জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারেন নি মুক্তিযোদ্ধাসহ শহিদ পরিবারের সদস্যরা৷ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেছেন, এই রায়ের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজয় ঘটল৷
বিজ্ঞাপন
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা৷ এ রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে হাইকোর্টের বাইরে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা৷ তাঁরা বলেন, এতদিন জামায়াতের দেশে-বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের যে কথা আমরা শুনে আসছিলাম, এই রায়ের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হলো৷ মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবার যে রায় প্রত্যাশা করেছিল এতে তার প্রতিফলন হয়নি বলে মনে করেন তাঁরা৷
‘মিরপুরের কসাই’ কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যু্দ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় রায় ঘোষণা করে৷ রায়ে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত
ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণিত হয়৷ এর মধ্যে দুটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হলেও তার সম্পৃক্ততা ছিল বলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ আর তিনটি অভিযোগে তাকে ১৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
ছবি: AP
প্রতিবাদে হরতাল
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী৷ দলটি মনে করে এ রায় গ্রহণযোগ্য নয়৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
রায়ে কেউ খুশি নয়
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় সরকার এবং জামায়াতে ইসলামী কোনো পক্ষই খুশি নয়৷ তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে সারা দেশে৷
ছবি: Reuters
ট্রাইবুনালের দ্বিতীয় রায়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এর আগে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন অভিযোগে ‘বাচ্চু রাজাকার’ নামে পরিচিত আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়৷ সেটি ছিল ট্রাইবুনালের দেয়া প্রথম রায়৷ দণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামী তাঁর বিচার শুরু আগে থেকেই পলাতক৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
অপেক্ষার অবসানে স্বস্তি
আবুল কালাম আযাদ ওরফে ‘বাচ্চু রাজাকার’-এর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিদের উল্লাস করতে দেখা গেছে৷ কিন্তু কাদের মোল্লার শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় তাঁদের প্রায় সবাই হতাশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, মুক্তিযুদ্ধের দাবি
একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসসহ তাদের অন্যান্য সহযোগীরা ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুটতরাজ, চালিয়েছিল৷ দেশি-বিদেশি সব মাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রচারিত হয়েছে৷ অনেক গ্রন্থেও লেখা আছে এই ইতিহাস৷ ছবিতে একাত্তরের কয়েকজন নারী মুক্তিযোদ্ধা৷
ছবি: Zinat Rahman
জামায়াত ও সমমনাদের সহিংসতা
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের বিচার বন্ধ করার দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে চলেছে জামায়াতে ইসলামী৷ কর্মসূচি পালনের সময় দলের কর্মীদের গাড়িতে আগুন দেয়া, ভাঙচুরসহ নানা ধরনের সহিংস কাজেও তৎপর হতে দেখা গেছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সংশয় জন্ম দেয়া পদত্যাগ
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিচার কাজ শুরু করলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কিছু প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে, বিতর্কেও জড়িয়েছে৷ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগে অভিযুক্ত দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর বিচার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বেলজিয়াম প্রবাসি এক আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞের স্কাইপ-এ কথা বলায় পদত্যাগ করতে হয় বিচারপতি নিযামুল হক নাসিমকে৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজয় ঘটল৷ তিনি বলেন, কাদের মোল্লার যদি মৃত্যুদণ্ড না হয়, তাহলে অন্যদের ৫ বছর, ১০ বছর করে কারাদণ্ড হবে, যা জাতি কখনই মেনে নিতে পারে না৷
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আবদুল কাদের মোল্লাকে দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ভুয়া বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধে শহিদ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবের ছেলে ও মেয়ে৷ তাঁরা বলেন, এই শাস্তি অতি নগণ্য৷ তাই এ রায় কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷ তাঁরা আরও বলেন, আদালতের প্রতি আস্থা আছে৷ তাই আশা করছি, সরকার যখন আপিল করবে, তখন যেন কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়৷
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, এই রায় তারা মেনে নিতে পারেন নি৷ আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি বলেন, জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় ঘোষিত হয়নি৷
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, প্রসিকিউশন পক্ষ প্রয়োজন মনে করলে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারে৷ রায় পুরোপুরি না দেখে বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাননি তিনি৷ আর আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় হয়নি৷ তাই এ রায় তিনি প্রত্যাখান করছেন৷
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অবশ্য এই রায়ের ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেয়নি৷