1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাকসু নির্বাচন: নানা অনিয়মের অভিযোগের মধ্যেই শেষ ভোটগ্রহণ

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ- জাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তা বর্জন করেছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল।

Bangladesch Dhaka | Studentenwahl an der Jahangirnagar-Universität
ছবি: Sium Shahriar

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪ টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। এর কিছুক্ষণ আগে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী।

সংবাদ সম্মেলনে সারাদিন ঘটে যাওয়া নানা অনিয়মের তালিকা তুলে ধরেন তারা। বৈশাখী অভিযোগ করেন, ভোট দেয়ার সময় ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে আঙুলে দেওয়া কালি মুছে যাচ্ছিল, একটা ব্যালট পেপার ফ্লোরে পাওয়া গেছে। এসব কারণে এই হলে দুই ঘণ্টা নির্বাচন বন্ধ ছিল।

একটি হলে এই প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। সব হলে ছাত্রদলের প্যানেলের এজেন্টদের থাকতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। আরও অভিযোগ করা হয়, তাজউদ্দীন আহমদ হলে ভোটার তালিকায় ছবি না থাকায় ভোট বন্ধ ছিল।

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের বিজয় ব্যহত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে এক হয়ে ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করেছে বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট ছাপানোর অভিযোগ করেছে ছাত্রদল। ভোটকেন্দ্রগুলো মনিটর করার জন্য যে সিসিটিভি বসানো হয়েছে, সেগুলোও এক জামায়াত নেতার কোম্পানি থেকেই আনা হয়েছে বলেও অভিযোগ করে এই প্যানেল।

নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার অভিযোগ বামপন্থিদেরও

বামপন্থি শিক্ষার্থীদের প্যানেল সম্প্রীতির ঐক্যের প্রার্থীরাও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা।

সম্প্রীতির ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শরণ এহসান বলেন, "গতকাল( বুধবার) রাত দুইটার পর জানানো হয়েছিল, প্রার্থীরা কেন্দ্রগুলোতে পোলিং এজেন্ট রাখতে পারবে। কিন্তু আজকে সকালে যখন পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রে গেছে, তখন তাদের নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। নির্বাচনে অনিয়মের শুরু হয়েছে ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের মধ্য দিয়ে। আজকে কয়েকটি হলে আমাদের প্যানেলের পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। প্রশাসন বলেছে তাদের ওপর আস্থা রাখতে। কিন্তু এই সময়কালে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান ছিল। প্রশাসনের এহেন আচরণ ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।"

নির্বাচনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই নির্বাচন কমিশনের নানা ধরনের অস্বচ্ছতা, অনিয়ম নজরে আসার কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি শরণ এহসান।

তিনি বলেন, "নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালে নানা সময়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে কিন্তু কমিশন তার কোনো সুরাহা করেনি। ৯ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করার কথা ছিল। আমরা জেনেছি, অনেক প্রার্থী সেই টেস্ট করেনি। ডোপ টেস্টের ফলাফল নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারেনি। এই সবকিছুতে নির্বাচন কমিশন আস্থা হারিয়েছে’’

ছাত্রদল ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে, অভিযোগ শিবির–সমর্থিত প্রার্থীর

নির্বাচনে ব্যাপক অসংগতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটও। প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেন, "আমরা গতকাল বুধবার থেকে দেখতে পেয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।"

বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অন্যান্য প্যানেলের কিছু বিষয়েও অভিযোগ তোলেন তিনি।

আরিফ উল্লাহ বলেন, "বিভিন্ন হলে ছাত্রদল নিজেদের প্যানেলের সদস্যদের ভোট দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে অভিযোগ তুলে শিবির–সমর্থিত এই ভিপি প্রার্থী বলেন, বিভিন্ন হলে দল বেঁধে গিয়ে ছাত্রদল ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে। তারা জাহানারা ইমাম হলে ঢুকে গার্ডকে মারধর করেছে। একটি হলে সরাসরি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে মব তৈরি করে ভোট বানচালের চেষ্টা করেছে।"

ক্যাম্পাসের চারপাশে বহিরাগত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের আনাগোনার ফলেও ক্যাম্পাসে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ শিবির-সমর্থিত প্রার্থীর।

চারটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল হলো, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল, ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট,  প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম৷

তিনটি আংশিক প্যানেল হলো, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ ও ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ৫৪ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি। তখন চারটি বিভাগে ২১ জন শিক্ষক ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে জাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বছরই জাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের প্রভাব বেশি ছিল। প্রথম নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন গোলাম মোর্শেদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা শাহ বোরহানউদ্দিন রোকন। তখনকার দুজন শিক্ষার্থী জানান, গোলাম মোর্শেদ সরাসরি রাজনীতি না করলেও জাসদ ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পরপর তিন বছর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আর ধারাবাহিকতা থাকেনি। সব মিলিয়ে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নির্বাচন হয়েছে ৯ বার। তারপর আর হয়নি। ১৯৭৩ সালের জাকসু নির্বাচনটি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন হয়। ১৯৯২ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ছাত্রদল একচেটিয়াভাবে জয়লাভ করেছিল। তারা জাকসু ও হল সংসদের ১০৭টি পদের মধ্যে ১০৫টি পেয়েছিল।

জাকসুতে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ এবং ছাত্র ৬ হাজার ১৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। একই সঙ্গে ২১টি হল সংসদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে।

সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী ৯ জন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

একেকটি হলে পদসংখ্যা ১৫। ২১টি হল সংসদে মোট পদ ৩১৫টি। এতে ৪৭৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী নেই। একজন করে প্রার্থী রয়েছে ৬৭টি পদে। সে হিসেবে মাত্র ২৪টি পদে ভোট হয়েছে।

এডিকে/এসিবি (প্রথম আলো)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ