রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলাটি শুনানির জন্য আগামী ডিসেম্বরে উঠবে বলে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
দি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগামী ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর এই মামলার শুনানি করা হবে৷
আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত দেশ গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য জরুরি আদেশ দিতে বলবে৷ দেশটির আইনজীবীরা বলছেন, তারা চান রোহিঙ্গাদের যেন আর কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য যেন আইসিজে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে
রোহিঙ্গাদের গণহত্যার দায়ে গত ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের দি হেগের দি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-তে মামলা করে গাম্বিয়া৷ ইসলামি কো-অপারেশনের ৫৭টি দেশের পক্ষে তারা এই মামলা করেছে বলে জানিয়েছে৷
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
8 ছবি1 | 8
মিয়ারমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তি বিধানে ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষরিত কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ ১৯৫৬ সালে ওই জেনোসাইড কনভেনশনে সই করে মিয়ানমার৷ এছাড়া দেশটির বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের বাড়িঘর ধ্বংসের কথা বলা হয়৷
২০১৭ সালের ২৫ আগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় বিদ্রোহীদের হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান৷ তখন বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা চলে আসেন৷ গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়৷
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তাদের উপর নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ তুলে ধরেন, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ৷
আইসিজে হলো জাতিসংঘের প্রধান বিচারিক অঙ্গ; ১৯৪৫ সালে গঠনের পরের বছর থেকে এই আদালত কার্যকর রয়েছে৷
রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনতে ১০টি সংগঠন গাম্বিয়াকে সহায়তা করছে, তাদের একটি হলো হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)৷
এইচআরডব্লিউর পরিচালক পরম-প্রিত সিং এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘‘গাম্বিয়ার এই আইনি পদক্ষেপের ফলে বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলো৷ এখন আদালত রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচাতে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নিতে পারে৷’’