আফগান মেয়েরা জাতিসংঘে কাজ করতে পারবে না বলে ফতোয়া জারি তালেবানের, জানালেন জাতিসংঘের মুখপাত্র।
বিজ্ঞাপন
এরপরই আফগানিস্তানে জাতিসংঘের কর্মীদের ৪৮ ঘণ্টা অফিসে না আসতে বলা হয়েছে। জতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেসের মত হলো, তালেবানের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না এবং এটা অভাবনীয় সিদ্ধান্ত।
মুখপাত্র জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষের সাহায্য দরকার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত খুবই চিন্তার।
সংবাদসংস্থা রয়টার্স তালেবান নেতা ও প্রশাসনের কাছ থেকে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
‘অধিকারহীন’ অসহায় আফগান নারীরা
২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানের নারীদের নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে তালেবান৷ সম্প্রতি নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে তারা৷
ছবি: AFP
বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ
বোরকা পরা এক নারী কান্দাহারের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন৷ গত বুধবার, এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করে তালেবান সরকার৷ এরপর থেকে নারীদের আর শ্রেণিকক্ষে যেতে দেওয়া হচ্ছে না৷
ছবি: AFP
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক নিয়ন্ত্রণ
বিবৃতি দেওয়ার পর কাবুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান৷ কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হয়েছে৷ পুরুষ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে গেছেন৷ আর কিছু পুরুষ শিক্ষক ধর্মঘট করছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা আগে থেকেই
নারীদের বিষয়ে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা অবশ্য আগে থেকেই জারি ছিল৷ যেমন, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ এবং প্রবেশপথ নারী পুরুষের জন্য আলাদা করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক প্রভাব’
গত অক্টোবর মাসে হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল৷ কিন্তু নতুন এই নিষেধাজ্ঞার কারণে অনিশ্চয়তায় তারা৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘‘নারীদের উচ্চশিক্ষার উপর দেওয়া এই নিষেধাজ্ঞা শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘনই নয়, এমন পদক্ষেপ দেশের ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে৷’’
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/Getty Images
একা একা দূরে নয়
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরের এক নির্দেশনা অনুযায়ী, আফগানিস্তানের নারীরা ৭২ কিলোমিটারের (৪৫ মাইল) চেয়ে বেশি দূরে একা যেতে পারবেন না৷ যেতে হলে সঙ্গে কোনো পুরুষকে রাখতে হবে৷তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অব ভাইস এক নির্দেশনায় কোনো চালক যাতে কখনো একা দূরে যেতে আগ্রহী নারীকে গাড়িতে না তোলেন সেই কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: Sayed Khodaiberdi Sadat/AA/picture alliance
টেলিভিশনে, মুভিতে চেহারা দেখানো যাবে না
টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে নারীদের চেহারা দেখানোও সীমিত করেছে তালেবান৷ এই নির্দেশের ফলে কোনো নারী আর টিভি শো, নাটক বা চলচ্চিত্রে অংশ নিতে পারেন না৷ বিশেষ ক্ষেত্রে অংশ নিলেও নারীকে অবশ্যই হিজাব পরতে হয়৷এক প্রতিবেদনে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক নারীই মিডিয়া ছেড়েছেন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Ariana News
নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় অবলুপ্ত
২০০১ সালে নারীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় খুলেছিল তখনকার সরকার৷২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে সেই মন্ত্ণালয় বন্ধ করেছে তালেবান৷ ওপরের ছবিতে কাবুলের এক বেকারির সামনে দরিদ্র নারীদের মধ্যে রুটি বিতরণের দৃশ্য৷ রুটি দিচ্ছেন এক সাধারণ নাগরিক৷
ছবি: Petros Giannakouris/AP/picture alliance
‘বিশ্ববিবেকের জন্য লজ্জা’
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নারীদের উপর এমন নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে তালেবান৷ তবে তালেবানের এই নিষেধাজ্ঞায় প্রতিবাদে পিছপা হননি অনেকেই৷ গত নভেম্বরে নিজেরদের এই অবস্থা বিশ্বকে জানাতে এভাবেই প্রতিবাদে শামিল হন নারীরা৷ সেখানে এক নারীকে ইংরেজিতে লেখা ‘আফগান নারীদের ভয়াবহ অবস্থা বিশ্ববিবেকের জন্য লজ্জা’ প্লেকার্ড নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নেন৷
ছবি: AFP
চেষ্টা করছে কেউ কেউ
তালেবানের শাসনে থাকা আফগানিস্তানের তরুণীরা শুধুমাত্র ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পায়৷ তবে এই ছবির তরুণীরা ভাগ্যবান৷ তালেবানের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কম এমন কিছু প্রদেশে অবশ্য নারীরা নিষেধাজ্ঞা মানছে না৷
ছবি: AFP
9 ছবি1 | 9
জাতিসংগের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা লিখিতভাবে কিছু পাননি। আফগান মন্ত্রী ও তালেবান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বুধবার কাবুলে বেশ কিছু বৈঠক হতে পারে।
ডজাতিসংগের আফগানিস্তান মিশনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার জানানো হয়েছিল, তাদের নারী কর্মীদের নানগরহারে কাজ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেজন্যই আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য জাতিসংঘের সব কর্মীকে অফিসে আসতে মানা করে দেয়া হয়েছে।
আফগান মেয়েদের বিনোদন পার্কেও ঢোকা নিষিদ্ধ
আফগানিস্তানে মেয়েদের উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা চাপালো তালেবান। বিনোদন পার্কে ঢুকতে পারবে না মেয়েরা।
ছবি: Hussein Malla/AP/picture alliance
নতুন নিষেধাজ্ঞা
আফগানিস্তানে তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে মেয়েদের উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাদের শেষ নিষেধাজ্ঞা হলো, মেয়েরা বিনোদন পার্কে ঢুকতে পারবে না। প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড প্রিভেনশন অফ ভাইস মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিনোদন পার্কে ঢোকার অনুমতি মেয়েদের নেই।
ছবি: Hector Retamal/AFP/Getty Images
জানিয়ে দেয়া হয়েছে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাবুলের দুইটি পার্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাদের কাছে তালেবানের নির্দেশ এসে গেছে, মেয়েদের আর ঢুকতে দেয়া যাবে না।
ছবি: Hector Retamal/AFP/Getty Images
স্পষ্ট নয়
তবে একটা বিষয় এখনো স্পষ্ট হয়নি, মেয়েদের বিনোদন পার্কে ঢোকার আলাদা দিন থাকবে কি না। আগে নিয়ম ছিল, সপ্তাহের কিছু দিন শুধু মেয়েরাই পার্কে ঢুকতে পারবে। এবারও সেই নিয়ম চালু হবে কি না তা তালেবান জানায়নি।
ছবি: Hector Retamal/AFP/Getty Images
একা নয়
এর আগে তালেবান জানিয়েছিল, অন্তত একজন পুরুষ আত্মীয় ছাড়া মেয়েরা একা রাস্তায় বেরোতে পারবে না। বাইরে বেরোতে গেলে তাদের মুখ ঢেকে রাখতেই হবে।
ছবি: Nava Jamshidi/Getty Images
সরকারি চাকরি নয়
মেয়েদের সমানে সরকারি চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের চাকরিতে মেয়েদের রাখা হয়েছে। কারণ, সেখানে উপযুক্ত পুরুষ পাওয়া যায়নি। বাকি সব সরকারি চাকরি থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।
ছবি: DW
ঘোষণা করেও পিছিয়ে আসা
গত মার্চে তালেবান জানিয়েছিল, শুধু মেয়েদের জন্য সেকেন্ডারি স্কুল খোলা হবে। কিন্তু পরে তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে যায়। এখনো সেই স্কুল খোলা হয়নি।
ছবি: Ebrahim Noroozi/AP/picture alliance
বিক্ষোভের মোকাবিলা
কাবুল ও অন্য শহরে নিজেদের অধিকারের দাবিতে মেয়েরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কিন্তু কড়া হাতে তাদের বিক্ষোভের মোকাবিলা করেছে তালেবান। মেয়েদের হত্যা করা হলেও অভিযুক্তের কোনো শাস্তি হয়নি।
ছবি: AHMAD SAHEL ARMAN/AFP
জাতিসংঘের রিপোর্ট
গত অগাস্টে প্রকাশিত জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে মেয়েদের অবস্থা ক্রমশ আরো ভয়াবহ এবং নিরাশাজনক হচ্ছে। নারী ও অল্পবয়স্ক মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
ছবি: Sharifa
8 ছবি1 | 8
গত ডিসেম্বরেই তালেবান সব এনজিও-র নারী কর্মীদের কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে নারীদের কাছে পৌঁছানোর কাজ যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনই যে সব দেশ ত্রাণসাহায্য দিচ্ছে, তারা তা বন্ধ করে দিতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রবল হয়েছে।