জাতিসংঘের গুম তালিকায় ভারতীয় দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী, দাবি জয়ের
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে ‘গুমের শিকার’ যে ৭৬ জনের তালিকা করেছে, সেখানে ভারতীয় দুই বিচ্ছিন্নতাবাদীরও নাম রয়েছে বলে দাবি করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়৷
বিজ্ঞাপন
তার প্রশ্ন, ‘‘জাতিসংঘের একটি গ্রুপ কীভাবে এত বড় ভুল করতে পারে?’’
বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘‘প্রশ্ন হলো- জাতিসংঘের একটি গ্রুপ কীভাবে এত বড় ভুল করতে পারে? উত্তরটি সহজ- তারা শুধুমাত্র স্থানীয় বাংলাদেশ-ভিত্তিক এনজিওদের দ্বারা সরবরাহকৃত গুমের ঘটনাবলীকে তথ্য যাচাই না করেই প্রকাশ করেছে৷’’
গত বছর প্রকাশিত ওই তালিকা ধরে প্রধানমন্ত্রীর সন্তান ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‘‘এই তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ করছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির গ্রহণযোগ্যতাকে৷ তালিকায় থাকা ৭৬ জনের মধ্যে অনেকে বাংলাদেশে বসবাস করছে যার প্রমাণ মিলেছে৷ সেখানে দু'জন ভারতীয় নাগরিকের নাম আছে৷’’
‘‘আবার অনেক তালিকাভুক্ত পলাতক আসামির নাম রয়েছে এখানে৷ যার কারণে যেই এনজিওগুলোর ওপর নির্ভর করে জাতিসংঘের প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, সেই এনজিওসহ প্রশ্ন উঠছে খোদ জাতিসংঘের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে৷’’
তালিকার দুইজন ভারতীয়ের থাকার বিষয়ে জয় লিখেছেন, ‘‘তালিকার ২ জন ভারতের মনিপুর রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী, নিষিদ্ধ সংগঠন ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট-ইউএনএলফ-এর শীর্ষ নেতা৷ একজন সংগঠনটির চেয়ারম্যান, অপরজন মেজর পদমর্যাদার৷ তারা হলেন- সানায়াইমা রাজকুমার ওরফে মেঘান ও কেইথেল্লাকপাম নবচন্দ্র ওরফে শিলহেইবা৷’’
এপিবি/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
গুম নিয়ে শীর্ষ ব্যক্তিদের মন্তব্য
বাংলাদেশে গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে জাতিসংঘ৷ গুম নিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে ছবিঘরটি সাজানো হয়েছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
সরকারের বক্তব্য
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলেট৷ ১৪ আগস্ট বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করেন তিনি৷ তখন তাকে একটি ভিডিও দেখানো হয় বলে জানিয়েছে প্রথম আলো৷ এতে বলা হয় বাংলাদেশে তিন কারণে মানুষ ‘নিখোঁজ’ হয়৷ প্রথমত, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত হওয়ার পর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য৷ দ্বিতীয়ত, কেউ ব্যবসায় লোকসান করলে৷ তৃতীয়ত, পারিবারিক কারণে৷
ছবি: Sazzad Hossain
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন
মিশেল বাচেলেটের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও বৈঠক হয়েছে৷ এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে যেটা হয়, সেটাই আমরা বলেছি৷ তাদের বলেছি, এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস (গুম) শব্দ আমাদের দেশে নাই৷ তবে কিছু কিছু লোক বলেছে, ৭৬ জন লোক নাকি গত ১০ বছরে নিখোঁজ হয়েছে৷ তারা বলেছে যে সরকারই নাকি নিখোঁজ করেছে৷ ৭৬ জনের ১০ জনকে আবার দেখা গেল, পাওয়া গেছে ঘোরাঘুরি করছে৷ আর বাকিগুলো এখনো আমরা ঠিক জানি না৷’’
ছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাচেলেট
বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাচেলেট বলেন, ‘‘গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত চায় জাতিসংঘ৷’’ তিনি বলেন, ‘‘নির্যাতন, বিচারবির্হিভূত হত্যাকাণ্ড, গুম - এমন সব অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স ব়্যাবের বিরুদ্ধে৷ আমি মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি৷ স্বাধীন, স্বচ্ছ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের কথা বলেছি৷ সেই সঙ্গে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছি৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
১৬ আগস্ট বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, তাদের ৬০০-র বেশি নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে৷ বাংলাদেশে ‘গুমের’ ঘটনা নিয়ে নেত্রনিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তিনি বলেন, ‘‘নেত্রনিউজের প্রতিবেদন প্রকাশের পরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্টেটমেন্ট দিয়েছে৷ এই যে ভয়াবহ, ভয়ংকর মানবাধিকারের যে চিত্র, এই চিত্র অবশ্যই শুধু নিন্দা নয়, এটা জঘন্যতম একটা ঘটনা৷’’ এ বিষয়ে তদন্ত করতে তিনি জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান৷
ছবি: bdnews24.com
ইলিয়াস আলী সম্পর্কে ব়্যাবের বক্তব্য
বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ‘গুম করা হয়েছে’ দাবি করার পাশাপাশি সুইডেনভিত্তিক ‘নেত্র নিউজ’ গত এপ্রিলে আরো দাবি করে যে, এর সঙ্গে ব়্যাব জড়িত৷ এ ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘‘আমরাও চেষ্টা করছি তাকে খুঁজে বের করার৷’’ তিনি বলেন, ‘‘ইলিয়াস আলীর বিষয়ে নেত্র নিউজ নামের সংবাদমাধ্যমটি যেভাবে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছে, র্যাব মনে করে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন৷’’
ছবি: bdnews24.com
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
২০১৭ সালে সংসদে দেয়া বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন গুম শুধু বাংলাদেশে নয়, অন্য দেশেও হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘২০০৯ সালের একটি হিসাবে ব্রিটেনে দুই লাখ ৭৫ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক গুম হয়ে গেল৷ তার মধ্যে ২০ হাজারের কোনো হদিসই পাওয়া গেল না৷ অ্যামেরিকার অবস্থা আরও ভয়াবহ৷ তাদের সব কিছু তো আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন, তারপরও সেই দেশে এত লোক গুম হয়, তার খোঁজ পাওয়া যায় না৷’’
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়৷ বিভিন্ন আত্মগোপনের ঘটনাকে গুম বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ বাংলাদেশে কেউ গুম হয় না৷