বৃহস্পতিবার সকালে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার কেন্দ্রস্থলে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়, তাকে দু'মাস আগের প্যারিস হামলার সঙ্গে তুলনা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এই হামলার সঙ্গেও তথাকথিত ইসলামিক স্টেট জড়িত বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই জঙ্গি দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ওয়েবসাইটেও জাকার্তা হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে আইএস বা আইসিস-এর এটাই প্রথম আঘাত৷
হামলার কেন্দ্র ছিল জাকার্তার সারিনা শপিং মল মোড়, যা রাজধানী শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা৷ এর কাছেই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, জাতিসংঘ ভবন এবং ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি অবস্থিত৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, হামলায় অন্তত দু'জন বেসামরিক নাগরিক এবং পাঁচজন হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ নিহত বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে একজন ক্যানাডার এবং অন্যজন ইন্দোনেশীয়৷ এছাড়া আহত হয়েছে জাতিসংঘে কর্মরত এক ডাচ নাগরিকসহ আরও ২০ জন৷
বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশটির পুলিশ সূত্র থেকে জানা যায়, বাহরুন নাইম নামের এক ইন্দোনেশীয় নাগরিকই এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী৷ তবে নাইম এ মুহূর্তে সিরিয়ায় অবস্থান করছে বলে খবর৷
হামলা শুরুর পরপরই অবশ্য পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে৷ এরপর দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা হামলাকারীদের সঙ্গে গোলাগুলি চলে পুলিশের৷ পুলিশ বাহিনীর মুখপাত্র আন্তন শার্লিয়ানও বলেন যে, হামলাকারীরা প্যারিস হামলার ধরন অনুসরণ করে৷ তাঁর কথায়, গত নভেম্বর মাসেই নাকি আইএস-এর হামলার হুমকি তারা পেয়েছিলেন৷
হামলাকারীদের মধ্যে দু'জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
ডিজি/এসিবি
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷