জাতিসংঘের উদ্বেগ উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার সাত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত৷ অভিবাসন বিষয়ক অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গারা সে দেশে বন্দি ছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
আসামের পুলিশ কর্মকর্তা ভাস্কর জ্যোতি মহন্ত জানান, ‘‘মিয়ানমারের সাত নাগরিককে আজ বিতাড়ন করা হয়েছে৷ মোরেহ সীমান্তে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে৷’’
ঐ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠালে তাঁরা নিপীড়নের শিকার হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ৷ সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে ভারত একটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে৷ ঐ আইন অনুযায়ী, কোনো শরণার্থী কিংবা আশ্রয়প্রার্থীকে এমন কোনো দেশে পাঠানো যায় না, যেখানে গেলে তার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
রোহিঙ্গা বিতাড়ন ঠেকাতে আদালতে একটি পিটিশনও দায়ের করা হয়েছিল৷ কিন্তু দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার সেই পিটিশন খারিজ করে দেন৷ কোর্ট তাঁদের অবৈধ অভিবাসী বলে রায় দেন৷ ‘‘এমনকি তাঁরা যে দেশ থেকে এসেছে, সেই দেশ তাঁদের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করেছে,’’ বলে জানান তিন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ৷
উল্লেখ্য, নতুন দিল্লির হিসেবে, ভারতে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাস করেন৷ তবে জাতিসংঘের হিসেবে, ভারতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৬ হাজার৷
গতবছর ভারতের সরকার সব রোহিঙ্গাকে বিতাড়নের নির্দেশ দিয়েছিল৷ কারণ, সরকার তাঁদের নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখে৷
তবে সরকারের ওই নির্দেশ অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে চ্যালেঞ্জ করা একটি পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন আছে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
নানা কাজে যুক্ত হচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা
গতবছরের ২৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করা এই শরণার্থীরা জীবন ও জীবিকার তাগিদে নানা কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
কৈশোরেই ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান
কুতুপালং মধুরছড়া ৮নং ব্লকে পরিবারসহ থাকে আব্দুর রহমান৷ ৬ সদস্যের পরিবারটি গেল বছরের আগস্টে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে৷ তারপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন আব্দুর রহমানের বাবা৷ তাই পরিবারের ভার এখন রহমানের কাঁধে৷ মিয়ানমারে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে ১১ বছর বয়সি রহমান৷ কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর থেকে সে থেকে সে মুদি দোকানদার৷ ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা এ দোকানে রহমানের মা-ও মাঝে মাঝে বসেন৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
সেলাই করে সংসার চালান ইউনুচ
১০ জনের পরিবার৷ তাই বাংলাদেশ সরকারের দেয়া ত্রাণে সংসার চলে না৷ মিয়ানমারে ইউনুচের দর্জির দোকান ছিল৷ সে কারণে বাংলাদেশে এসেও ৩ হাজার টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনে শুরু করেছেন একই কাজ৷ পরিবারের ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই মেয়ে৷ তাই মেয়েদের বিয়েসহ অন্যন্য খরচ জোগানোর জন্য দর্জির কাজ করেই টাকা জমাচ্ছেন ইউনুচ৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
মাতৃহারা আমির
গত বছরের ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর অভিযানের মূখে মিয়ানমার থেকে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে পালিয়ে আসে আমির সদু (১১)৷ মা মিয়ানমারে সেনাদের হাতে মারা যান৷ ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে আমির সবার ছোট৷ বাবা আবার বিয়ে করেছেন৷ ৭ ভাই-বোনকে থাকতে হয় আলাদা বাসায়৷ পরিবারের স্বার্থে আমিরও নেমে পড়েছে কাজে৷ মধুরছড়ায় রাস্তার পাশে অস্থায়ী এক মুচির দোকান দিয়েছে সে৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
নুর সেহারাও দোকানদার
আলী জোহা রাজমিস্ত্রি৷ তবে তাঁর ছেলে নুর সেহারা এখন দোকান চালায়৷ এক বছর আগে স্ত্রী’র গহনা বিক্রি করে সেই টাকায় দোকান খুলেছিলেন আলী জোহা৷ বড় পরিবারের খরচ নির্বাহ করতে নূরকে দোকানের দায়িত্ব দিয়ে নিজের পুরোনো পেশায় ফিরে গেছেন আলী জোহা৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
মোবাইল মেরামতকারী আতাউল্লাহ
আতাউল্লাহর বয়স এখন ১৯ বছর৷ মিয়ানমারে থাকতে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন৷ এখন বাংলাদেশে এসে কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি মেরামতের কাজ পারেন৷ কুতুপালং লোহার ব্রিজ এলাকার এই দোকানে চাকরি করে মাসে ৩ হাজার টাকা পান তিনি৷ ৭ সদস্যের সংসার চালাতে তাঁর বাবাকেও রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হয়৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
মামার দোকানে চাকরি
রেজাউল করিমমনের বাবা নেই৷ তাই ১১ বছর বয়সেই সংসার চালাতে মামার দোকানে চাকরি নিতে হয়েছে তাকে৷ মাত্র ৮-৯ হাজার টাকার পুঁজির এ দোকানের আয় খুব বেশি নয়৷৭ সদস্যের পরিবারের জন্য এ মুহূর্তে অবশ্য সামান্য টাকাই অনেক৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
ফি ছাড়া রোগী দেখেন রোহিঙ্গা ‘ডাক্তার’
মিয়ানমারে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন শামসুল আলম৷ সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কুতুপালং লম্বাশিয়া বাজারে ঔষধের দোকান দিয়েছেন৷ প্রায় ১ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে খোলা এ দোকানে রোগীদের চিকিত্সা সেবা দিতেও দেখা যায় তাঁকে৷ শামশুল জানান, রাখাইন ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি পাশ করার পর হাসপাতালে চাকরি পেয়েছিলেন৷ ওই চাকরি করার সময় ডাক্তারি সম্পর্কেও ধারণা হয়ে যায় তাঁর৷ কুতুপালংয়ে তাঁর মূল পেশা ওষুধ বিক্রি৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
চুল কাটেন রফিক
সেলুনে চাকরি করেন রফিক৷ বালুখালীর পানবাজারের এই সেলুনে কাজ করার পর মাত্র ৬ মাসেই চুল কাটায় বেশ দক্ষ হয়েছে উঠেছেন রফিক৷ আগে এক সময় টমটম চালাতেন৷ তবে এখন চুল কাটাই রফিকের পেশা৷