জাকির নায়েকের এনজিও ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার অনুদান পায় সোনিয়া গান্ধী পরিচালিত রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট৷ তাই নায়েকের বেআইনি গতিবিধি প্রকাশ্যে আসায় ঐ টাকা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা৷
বিজ্ঞাপন
গুলশান হামলাকারীদের দু'জন পিস টিভির কর্ণধার ড. জাকির নায়েকের টুইটার-অনুসারী ছিলেন৷ তাঁর বক্তব্য ধারাবাহিকভাবে পিস টিভিতে প্রচার হতো এবং তাতে জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার মতো উপাদান ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তাই ড. নায়েকের সঙ্গে কংগ্রেস সভানেত্রী পরিচালিত এনজিও-টির একটি সম্পর্ক বেরিয়ে আসায়, বিষয়টিকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে মাঠে নেমেছে বিজেপি৷ ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনের মুখে স্বাভাবিকভাবেই এটি বিজেপির মোক্ষম হাতিয়ার৷ অবশ্য ভারতের বিতর্কিত এই বক্তার বেআইনি গতিবিধি প্রকাশ হওয়ার পর, অনুদান বাবদ পাওয়া সেই অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কংগ্রেস৷
এরপরও বিতর্কিত ধর্ম প্রচারক জাকির নায়েক পরিচালিত এনজিও মুম্বই-ভিত্তিক ইসলামিক রিসার্চ ফাইন্ডেশন বা আইআরএফ ২০১১ সালে গান্ধী পরিবার পরিচালিত এনজিও রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান কেন দিয়েছিল, এর পেছনে অন্য কোনো অভিসন্ধি আদৌ ছিল কিনা – তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশই বাড়ছে৷ উত্তর প্রদেশ এবং পাঞ্জাবের আসন্ন নির্বাচনের মুখে কংগ্রেসকে চেপে ধরতে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের অভিযোগ, কংগ্রেস সরকারের আমলেই এই টাকা দেয়া-নেয়া হয়েছিল৷ তাহলে কি বুঝতে হবে যে, জাকির নায়েকের দেশবিরোধী আপত্তিকর গতিবিধি আড়াল করতেই এই অর্থ ঘুস হিসেবে দেওয়া হয়েছিল?
বিশ্বের ভয়ংকর পাঁচ জঙ্গি সংগঠন
তথাকথিত জঙ্গিদের কারণে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ অনেকেরই ধারণা তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-ই সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি গোষ্ঠী৷ কিন্তু বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচি বা গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
বোকো হারাম
ইসলামিক স্টেট বা আইএস নয়, বিশ্বের ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠনগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৫ সালে আবু বকর শেকাউ-এর নেতৃত্বে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৬ হাজার ৬৪৪ জন মানুষকে হত্যা করেছে৷ তাদের হামলায় আহত হয়েছে ১,৭৪২ জন৷ বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক৷ এছাড়া হাজারো কিশোরীকে অপহরণ করেছে বোকো হারাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S.Alamba
ইসলামিক স্টেট
যদিও বোকো হারাম আইএস-এর তুলনায় বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, কিন্তু আতঙ্ক সৃষ্টির দিক থেকে সবচেয়ে উপরে আছে আইএস৷ বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলা হচ্ছে আইএসকে৷ ২০১৫ সালে তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৭৩ জন মানুষ এবং আহত হয় ৫ হাজার ৭৯৯ জন৷ ১০৭১টি হামলা চালিয়েছে তারা বিশ্ব জুড়ে৷ আবু বকর আল-বাগদাদির নেতৃত্বে সংগঠনটি সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক ও ইউরোপ জুড়ে এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তালেবান
১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ চলার সময় এই জঙ্গি সংগঠনটির আবির্ভাব৷ বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ জঙ্গি সংগঠন বলা হয় এদের৷ ২০১৫ সালে তালেবানের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩ হাজার ৪৭৭ জন এবং আহত হয়েছে ৩ হাজার ৩১০ জন৷ গত বছর বিশ্ব জুড়ে ৮৯১ টি হামলা চালিয়েছে তারা৷ হিবাতুল্লাহ আকন্দজাদা এখন তালেবানের নেতৃত্বে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Noorullah Shirzada
ফুলানি জঙ্গি গোষ্ঠী
বিশ্বব্যাপী এদের তেমন পরিচিতি নেই৷ এরা নাইজেরিয়ার ফুলা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ এদের লক্ষ্য ফুলানির ভূমি মালিকদের হত্যা করা৷ ২০১৫ সালে ১৫০ টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ফুলানি, তাদের হামলায় মারা গেছে ১ হাজার ২২৯ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
আল-শাবাব
বোকো হারামকে যদি আইএস-এর সাথে তুলনা করা হয়, তবে আল শাবাবকে তুলনা করা যায় আল-কায়েদার সঙ্গে৷ পূর্ব আফ্রিকায় এদের আধিপত্য অনেক বেশি৷ সোমালিয়াকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোই তাদের মূল লক্ষ্য৷ গত বছর জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৪৯৬টি হামলা চালিয়েছে, হত্যা করেছে ১ হাজার ২১ জন মানুষকে, আহত হয়েছে ৮৫০ জন৷
ছবি: A. Ohanesian
5 ছবি1 | 5
তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী কংগ্রেসের মনিশ তেওয়ারি ২০১২ সালে একবার সংসদে বলেছিলেন, সরকার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাকির নায়েকের পিস টিভিসহ অনেকগুলি টিভি চ্যানেলের দিকে নজর রাখছে৷ তাই যদি হয়, তাহলে কংগ্রেসের বক্তব্য অনুযায়ী সেই অর্থ ২০১২ সালেই কেন ফিরিয়ে দেওয়া হলো না? রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন প্রথমে অনুদানের কথা অস্বীকার করলেও, পরে স্বীকার করে যে আরজিএফ-এর সহযোগী রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে দেওয়া হয়েছিল ঐ অনুদান৷ এটা কি খবরটা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা নয়? বলা বাহুল্য, এ প্রশ্ন বিজেপির৷ তবে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, উত্তর প্রদেশ বিধানসভার আসন্ন ভোটে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে জঙ্গিবাদের মদতদাতা জাকির নায়েকের যোগসূত্রের কথা নির্বাচনি কৌশল হিসেবেই জনসমক্ষে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি৷
অন্যদিকে, বিতর্কের অভিমুখ ঘোরাতে আত্মপক্ষ সমর্থনে কংগ্রেসের বক্তব্য: প্রথমত, রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে (আরজিসিটি) জাকির নায়েকের এনজিও ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) যখন অনুদান দিয়েছিল, তখন জাকির নাইকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে মদত দেবার কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু এ বছরের ১লা জুলাই ঢাকার গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পরপরই জাকির নায়েকের নাম উঠে আসে৷ তাই নায়েকের সঙ্গে জঙ্গিবাদের সম্পর্কটা আগে থেকে বোঝা সম্ভব ছিল না৷ একমাত্র জ্যোতিষিদের পক্ষেই সেটা বোঝা সম্ভব৷ তবে খবরটি প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয়ত, রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে দেওয়া অনুদান অবৈধ নয়, কারণ ২০১০ সালের বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইনে শুধু আরজিসিটি নয়, ড. নায়েকের সংস্থা আইআরএফ-কেও নথিভুক্ত করা হয়৷ ঐ আইন অনুসারে নথিভুক্ত দু'টি এজিওর মধ্যে অর্থ বিনিময় অবৈধ নয়৷
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎসাহ, উদ্বেগ দুই-ই আছে৷ আর সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল ও ইসলামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ৷ ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে আজকের প্রজন্ম?
ছবি: Reuters
পিয়ান মুগ্ধ নবীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়ান মুগ্ধ নবীর কাছে ধর্ম বিষয়টা পুরোপুরি ব্যক্তিগত হলেও রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়৷ তবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
শিবরাজ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শিবরাজ চৌধুরী৷ তার মতে, ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ ধর্মের মূল বিষয় মনুষত্ব বা মানুষের মধ্যকার শুভবোধ৷ তবে ধর্মের নামে যদি কখনো মৌলবাদ কিংবা চরমপন্থা চলে আসে, সেটা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়৷
ছবি: DW
শিহাব সরকার
ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শিহাব সরকার৷ তার মতে, ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়৷ বলা বাহুল্য, ধর্মের নামে রাজনীতি তিনিও সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
আসিফ হামিদী
আসিফ হামিদীও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন৷ তিনিও মনে করেন ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
ছবি: DW
মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর
ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর৷ তাঁর মতেও রাজনীতি ধর্মভিত্তিক হতে পারে না৷ তবে আল্লাহ এবং রাসুলের কিংবা ইসলামের উপর কোনোরকম আঘাত আসলে তার বিরোধীতা করা সব মুসলমানের নৈতিক দ্বায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
সাদমান আহমেদ সুজাত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ সুজাত৷ তাঁরও ঐ এক কথা৷ ‘‘ধর্ম এবং রাজনীতি কখনো এক হতে পারে না৷’’ তিনি জানান, ‘‘ধর্ম আমরা সাধারণত জন্মগতভাবে পাই, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা অনুসরণ করি৷’’
ছবি: DW
সাজ্জাদ হোসেন শিশির
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শিশির৷ তাঁর মতে, রাজনীতি সবসময়ই ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া উচিত৷ তাঁর বিশ্বাস, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেললে তার ফল কখনো ভালো হয় না৷
ছবি: DW
দাউদুজ্জামান তারেক
ঢাকার আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাউদুজ্জামান তারেক মনে করেন, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের কখনো মিল হতে পারে না৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসরণও করতে পারেন৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
ঢাকার মতে, গুলশান হামলার সঙ্গে যুক্ত দু'জন বাংলাদেশি যুবকের মস্তিষ্ক ধোলাই করে সন্ত্রাসী খাতায় নাম লেখাতে প্ররোচিত করেছিলেন ঐ বিতর্কিত ধর্ম প্রচারক৷ আর সেজন্য তাঁর উপগ্রহ পিস টিভিকে কাজে লাগানো হয়েছিল, যা প্রচারিত হতো দুবাই থেকে৷ গুলশান হামলার পর তাই পিস টিভির সম্প্রচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ এবং ভারতকেও অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে হাসিনা সরকার৷ হালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী দিল্লি সফরে এসে মোদী সরকারকেও এই বার্তা দিয়ে যান বেশ জোরালোভাবে৷ তাঁরা বলেন, দিল্লি ও ঢাকা সন্ত্রাস দমনে একে-অপরের হাত শক্ত করতে সব রকম সহযোগিতা করে যাবে৷
ভারত কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
সম্প্রতি ভারতেও সরাসরি পিস টিভি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বাতিল করা হয়েছে মুম্বইতে জাকির নায়েকের এনজিও ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রেজিস্ট্রেশনও৷ এছাড়া গত সপ্তাহে নতুন দিল্লিতে, ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের বিদেশ সচিব জঙ্গিবাদ মোকাবিলার পাশাপাশি ধর্ম নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেও বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য বিশ্বের সমর্থন চেয়েছেন৷ তাঁর কথায়, বাংলাদেশের কঠিন সময়ে ভারত সর্বদাই বাংলাদেশের পাশে থেকেছে৷ সুতরাং এবার বিশ্বেরও উচিত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো৷ মুম্বইতে ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নথিপত্র পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে৷ এবং তার জন্য আপাতত দপ্তরটি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে খবর৷
ধর্মের নামে মন্দির, মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় হামলা
প্রাচীন স্থাপনা ও অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করে চলেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ মসজিদের ওপরও হামলা হয়েছে৷ উপমহাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ইতিহাসও দীর্ঘ৷ ধর্মের নামে এমন ধ্বংসের ‘খেলা’ থামবে কবে?
ছবি: Reuters
মালিতে ধ্বংসলীলা
এক সময় মালির টিমবাকটু শহরের অন্য নাম ছিল ‘মরুদ্যানের মুক্তা’৷ সেই শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেই চলেছে সেখানকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠন৷ ২০১২ সালে শহরটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলমানদের গড়া অনেক স্থাপত্য নিদর্শনও ধ্বংস করেছে তারা৷ সম্প্রতি শহরটিকে জঙ্গিদের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করার দাবি করেছে মালির সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP
সন্ত্রাসপ্রীতি এবং জ্ঞানভীতি
শুধু স্থাপনা বা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনই নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপিও ধ্বংস করেছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/P. Breu
তথাকথিত আইএস-এর হামলা
সিরিয়ার পালমিরা শহরের প্রায় ২,০০০ বছরের পুরনো স্থাপনাগুলোও রেহাই পায়নি৷ সে দেশে চলছে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর ধ্বংসযজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পালমিরার মন্দির ধ্বংস
এক সময় সিরিয়ার হোমস নগরীর এই স্থাপনাটিকে নিয়ে গর্ব করত সিরিয়া৷ এটি এক সময় ছিল মন্দির৷ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন এই উপসনালয় দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হতেন৷ আইএস-এর হামলায় স্থাপনাটি এখন ক্ষতবিক্ষত৷
ছবি: Reuters/Stringer
ধ্বংস যখন প্রচারণার হাতিয়ার
ধর্মীয় সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক সহাবস্থানকে হুমকির মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টায় আইএস অক্লান্ত৷ নৃশংসতা, বর্বরতা ক্রমেই আইএস-এর প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠছে৷ এভাবে পেট্রল ঢেলে স্থাপনা পোড়ালে সংবাদমাধ্যম লুফে নেয় খবর, খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত জঙ্গিরাও পেয়ে যায় তাদের কাঙ্খিত প্রচার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আয়ের উৎস
সিরিয়া ও ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ শুধু ধ্বংসই করে না, অনেক সময় কদর বুঝে সেগুলো চোরাপথে চড়াদামে বিক্রিও করে আইএস৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ আছে আইএস-এর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/IS/Internet
আফগানিস্তানে তালেবান বর্বরতা
আফগানিস্তানের এই বৌদ্ধ মন্দিরটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো৷ ২০০১ সালে হামলা চালিয়ে এটি প্রায় ধ্বংস করে দেয় তালেবান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Ahmed
আফ্রিকায় হামলার শিকার মসজিদ
মসজিদও অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্মীয় উন্মত্ততার শিকার৷ ২০১৫ সালে মুসলমানদের উপাসনালয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলার খবর আসে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান থেকে৷ খ্রিষ্টান-মুসলিম দাঙ্গায় সেখানে অন্তত ৪১৭টি মসজিদ আংশিক অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করা হয়৷
ছবি: ISSOUF SANOGO/AFP/Getty Images
গির্জায় হামলা
ইসলামি জঙ্গিরা আফ্রিকা অঞ্চলে গির্জাতেও প্রায়সময়ে হামলা চালায়৷ হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ ওপরের ছবিটিতে কেনিয়ার এক গির্জায় হামলার পরের দৃশ্য৷
ছবি: dapd
ভারতের ইতিহাসের কালো অধ্যায়
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসের ‘কালো দিন’৷ ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার বাবরি মসজিদে সেদিনই হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে হিন্দু মৌলবাদীরা৷ মুঘল সম্রাট বাবরের নামে গড়া সুপ্রাচীন এই মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
বাংলাদেশে প্রতিবছরই মন্দিরে হামলা
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মূলত একাত্তরের মুক্তযুদ্ধের সময় থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুরা হামলা, নির্যাতনের শিকার৷ তবে মন্দিরে মুর্তি ভাঙা, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনা ঘটে প্রতিবছর৷ বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হামলার কারণ ধর্মীয় উগ্রতা৷ সারা বিশ্বে ধর্মের নামে ধর্মীয় উপাসনালয় বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর হামলা থামবে কবে?
ছবি: Reuters
11 ছবি1 | 11
গুলশন সন্ত্রাসী কাণ্ডের সময় জাকির নায়েক অবশ্য বিদেশে ছিলেন৷ ভারতে এলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে, এই আশঙ্কায় এখনও তিনি দুবাইতে রয়েছেন৷ সেখানে বসেই তিনি ই-মেলে ভারতের কাছে জানতে চেয়েছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার বা জোর করে ধর্ম বদল করার অথবা যুবকদের মস্তিষ্ক ধোলাইয়ের অভিযোগ কতটা সত্যি সে সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ পেশ করা হোক৷ ভারতের আদালত তাঁর নিরপেক্ষ বিচার করবে৷ তবে হ্যাঁ, জাকির নায়েক বিদেশে থাকলেও মুম্বইতে তাঁর ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সদরদপ্তর রয়েছে৷
ওদিকে ভারতের নাগরিক সমাজের একটা অংশের প্রশ্ন, জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলে, কট্টর হিন্দুত্ববাদ প্রচার করাও কি একই বন্ধনীভুক্ত নয়? প্রশ্নটা বিতর্কিত হলেও ভেবে দেখার অবকাশ আছে৷ কারণ কোনো উগ্রবাদই তো সমর্থনযোগ্য নয়, তাই না?