বলিউডের আরেক শীর্ষ অভিনেতা ধর্মেন্দ্র৷ জনপ্রিয় এই অভিনেতার বংশধরেরা অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও নাম কামিয়েছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে৷ সানি দেওল ও ববি দেওলের কিছু ছবি হিট হলেও তুখোড় অভিনয়শিল্পীদের সাথে প্রতিযোগিতায় বেশ পিছিয়েই পড়েন তাঁরা৷ চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে নাম কামিয়েছেন ধর্মেন্দ্রর মেয়ে ইশা দেওলও৷
ছবি: Ambalika Misra
কাপুর খানদান
কাপুরদের রাজত্বের ইতিহাস অন্য অনেকের চেয়ে বেশ লম্বা৷ ব্রিটিশ শাসনামলে যখন নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ ছিল, তখন হিন্দি সিনেমার পথিকৃৎদের একজন ছিলেন পৃথ্বিরাজ কাপুর৷ চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য পদ্মভূষণ দেয়া হয় তাঁকে৷ তাঁকে দিয়েই শুরু কাপুর বংশের চার প্রজন্মের রাজত্ব৷ রাজকাপুর, তাঁর ছেলে ঋষি কাপুর এবং সর্বশেষ এখন রণবীর কাপুর আনন্দ দিয়ে চলেছেন বলিউড ভক্তদের৷
ছবি: DW
প্রযোজনা, পরিচালনা, অভিনয়
বাবা মহেশ ভাট বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক৷ কিন্তু মেয়ে আলিয়া ভাট সেদিকে না গিয়ে সোজা অভিনয়ে৷ শুধু নাম নয়, মেধাতেও যে বাপের চেয়ে কোন অংশে কম না, তা এখনও প্রমাণ করে চলেছেন আলিয়া ভাট৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
গান্ধী বংশ
ভারতের রাজনীতি, নেহেরুর গড়ে যাওয়া রাজত্ব এবং কংগ্রেস দায়িত্ব এখন রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ কংগ্রেস পরবর্তীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে রাহুলই হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: UNI
উত্তর প্রদেশের যাদব
মুলায়েম সিং যাদবের ‘বংশের সুনাম রক্ষা’ করছেন অখিলেশ যাদব৷ সভাপতি হিসেবে বাবার সমাজবাদী দলের হাল তো ধরেছেনই, বাবার মতো হয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
বিহারের যাদব
বিহার প্রদেশের আরেক যাদব, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের ছোট ছেলে তেজস্বী যাদব৷ জোট সরকারের সময় উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/A. Yadav
কাশ্মিরের মুফতি
জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি৷ সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ সাঈদের মেয়ে মেহবুবা৷ রাজ্যটিতে তিনিই প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী৷ সমর্থকরা তাঁকে সম্মান করে ‘বাজি’ বলে ডাকেন, উর্দুতে যার অর্থ ‘বড় বোন’৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/N. Kanotra
জম্মুর আবদুল্লাহ
জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক নেতা ফারুক আবদুল্লাহর ছেলে ওমর আব্দুল্লাহ৷ তিনিও বাবার কাছ থেকে শুধু রাজনীতিই নয়, পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পদও৷
ছবি: picture-alliance/epa/F. Khan
আল্লা রাখার উত্তরাধিকার
শুধু উপমহাদেশ নয়, তবলায় জাদু দেখিয়ে পুরো বিশ্বকেই তাক লাগিয়েছিলেন আল্লা রাখা৷ তাঁর সন্তান ওস্তাদ জাকির হোসেন ধরে রেখেছেন সেই বংশপরম্পরা, ছড়িয়ে যাচ্ছেন তবলার ম্যাজিক৷
ছবি: AP
বাপ কা বেটি
উপমহাদেশের আরেক গর্ব পণ্ডিত রবিশংকর৷ এই সিতার মায়েস্ত্রোর যোগ্য কন্যা আনুশকা শংকর৷ বিশ্বের নামকরা সিতারবাদকদের মধ্যে অন্যতম স্থান দখলে নিয়েছেন আনুশকা৷
ছবি: AP
গীতা ফোগাট
আমির খানের চলচ্চিত্র দঙ্গল-এর সৌজন্যে মোটামোটি সবাই এখন জানেন গীতা ফোগাটের নাম৷ বিখ্যাত কুস্তিগীর মহাবীর ফোগাটের মেয়ে গীতা ভারতের হয়ে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কুস্তিতে স্বর্ণপদক পাওয়া নারী৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
বিচারক চন্দ্রচূড়
ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় ছিলেন ভারতে প্রখ্যাত প্রধান বিচারপতি৷ তাঁর ছেলে ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড়ও আইনজ্ঞ হিসেবে ধরে রেখেছেন সুনাম৷ ধনঞ্জয়ও এখন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি৷