1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতির হৃদয়ে একাত্তরের দেশপ্রেম খুঁজে ফেরেন ডা. মাখদুমা

১১ জুন ২০১১

১৯৪৫ সালে কলকাতায় জন্ম ডা. মাখদুমা নারগিস রত্নার৷ পিতা ব্যারিস্টার আব্দুল গনি খান এবং মা সেকেন্দার জাহান বেগম৷ বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের গ্রামীণ মানুষের জন্য গৃহীত ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ প্রকল্পের পরিচালক তিনি৷

ডা. মাখদুমা নারগিসছবি: Shamim Reza

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর এক বছর আগে মেডিকেল কলেজের লেখাপড়া শেষ করেন মাখদুমা৷ ইন্টার্নশিপ করে তৎকালীন পাকিস্তানের বিমান বাহিনীতে মেডিকেল কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছিলেন৷ কলেজ জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তিনি৷ ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী হিসেবে ছয় দফা, এগারো দফা আন্দোলনসহ সেসময়ের প্রায় সকল আন্দোলন-সংগ্রামে কাজ করেছেন৷ প্রগতিশীল নারীদের নিয়ে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মী মাখদুমা৷ যে কারণে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যে অনিবার্য যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে তা যথার্থই অনুধাবন করেছিলেন মাখদুমা এবং তাঁর সংগ্রামী সহকর্মীরা৷ ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য একরকম প্রস্তুতিই নিচ্ছিলেন তাঁরা৷

একাত্তরে পরিবারের সঙ্গে ডা. মাখদুমা নারগিসছবি: Shamim Reza

পহেলা মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশবাসীকে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়ার ডাক দেন তখন থেকেই নিজ কর্মস্থলে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন মাখদুমা৷ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য সভা-সমাবেশ করা এবং অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে থাকেন৷ ফলে ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরুর পর আর ঢাকায় থাকা নিরাপদ ছিল না তাঁর জন্য৷ ২৭ মার্চই তাঁর স্বামী ঢাকা ছেড়ে ভারত চলে যান যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য৷ তবে মাখদুমা গোপনে দেশের ভেতরে থেকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সহায়ক কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন৷ অবশেষে ৩ মে ঢাকা ছেড়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন৷

মুক্তিযুদ্ধের জন্য ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টির জন্য যে পৃথক গেরিলা বাহিনী ছিল তাদের শিবিরে গিয়ে হাজির হন মাখদুমা৷ সেখানে চিকিৎসক হিসেবে শরণার্থী এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিতে থাকেন৷ এছাড়া যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে উপযুক্ততার সনদ দিতেন৷ এছাড়াও নারী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সভা-সমাবেশ করতেন৷ মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসে অসংখ্য লোমহর্ষক এবং হৃদয় বিদারক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন এবং হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন৷ সেসব ঘটনার একটি ডয়চে ভেলের কাছে তুলে ধরেন ডা. মাখদুমা৷

সম্প্রতি পরিবারের সঙ্গে ডা. মাখদুমা নারগিসছবি: Shamim Reza

তিনি বলেন, ‘‘আগরতলায় শরণার্থী শিবিরের পাশেই একটি ছোট ঘরে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতো৷ একদিন দু'টো ছোট ছেলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে সেখানে ঘোরাঘুরি করছিল৷ তাদের বয়স ১৫ থেকে ১৬ বছর হবে৷ আমার সব কাজ শেষ হওয়ার পর তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম যে, কেন তারা সেখানে অনেকক্ষণ ধরে ঘুরছে৷ তখন তারা বেশ কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক নানা কথা বলে একটা তালপাতার ঠোঙা বের করে আমাকে দিতে চায়৷ আমি বললাম, এটা আমি কেন নিবো? কী আছে এতে? তারা বলল, তারা মাত্র বাংলাদেশ থেকে এসেছে৷ দেশ থেকে সঙ্গে করে গুড় নিয়ে এসেছে৷ আমি বললাম, এটা তোমাদের কাছেই রাখো৷ তোমাদের এখানে খাওয়া-দাওয়ার অনেক কষ্ট হবে৷ তারপরও তারা বলল যে, না আপনার ছোট বাচ্চা আছে তাকে এটা দিবেন৷ এরপরও তারা চলে না গিয়ে বসেই আছে৷ তখন জিজ্ঞেস করলাম যে, তোমাদের কি আরও কিছু বলার আছে? তখন তারা জানালো মুক্তিযুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণের আগ্রহ৷ আমি বললাম যে, ১৮ বছরের কম বয়সের কাউকে তো আমরা যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি না৷ এমনকি ২১ বছরের কম হলেই আমরা নিরুৎসাহিত করতাম৷ কিন্তু তারা বিভিন্নভাবে অনুরোধ করতে থাকল৷ এমনকি আমার পায়ে ধরার উপক্রম৷ তারা বলল, আমাদের গ্রামে যখন পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা ঢুকল তখন তারা যেভাবে গ্রামের নারী-পুরুষদের উপর নারকীয় নির্যাতন চালিয়েছে, তা আপনি দেখলে আপনার ছোট বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও আপনি যুদ্ধে যেতে চাইতেন৷ তাই আমরা যদি অন্তত একজন পাক সেনাকেও না মেরে মরে যাই, তাহলে এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কিছু থাকবে না৷ নিরুপায় হয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতনদের কাছে ছেলে দু'টোকে নিয়ে গেলাম৷ জানালাম যে, আমার কাছে ছেলে দু'টোকে খুবই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হয়েছে, আপনারা তাদের বিষয়টি দেখুন৷ তবে তারা যে এখন কেমন আছে কিংবা আদৌ বেঁচে আছে কি না জানিনা৷ কিন্তু তাদের চোখে মুখে মাতৃভূমির প্রতি এবং দেশের মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা আমি দেখেছিলাম সেটি আমাকে এখনও আন্দোলিত করে৷ তবে ১৯৭১ আমাদের মাঝে দেশ ও জাতির প্রতি যে ভালোবাসা ও প্রেম জাগিয়েছিল তা কি আমরা পারি না আবারও নিজেদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে?''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ