1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ বিপর্যয় এড়াতে অভিনব মডেল

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে গিয়ে আরও সংকটে পড়ছে৷ শহরের উত্তরে দরিদ্র একটি এলাকার মানুষ টেকসই উন্নয়নের এক মডেল চালু করে আদর্শ হয়ে উঠেছে৷

Indonesien Erdrutsch in Bali
ছবি: Reuters/Antara Foto/N. Budhiana

বন্যা মোকাবিলার প্রচেষ্টা

৩ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার শহর  জাকার্তা ইন্দোনেশিয়ার বর্ধিষ্ণু রাজধানী ও বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জনপদ৷ শহরের কেন্দ্রস্থল ব্যস্ততায় ভরা৷ কিন্তু শহরের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে পড়েছে৷ শহরের উত্তরে সমুদ্রের ধারে জেলেদের বসতির পরিস্থিতি এখনই বেশ করুণ৷ ২০০২ সালে মুরা বারু বন্দরে বন্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে একটি প্রাচীর গড়ে তোলা হয়েছিল৷

সেই প্রাচীরকে আরও মজবুত করে তার উচ্চতাও বার বার বাড়ানো হয়েছে৷ বন্যা ছাড়াও প্রবল বৃষ্টিপাত হলেই পানি উপচে পড়ে৷ প্রশ্ন হলো, জাকার্তা শহর কেন ডুবে যাচ্ছে? পরিবেশ উপদেষ্টা ইরভান পুলুনগান বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ পানির এত বেশি নিষ্কাশন হচ্ছে, যে উপরের স্তরে পানি সরে গিয়ে মাটি বসে যাচ্ছে৷ পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি গত ২০ বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনও ঘটছে৷ তার প্রভাব শহরের জন্য ঝুঁকি দ্বিগুণ করে তুলছে, কারণ শহরটি তো স্বাভাবিক অবস্থায় এখনই পানির নীচে রয়েছে৷''

 

এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চার বছর আগে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল৷ শহরকে সাগরের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে সমুদ্রের উপর কয়েকটি কৃত্রিম দ্বীপ গড়ে তোলা হয়৷ তারপর থেকে জেলেদের জালে অনেক কম মাসেল বা ঝিনুক ধরা পড়ছে৷ প্রশ্নের উত্তরে জেলেরা জানালো, যে তারা দিনে প্রায় ৫০ কিলো ঝিনুক ধরতে পারছে৷ দ্বীপ তৈরির আগে সেই পরিমাণ ছিল ২০০ কিলোগ্রাম! 

ইন্দোনেশিয়ায় মডেল হয়ে উঠেছেন দরিদ্র এলাকার মানুষ

05:37

This browser does not support the video element.

এবার সেখানে নতুন এক বন্দর তৈরি হচ্ছে৷ সেই সঙ্গে সমুদ্রের বুকে ৫০ মিটার দূরে আরও একটি প্রাচীরও তৈরি হবে৷ তখন জেলেরা তাদের মাছ ধরার ক্ষেত্র থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন৷

নিয়মিত বন্যার সঙ্গে তাঁরা ঘর করতে শিখেছেন৷ কিন্তু নতুন পদক্ষেপের ফলে তাঁদের বসতির কার্যত মৃত্যু হবে বলে তাঁদের ধারণা৷ তাছাড়া কেউই তাঁদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না৷ স্থানীয় জেলে খলিল বলেন, ‘‘উপকূলীয় প্রাচীর জেলেদের সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করবে কি? এর ফলে সমাজের কিছু সুবিধা হলেও উন্নতির এই পরিকল্পনা নিয়ে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে৷''

জটিল চ্যালেঞ্জ

ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে গত কয়েক বছরের মতো এতটা নাটকীয়ভাবে নামতে দেওয়া যাবে না৷ অন্যথায় গোটা শহর আরও দ্রুত তলিয়ে যাবে এবং বন্যার আশঙ্কা আরও বেড়ে যাবে৷

আবর্জনা এই সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলছে৷ বিশেষ করে বর্ষাকালে জঞ্জালের কারণে নদীনালা বুজে যাচ্ছে৷ ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যহত হচ্ছে৷ আবর্জনার মোকাবিলা করতে সম্প্রতি প্রায় ১২,০০০ মানুষ ২৪ ঘণ্টা ধরে সংগ্রাম শুরু করেছেন৷

বন্যা থেকে সুরক্ষার পদক্ষেপের দোহাই দিয়ে বেশ কিছু এলাকা থেকে জোর করে মানুষকে সরিয়ে দিয়ে সব ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ ২০১৫ সালে টোংকল এলাকাও ধ্বংসের পরিকল্পনা ছিল৷ সেখানে নদীর ধারেই বাসিন্দাদের বস্তি ছিল৷ ভিটেমাটি হারানোর ভয়ে স্থানীয় মানুষ অবশ্য সক্রিয় হয়ে উঠেছিল৷ সবার আগে তারা নিজেরাই বস্তির কিছু অংশ ধ্বংস করে ফেলেছিল৷ টোংকল এলাকার বাসিন্দা গুগুন মুহাম্মদ বলেন, ‘‘৩ বছর আগে আমরা নিজেদের বাড়ির অংশ কেটে ফেলেছিলাম, নদী সাফাইয়ের কিছু কাজ করেছিলাম, শাকসবজি, ফুলের চারা লাগিয়েছিলাম৷ একেবারে নিখুঁত না হলেও কিছু রদবদল হয়েছে৷''

নাগরিক উদ্যোগ

শান্ত ও সবুজ এক মরূদ্যান সৃষ্টি হয়েছে৷ বাসিন্দারাও গর্বিত৷ তারা নিজেদের এলাকা নিজেরাই পরিচ্ছন্ন রাখে৷ নদীর পাড় খালি করে তারা যে জায়গা সৃষ্টি করেছে, তার ফলে নদীও বাড়তি জায়গা পাচ্ছে৷

তারপর বাইরে থেকেও সাহায্য এসেছে৷ স্থপতিদের সঙ্গে মিলে তারা এক টেকসই বাড়ির পরিকল্পনা করেছে৷ প্লাস্টিক ও টিনের বদলে পাথর ও কাঠ দিয়ে এমন একটি বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে৷ সাতটি পরিবার আজ সেখানে থাকে৷ গুগুন মুহাম্মদ তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে থাকেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আগের তুলনায় অনেক শীতল৷ আমার একটা জানালাও রয়েছে৷ আগে আমার জানালা ছিল না, তাই এটা আমার কাছে জরুরি৷'' 

স্থপতিরাও টেকসই ও আরও উন্নত থাকার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন৷ সেইসঙ্গে আরও অনেক ইচ্ছা ছিল তাঁদের৷ সেই স্থপতিদের মধ্যে একজন হেরলিলি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি বলছি না, যে ফলাফল হিসেবে বাড়িটির গুরুত্ব নেই৷ তবে তার সঙ্গে যে সামাজিক প্রক্রিয়া আসে, সেটাই সবচেয়ে জরুরি৷''

দায়িত্বশীল হয়ে টেকসই পদ্ধতিতে পানি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ৷ টোংকল এলাকার মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন, যে বাস্তবেও এমনটা সম্ভব৷ এলাকাটি অন্যদের জন্য আদর্শ হয়ে উঠেছে৷ পৌর কর্তৃপক্ষও সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে৷

জাকার্তা শহরের দরিদ্র মানুষ সমস্যার কারণ নয়, বরং সমাধানসূত্রের অংশ হয়ে উঠেছে৷

মিশায়েল ভেৎসেল/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ