ইসলাম ধর্মের বিতর্কিত প্রচারক জাকির নায়েক বিদেশে গা ঢাকা দিয়েছেন৷ ভারতের তদন্তকারি সংস্থা তাঁকে ধরে আনতে শুরু করেছে ব্যাপক তৎপরতা৷ সন্ত্রাসবাদে প্ররোচনাসহ একাধিক বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে৷
বিজ্ঞাপন
জাকির নায়েক বর্তমানে বিদেশে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ ভারতে ফিরলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে এই ভয়েই তিনি বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ দেশে ফেরার কোনো উদ্যোগই তিনি নিচ্ছেন না৷ এদিকে জাতীয় তদন্তকারি সংস্থা এনআইএ হন্যে হয়ে তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছে৷
কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে? কারণ, অভিযোগ রয়েছে, তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের নামে সন্ত্রাসবাদে মদত দিয়ে থাকেন৷ তাঁর এজিওগুলি দেশ বিদেশ থেকে পাওয়া আর্থিক অনুদানে বিভিন্ন বেআইনি কার্কলাপে লিপ্ত৷ এসব অভিযোগে আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ এর প্রেক্ষিতে তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে অবিলম্বে দেশে ফেরার জন্য সমন জারি করেছে৷ কিন্তু তিনি ফেরেননি৷
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা আইএনএ'র কাছে সর্বশেষ খবর, তিনি এখন সৌদি আরবে আছেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে এখন জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে চলেছে আইএনএ৷ তাতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে ইন্টারপোলের ‘রেডকর্ণার নোটিশ' জারি করা হবে৷ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেবার জন্য বলা হবে সৌদি সরকারকে৷
বিশ্বের ভয়ংকর পাঁচ জঙ্গি সংগঠন
তথাকথিত জঙ্গিদের কারণে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ অনেকেরই ধারণা তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-ই সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি গোষ্ঠী৷ কিন্তু বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচি বা গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
বোকো হারাম
ইসলামিক স্টেট বা আইএস নয়, বিশ্বের ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠনগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৫ সালে আবু বকর শেকাউ-এর নেতৃত্বে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৬ হাজার ৬৪৪ জন মানুষকে হত্যা করেছে৷ তাদের হামলায় আহত হয়েছে ১,৭৪২ জন৷ বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক৷ এছাড়া হাজারো কিশোরীকে অপহরণ করেছে বোকো হারাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S.Alamba
ইসলামিক স্টেট
যদিও বোকো হারাম আইএস-এর তুলনায় বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, কিন্তু আতঙ্ক সৃষ্টির দিক থেকে সবচেয়ে উপরে আছে আইএস৷ বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলা হচ্ছে আইএসকে৷ ২০১৫ সালে তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৭৩ জন মানুষ এবং আহত হয় ৫ হাজার ৭৯৯ জন৷ ১০৭১টি হামলা চালিয়েছে তারা বিশ্ব জুড়ে৷ আবু বকর আল-বাগদাদির নেতৃত্বে সংগঠনটি সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক ও ইউরোপ জুড়ে এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তালেবান
১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ চলার সময় এই জঙ্গি সংগঠনটির আবির্ভাব৷ বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ জঙ্গি সংগঠন বলা হয় এদের৷ ২০১৫ সালে তালেবানের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩ হাজার ৪৭৭ জন এবং আহত হয়েছে ৩ হাজার ৩১০ জন৷ গত বছর বিশ্ব জুড়ে ৮৯১ টি হামলা চালিয়েছে তারা৷ হিবাতুল্লাহ আকন্দজাদা এখন তালেবানের নেতৃত্বে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Noorullah Shirzada
ফুলানি জঙ্গি গোষ্ঠী
বিশ্বব্যাপী এদের তেমন পরিচিতি নেই৷ এরা নাইজেরিয়ার ফুলা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ এদের লক্ষ্য ফুলানির ভূমি মালিকদের হত্যা করা৷ ২০১৫ সালে ১৫০ টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ফুলানি, তাদের হামলায় মারা গেছে ১ হাজার ২২৯ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
আল-শাবাব
বোকো হারামকে যদি আইএস-এর সাথে তুলনা করা হয়, তবে আল শাবাবকে তুলনা করা যায় আল-কায়েদার সঙ্গে৷ পূর্ব আফ্রিকায় এদের আধিপত্য অনেক বেশি৷ সোমালিয়াকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোই তাদের মূল লক্ষ্য৷ গত বছর জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৪৯৬টি হামলা চালিয়েছে, হত্যা করেছে ১ হাজার ২১ জন মানুষকে, আহত হয়েছে ৮৫০ জন৷
ছবি: A. Ohanesian
5 ছবি1 | 5
জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তাঁর বাসভবন এবং ১০টি এনজিও'র কার্যালয়ে তল্লাসি চালিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিডি, ডিভিডি, মোবাইল ফোন, ফাইলপত্র ইত্যাদি এবং নগদ ১২ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ এখন জাকিরের এনজিওগুলির টাকাপয়সা কোথা থেকে আসে এবং সেই টাকা কোথায় কিভাবে খরচ করা হয় তা খতিয়ে দেখা হবে৷ দেখা হবে কাদের সঙ্গে হয়ে থাকে আর্থিক লেনদেন, বিনিয়োগ ইত্যাদি৷বিষয়গুলো খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে দিল্লি থেকে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যাওয়া হয়৷ যেসব সংস্থায় হানা দেওয়া হয় তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য মুম্বাইয়ের ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন, হারমনি মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড যার অঙ্গ হিসেবে পিস টিভি সম্প্রচার করতো জাকির নায়েকের উগ্রবাদী ইসলামিক ধর্মীয় ব্যাখ্যা৷ এছাড়া সিল করে দেওয়া হয় ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল৷ বাতিল করে দেওয়া হয় জাকিরের ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের এনজিও লাইসেন্স৷ ‘ফ্রিজ' করে দেওয়া হয় জাকিরের নিজস্ব এবং অন্যসব এনজিওর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট৷ বন্ধ করে দেওয়া হয় জাকির এবং ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট এবং অন-লাইন পরিষেবা৷
ভারতের শীর্ষ তদন্তকারী এজেন্সির দাবি, ৫০জন জঙ্গিকে আটক করার পর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তারা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, সিমির মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত৷ এদের মধ্যে আবু আনাস নামে ২৪ বছরের এক মুসলিম যুবক নাকি স্বীকার করেছে সে ইসলামিক রিসার্চ ফাইন্ডেশন থেকে স্কলারশিপের নামে ৮০ হাজার টাকা পায়৷ সেই টাকা দিয়ে সে নাকি ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে সিরিয়া যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল৷ কিন্তু তার আগেই সে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ধরা পড়ে৷ ইসলামিক রিসার্চ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে৷
ধর্মের নামে মন্দির, মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় হামলা
প্রাচীন স্থাপনা ও অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করে চলেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ মসজিদের ওপরও হামলা হয়েছে৷ উপমহাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ইতিহাসও দীর্ঘ৷ ধর্মের নামে এমন ধ্বংসের ‘খেলা’ থামবে কবে?
ছবি: Reuters
মালিতে ধ্বংসলীলা
এক সময় মালির টিমবাকটু শহরের অন্য নাম ছিল ‘মরুদ্যানের মুক্তা’৷ সেই শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেই চলেছে সেখানকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠন৷ ২০১২ সালে শহরটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলমানদের গড়া অনেক স্থাপত্য নিদর্শনও ধ্বংস করেছে তারা৷ সম্প্রতি শহরটিকে জঙ্গিদের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করার দাবি করেছে মালির সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP
সন্ত্রাসপ্রীতি এবং জ্ঞানভীতি
শুধু স্থাপনা বা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনই নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপিও ধ্বংস করেছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/P. Breu
তথাকথিত আইএস-এর হামলা
সিরিয়ার পালমিরা শহরের প্রায় ২,০০০ বছরের পুরনো স্থাপনাগুলোও রেহাই পায়নি৷ সে দেশে চলছে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর ধ্বংসযজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পালমিরার মন্দির ধ্বংস
এক সময় সিরিয়ার হোমস নগরীর এই স্থাপনাটিকে নিয়ে গর্ব করত সিরিয়া৷ এটি এক সময় ছিল মন্দির৷ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন এই উপসনালয় দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হতেন৷ আইএস-এর হামলায় স্থাপনাটি এখন ক্ষতবিক্ষত৷
ছবি: Reuters/Stringer
ধ্বংস যখন প্রচারণার হাতিয়ার
ধর্মীয় সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক সহাবস্থানকে হুমকির মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টায় আইএস অক্লান্ত৷ নৃশংসতা, বর্বরতা ক্রমেই আইএস-এর প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠছে৷ এভাবে পেট্রল ঢেলে স্থাপনা পোড়ালে সংবাদমাধ্যম লুফে নেয় খবর, খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত জঙ্গিরাও পেয়ে যায় তাদের কাঙ্খিত প্রচার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আয়ের উৎস
সিরিয়া ও ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ শুধু ধ্বংসই করে না, অনেক সময় কদর বুঝে সেগুলো চোরাপথে চড়াদামে বিক্রিও করে আইএস৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ আছে আইএস-এর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/IS/Internet
আফগানিস্তানে তালেবান বর্বরতা
আফগানিস্তানের এই বৌদ্ধ মন্দিরটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো৷ ২০০১ সালে হামলা চালিয়ে এটি প্রায় ধ্বংস করে দেয় তালেবান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Ahmed
আফ্রিকায় হামলার শিকার মসজিদ
মসজিদও অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্মীয় উন্মত্ততার শিকার৷ ২০১৫ সালে মুসলমানদের উপাসনালয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলার খবর আসে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান থেকে৷ খ্রিষ্টান-মুসলিম দাঙ্গায় সেখানে অন্তত ৪১৭টি মসজিদ আংশিক অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করা হয়৷
ছবি: ISSOUF SANOGO/AFP/Getty Images
গির্জায় হামলা
ইসলামি জঙ্গিরা আফ্রিকা অঞ্চলে গির্জাতেও প্রায়সময়ে হামলা চালায়৷ হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ ওপরের ছবিটিতে কেনিয়ার এক গির্জায় হামলার পরের দৃশ্য৷
ছবি: dapd
ভারতের ইতিহাসের কালো অধ্যায়
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসের ‘কালো দিন’৷ ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার বাবরি মসজিদে সেদিনই হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে হিন্দু মৌলবাদীরা৷ মুঘল সম্রাট বাবরের নামে গড়া সুপ্রাচীন এই মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
বাংলাদেশে প্রতিবছরই মন্দিরে হামলা
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মূলত একাত্তরের মুক্তযুদ্ধের সময় থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুরা হামলা, নির্যাতনের শিকার৷ তবে মন্দিরে মুর্তি ভাঙা, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনা ঘটে প্রতিবছর৷ বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হামলার কারণ ধর্মীয় উগ্রতা৷ সারা বিশ্বে ধর্মের নামে ধর্মীয় উপাসনালয় বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর হামলা থামবে কবে?
ছবি: Reuters
11 ছবি1 | 11
এই বিতর্কিত ধর্মপ্রচারকের বিরুদ্ধে সরকারের কড়া পদক্ষেপ নেবার পেছনে কী কোনো বিশেষ কারণ আছে? জানতে চেয়েছিলাম প্রবীণ সাংবাদিক এ.কে বসুর কাছে৷ উত্তরে উনি ডয়চে ভেলেকে যা বললেন, তার মর্মার্থ হলো, ঢাকার গুলশান ক্যাফের সন্ত্রাসীকাণ্ডের পরই কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা জাকির নায়েক এবং ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উঠে-পড়ে লেগেছে৷
জাকিরের এনজিওগুলি ভারতে অনেকদিন ধরেই তো কাজকর্ম চালিয়ে এসেছে৷ কিন্তু সরকার আগে তো ওদের নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায়নি! গুলশানকাণ্ডে জাকিরের পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে বলে ঢাকা দৃঢ় সন্দেহ পোষণ করে এবং বাংলাদেশের মন্ত্রী এবং উচ্চ-আধিকারিকরা দুইবার দিল্লি এসে মোদী সরকারকে সেই বিষয়ে অবহিত করেন এবং যেহেতু জাকির নায়েক ও তাঁর এনজিওগুলি ভারতে সক্রিয়, তাই দিল্লির তরফে কড়া ব্যবস্থা নেবার জন্য মোদী সরকারকে চাপ দেন৷ আর এটা তো সত্যি, সন্ত্রাস দমনে ঢাকা, বিশেষ করে হাসিনা সরকার ও দিল্লি পরস্পরের হাত ধরে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ আর এটা করা খুবই দরকার ছিল৷ না করলে দিল্লি-ঢাকা মৈত্রী সম্পর্কে দ্বিচারিতার ছায়া পড়তো৷ দ্বিতীয়ত, ভারত নিজেই তো সন্ত্রাসের বড় শিকার. কাজেই নিজের স্বার্থও জড়িত৷
জাকির নায়েককে কী ভারতে আনা সম্ভব হবে? সেটা বলা এই মূহুর্তে মুশকিল বলে মনে করছেন সাংবাদিক বসু৷ কারণ বহু চেষ্টা করেও দিল্লি এখনও পর্যন্ত মুম্বাই ডন দাউদ ইব্রাহিমকে ভারতে আনতে পারেনি, ক্রিকেট কেলেঙ্কারিতে জড়িত ললিত মোদীকে বিদেশ থেকে আনতে পারেনি এবং হালে বিরাট ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যকে দেশে ফেরত আনতে পারেনি শত চেষ্টা সত্বেও৷
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎসাহ, উদ্বেগ দুই-ই আছে৷ আর সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল ও ইসলামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ৷ ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে আজকের প্রজন্ম?
ছবি: Reuters
পিয়ান মুগ্ধ নবীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়ান মুগ্ধ নবীর কাছে ধর্ম বিষয়টা পুরোপুরি ব্যক্তিগত হলেও রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়৷ তবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
শিবরাজ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শিবরাজ চৌধুরী৷ তার মতে, ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ ধর্মের মূল বিষয় মনুষত্ব বা মানুষের মধ্যকার শুভবোধ৷ তবে ধর্মের নামে যদি কখনো মৌলবাদ কিংবা চরমপন্থা চলে আসে, সেটা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়৷
ছবি: DW
শিহাব সরকার
ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শিহাব সরকার৷ তার মতে, ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়৷ বলা বাহুল্য, ধর্মের নামে রাজনীতি তিনিও সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
আসিফ হামিদী
আসিফ হামিদীও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন৷ তিনিও মনে করেন ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
ছবি: DW
মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর
ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর৷ তাঁর মতেও রাজনীতি ধর্মভিত্তিক হতে পারে না৷ তবে আল্লাহ এবং রাসুলের কিংবা ইসলামের উপর কোনোরকম আঘাত আসলে তার বিরোধীতা করা সব মুসলমানের নৈতিক দ্বায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
সাদমান আহমেদ সুজাত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ সুজাত৷ তাঁরও ঐ এক কথা৷ ‘‘ধর্ম এবং রাজনীতি কখনো এক হতে পারে না৷’’ তিনি জানান, ‘‘ধর্ম আমরা সাধারণত জন্মগতভাবে পাই, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা অনুসরণ করি৷’’
ছবি: DW
সাজ্জাদ হোসেন শিশির
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শিশির৷ তাঁর মতে, রাজনীতি সবসময়ই ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া উচিত৷ তাঁর বিশ্বাস, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেললে তার ফল কখনো ভালো হয় না৷
ছবি: DW
দাউদুজ্জামান তারেক
ঢাকার আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাউদুজ্জামান তারেক মনে করেন, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের কখনো মিল হতে পারে না৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসরণও করতে পারেন৷