জাকসু নির্বাচন: নানা অনিয়মের অভিযোগের মধ্যেই শেষ ভোটগ্রহণ
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ- জাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তা বর্জন করেছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল।
ছবি: Sium Shahriar
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪ টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। এর কিছুক্ষণ আগে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী।
সংবাদ সম্মেলনে সারাদিন ঘটে যাওয়া নানা অনিয়মের তালিকা তুলে ধরেন তারা। বৈশাখী অভিযোগ করেন, ভোট দেয়ার সময় ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে আঙুলে দেওয়া কালি মুছে যাচ্ছিল, একটা ব্যালট পেপার ফ্লোরে পাওয়া গেছে। এসব কারণে এই হলে দুই ঘণ্টা নির্বাচন বন্ধ ছিল।
একটি হলে এই প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। সব হলে ছাত্রদলের প্যানেলের এজেন্টদের থাকতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। আরও অভিযোগ করা হয়, তাজউদ্দীন আহমদ হলে ভোটার তালিকায় ছবি না থাকায় ভোট বন্ধ ছিল।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের বিজয় ব্যহত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে এক হয়ে ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করেছে বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট ছাপানোর অভিযোগ করেছে ছাত্রদল। ভোটকেন্দ্রগুলো মনিটর করার জন্য যে সিসিটিভি বসানো হয়েছে, সেগুলোও এক জামায়াত নেতার কোম্পানি থেকেই আনা হয়েছে বলেও অভিযোগ করে এই প্যানেল।
নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার অভিযোগ বামপন্থিদেরও
বামপন্থি শিক্ষার্থীদের প্যানেল সম্প্রীতির ঐক্যের প্রার্থীরাও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা।
সম্প্রীতির ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শরণ এহসান বলেন, "গতকাল( বুধবার) রাত দুইটার পর জানানো হয়েছিল, প্রার্থীরা কেন্দ্রগুলোতে পোলিং এজেন্ট রাখতে পারবে। কিন্তু আজকে সকালে যখন পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রে গেছে, তখন তাদের নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। নির্বাচনে অনিয়মের শুরু হয়েছে ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের মধ্য দিয়ে। আজকে কয়েকটি হলে আমাদের প্যানেলের পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। প্রশাসন বলেছে তাদের ওপর আস্থা রাখতে। কিন্তু এই সময়কালে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান ছিল। প্রশাসনের এহেন আচরণ ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।"
নির্বাচনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই নির্বাচন কমিশনের নানা ধরনের অস্বচ্ছতা, অনিয়ম নজরে আসার কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি শরণ এহসান।
তিনি বলেন, "নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালে নানা সময়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে কিন্তু কমিশন তার কোনো সুরাহা করেনি। ৯ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করার কথা ছিল। আমরা জেনেছি, অনেক প্রার্থী সেই টেস্ট করেনি। ডোপ টেস্টের ফলাফল নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারেনি। এই সবকিছুতে নির্বাচন কমিশন আস্থা হারিয়েছে’’
ছাত্রদল ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে, অভিযোগ শিবির–সমর্থিত প্রার্থীর
নির্বাচনে ব্যাপক অসংগতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটও। প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেন, "আমরা গতকাল বুধবার থেকে দেখতে পেয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।"
বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অন্যান্য প্যানেলের কিছু বিষয়েও অভিযোগ তোলেন তিনি।
আরিফ উল্লাহ বলেন, "বিভিন্ন হলে ছাত্রদল নিজেদের প্যানেলের সদস্যদের ভোট দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে অভিযোগ তুলে শিবির–সমর্থিত এই ভিপি প্রার্থী বলেন, বিভিন্ন হলে দল বেঁধে গিয়ে ছাত্রদল ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে। তারা জাহানারা ইমাম হলে ঢুকে গার্ডকে মারধর করেছে। একটি হলে সরাসরি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে মব তৈরি করে ভোট বানচালের চেষ্টা করেছে।"
ক্যাম্পাসের চারপাশে বহিরাগত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের আনাগোনার ফলেও ক্যাম্পাসে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ শিবির-সমর্থিত প্রার্থীর।
তিনটি আংশিক প্যানেল হলো, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ ও ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ৫৪ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি। তখন চারটি বিভাগে ২১ জন শিক্ষক ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে জাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বছরই জাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের প্রভাব বেশি ছিল। প্রথম নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন গোলাম মোর্শেদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা শাহ বোরহানউদ্দিন রোকন। তখনকার দুজন শিক্ষার্থী জানান, গোলাম মোর্শেদ সরাসরি রাজনীতি না করলেও জাসদ ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পরপর তিন বছর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আর ধারাবাহিকতা থাকেনি। সব মিলিয়ে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নির্বাচন হয়েছে ৯ বার। তারপর আর হয়নি। ১৯৭৩ সালের জাকসু নির্বাচনটি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন হয়। ১৯৯২ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ছাত্রদল একচেটিয়াভাবে জয়লাভ করেছিল। তারা জাকসু ও হল সংসদের ১০৭টি পদের মধ্যে ১০৫টি পেয়েছিল।
জাকসুতে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ এবং ছাত্র ৬ হাজার ১৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। একই সঙ্গে ২১টি হল সংসদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে।
সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী ৯ জন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
একেকটি হলে পদসংখ্যা ১৫। ২১টি হল সংসদে মোট পদ ৩১৫টি। এতে ৪৭৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী নেই। একজন করে প্রার্থী রয়েছে ৬৭টি পদে। সে হিসেবে মাত্র ২৪টি পদে ভোট হয়েছে।
এডিকে/এসিবি (প্রথম আলো)
শিক্ষাঙ্গনে নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থী ও বিশ্লেষকদের কথা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন নির্বাচন হয় না? বাধা কোথায়? কলেজগুলোতেও কি ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত না? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ছবি: DW
রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখতেই নিয়মিত নির্বাচন হয় না : ডা. জাহেদ উর রহমান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে সরকার-বিরোধীরাই অধিকাংশ সময় নির্বাচিত হয়। ফলে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারী দলের ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ খর্ব হয়। এই কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারগুলো নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে চায় না।
ছবি: DW
আমি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে চাইবো : রিফাত জাহান, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সবার আগে আমি আমি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে চাইবো, যার কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা নেই এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠন দ্বারা প্রভাবিত হবে না। প্রার্থীর কাছে আমি প্রতিবাদ করার ক্ষমতা, সচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দাবি করতে পারি, তবে অবশ্যই সেটা শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হবে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চাই না : রাতুল হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডাকসু ঐতিহাসিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল। তবে বাস্তবে এটি প্রায়ই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবাধীন হয়ে পড়ে৷ ফলে, প্রশ্ন ওঠে- ডাকসু কি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করছে, নাকি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হচ্ছে? অবশ্য ডাকসুর প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হন, তবু তারা সাধারণত নিজেদের রাজনৈতিক দলের প্রতি বেশি দায়বদ্ধ থাকেন। এমন লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি চাই না।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি : অর্পিতা সাহা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নির্বাচনে নারী প্রার্থী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এই নেতৃত্বে সবার কণ্ঠস্বর সমানভাবে শোনা না গেলে গণতান্ত্রিক চর্চা পূর্ণতা পায় না। তাই নারীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ খুবই সামান্য : পপি রাজবংশী, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ খুবই সামান্য। ছাত্র সংসদে বিভিন্ন পদে কিছু নারী শিক্ষার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও তাদের অবস্থান ভালো না। আবার হল সংসদে অনেক পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই। সব মিলিয়ে মেয়েদের অংশগ্রহণও সন্তোষজনক নয়। রাকসুতে ‘জাতিসত্ত্বা বিষয়ক সম্পাদক’ পদের সংযুক্তিসহ চার দফা দাবি জানিয়েছিল ‘আদিবাসী’ ছাত্র সংগঠনগুলো। এ দাবিও উপেক্ষিত হয়েছে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নির্বাচিতদের দায়িত্ব অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা : নাঈম ইবনে জামান, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমি যাদের ভোট দিবো, তাদের কাছে আমার প্রত্যাশা, দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ না হওয়ায় প্রশাসনিক ও একাডেমিক যেসব অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। যেমন, একাডেমিক সিলেবাসকে যুগোপযোগী করা, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ফান্ডিং ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা গ্রহণ।
লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠনগুলোর অগ্রাধিকার শিক্ষার্থীদের দাবি নয়, বরং দলীয় স্বার্থই হবে - এমন আশঙ্কা বাস্তবসম্মত। যখন ছাত্র সংসদ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে, তখন তারা জাতীয় স্বার্থে বড় ভূমিকা রেখেছে। দলীয় রাজনীতির অতীত ইতিহাসের আলোকে বলা যায়, ছাত্র সংসদে দলীয়করণ হলে শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র কন্ঠস্বর হারিয়ে যাবে, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত হবে না। এককেন্দ্রিক রাজনৈতিক মতাদর্শকে হেজেমোনিক করে তুলবে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নির্বাচিতরা যেন শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন : সাদিয়া শরিফ শান্তা, শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা থাকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক স্বার্থ নয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবেন। কিন্তু যদি পূর্ণ প্যানেল বা অধিকাংশ পদে রাজনৈতিক সংগঠনের প্রার্থীরাই জয়ী হন, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে তাদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সৎ ও মেরুদণ্ড থাকা নেতা চাই : মামুন ইসলাম, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চাকসু নেতার হতে হবে স্বচ্ছ, তার মধ্যে অবশ্যই কোনো প্রকার দ্বিচারিতা, কিংবা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য কাজ করার মানসিকতা থাকতে পারবে না। প্রশ্ন করা ও প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার মতো সৎ সাহস এবং ডিসিশন মেইকিংয়ের যোগ্যতা, তথা মেরুদণ্ড থাকা একান্ত জরুরি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি থাকা জরুরি : অর্পিতা সুশীল অপি, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চাকসু নির্বাচনে অমুসলিম ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত জরুরি। এটি বৈষম্য রোধ, সবার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত এবং তাদের নির্দিষ্ট সমস্যা ও চাহিদা তুলে ধরতে সহায়ক হবে। এ ধরনের প্রতিনিধিত্ব যতটা বেশি উঠে আসবে, শিক্ষার্থীদের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ছাত্র সংসদ গঠনে ততবেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
ক্যাম্পাসে শান্তি ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব : বোরহান রব্বানী, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। তবে আমরা তেমন কোনো পরিচয়ের ভিত্তিতে ভোট দেবো না। আমরা বিবেচনা করবো-কে বা কারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যারা শিক্ষার্থীদের নায্য অধিকার আদায় করতে পারবে। এছাড়া যাদের ইশতেহারে ক্যাম্পাসের শান্তি, উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- তাদেরই আমরা ভোট দেবো।
জাকসু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম থাকার অন্যতম কারণ হলো- রাজনীতির পরিবেশকে এখনো অনেকেই নিরাপদ মনে করেন না। কেননা, গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ব্যাপক ভূমিকা থাকলেও এর পরবর্তী সময়ে নারীদের অনলাইন বুলিংয়ের মাধ্যমে রাজনীতিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক চাপ, নিরাপত্তার অভাব এবং নেতৃত্বে নারীদের সুযোগ কম থাকায় অনেকেই এগিয়ে আসতে চান না।