মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বজুড়ে অ্যামেরিকার নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ৩১ জুলাই জাওয়াহিরির মৃত্যুর পর তাদের উপর হামলার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের কাছে যে তথ্য আছে, তার ভিত্তিতে বলা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যামেরিকার নাগরিকরা আক্রান্ত হতে পারেন। সেই আক্রমণ আত্মঘাতী বাহিনী করতে পারে বা হত্যা, অপহরণের চেষ্টা হতে পারে অথবা বোমা মারা হতে পারে।
তাই বিদেশে মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে তাদের নজর রাখতে বলা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন, আল-কায়দা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত। কে ছিলেন তিনি? লাদেনের সঙ্গে কীভাবে পরিচয়?
ছবি: Getty Images/AFP/K. Desoukiকায়রোয় জন্ম জাওয়াহিরির। যথেষ্ট ধনী পরিবারে জন্ম তার। তবে ছোটবেলা থেকেই চরমপন্থি মতাদর্শে বিশ্বাসী তিনি। খুব অল্প বয়সেই তিনি মিশরের চরমপন্থি ইসলামিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
ছবি: B. K. Bangash/AP Photo/picture alliance১৫ বছর বয়সে প্রথম গ্রেপ্তার হন জাওয়াহিরি। বেআইনি মুসলিম ব্রাদরহুড দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণে। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট আনওয়ার সাদাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে গ্রেপ্তার হন জাওয়াহিরি। তিনবছরের জেল হয় তার। এরপর ১৯৯৭ সালে লাক্সারে পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনাতেও তার নাম জড়িয়ে যায়।
ছবি: Mazhar Ali Khan/AP Photo/picture allianceলাক্সারের ওই ঘটনার পরেই ওসামা বিন-লাদেনের সঙ্গে পরিচয় হয় জাওয়াহিরির। আফগানিস্তানে লাদেনের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন তিনি। লাদেনের ছায়াসঙ্গী হন। লাদেনের চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করতেন তিনি।
ছবি: Al-Jazeera/APTN/picture alliance১৯৯৮ সালে অ্যামেরিকাকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে লাদেন একটি ফতোয়া দেন। অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেন। সেই ফতোয়ায় পাঁচ লাদেন ঘনিষ্ঠ সই করেছিলেন। জাওয়াহিরি তাদের মধ্যে একজন।
ছবি: Al-Jazeera/AP Photo/picture alliance২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে আক্রমণের পর লাদেনের সঙ্গে জাওয়াহিরিও বেপাত্তা হয়ে যান। তিনি নিহত হয়েছেন বলে একাধিকবার ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে।
ছবি: IntelCenter/AP Photo/picture allianceবেপাত্তা থাকা অবস্থাতেই একাধিক হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে আফ্রিকায়। ২০১১ সালে লাদেন নিহত হওয়ার পর তিনি আল-কায়দার প্রধান হন। তার মাথার দাম ছিল দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার। তবে তার সময়ে আইএস আরো বড় শক্তিতে পরিণত হয়। সিরিয়া এবং ইরাকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তারা দখল করে।
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausafসোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেন, কাবুলে ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন জাওয়াহিরি। গত শনিবার এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বাইডেন।
ছবি: Jim Watson/REUTERS কীভাবে মারা হয়েছে
আল-কায়দা প্রধান আল-জওয়াহিরি সূর্যোদয়ের একঘণ্টা পরে প্রার্থনা শেষ করে কাবুলের বাড়ির বারান্দায় এসেছিলেন। তখন স্থানীয় সময় ছয়টা ১৮ মিনিট। সেসময় দুইটি ক্ষেপণাস্ত্র সেখানে আছড়ে পড়ে। আল-জাওয়াহিরি মারা যান। কিন্তু বাড়ির ভিতরে থাকা তার স্ত্রী ও মেয়ের কিছু হয়নি।
কী করে সম্ভব হলো এতটা নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত করা? অতীতে এই ধরনের ক্ষেত্রে বহুবার লক্ষ্যের বাইরে আঘাত করেছে ক্ষেপণাস্ত্র এবং বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার জন্য অ্যামেরিকার প্রবল সমালোচনা হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে ড্রোন থেকে যে ক্ষেপণাস্ত্র মারা হয়েছে, তা নিখুঁতভাবে লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। ড্রোনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ড্রোনকে চালিত করা হয় অনেক দূরে বসে। আর ড্রোনে লাগানো ক্যামেরায় পুরো ছবি ধরা পড়ে। লক্ষ্যের দিকে তাক করে লেজার সংকেত দিকে ফেলা হয়। লেজার রশ্মি যে পথে যায়, সেই রাস্তা ধরে ক্ষেপণাস্ত্রও যায় ও লক্ষ্যে গিয়ে আঘাত করে। সেজন্যই এতটা নিখুঁতভাবে লক্ষ্যে আঘাত করা সম্ভব হয়।
জিএইচ/এসজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি)