মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন শার্লটভিলে জাতিগত উত্তেজনা প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান থেকে তাঁর দূরত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Vatsyayana
বিজ্ঞাপন
রবিবার একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে টিলারসনকে ভার্জিনিয়া প্রদেশের শার্লটভিল শহরে উগ্র দক্ষিণপন্থিদের সমাবেশে প্রাণঘাতী সহিংসতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হয়৷ উত্তরে টিলারসন দৃশ্যত জাতি সম্পর্কে অ্যামেরিকার মূল্যবোধকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোভাব থেকে পৃথক করেন৷
টিলারসন বলেন যে, জাতিগত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে দেশের দৃঢ়সংকল্প স্পষ্ট৷ ‘‘ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) থেকে আমরা অ্যামেরিকার মূল্যবোধ ব্যক্ত করি৷ আমরা মার্কিন জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি, আমরা অ্যামেরিকার মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করি, স্বাধীনতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার, সারা বিশ্বে সব মানুষের প্রতি সমান আচরণের জন্য আমাদের অঙ্গীকার – এবং সেই বার্তা কোনোদিনই বদলায়নি,'' ফক্স নিউজ-কে এ কথা বলেন টিলারসন৷ ঐ মূল্যবোধের প্রগতি ও প্রতিরক্ষার প্রতি মার্কিন সরকার বা তার সংস্থাসমূহের অঙ্গীকার সম্পর্কে কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিৎ নয় বলেও টিলারসন মনে করেন৷
নব্য-নাৎসিবাদ, যোগ্য প্রতিবাদ
01:01
This browser does not support the video element.
প্রেসিডেন্টের মূল্যবোধ
এ প্রসঙ্গে টিলরসন বলেন, ‘দ্য প্রেসিডেন্ট স্পিকস ফর হিমসেল্ফ' – অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট তাঁর নিজের মনোভাবই ব্যক্ত করে থাকেন৷
১১ ও ১২ আগস্ট শার্লটভিলে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট' বা শ্বেতাঙ্গ জাতিবাদি, শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদি, নব্য নাৎসি ও অপরাপর চরম দক্ষিণপন্থি গোষ্ঠীদের ব়্যালিতে তিনজন মানুষ নিহত ও আরো অনেকে আহত হন৷ মার্কিন গৃহযুদ্ধের আমলের এর কনফেডারেট জেনারেলের মূর্তি অপসারণ করার বিরুদ্ধে এই দক্ষিণপন্থি প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়েছিল৷
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ঘটনা সম্পর্কে বেশ কয়েক ঘণ্টা নীরব থাকার পর যে বিবৃতি দেন, তাতে মনে হতে পারে যে, যারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন, তাদের তিনি নিও-নাৎসিদের সঙ্গে একই পর্যায়ে ফেলছেন৷
‘‘ঘৃণা, গোঁড়ামি ও সহিংসতার এই আশ্চর্য প্রকাশ''-এর নিন্দা করার সময় ট্রাম্প যোগ করেন, ‘‘সব তরফ থেকেই, সব তরফ থেকেই৷'' প্রতিবাদের ‘‘দু'পক্ষেই অনেক ভালো মানুষ'' ছিলেন, বলে ট্রাম্প আরো মন্তব্য করেন৷ ট্রাম্পের এইসব উক্তি জাতীয়বাদি মহলে হাততালি কুড়োলেও, স্বদেশে ও বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে৷
‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ এর অজানা কিছু কথা
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট দিনটি অ্যামেরিকার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে৷ সেদিন ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, যিনি অ্যামেরিকায় আফ্রিকান-অ্যামেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা৷
ছবি: AP
লক্ষ্য বর্ণবাদের অবসান
এই সেই বিখ্যাত ছবি৷ ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়ালে প্রায় আড়াই লক্ষ সমর্থকের উদ্দেশ্যে ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ণবাদ দূর করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাগরিক অধিকার আন্দোলন
বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’ বা নাগরিক অধিকার আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তারই অংশ হিসেবে ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট আয়োজিত ‘মার্চ অন ওয়াশিংটন’ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি৷ ছবিতে সামনের সারিতে বাম থেকে দ্বিতীয়তে দেখা যাচ্ছে তাঁকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
যেভাবে আন্দোলনের শুরু
ছবির এই নারীর নাম রোজা পার্কস৷ বাস চালকের নির্দেশের পরও বাসের পেছনে বসতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তার প্রতিবাদেই শুরু হয়েছিল নাগরিক অধিকার আন্দোলন - যাঁর অন্যতম নেতা ছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ মার্কিন কংগ্রেস পরবর্তীতে রোজা পার্কসকে ‘দ্য ফার্স্ট মিনিস্টার অফ সিভিল রাইটস’ উপাধি দিয়েছিল৷
ছবি: AP
বাস বয়কটের দায়ে অভিযুক্ত
রোজা পার্কসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাস বয়কট আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৬ সালের ২২ মার্চ তোলা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিংকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী কোরেটা স্কট কিং৷ এটা আদালত ছাড়ার সময়কার ছবি৷ মন্টগোমারি শহরের বাসে চালু থাকা নিয়ম ভঙ্গের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল লুথার কিং এর বিরুদ্ধে৷ তবে তাঁর আপিলের পর বিচারক ৫০০ ডলারের জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকার
১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চের এই ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং ও তাঁর স্ত্রী সহ অন্যান্যদের৷
ছবি: William Lovelace/Express/Getty Images
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবি নিয়ে ১৯৬৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
জন্ম
১৯২৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি জর্জিয়ার অ্যাটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৫ সালে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি৷ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৫৷ নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ৷ ছবিটি ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণের৷
ছবি: picture-alliance/akg
জার্মান মার্টিন লুথার
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর নাম কিন্তু শুরুতে ছিল মাইকেল কিং৷ পরবর্তীতে তাঁর বাবা ষোড়শ শতকে যে জার্মান ক্যাথলিক যাজক প্রোটেস্টান্ট গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন, সেই মার্টিন লুথারের নামে তাঁর ছেলে ও নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মার্টিন লুথার কিং৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
মৃত্যু
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তাঁকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জেমস আর্ল রে’কে (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে)৷ ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রে একবার জেল থেকে পালিয়ে যাবার পর এফবিআই তাঁকে ধরতে এই পোস্টারটি ছাপিয়েছিল৷ তিনটি ছবিই রে’র৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
9 ছবি1 | 9
‘জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করার' অভিযোগ
এ অভিযোগ এসেছে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তরফ থেকে৷ রবিবারেই তিনি ‘‘জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করার'' ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের ‘অসীম প্রস্তুতি'-র কথা বলেন৷
‘‘আমাদের এমন একজন অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট আছেন, যিনি (একদিকে) নিও-নাৎসি ও ক্লু-ক্লুক্স-ক্ল্যানের সদস্যবৃন্দ ও (অপরদিকে) যারা তাদের বিষ ও ঘৃণার বিরোধী, (এই দুই-এর মধ্যে) নৈতিক সমমূল্যতার কথা প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করেছেন,'' এবং এর মাধ্যমে ‘‘শ্বেতাঙ্গ জাতিবাদিদের সাহস দিয়েছেন,'' বলে বাইডেন অভিযোগ করেন৷
জাতিগত বৈষম্য সংক্রান্ত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানও শার্লটভিলের ঘটনার প্রতি ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ার নিন্দা করেছে ও ওয়াশিংটনের প্রতি ‘দ্ব্যর্থহীন ও নিঃশর্তভাবে' জাতিবাদি ‘হেট স্পিচ' ও অপরাপর অপরাধ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে ও বলেছে যে, ট্রাম্পের এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়া উচিৎ৷
একটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গত সপ্তাহে প্রকাশিত জরিপ অনুযায়ী, মার্কিনিদের ৬০ ভাগ বনাম ৩২ ভাগ শার্লটভিলের ঘটনা সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্যে সুখি নন৷ উত্তরদাতাদের একটি অনুরূপ শতাংশ জাতিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতি প্রত্যাখ্যান করে থাকেন৷ ট্রাম্প গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া যাবৎ বিদ্বেষ ও পরস্পরের প্রতি বিরূপ মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উত্তরদাতাদের দুই-তৃতীয়াংশের বিশ্বাস৷